রবিবার, ৩১ মে, ২০১৫

বিশ্ব-বিখ্যাত ইমামগণের মতে শবে বারাত বা লাইলাতুল বারা'ত :-




★ ইমাম শাফেয়ী রহ বলেন-

و بلغنا أنه كان يقال إن الرعاء يستجاب في خمس في ليال في ليلة جمعة و ليلة الأضحى و ليلة الفطر و اول ليلة من رجب و ليلة النصف من شعبان

আর আমাদের নিকট এরূপ বর্ণনা এসেছে যে, নিশ্চই পাঁচটি রাতে বান্দার দুআ’র জবাব দেয়া হয় অর্থাৎ দু’আ কবুল করা হয়, জুমার রাত, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহার রাত, রজবের প্রথম রাত এবং শাবানের মধ্য রাত (শবে বরাত)।
[আল উম্ম, ১:২৩১/২:৪৮৫, ইবনে রজব লাতায়িফুল মা’আরিফ ১:১৩৭]


★ খলিফা উমর ইবনে আব্দুল আযীয রাহঃ বসরায় তার গভর্নরকে লিখেন-

عليك بأربع ليال من السنة فإن الله يفرغ فيهن الرحمة إفراغا أول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة الفطر وليلة الأضحى

বছরে চার রাতের ব্যাপারে তোমার সতর্ক থাকা প্রয়োজন, কেননা আল্লাহ্‌ তা’আলা ঐ রাতগুলোতে তার রহমতের দরজা উন্মুক্ত করে দেন। তা হল, রজবের প্রথম রাত, শাবানের মধ্য রাত এবং ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত।
[ইবনে রজব লাতায়িফুল মা’আরিফ ১:১৩৭]


★ ওহাবী‬ ও সালাফী ইমাম ইবনে তাইয়িমাহ তাঁর স্বীয় ফতোয়া গ্রন্থে লিখেছেন-

إذَا صَلَّى الْإِنْسَانُ لَيْلَةَ النِّصْفِ وَحْدَهُ أَوْ فِي جَمَاعَةٍ خَاصَّةٍ كَمَا كَانَ يَفْعَلُ طَوَائِفُ مِنْ السَّلَفِ فَهُوَ أَحْسَنُ

যদি কোন ব্যক্তি একাকী অথবা নির্দিষ্ট জামাতের সাথে শা’বানের মধ্য রাতে ইবাদত করে যেমনটা সালফে সালেহীনগণ করতেন অবশ্যই তা অধিক উত্তম হবে।
[মাজমাউ’ল ফতওয়া ফতোয়ায়ে তাইয়িমাহ,২৩তম খণ্ড,১৩১ পৃষ্ঠা]

★ তিনি আরো বলেন,

وَأَمَّا لَيْلَةُ النِّصْفِ فَقَدْ رُوِيَ فِي فَضْلِهَا أَحَادِيثُ وَآثَارٌ وَنُقِلَ عَنْ طَائِفَةٍ مِنْ السَّلَفِ أَنَّهُمْ كَانُوا يُصَلُّونَ فِيهَا فَصَلَاةُ الرَّجُلِ فِيهَا وَحْدَهُ قَدْ تَقَدَّمَهُ فِيهِ سَلَفٌ وَلَهُ فِيهِ حُجَّةٌ فَلَا يُنْكَرُ مِثْلُ هَذَا

শাবানের মধ্য রাতের ফজিলত সম্পর্কে বহু হাদীস এসেছে,আছার তথা সাহাবায়ে কেরামের বর্ণনা, তাবে তাবেঈগন সালফে সালহীগনের বক্তব্য রয়েছে আর তারা এই রাতে ইবাদত করতেন। সালফে সালেহীনদের মধ্যে এ রাতে ইবাদতের ব্যাপারে আন্তরিকতা ও একাগ্রতা পাওয়া যায় এবং এ ব্যাপারে (শবে বরাত) কোন নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায় নি।
[মাজমাউ’ল ফতওয়া ফতোয়ায়ে তাইয়িমাহ,২৩তম খণ্ড,১৩২ পৃষ্ঠা]


★ এমনিভাবে ফিক্বহে হানাফীর প্রসিদ্ধ কিতাব আদ্দুররুল মুখতারে শবে বরাতের সম্পর্কে বলা হয়েছে।
[১ম খণ্ড,২৪-২৫ পৃষ্ঠা]

★ হাম্বলী মাযহাবের সুপ্রসিদ্ধ ফক্বীহ আল্লামা শায়খ মানসূর ইবনু ইউনুস (রহঃ) লিখেনঃ

” হ্যাঁ, শাবানের পনের তারিখের রাত সম্বন্ধে ফজীলতের কথা বিদ্যমান। সলফে সালেহীন এই রাতে নামায পড়তেন। কিন্তু এ রাতে জাগরণের লক্ষ্যে মসজিদে জমায়েত হওয়া বিদআত। এ রাতে জাগরণ থেকে ইবাদত করার ফজীলত ঠিক দুই ঈদের রাতে জাগরণ থেকে ইবাদত করার ফজীলতের মতই। “

★ আল্লামা ইসহাক ইবনুল মুফলিহ (মৃঃ ৮৮৪ হিঃ) বলেনঃ

” হাদীছের কারণে মাগরিব এবং ইশার মাঝখানে জাগ্রত থেকে ইবাদত করা মুস্তাহাব। অনেকেই বলেছেন, আশূরার রাত, রজবের প্রথম তারিখ রাত এবং শা‘বানের পনের তারিখ রাতেও জাগ্রত থেকে ইবাদত করা মুস্তাহাব। ”

★ ফিক্বহে হানাফীর ইমাম মুহাম্মদ ইবনু আলী আল হাসফাকী (মৃঃ ১০৮৮ হিঃ) বলেনঃ

” সফরের পূর্বে দু’রাকআত, সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে দু’রাকআত, দুই ঈদের রাতে, শাবানের পনের তারিখে, রমজানের শেষ দশ রাতে এবং জিলহজ্বের প্রথম তারিখে জাগ্রত থেকে ইবাদত কতা মুসতাহাব। ”

★  আল্লামা ইবনু নুজাইম হানাফী (মৃঃ ৯৭০ হিঃ) বলেনঃ

” রমজানের শেষ দশ রাতে দুই ঈদের রাতে, পহেলা জিলহজ্ব রাতে, শাবানের পনের তারিখ রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করা মুসতাহাবের অন্তর্ভুক্ত। যেমনটি হাদীছসমূহে এসেছে। ”

★ আল্লামা হাসান ইবনু আম্মার ইবনু আলী আশ-শারাম্বলালী আল হানাফী (মৃঃ ১০৬৯ হিঃ) বলেনঃ

” শাবানের পনের তারিখ রাত জেগে ইবাদত করা মুস্তাহাব। ”

★ শায়খ আবদুল হক্ব মুহাদ্দিছে দেহলভী স্বীয় গ্রন্থ ( ماثبت بالسنة فى أيام السنة ٣٦٠ ) তে কিছু হাদীছ এবং তাবিঈনদের কিছু বক্তব্য ও আমল নকল করার পর বলেনঃ

” … সুতরাং উল্লেখিত হাদীছসমুহের ভিত্তিতে এই রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করা মুস্তাহাব।ফাজাইলে আ’মালের ক্ষেত্রে এ ধরনের হাদীছের উপর আমল করা যায়। ”


★ অনুরূপ শেখ মুহাদ্দিছে দেহলভী (রহঃ) তার স্বীয় গ্রন্থ “ মা ছাবাতা বিসসুন্নাহ ” এবং “ মাজালিসুল আবরার ” গ্রন্থদ্বয়ে সূরা দুখানের আয়াতসমূহ থেকে শবে বরাত উদ্দেশ্য বলে সাব্যস্ত করেছেন।

( দেখুন মাজালিসুল আবরারঃ পৃ – ১৭৭ )


★ আল্লামা আব্দুলহক্ব মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) ما ثبت بالسنة এর বিবরণটি নিম্নে প্রদত্ত হলোঃ

“ অধিকাংশ উলামাদের মতামত হলো, কুরআন অবতরণ ও প্রতিটি প্রজ্ঞাসম্পন্ন বিষয়ের ফয়সালা শবে ক্বদরে সম্পন্ন হলেও এসব বিষয় আরম্ভ হয়েছে শবে বারাত তথা মধ্য শাবানের রাতে। ”

( দেখুন হাকীকতে শবে বরাতঃ পৃ – ৮ )


★ আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা তার ফাতওয়াতে লিখেনঃ

সাহাবারা, তাবেঈনরা, সালাফরা এ রাত অনেক গুরুত্বের সাথে পালন করে এসেছেন।

( ২৩ খ, ১৩২ পৃ)

” পূর্ববর্তী যুগের অনেক উলামাই এ রাতের ফযীলতকে গ্রহণ করেছেন। যেসব বুজুর্গানে দ্বীনরা এই রাতের ফজীলত সম্পর্কে একমত হয়েছেন, তাদের মধ্যে উমর বিন আব্দুল আযীয, ইমাম আল শাফী, ইমাম আল আওযায়ী, আতা ইবনে ইয়াসার, ইমাম আল মাজদ বিন তাইমিয়্যাহ, ইবনে রজব আল হাম্বলী এবং হাফিয যয়নুদ্দীন আল ইরাকী (রহঃ) অন্যতম। ”

( লাতাইফুল মারিফ, হাফিজ ইবনে রজবঃ পৃ-২৬৩,২৬৪; ফাতহুল ক্বাদীরঃ খ-২, পৃ-৩১৭ )


★” ইমাম শাফেঈ বলেছেন, আমি এসব রাতে পূর্ববর্তীরা যা কিছু আমল করতো বলে বর্ণনা করেছি তাসবই মুস্তাহাব মনে করি, ফরজ নয়। ”

( আল মাজমু )

★ ইমাম সুয়ুতী (রহঃ) তাঁর ‘হাকীকত আল সুন্নাহ ওয়াল বিদাহ’ তে বলেনঃ

” শাবান মাসের মাঝ রাত সম্পর্কে, এর অনেক ফযীলত রয়েছে এবং এর কিছু অংশ অতিরিক্ত ইবাদতে কাটানো মুস্তাহাব। ”

( হাকীকত আল সুন্নাহ ওয়াল বিদাহ আও আল আমর বি আল ইত্তিবা ওয়া আল নাহি আনাল ইবতিদা (১৪০৫/১৯৮৫ সংস্করণ), পৃ-৫৮ )

তিনি আরও লিখেনঃ

” এটি একাকী করতে হবে, জামাআতের সাথে নয়। ”

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন