এটি প্রমাণের ধারনাটি মূলত: ইহুদী ধর্ম থেকে এসেছে। ইহুদীরা আল্লাহ তায়ালাকে মানুষের আকৃতিতে বিশ্বাস করে। মানুষের প্রায় সব গুণাগুণ আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করে থাকে। দেহবাদী আকিদার ক্ষেত্রে ইহুদীদের এসব জঘন্য আকিদা কাররামিয়া ও শিয়াদের মাধ্যমে ইসলামী আকিদায় প্রবেশ করে। পরবর্তীতে কাররামিয়াদের অনুসারী তথাকথিত সালাফীরাও এসব বাতিল আকিদা লালন করে এবং সমাজে দেহবাদী আকিদা প্রচার করতে থাকে।
আল্লাহর আকার সম্পর্কে ইহুদী আকিদা:
ওল্ড টেস্টামেন্টের বুক অব জেনেসিসে রয়েছে,
And God said, Let us make man in our image, after our likeness: and let them have dominion over the fish of the sea, and over the fowl of the air, and over the cattle, and over all the earth, and over every creeping thing that creepeth upon the earth.
"প্রভূ বললেন, আমি আমার আকৃতিতে, আমার সাদৃশ্যে মানুষ সৃষ্টি করবো, যারা মাছ, সমুদ্র.....জয় করবে"
[বুক অব জেনেসিস, পরিচ্ছেদ-১, শ্লোক-২৬]
একই বইয়ের ২৭ নং শ্লোকে রয়েছে,
So God created man in his own image, in the image of God created he him; male and female created he them.
অর্থাৎ সুতরাং প্রভূ মানুষকে নিজের আকৃতিতে সৃষ্টি করলেন; প্রভূর আকৃতিতে মানুষকে সৃষ্টি করলেন। আর তাদেরকে সৃষ্টি করলেন পুরুষ ও মহিলা হিসেবে।
[বুক অব জেনেসিস, পরিচ্ছেদ-১, শ্রোক, ২৭]
অনলাইন ভার্সন:
http://studybible.info/KJV/Genesis%201:27
ইহুদীদের কিতাব থেকে আল্লাহর আকার প্রমাণ:
তথাকথিত সালাফীরা যে ইহুদীদের কিতাব থেকে তাদের এই আকিদাটি নিয়েছে, এটি আমাদের মৌখিক কোন দাবী নয়। বরং তাদের কিতাবেই বিষয়গুলো স্পষ্ট রয়েছে।
সালাফীদের বক্তব্য:
সালাফীদের অন্যতম শায়খ হলেন আব্দুল আজিজ রাজেহী ও শায়খ সালেহ ইবনে আব্দুল আজিজ আলুশ শায়খ। তাদের মতে আল্লাহ তায়ালার সুরত বা আকৃতি রয়েছে। এই সুরত হলো আল্লাহর শিকল বা গঠন ও অবকাঠামো। আল্লাহ তায়ালার এই গঠন ও অবকাঠামোর মাধ্যমে তিনি অন্যদের থেকে পৃথক হয়ে থাকেন। আল্লাহ তায়ালার বিদ্যমান হওয়ার জন্য এমন একটি সুরত বা গঠন প্রয়োজন, যার মাধ্যমে তিনি অস্তিত্বশীল হয়ে থাকেন।
[বয়ানু তা'লবিসিল জাহমিয়া, পৃ.৪৫৫]
সৌদি মুফতী বোর্ডের ফতোয়া:
সালাফীরা শুধু আল্লাহ তায়ালার আকার আছে, একথা বলেই ক্ষ্যান্ত হয় না। বরং তাদের মতে আল্লাহর আকার হলো মানুষের মতো। এর স্বপক্ষে তারা দলিল দিয়ে থাকে, আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন এই হাদীস দ্বারা। তাদের মতে আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে আল্লাহর নিজের আকৃতি অনুযায়ী সৃষ্টি করেছেন। বরং তাদের নিকট আল্লাহর আকার ও মানুষের আকারের মাঝে একটি মা'নায়ে কুল্লী বা সামষ্টিক অর্থ রয়েছে। অর্থাৎ উভয়ের আকৃতি একই রকম। তবে এই মা'নায়ে কুল্লী বা সামষ্টিক অর্থ থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর আকৃতি মানুষের সাথে সাদৃশ্য রাখে না। অর্থাৎ আল্লাহর একটি গঠন বা আকৃতি রয়েছে যেটা মানুষের মতো। কিন্তু এই গঠন হুবহু মানুষের আকৃতির সাইজ, রং বা পরিমাপ এক নয়। তাদের নিকট আল্লাহর আকার ও মানুষের আকারের মাঝে গুণগত পার্থক্য বিদ্যমান কিন্তু সমষ্টিগতভাবে উভয় আকৃতি একই রকম। এই কথাটি সৌদি মুফতী বোর্ডের পক্ষ থেকে ফতোয়া দেয়া হয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ) ফতোয়া নং-২৩৩১
ইবনে উসাইমিনের বক্তব্য:
"ইবনে উসাইমিনের মতে আল্লাহর গুণের সাথে মানুষের সাদৃশ্য রয়েছে। তার মতে আল্লাহর হাত ও মানুষের হাতের মাঝে সাদৃশ্য রয়েছে। আল্লাহর চোখ ও মানুষের চোখের মাঝে সাদৃশ্য রয়েছে। আল্লাহর চেহারার সাথে মানুষের চেহারার সাদৃশ্য রয়েছে। তবে আল্লাহর হাত হুবহু মানুষের হাতের মতো নয়।" অর্থাৎ ইবনে উসাইমিনের মতে আল্লাহর সাথে মানুষের সাদৃশ্য রয়েছে কিন্তু আল্লাহর হাত হুবহু মানুষের হাতের মতো নয়।
এই হুবহু জিনিসটা বোঝার জন্য ছোট্র একটি উদাহরণ দিচ্ছি,
আমরা জানি ত্রিভুজ কয়েক প্রকার। এর মধ্যে এক প্রকার ত্রিভুজ হলো, সমবাহু ত্রিভুজ। অর্থাৎ একটা ত্রিভুজকে অপর আরেকটি ত্রিভুজের কোণ ও বাহুর দিক থেকে সমান। একটাকে আরেকটা দিয়ে রিপ্লেস করা যায়। কিন্তু সমবাহু ত্রিভুজ ছাড়া অন্যান্ সব ত্রিভুজই একটা আরেকটার সাথে সাদৃশ্য রাখে। কিন্তু এগুলো তো একটা আরেকটা হুবহু একই রকম নয়।
সারকথা হলো, ইবনে উসাইমিনের মতো আল্লাহ তায়ালা ও মানুষের মাঝে সাদৃশ্য রয়েছে কিন্তু আল্লাহ ও মানুষ হুবহু এক নয়। আল্রাহর চেহারার সাথে মানুষের চেহারার সাদৃশ্য রয়েছে, কিন্তু আল্রাহ ও মানুষের চেহারা হুবহু এক নয়।
সালাফীদের শায়খ হামুদ বিন আব্দুল্লাহ তুয়াইজারী একটি কিতাব লিখেছে। কিতাবের নাম, আকিদাতু আহলিল ইমান ফি খালকি আদম আলা সুরতির রহমান ( মু'মিনের বিশ্বাস: আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে আল্লাহর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন)। সৌদি শায়খ ইবনে বাজ এই কিতাবের উপর একটি ভূমিকা লেখে দিয়েছে। কিতাবের ভূমিকায় ইবনে বাজ লিখেছে, আল্লাহ তায়ালার নিজ আকৃতিতে আদম আ. কে সৃষ্টি করেছেন এটি সালাফে সালেহীনের আকিদা। তিনি অন্যান্য আলেমদেরকে এটি বিশ্বাস করার আহ্বান জানিয়েছেন। হামুদ বিন আব্দুল্লাহ আত-তুয়াইজারী এ কিতাবটি একটি জঘন্য কিতাব। তার বক্তব্যগুলো স্পষ্ট মুজাসসিমাদের বক্তব্য। সে মূলত: দেহবাদী আকিদা প্রমাণের জন্য এই বই লিখেছে। এই তুয়াইজারী আল্লাহর আকৃতি প্রমাণের জন্য তাউরাত থেকে প্রমাণ দিয়েছে যে, আল্লাহর আকৃতি রয়েছে।
সালাফী আলেমদের বিরোধীতা:
সালাফী আলেমদের মাঝে শায়খ আলবানী আল্লাহর আকার বা আকৃতি অস্বীকার করেছেন। এছাড়াও ইবনে খোযাইমা তার কিতাবুত তাউহীদে আল্লাহর আকৃতি অস্বীকার করেছেন। আলবানী সাহেবের ছাত্র নাসীব রিফায়ীও আল্লাহর আকৃতি অস্বীকার করেছেন।
আলবানী সাহেবের বক্তব্য:
শায়খ আলবানী ইবনে বাজের ভূমিকা সমৃদ্ধ কিতাব "আকিদাতু আহলিল ইমান ফি খালকি আদম আলা সুরতির রহমান" ( মু'মিনের বিশ্বাস: আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে আল্লাহর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন) কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি তুয়াইজারীর লেখা এই কিতাব সম্পর্কে সহীহু আদাবিল মুফরাদে লিখেছেন,
" তুয়াইজারী "আকিদাতু আহলিল ইমান ফি খালকি আদম আলা সুরতির রহমান" ( মু'মিনের বিশ্বাস: আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে আল্লাহর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন) এই কিতাব লিখে সালাফী আকিদা ও রাসূল স. এর হাদীসের প্রতি নিকৃষ্ট কাজ করেছে।"
তুয়াইজারী সম্পর্কে শায়খ আলবানী বলেন, সে হাদীস নিয়ে কথা বলার যোগ্য নয় এবং আলেমদের বক্তব্য বিকৃত করে থাকে। অর্ধেক বক্তব্য উল্লেখ করে এবং অর্ধেক ছেড়ে দেয়।
[সহীহু আদাবিল মুফরাদ, ৩৭৫ পৃ.]
এছাড়াও দেখুন, ফাতাওয়াশ শায়খ আলবানী ফিল মদিনাতি ওয়াল ইমারত, পৃ,১৬-১৭। মুখতাসারু সহীহিলি বোখারী, খ.২, পৃ.১৭৮।
আলবানী সাহেব আল্লাহর আকৃতি অস্বীকার করায় অন্যান্য সালাফী শায়খরা তার উপর বেশ চটেছেন। সালাফীদের দু'জন শায়খ স্পষ্ট আলবানীর সমালোচনা করেছে। এরা হলেন, শায়খ আব্দুর রাজ্জাক আফিফী ও শায়খ আব্দুল্লাহ দাবিশ।
আব্দুর রাজ্জাক আফিফীর বক্তব্য:
"আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। এটিই সঠিক। যদিও আলবানী ও নাসীব রিফায়ী এর বিরোধীতা করেছে"
[ফাতাওয়া ও রসাইল, পৃ.১৬০,, খ.১]
আব্দুল্লাহ দাবিশ এর বক্তব্য:
****************
শায়খ আব্দুল্লাহ দাবিশ আলবানী সম্পর্কে লিখেছে,
" আলবানীর মতটি আমি দেখেছি। এটি আহলে সুন্নতের বক্তব্যের বিরোধী এবং পথভ্রষ্ট জাহমিয়াদের বক্তব্যের অনুরুপ"
[দিফাউ আহলিস সুন্নাহ, পৃ.৫]
যারা আল্লাহর আকার সাব্যস্ত করে তাদের সম্পর্কে ইমাম কুরতুবী রহ. এর বক্তব্য:
যারা আল্লাহর আকার সাব্যস্ত করেছে এবং আল্লাহর আকৃতিতে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে এধরনের বিশ্বাস রাখে, ইমাম কুরতুবী তাদেরকে মুশাববিহা বলেছেন। ইমাম কুরতুবী এধরনের আকিদা পোষণকারীদেরকে কাফের পর্যন্ত বলেছেন।
[আল-মুফহিম, খ.৬, পৃ.৫৯৮]
সালাফীদের কল্পনায় Sky God
যা একদম কুফর ,শিরিক
সালাফী দের কল্পনায় Sky God (নানাউযুবিল্লাহ)
ফিত্নাবাজ ইবনে বায
ফিত্নাবাজ সওদী গ্রেন্ড মুফতী
সালাফীদের গুরু আলবানী
ভয়ানক ফিতনা বিললাল ফিলিপস
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন