সোমবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৫

প্রশ্নোত্তরে মাযহাবের তাক্বলিদ (পর্ব ২)


♦♦যার যার মাযহাব সুন্দর ভাবে পালন করা উচিত ♦♦

যে যার যার মাযহাব অনুসরণ করবে।

—ইমাম মালেক

খলীফা আবু জাফর মানসুর আগ্রহ প্রকাশ করলেন যে, আমি চাই গোটা মুসলিম সম্রাজ্যে এক ইলমের (অর্থাৎ মুয়াত্তা মালিকের) অনুসারী হোক। আমি সকল এলাকার কাযী ও সেনাপ্রধানদের নিকট এ ব্যাপারে ফরমান জারি করতে চাই।

ইমাম মালিক (রহ.) বললেনঃ
[ইবনে সা'দের বর্ণনায়]

يا أمير المؤمنين ! لا تفعل هذا، فإن الناس قد سبقت إليهم أقاويل، وسمعوا أحاديث، ورووا روايات، وأخذ كل قوم بما سبق إليهم وعملوا.

অর্থাৎ "হে আমীরুল মু'মিনীন! এমনটি করবেন না। কেননা, লোকেরা সাহাবীগণের বক্তব্য শুনেছে, হাদীস শুনেছে, রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছে এবং প্রত্যেক জনগোষ্ঠী তাই গ্রহণ করেছে, যা তাদের নিকট পৌঁছেছে এবং তদানুযায়ী আমল করেছে।"

[আততবাকাত ৪৪০]

খতীব বাগদাদীর বর্ণনায় আছে, ইমাম মালিক (রহ.) বললেন,

يا أمير المؤمنين ! إن إختلاف العلماء رحمة من الله تعالى هذه الأمة، يتبع ما صح عنده، وكل على هدى، وكل يريد الله تعالى.

অর্থাৎ "হে আমীরুল মু'মিনীন! নিঃসন্দেহে আলেমগণের মতপার্থক্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এ উম্মতের জন্য রহমহত। প্রত্যেকে তাই অনুসরণ করে, যা তাদের নিকট সহীহ সাব্যস্ত হয়েছে, প্রত্যেকেই হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং প্রত্যেকেই আল্লাহর (সন্তুষ্টি) কামী।

[কাশফুল খাফা, আলআজলূনী ১/৫৭-৫৮; উকূদুল জুমান আসসালেহী ১১]



♦♦প্রশ্ন: হাদিস থাকতে মাযহাব কেন মানব?মাযহাব মানার উপকারিতা কি?


উত্তর:-
হাদিস সহিহ কিনা দ্বয়ীফ কোন হাদিসের কি ব্যাখ্যা তা রাসুল(সা) থেকে  সাহাবীগন শিখেছেন আর সাহাবীগন থেকে তাবেয়ী, আর তাবেয়ীগন থেকে তাবে-তাবেয়ীগন।আর তাদের থেকে সকল ইমাম,মুজতাহিদ,মুহাদ্দিসিনগন শিখেছেন।
সাহাবীগন হাদিস লিখেন নি আর তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীগন সেই সব হাদিস সংকলন করেছেন যদি মাযহাব (৪ মাযহাব তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীগন থেকে) এর তাক্বলিদ নাই করে কেউ তাহলে লা-মাযহাবী মুর্খরা এই হাদিস পেল কোথায় ???

তা ছাড়া হাদিসের মান নির্নয়ে মাযহাবের ভুমিকা অপরিহার্য।
যেমন এক হাদীসের ক্ষেত্রে একাধিক
বক্তব্য এসেছে। এক হাদীসকে একদল
মুহাদ্দিস
সহীহ বলেছেন, অপরদল তাকে হাসান
বলেছেন,
কেউবা জঈফ বলেছেন।
যেহেতু হাদীস সহীহ বা জঈফ হওয়ার কোন
দলীল কুরআন বা হাদীসে বর্ণিত নয়। এসবই
গবেষকদের গবেষণার সৃষ্টি। যদি কুরআন
বা হাদীসে কোন হাদীসকে সহীহ বা জঈফ
বলা হতো, তাহলে আমরা কিছুতেই
কারো গবেষণা মেনে হাদীসকে সহীহ বা জঈফ
মানতাম না। বরং সরাসরি কুরআন ও
হাদীসে বর্ণিত সহীহ এবং জঈফকেই
মেনে নিতাম। কিন্তু যেহেতু কুরআন ও
হাদীসে সহীহ বা জঈফের কথা উল্লেখ নেই,
তাই আমাদের মূলনীতি হল, যিনি কুরআন ও
হাদীসের শব্দের সাথ তার অন্তর্নিহিত অর্থ
সম্পর্কে সম্মক অবগত, সেই
সাথে যিনি আল্লাহর নবীর বলা শ্রেষ্ঠ যুগের
মুহাদ্দিস ফক্বীহ তার কথার
আলোকে হাদীসকে সহীহ ও জঈফ নির্ণিত
করবো।

তথা শ্রেষ্ঠ যুগের মুহাদ্দিস ফক্বীহ
যে হাদীসকে গবেষণা করে সহীহ সাব্যস্ত
করে আমলযোগ্য হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন,
তার
হাদীসকে সহীহ ধরে আমল করবো। আর
তিনি যে হাদীসকে জঈফ বা কোন কারণ
সংশ্লিষ্ট সাব্যস্ত করে বাদ দিয়েছেন,
আমরা উক্ত হাদীসকে আমলহীন ধরে আমল
করবো না।
শ্রেষ্ঠ যুগের পরের কোন মুহাদ্দিসের
গবেষণা মেনে হাদীস সহীহ বা জঈফ বলার
চেয়ে শ্রেষ্ঠ যুগের মুহাদ্দিস ফক্বীহের
গবেষণা মেনে হাদীসকে সহীহ বা জঈফ
বলা কি অধিক নিরাপদ নয়?
আরেকটি লক্ষ্যণীয় বিষয়
ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর জন্ম ৮০ হিজরী।
মৃত্যু-১৫০ হিজরী।
ইমাম মালিক রহঃ এর জন্ম-৯৩ হিজরী।
মৃত্যু-১৭৯।
ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর জন্ম-১৫০ হিজরী।
মৃত্যু-২০৪ হিজরী।
ইমাম আহমাদ বিন বিন হাম্বল রহঃ এর
জন্ম-১৬৪, মৃত্যু-২৪১ হিজরী।
ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ এর জন্ম-১১৩
হিজরী এবং মৃত্যু-১৮২ হিজরী।
ইমাম মুহাম্মদ রহঃ এর জন্ম ১৩১
হিজরী এবং মৃত্যু-১৮৯ হিজরী।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ইমাম মুহাম্মদ
রহঃ নাবালেগ থেকে বালিগ হওয়ার
সাথে সাথেই ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর
শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।

মুহাদ্দিসীনদের জন্ম ও মৃত্যু
মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল বুখারী রহঃ এর
জন্ম-১৯৪ হিজরী এবং মৃত্যু ২৫৬ হিজরী।
মুসলিম বিন হাজ্জাজ ইমাম মুসলিম রহঃ এর
জন্ম ২০৪ হিজরী এবং মৃত্যু ২৬১ হিজরী।
মুহাম্মদ বিন ঈসা বিন সাওরা ইমাম
তিরমিজী জন্ম-২১০ হিজরী এবং মৃত্যু ২৭৯
হিজরী।
মুহাম্মদ বিন ইয়াজিদ ইমাম ইবনে মাজাহ এর
জন্ম-২০৯ হিজরী এবং মৃত্যু-২৭৩ হিজরী।
সুলাইমান বিন আসআস ইমাম আবু দাউদ রহঃ এর
জন্ম- ২০২ হিজরী এবং মৃত্যু-২৭৫ হিজরী।
আবু আব্দুর রহমান আহমদ ইমাম
নাসায়ী রহঃ এর
জন্ম ২১৫ হিজরী এবং মৃত্যু ৩০৩ হিজরী।
এই হল সিহাহ সিত্তার জন্ম ও মৃত্যুর সন।
লক্ষ্য
করুন যে,
ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মৃত্যুর ৪৪ বছর পর
জন্ম লাভ করেছে ইমাম বুখারী রহঃ।
ইমাম মুসলিম রহঃ এর জন্ম গ্রহণ করেছেন
৫৪
বছর পর।
ইমাম তিরমিজী রহঃ জন্ম গ্রহণ করেছেন ৬০
বছর পর।
ইমাম আবু দাউদ রহঃ জন্ম লাভ করেছেন ৫২
বছর পর।
ইমাম ইবনে মাজাহ রহঃ জন্ম গ্রহণ করেছেন
৫৯ বছর পর।
ইমাম নাসায়ী রহঃ জন্ম গ্রহণ করেছেন ৬৫
বছর পর।

ইলমে হাদীসের সাথে সম্পর্ক রাখেন এমন
একজন সাধারণ শিক্ষার্থীও জানেন যে,
হাদীস
সহীহ বা জঈফ হয় মৌলিকভাবে সনদের
দুর্বলতার কারণে। আরে অনেক কারণেও হয়,
তবে মূল কারণ সনদের দুর্বলতা। অর্থাৎ
সনদের
মাঝে দুর্বল রাবী থাকার কারণে সহীহ
হাদীসও জঈফ হয়ে যায়, এমনকি মুনকারও
হয়ে যায়। আর সনদের মাঝে রাবীগণ
শক্তিশালী থাকার কারণে হাদীস সহীহ
হয়ে থাকে।আমরা যদি ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করি যে,
ইমাম আবু হানীফা রহঃ যখন হাদীসের
আলোকে মাযহাব সংকলিত করেন, তখন
যে হাদীস সনদের শক্তিশালীত্বের
কারণে সহীহ ছিল, উক্ত হাদীসটি ৪০/৫০
বছর পরেও সহীহ থাকা শর্ত কি না? অবশ্যই
নয়। কারণ, একটি হাদীস যখন ইমাম আবু
হানীফা রহঃ দেখলেন, সে হাদীসটি তার
কাছে সহীহ, কারণ তার মাঝে এবং সাহাবীর
মাঝে একজন বা সর্বোচ্চ দুইজনের মাধ্যম
বিদ্যমান। সেই একজন বা দুইজনও শ্রেষ্ঠ যুগের
লোক। তাদের মাঝে হাদীস জঈফ হওয়ার কোন
কারণ বিদ্যমান হওয়া প্রায় অসম্ভব।


যেখানে ইমাম আবু হানীফা রহঃ নিজেই একজন
জাঁদরেল মুহাদ্দিস এবং জারাহ তাদীলের
ইমাম। সেখানে তিনি কোন সহীহ হাদীস
ছাড়া গ্রহণ করতেই পারেন না।
যেমনটি আমাদের গায়রে মুকাল্লিদরাও
অকপটে স্বীকার করে প্রচার করে বেড়ায় যে,
ইমাম আবু হানীফা রহঃ বলেছেন“যখন হাদীস
সহীহ হবে, তখন সেটাই আমার মাযহাব”।
তাই তিনি হাদীসের ভিত্তিতে যেসব
মাসআলা বলেছেন, তার সব ক’টিই ছিল সহীহ
হাদীস। যেহেতু তার এবং রাসূল সাঃ এর
মাঝে মাধ্যম ছিল দুই বা একজন। তাই সনদের
মাঝে দুর্বলতা আসা ছিল খুবই দূরের কথা।
কিন্তু উক্ত হাদীসটি, যেটাকে ইমাম আবু
হানীফা রহঃ সনদ শক্তিশালী হওয়ার
কারণে সহীহ হিসেবে মত দিয়ে তার
মাঝে নিহিত মাসআলাকে সহীহ সাব্যস্ত
করেছেন, ঠিক সেই হাদীসটিই ৪০/৫০ বছর
পর সনদের দুর্বলতার কারণে পরবর্তীদের
কাছে যেতে পারে।
কারণ ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর
কাছে যে হাদীস সহীহ হিসেবে এল সনদ
শক্তিশালী হওয়ার দ্বারা উক্ত
হাদীসটি যদি পরবর্তীতে কোন দুর্বল
রাবী বর্ণনা করে, তাহলে উক্ত হাদীসটি উক্ত
দুর্বল ব্যক্তির বর্ণনার কারণে যার
কাছে বর্ণনা করল, তার কাছে উক্ত
হয়ে যাচ্ছে দুর্বল তথা জঈফ।

 কিন্তু সে হাদীস
কিন্তু ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর জমানায়
সহীহই ছিল। সেটি জঈফ
হয়েছে পরবর্তীতে এসে। তাহলে সহীহ
থাকা অবস্থায় উক্ত হাদীসের
ভিত্তিতে যেহেতু ইমাম আবু
হানীফা রহঃ স্বীয় মাযহাব দাঁড়
করিয়ে ফেলেছেন, তাই ৪০/৫০ বছর পরের
কোন মুহাক্কিকের কাছে জঈফ সুত্রে পৌঁছার
কারণে জঈফ মনে হলেও আবু হানীফা রহঃ এর
মাযহাব কিন্তু জঈফ হাদীস নির্ভর
হয়ে যাচ্ছে না।
আরো সহজভাবে বুঝুন! ইমাম আবু
হানীফা রহঃ তাবেয়ী হিসেবে চার জন
সাহাবী থেকে সরাসরি হাদীস পেয়েছেন।
যথা-
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উনাইস রাঃ থেকে।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবী আওফা রাঃ থেকে।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন হারেস রাঃ থেকে।
হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে।
এখন বলুন, এ চারজন থেকে পাওয়া হাদীস
বা সুন্নতে নববীতে কোন জুউফ
তথা দুর্বলতা পাওয়ার সুযোগ আছে?
তাহলে তাদের বক্তব্যের আলোকে তিনি যেসব
মাসআলা তার ফিক্বহে হানাফীতে সংকলিত
করেছেন, তা জঈফ হাদীস নির্ভর হয় কি করে?
তবে উক্ত হাদীসগুলোই পরবর্তীতে কোন দুর্বল
হাদীস বর্ণনাকারী বলার কারণে দুর্বল হতেই
পারে। বিশেষ করে যেখানে ৪০
থেকে ৬০/৭০ বছরের পর।

সুতরাং হানাফী মাযহাবের যেসকল
মাসআলা হাদীস নির্ভর। কিন্তু সহীহ
হাদীসের উপর নির্ভর করে মাসআলা সংকলিত
হওয়ার পর পরবর্তী কোন হাদীস সংকলকের
কাছে আসার পর পরবর্তী কোন রাবীর
দুর্বলতার কারণে হাদীসটি জঈফ হয়ে গেলেও
হানাফী মাযহাবকে দুর্বল হাদীস সম্বলিত
বলে এড়িয়ে যাওয়াটা হবে অযৌক্তিক
এবং বিবেকশূণ্য মতামত।
তবে কোন মুজতাহিদ এর
বিরোধিতা করে ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন
তার ইজতিহাদী যোগ্যতার কারণে।
যেমনটি ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালিক ও ইমাম
আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ প্রমূখগণ করেছেন।
কোন ইজতিহাদের যোগ্যতা নেই এমন কোন
সাধারণ মুসলমানের কোন অধিকার নেই, মনমত
একটি মতকে পরবর্তী মুহাদ্দিসের বক্তব্যের
আলোকে একটি প্রাধান্য দিয়ে দেয়া। আর
মুহাদ্দিস ফক্বীহ ইমামের মতকে ভুল
বলে আখ্যায়িত করা। এরকম আচরণ চরম
ধৃষ্টতা বৈ কিছু নয়।


মুজতাহিদ ভুল করলেও একটি সওয়াব
ﻋَﻦْ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﻌَﺎﺹِ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ
ﺍﻟﻠَّﻪِ -ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ « – ﺇِﺫَﺍ ﺣَﻜَﻢَ
ﺍﻟْﺤَﺎﻛِﻢُ ﻓَﺎﺟْﺘَﻬَﺪَ ﻓَﺄَﺻَﺎﺏَ ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮَﺍﻥِ ﻭَﺇِﺫَﺍ
ﺣَﻜَﻢَ ﻓَﺎﺟْﺘَﻬَﺪَ ﻓَﺄَﺧْﻄَﺄَ ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮٌ
হযরত আমর বিন আস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল
সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যখন কোন বিশেষজ্ঞ
হুকুম বলতে গিয়ে ইজতিহাদ করে, আর তার
ইজতিহাদ সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য
রয়েছে দু’টি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদে ভুল
হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব।
{সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৯১৯, সহীহ
মুসলিম, হাদীস নং-৪৫৮৪, সুনানে আবু দাউদ,
হাদীস নং-৩৫৭৬}
মুজতাহিদের অনুসারী মুকাল্লিদের কোন
চিন্তার কারণ নেই। অতিরিক্ত পন্ডিতিরও
কোন দরকার নেই। কারণ রাসূল
সাঃ ঘোষণা অনুযায়ী মুজতাহিদের
যদি মাসআলা বলতে ভুলও হয়, তাহলেও
তিনি একটি নেকি পাচ্ছেন। আর সঠিক
হলে দুইটি নেকি পাবেন।
তাই মুজতাহিদের ইজতিহাদকৃত মাসআলায় চলার
দ্বারা সওয়াব পাওয়া নিশ্চিত।

মাযহাব বার বার পরিবর্তন করে কেউ যেন মাসআলা নিয়ে বিভ্রান্ত না হয় সেজন্যই ইবনে তাইমিয়া বলেনঃ “লাগামহীনভাবে যে মাযহাবযখন মনে চায়, সেটাকে মানা সুষ্পষ্ট হারাম
ও অবৈধ। {ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-২/২৪১}

উম্মতের ইজমা হয়ে গেছে যে, এ ৪র্থ
শতাব্দির পর থেকে লাগামহীনভাবে যখন
যে মাযহাব ইচ্ছে সে মাযহাব
মানা যাবে না। সুনির্দিষ্টভাবে
একটি মাযহাবকে মানতে হবে।
{আলইনসাফ-৫২, ৫৭-৫৯, মাদারে হক-৩৪১,
ইন্তিসারুল হক বজওয়াবে মিয়ারে হক-১৫৩,
আলমুআফাকাত-৪/১৪৬, আলমাজমূহ শরহুল
মুহাজ্জাব-১/৯১}



♦♦কথিত আহলে হাদীস ও নামধারী জামাতে ইসলাম ও লা-মাযহাবী  ফিতনাবাজদের ২০টি ওয়াসওয়াসার জবাব:-

প্রশ্ন-১
আবু হানিফার উস্তাদ হাম্মাদ কোন মাযহাব
মানতেন?
ইলজামী জবাব==
ইমাম বুখারী বুখারী সংকলনের আগে মানুষ
সহীহ হাদীস কোথা থেকে দেখে আমল করত?
ইমাম বুখারীর উস্তাদ মক্কী বিন ইবরাহীম
কোন সহীহ কিতাবের হাদীস মানতেন?
প্রশ্ন নং-২
হাম্মাদের উস্তাদ ইবরাহিম নাখয়ি কোন
মাযহাব মানতেন?
ইলজামী জবাব==
ইমাম বুখারী বুখারী সংকলনের আগে মানুষ
সহীহ হাদীস কোথা থেকে দেখে আমল করত?
মক্কী বিন ইবরাহীমের উস্তাদ ইবনে জুরাইজ
কোন সহীহ কিতাবের হাদীস মানতেন?
প্রশ্ন নং-৩
আবু হানিফারর ছাত্ররা কেন তার ফতোয়ার ৩
ভাগের ২ ভাগের বিরোধতা করলেন?
ইলজামী জবাব==
ইমাম বুখারীর ছাত্র ইমাম তিরমিজী কেন
ইমাম বুখারীর সহীহকে অনেক ক্ষেত্রেই তরক
করে দিয়ে অন্য হাদীস গ্রহণ করেছেন?
প্রথম কথা হল, তাহলে বুঝা যায়
হানাফী মাযহাবের
আলেমরা বা মানুষরা ইমাম আবু
হানিফাকে অন্ধ অনুসরন করে না।
তো আপনি কি বলতে চাচ্ছেন কেন অন্ধ অনুসরন
করে নি ?


প্রশ্ন নং-৪
আবু ইউসুফ ও মুহামমাদের মাঝে দুশমনি শুরু হয়
কেন?
ইলজামী জবাব==
হযরত মুয়াবিয়া রা. ও হযরত আয়েশা রা. এর
সাথে হযরত আলী রা. এর দুশমনি শুরু হল কেন ?
এখন কে ভ্রান্ত এবং জাহান্নামী ?
প্রশ্ন নং-৫
ইসা আ. কোন মাযহাব মানবেন?
তিনি নাকি ইজতেহাদ করবেন। নবি রাসুলরাও
আবার ইজতেহাদ করেন? তবে ওহি আসার
দরকার কি ছিল?
ইলজামী জবাব==
ঈসা আ. কোন হাদীসের কিতাব মানবেন?
সিহাহ সিত্তা নাকি অন্য কিতাব? সহীহ
হাদীস মানবেন নাকি হাসান হাদীস?
নাকি তিনি নিজেই হাদীসের
পরিভাষা প্রণয়ন করবেন? নবী রাসূলরাও
কি সহীহ হাসান, জঈফ
ইত্যাদি শব্দে হাদীসের
বিভক্তি করে থাকেন?
হাদীসের যে বলা হলেছে ইজতেহাদের ভুল
হলে এক সওয়াব – তা বলা হয়েছে কেন ?
নবী স. কি উম্মতের
সাথে মসকরা করে গেছেন?
প্রশ্ন নং-৬
মুসলিম খলীফা কোন মাযহাব হতে নির্বাচিত
হবেন?
ইলজামী জবাব==
মুসলিম খলীফারা কার পরিভাষা মেনে হাদীস
সহীহ জঈফ হিসেবে আমল করবেন? ইমাম
বুখারীর না ইমাম মুসলিম নাকি অন্য কারো?
পূর্ববর্তী মুসলিম খলিফারা কার
বানানো সহীহ জঈফ পরিভাষার অনুসরন
করতেন?


প্রশ্ন নং-৭
ইতিহাসে ২১ জন আবু হানিফা পাওয়া যায়।
কোন আবু হানিফা হানাফি মাযহাব বানালেন?
ইলজামী জবাব==
ইতিহাসে অসংখ্য মুহাম্মদ বিন ইসমাইল
পাওয়া যায়, কার নামে বুখারী শরীফ
বানানো হল?
প্রশ্ন নং-৮
হানাফি মাযহাব ঠিক হলে পরে আরো কোন
মাযহাব আসলো?
ইলজামী জবাব==
প্রতি কিরাতই সঠিক হলে, সাত কিরাতে কুরআন
নাজিল হল কেন? ইমাম বুখারীর সহীহ এর
সংজ্ঞা সঠিক হলে পরবর্তীতে তার
ছাত্ররা নতুন করে সহীহের সংজ্ঞা বানালেন
কেন?
প্রশ্ন নং-৯
হানাফি ফেকার কিতাব যেমন : হেদায়া,
শরহে বেকায়া ইতা্যাদি কিতাবগুলিতে মাযহাব
মানা ফরজ/ নফল/ সুন্নাত / ওয়াজিব /
মুস্তিহাব — এর পক্ষ্যে কোন দলীল নেই কেন?
ইলজামী জবাব==
বুখারী শরীফকে সহীহ হাদীসের গ্রন্থ
মানতে হবে একথা কুরআন ও সহীহ হাদীসের
কোথাও নেই কেন?
প্রশ্ন নং-১০.
সাধারণ জনতা তাকলীদ করবে কারন সে হক ও
বাতিল বুঝে না।
তবে সে কিভাবে বুঝবে হানাফি মাযহাবই
ঠিক? সে কিভাবে দেওবন্দি, ব্রেলভি ও
হাজার হাজার পীরের মধ্য
হতে হককে বেছে নিবে? ।
ইলজামী জবাব==
লক্ষ লক্ষ জাল হাদীস পৃথিবীতে বিদ্যমান।
তাহলে এই সকল জাল হাদীস থেকে সহীহ
হাদীসগুলো কিভাবে বেছে নিবে সাধারণ
মানুষ?



প্রশ্ন নং-১১
দলীল সহ জানার জন্য কেন আদেশ করা হল
তাকলিদ যদি করাই সঠিক হতো?
ইলজামী জবাব==
দলীলসহই যদি সবার দ্বীন মানার আদেশ
হয়ে থাকে, তাহলে সূরা ফাতিহাতে কেন
নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দাদের অনুসরনের
কথা বলা হয়েছে দলীলের কথা উল্লেখ
না করেই?
কুরআন ও হাদীসের আলোকে জানাবেন আশা করি
প্রশ্ন নং-১২
দুজন আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ
হওয়া এবং তাদের নামে মাজহাব
বানানো কি এক বিষয় কিনা?
ইলজামী জবাব==
আলেমের মতভেদ আর মুজতাহিদের মতভেদ এক
বস্তু নয়। এমন সাধারণ কথাও
যিনি বুঝতে পারেন না তিনি এমন
জ্ঞানী সাজার অপচেষ্টা কেন করছেন আমাদের
বুঝে আসে না।
আলেমের মতভেদ আর মুজতাহিদের মতভেদকে এক
পাল্লায় মাপা আর দুই ডাক্তারের মতভেদ আর
দুই শিশুর মতভেদকে এক পাল্লায় মাপার মতই
আহমকী বৈ কিছু নয়। আগে সাধারণ
ডিগ্রিধারী আলেম আর মুজতাহিদের
সংজ্ঞাটি শিখে নিন। তারপর এ উদ্ভট কিয়াস
করতে আসুন।
প্রশ্ন নং-১৩
যদি এক বিষয় হয়, তবে সাহাবীগণও
তো ইখতিলাফ (মতবিরোধ) করেছেন। তাদের
নামে কেন মাজহাব হলো না?
ইলজামী জবাব==
সহীহ নামের
কিতাবতো ইবনে খুজাইমা রহঃ এবং ইবনে হিব্বান
রহঃ এবং মুস্তাদরাক সংকলকও করেছেন, কিন্তু
তাদের কিতাব কেন সিহাহ সিত্তায় শামিল
হলো না?
হাদীসের সকংলকনতো সাহাবাগণও করেছেন,
তাহলে তাদের সংকলিত গ্রন্থকে কেন সিহাহ
সিত্তায় শামিল করা হয়নি?



প্রশ্ন নং-১৪
আর যদি এক বিষয় না হয় তবে আলেমদের
মতভেদকে কেন্দ্র করে ৪ মাজহাব
বানানোটা কি ভুল নয়? ৪। যদি ভুল হয়
তবে সেটা স্বীকারনা করা কি শয়তানের
লক্ষণ নয়?
ইলজামী জবাব==
আলেমদের মতভেদকে কেন্দ্র করে হাদীসের
খন্ড খন্ড করে, সহীহ লিগাইরিহী, সহীহ
লিজাতিহী, হাসান লিজাতিহী, হাসান
লিগাইরিহী,
ইত্যাদি নামে হাদীসকে দ্বিখন্ডিত
করা কিভাবে জায়েজ হয়েছে?
হাদীসের কিতাবকে বিভক্ত করে সিহাহ
সিত্তা বলে অসংখ্য সহীহ
হাদীসওয়ালা অন্যান্য কিতাবের সাথে কেন
এমন বিমাতাসূলভ আচরণ করা হলো? হাদীসের
মাঝে এমন বিভক্তি করতে কোন সহীহ
হাদীসে নির্দেশ এসেছে?
১২৪৬হিজরীর সৃষ্ট বিদআতি মাযহাব কথিত
আহলে হাদীসী মাযহাবে ভন্ডামীপূর্ণ
মতাদর্শী অনুসারীদের ভন্ডামী প্রকাশিত
হওয়ার পরও নিজেদের ভুল স্বীকার
না করা কি শয়তানী কর্ম নয়?


প্রশ্ন নং-১৫
মাজহাবীরা বলে থাকে জানা না থাকলে আলেমদের
জিজ্ঞেস করতে হবে। কোন আলেমকে কোন
ফাতওয়া জিজ্ঞেস করা মানেই কি এই
যে সে আলেমের নামে মাজহাব
বানিয়ে তাতে প্রবেশ করা কি এক বিষয়?
ইলজামী জবাব==
আপনি আগে ডিগ্রিধারী আলেম্ ও মুজতাহিদ
শব্দের তাহকীকটি শিখে আসুন।
তাহলে বুঝতে পারবেন আপনার
প্রশ্নটি একটি আহমকী ও অজ্ঞতাসূচক প্রশ্ন।
মুজতাহিদের অনুসরণকে সাধারণ আলেমের
অনুসরণের কিয়াস করা কুরআনের কোন আয়াত
বা হাদীস দ্বারা প্রমানিত?
জাহিলীপূর্ণ প্রশ্ন এটি। মুজতাহিদ ও
গায়রে মুজতাহিদের পার্থক্যও
যিনি বুঝতে সক্ষম নয় তিনি এসেছেন জ্ঞান
ঝাড়তে। মুজতাহিদ
গবেষণা করে ফাতওয়া দিবেন। আর সেই
ফাতাওয়া জেনে সাধারণ আলেম অজ্ঞ সাধারণ
মুসলিমদের জানাবে।
দুটি ভিন্ন বস্তকে গুলিয়ে ফেলা আহমকের কাজ।
প্রশ্ন নং-১৬
যদি কিছু আলেম কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেয়,
তারপরেও কি আপনি সেই আলেমদের ভুল
সিদ্ধান্তের অনুসরণ করে যাবেন?
উত্তর
আলেম আর মুজতাহিদ এক বস্তু নয়। মুজতাহিদের
ভুলেও একটি সওয়াব নিহিত। ভুল করেছেন
কি না? সেটি বুঝতে পারবে আরেকজন
মুজতাহিদ। যেমন ডাক্তারের প্রেশক্রিপশনের
ভুল বুঝেতে পারবে আরেকজন ডাক্তার। মুচি নয়।
মুজতাহিদ ভুল করেছেন কিনা? সেটি আপনার
মত জাহিল অন্য ভাষায় মুচি ডাক্তারের ভুল
ধরবে কিভাবে?


প্রশ্ন নং-১৭
আল্লাহ তো আমাদের ভালো মন্দের জ্ঞান
দিয়েছেন। আপনি যদি সেটা ব্যবহার
না করেন, তবে নিজের এই ভুলের জন্য কি জবাব
দিবেন?
ইলজামী জবাব==
আমাদের প্রশ্নতো সেটাই। কুরআন ও সহীহ
হাদীসের অনুসরণের দাওয়াত দিচ্ছেন,
মুজতাহিদের অনুসরণকে শিরক বলছেন। অথচ
কুরআন ও সহীহ হাদীস দিয়ে দুই রাকাত নামায
দেখাতে পারেন না কারো কারো না অন্ধ
তাকলীদ করে। চোখে আঙ্গুল দিয়ে বারবার
ভুলগুলো ধরিয়ে দেবার পরও
গোড়ামী যে অহর্নিশি করে যাচ্ছেন এর
কি জবাব দিবেন হাশরের ময়দানে?
প্রশ্ন নং-১৮
আবু তালেব অন্ধভাবে তার পূর্ব পুরুষদের
আকড়ে ধরেছিলেন। আপনিও কি সেই একই ভুল
করবেন?
ইলজামী জবাব==
একই প্রশ্ন আপনাদের জন্য। অন্ধভাবে পূর্ব পুরুষ
আব্দুল হক বানারসী, মুহাম্মদ হুসাইন
বাটালবী, মিয়া নজীর আহমাদ, নওয়াব
সিদ্দিক হাসান খান, নাসীরুদ্দীন
আলবানী প্রমুখ পূর্ব পুরুষদের বিদআতি মতবাদ
আঁকড়ে ধরে থাকবেন, নাকি বিবেকটাও একটু
খাটাবেন?


প্রশ্ন নং-১৯
সূরা রুমের
৩১-৩২নং আয়াতে যারা দ্বীনকে বিভক্তকরে (আলেমরা)
এবং যারা দলে দলে বিভক্ত হয়(আলেমদের
ফাতওয়ার অনুসারীরা)তাদের সবাইকে মহান
আল্লাহ”””মুশরিক””” বলে ফাতওয়া দিয়েছেন।
আপনারা ৪ মাজহাবের ১টায় প্রবেশ
করে বিভক্ত হয়ে সেই মুশরিকের খাতায়
যে নাম লেখাননি তার কোন প্রমাণ কি আপনার
নিকট আছে?
ইলজামী জবাব==
এই উপমহাদেশে কোন ধর্মী’য় বিভক্তি ছিল
না। ১২৪৬ হিজরী থেকে নতুন
বিদআতি মাযহাব আব্দুল হক বানারসীর
মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করে মুসলিমের
মাঝে যে অনৈক্য আর বিভক্তির নোংরা খেলায়
মেতেছেন আপনারা এর জন্য কুরআনের
আয়াতটিকে আপনাদের একবারও মনে পড়ছে না।
নিজের দলীলেইতো নিজে মুশরিক
হয়ে যাচ্ছেন।
এই শিরক থেকে খাটি ঈমান কি আপনাদের
কখনোই নসীব হবে না? নাকি আল্লাহ
অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন? এভাবে দ্বন্দ
আর বিভক্তির ভয়ানক খেলায়
মেতে আপনারা যে মুশরিকের খাতায় নাম
লেখাননি এর কোন প্রমাণ কি আপনাদের
কাছে আছে?
প্রশ্ন নং-২০
সূরা আনআম এর
১৫৯নং আয়াতে বলা হয়েছে যারাদ্বীনকে বিভক্ত
করে ও দলে দলে ভাগ হয়, তাদের
সাথে নাবী সাঃ এর কোন”””সম্পর্ক”””নেই।
বিভক্তির ফাতওয়া মেনে দলে দলে ভাগ
হওয়ার পরেও কি আপনি এই দাবী করতে পারেন
যে আপনার সাথে নাবী সাঃ এর কোন সম্পর্ক
আছে?
ইলজামী জবাব==
শুব্বানে আহলে হাদীস।
আহলে হাদীস আন্দোলন বাংলাদেশ।
জমিয়তে আহলে হাদীস বাংলাদেশ।
গুরাবায়ে আহলে হাদীস।
আহলে হাদীস যুব আন্দোলন
ইত্যাদি নামে মুসলমানদের দলে দলে ভাগ
করার পরও আপনি কি দাবি করতে পারেন যে,
আপনাদের সাথে রাসূল সাঃ এর কোন সম্পর্ক
আছে?







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন