বৃহস্পতিবার, ২৮ মে, ২০১৫

পর্ব ১: কারামতে আউলিয়া ও বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য ঘটনা থেকে অলীগন জীবিত তার প্রমান :-


             

                     ঘটনা – ১


★ ইমাম বাইহাকী রহ. হযরত সাইদ ইবনুল মুসাইয়্যাব থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত উসমান রা. এর সময় যায়েদ ইবনে খারিজা আল-আনসারী রা. ইন্তেকাল করেন। তাকে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি কথা বলে উঠেন। এবং বলেন, রাসূল স. এর কথা পূর্ববতী আসমানী কিতাবে রয়েছে। আবু বকর সত্য বলেছেন। উমর সত্য বলেছেন। উসমান সত্য বলেছেন।


Reference :-

ঘটনার সনদ বা সূত্র বিশুদ্ধ। দেখুন,

১. আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসীর রহ. খ.৬, পৃ.২৯৩
২.দালাইলুন নুবুওয়াহ, ইমাম বাইহাকী রহ.। হাদীস নং ২৩০৫
৩.আল-ইস্তেয়াব, ইবনে আব্দুল বার রহ. বর্ণনা নং ৮৪৪ ।
৪. ত্ববরানী ফিল কাবীর, বর্ণনা নং ৫১৪৪
৬.তাহজীবুল কামাল।
৭. আস-সিকাত, ইবনে হিব্বান রহ.।
৮. ইমাম আবু হাতিম, মাশাহিরু উলামায়িল আমসার।

★ এছাড়াও বহুগ্রন্থে এটি উল্লেখ করা হয়েছে। এই ঘটনার সনদ সহীহ।

ইবনে আব্দুল বার রহ. উক্ত ঘটনা বর্ণনা করার লিখেছেন,

وهو الذي تكلم بعد الموت لا يختلفون في ذلك

যায়েদ ইবনে খারিজা রা. যিনি মৃত্যুর পর কথা বলেছেন। এ ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণ মতবিরোধ করেননি।



                       ঘটনা-২:



★ ইমাম বাইহাকী রহ. দালাইলুন নুবুওয়াহতে বর্ণনা করেছেন, হযরত রিবয়ী ইবনে খিরাশ বলেন,
“আমার এক ভাই মৃত্যুবরণ করল। সে আমাদের মাঝে সবচেয়ে দীর্ঘ নামায আদায় করতো। ঘরমের দিনে সবচেয়ে বেশি রোজা রাখতো। আমরা তাকে কাপড় আবৃত করলাম। সকলে তার পাশে বসে ছিলাম। হঠাৎ সে চেহারার কাপড় সরিয়ে দিয়ে বলল, আস-সালামু আলাইকুম। আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ, মৃত্যুর পরেও? সে বলল, আমি আমার প্রভূর সাথে সাক্ষাৎ করেছি। দয়াময় প্রভূ আমাকে জান্নাত দান করেছেন। তিনি আমার প্রতি রাগান্নিত নন। তিনি আমাকে মণি-মুক্তা খচিত কাপড় পরিধান করিয়েছেন। তোমরা খুব দ্রুত আমাকে রাসূল স. এর কাছে পৌছে দেও। কেননা তিনি আল্লাহর শপথ করেছেন, আমি তার কাছে না পৌছা পর্যন্ত তিনি স্থান ত্যাগ করবেন না। ”


★ ঘটনাটি বিশুদ্ধ সূত্রে রর্ণিত। ঘটনাটি যেসব বিখ্যাতু মুহাদ্দিস উল্লেখ করেছেন,

১. ইমাম বাইহাকী, দালাইলুন নুবওয়াহ, খ.৬, পৃ.৪৫৪
২.ইবনে সায়াদ, আত-ত্ববাকাত, খ.৬, পৃ.১৬০।
৩.আল-ইস্তেয়াব, ইবনে আব্দিল বার, যায়েদ ইবনে খারিজা এর জীবনী।
৪.ইবনে আবিদ দুনিয়া, মান আশা বা’দাল মাউত, বর্ণনা নং ৯ ।
৫. ইবনে হিব্বান, আস-সিকাত, খ.৪, পৃ.৩২৬


★ উপর্যুক্ত ঘটনাটি উল্লেখ করার পর ইমাম বাইহাকী রহ. লিখেছেন,

هذا إسناد صحيح، لا يشك حديثيُّ في صحته

অর্থ: ঘটনার সনদ সহীহ। এটি সহীহ হওয়ার ব্যাপারে কোন মুহাদ্দিস সন্দেহ করতে পারে না।

★ ঘটনাটি সালাফীদের অনুসরণীয় শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানী তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন। ঘটনাটি উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন,

وبالجملة؛ فالقصة صحيحة بلا شك، والله على كل شيء قدير

অর্থ: “মোট কথা, নি:সন্দেহে ঘটনাটি বিশুদ্ধ (সহীহ)। আল্লাহ তায়ালা সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান”
[সিলসিলাতুস জয়ীফা, ৬৬৭৩ নং হাদীসের আলোচনা দ্রষ্টব্য]





                      ঘটনা -৩:



★ বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিক ইবনে আসাকির তার তারীখে লিখেছেন,

عن عبد الله بن عتبة الأنصاري ، قال بينما ثم يثورون القتلى يوم مسيلمة إذ تكلم رجل من الأنصار من القتلى ، فقال : محمد رسول الله أبو بكر الصديق عمر الشهيد عثمان الرحيم ثم سكت

আব্দুল্লাহ ইবনে উতবা আল-আনসারী রা. বলেন, মুসালাইমাতুল কাজ্জাবের সাথে যখন ঘোরতর লড়াই চলছিল, আনসারী এক শহীদ কথা বলে উঠল। সে বলল, “মুহাম্মাদ স. আল্লাহর রাসূল। আবু বকর হলেন সিদ্দিক (সত্যবাদী), উমর রা. হলেন শহীদ। উসমান রা. হলেন নম্র ও কোমল হৃদয়ের অধিকারী। এরপর সে চুপ করল।

Reference :

তারীখে দিমাশক, খ.৩০, পৃ.৪০৮
মান আশা বা’দাল মাউত, পৃ.১৭, বর্ণনা নং ৮




                              ঘটনা-৪:



★ জঙ্গে সিফফীন অথবা জঙ্গে জামালে মৃতের কথোপকথন:
ইমাম ইবনে কাসীর রহ. আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে লিখেছেন,

عن عبد الله بن عبيد الأنصاري ، قال : بينما هم يثورون القتلى يوم صفين أو يوم الجمل إذ تكلم رجلٌ من الأنصار من القتلى فقال محمد رسول الله أبو بكر الصديق عمر الشهيد عثمان الرحيم ثم سكت

“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উবায়েদ আল-আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জঙ্গে জামাল অথবা সিফফীনে যখন ঘোরতর লড়াই চলছিল, হঠাৎ এক আনসারী শহীদ কথা বলে উঠল। সে বলল, মুহাম্মদ স. আল্লাহর রাসূল । আবু বকর হলেন, সত্যবাদী। উমর হলেন শহীদ। উসমান কোমল হৃদয়ের অধিকারী। এরপর সে চুপ করল। ”
[আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খ.৬, পৃ.১৫৮]
[তারীখে দিমাশক, খ.৩৯, পৃ.২২২]





                                ঘটনা ৫:




★ মৃত্যুর পর হাসি:
বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনে আবিদ দুনিয়া রহ. বর্ণনা করেছেন, হারিস আল-গানাবী বর্ণনা করেন, রবী ইবনে খিরাশ কসম খেয়েছিলেন, তিনি পরকালে তার অবস্থান না জানা পর্যন্ত দাঁত বের করে কখনও হাসবেন না। তার মৃত্যুর পরেই কেবল তিনি হেসেছিলেন। রবী ইবনে খিরাশের ভাই রিবয়ী ইবনে খিরাশও একই কসম খেয়েছিলেন। তিনি জান্নাতী না কি জাহান্নামী সেটা না জানা পর্যন্ত হাসবেন না। হারেস আল-গানাবী বলেন, রিবয়ী ইবনে খিরাশের গোসলদাতা আমাকে বলেছে, আমরা যতক্ষণ তাকে গোসল দিচ্ছিলাম ততক্ষণ তিনি খাটের উপর মুচকী হাসছিলেন।
মান-আশা বা’দাল মাউত, পৃ.২০, বর্ণনা নং ১২ ।


★ বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনে আবিদ দুনিয়া রহ. ( ২০৮-২৮১ হি:) একটি বিখ্যাত কিতাব লিখেছেন। কিতাবের নাম, মান আশা বা’দাল মাউত (মৃত্যুর পরে যারা জীবিত হয়েছেন)। এই কিতাবটি একজন বিখ্যাত সালাফের। যিনি মুহাদ্দিস হিসেবে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য।পরবর্তীতে ইমাম বাইহাকী, ইবনে কাসীর, জালালুদ্দীন সূযূতী, ইবনে রজব হাম্বলীসহ অসংখ্য মুহাদ্দিস ও আলেম তার কিতাব থেকে বিভিন্ন ঘটনা উদ্ধৃত করেছেন। সুতরাং মৃত্যুপরবর্তী কারামতে বিশ্বাস স্থাপন যেমন সালাফের মানহাজ, তেমন পরবর্তী আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন