শনিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৫

কালিমা তাইয়্যেবা তে রিসালাতের ঘোষনা কি সহিহ হাদিসে নেই?



Lecture : কালেমা তাইয়্যেবাহ নিয়ে মিথ্যাচার :-
Masum Billah Sunny

এখানে যে কয়েকটা Step এ পুরোটা lecture শেষ হবে দেখে নিন:-
STEP1: তাদের মিথ্যাচারের ভয়াবহতা প্রমানসহ সেগুলোর বিবরন।

STEP2: হযরত আদম (আ) এর দেখা কালিমা যা আরশের খুটিতে লেখা আছে- ""লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ"" একে জাল অপপ্রচারের জবাব।

STEP3: তাদের দাঁতভাঙা জবাবে অসংখ্য সহিহ হাদিস এর Reference সংগ্রহ করে দিলাম

STEP4: তারপর কিছু হাদিস বর্ননা করে সবগুলোর জবাব কুরআন ও হাদিস থেকে দেয়া হল।
দয়া করে post টি পুরোটা পড়বেন নয়তো আপনে অনেক মারাত্মক ভুল বুঝতে পারেন কারন post টি বিশাল বড়। বুঝার সুবিধার জন্য দাগ কেটে আলাদা করে দিলাম।

আজ এই আবর্জনা গুলোকে সাফ করে দিব চিরদিনের জন্য এই post পড়ার পর কোন দিন কেউ আর তাদের ধোকায় পড়বেন না আশা করছি।

→→→→→→→→→→→→→→→


ইদানিং বেশকিছু ওহাবী জামাতী ভন্ড আর দাওয়া group যারা মুলত peace tvর ভাইদের আরেক পরিচয়।অনেক দিন থেকেই লক্ষ করছি তারা বিভিন্ন website ,blog  ,facebook ,youtube এ কুরআন হাদিসে কোন কালিমা তাইয়্যেবাহ নেই বলে প্রচার করে আসতেসে তাদের মতে আমরা যে কালিমা পড়ি তা বিদাত ও ভুল। চাইলে প্রমান স্বরুপ ইন্টারনেট এ দেখে নিতে পারেন। (নাউজুবিল্লাহ)


সাধারণ মুসলমানকে কত বড় ধোকা দিচ্ছে এই ভন্ড ওহাবী জামাতী নামধারী আহলে হাদিস এর দল দেখুন ****

#SETP1:-

আগে তাদের ভয়াবহতা বুঝানোর জন্য তাদের কিছু মন্তব্য তুলে ধরলাম *****

'কালেমায়ে তাইয়্যিবাহ' কোনটি ??

১) "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ"।      নাকি 

অর্থঃ নাই কোন ইলাহ বা মা'বুদ আল্লাহ ছাড়া। 

২) "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ"।

অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ বা মা'বুদ নাই - মুহাম্মদ(সাঃ) আল্লাহর রাসুল।

সারকথা হলঃ

দীর্ঘ ২৫ বছরের গবেষনায় "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ" - এই বাক্যটি সম্পর্কে কোন জাল হাদিস ছাড়া কুরআনে ও সহিহ হাদিসে পাওয়া যায় নাই। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ 

***বুখারীঃ ১/১২, ২৯, ৩/১২৮৭(ইঃফাঃবাঃ) এবং মুসলিমঃ ১/৪৫, ৪৭, ৫৭, ৬১(বাঃইঃসেঃ)। 


বাতিলদের আরো মন্তব্য দেখুন :-


শেষ নবী মুহাম্মদ সঃ বলেছেন :
যে-ই বলবে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” জান্নাতে যাবে।

শেষ নবী সঃ কোথাও, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” একত্রে বলেন নি।

যে কেউ জেনে তা বলবে, ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের ন্যায় ওযাইর ও ঈসা আঃ কে আল্লাহর শরীক বানানোর পাপে মুশ্রিক ও কাফের হয়ে যাবে।

এতো দিন যারা না জেনে ভুলে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” একত্রে বলেছে ও লিখেছে,
তারা তওবা করে এখন থেকে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” কালেমা তাইয়েবা ও তাওহীদ পড়ে ঈমান নবায়ন করবে।

ঘরে, মসজিদে, অফিসে, স্থাপনায় ও যেখানে যেখানে “লা ইল্লাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” একত্রে লেখা আছে, তা মুছে ও সরিয়ে ফেলবে। এখন থেকে পৃথক পৃথক কলেমা তাইয়েবা ও কালেমা রিসালাত পড়বে, লিখবে ও শিখাবে।


Nawzubillah,Nawzubillah,Nawzubillah


কালেমা দারা আল্লাহ রাসুল কিতাব ফেরেশতা ও তকদির সবকিছুর উপর পর্নাংগ ইমান আনতে হবে শুধু তাওহীদ এর ঘোষনা দিয়ে আল্লাহকে রব মানলেন আর বাকি গুলোর প্রতি ইমান আনলেন না এটার নাম ইসলাম নয়।

নিচে তাদের কিছু মিথ্যাচার প্রমানসহ দেখুন :-

এখানে দেখুন ওহাবী আহলে হাদিস দের কালেমা তাইয়্যেবাহ নিয়ে সন্দেহ আর মিথ্যাচার :-

কালেমা তাইয়্যেবাহ এর step দেখুন :-

https://m.facebook.com/IslamForEveryLife/posts/763006673744791

দাওয়া ব্লগ যাদের আকিদাহ peace tv group আকিদাহ ওরফে নামধারী আহলে হাদিস যারা স্পস্টভাবে কালেমা তাইয়েবাকে ভুল বলেছে :-

http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/6778/maruf_rusafi/36999#.VBl0K7BuvFo

এই same post আবার copy peste মারসে আমার friendlist এর এই আহলে হাদিস ভাই আগে ভাবতাম reseacher এখন দেখি না বুঝেই copy peste মারে :-

https://m.facebook.com/notes/shakil-talukdar/কালেমায়ে-তাইয়্যিবাহ-কোনটি-/10200274802006742/?p=10&ref=bookmark

কালেমা তাইয়্যেবাহ এর step দেখুন:-

http://askislambd.weebly.com/gqa123.html

এখানে দেখুন ওহাবী জামাতিরা শুধু তাওহীদের ঘোষনা দিয়েছে কিন্তু রিসালাতের কোন ঘোষনা নেই।কেন??

http://www.jamiyat.org.bd/archives/3281

https://m.facebook.com/learn.jamat.shibir/posts/207492005983401

আহলে হাদিসও শুধু তাওহিদ এর ঘোষনা দিচ্ছে রিসালাতের ঘোষনা নেই কেন??

http://hadith.blog.com/2011/12/12/বর্তমানে-অধিকাংশ-মুসলিম/

এখানে কালেমা নিয়ে সন্দেহতো আছে ই এমনকি একমাত্র কুরআন ছাড়া সহীহ হাদিসকেও মানতে সন্দিহান কারন হাদিস রাসুল(সা) এর ওফাতের ২০০-৩০০ বছর পর সংকলিত হয়েছে বলে তারা ইসলামের মধ্যে আরেক টা মারাত্তক ফেরকা।

http://www.signofquran.com/upload/38.html


→→→→→→→→→→→→→→→

STEP 2 :-

হাদিসকে জাল বানানোর কত চেষ্টা ওইসব জাহান্নামী দের আল্লাহ উপযুক্ত প্রতিদান দিবেন । ওহাবী সালাফীরা প্রচার করছে এটি নাকি জাল হাদিস। কারন ১টাই এখানে নবীর শান লেখা আছে তাই তাদের গা জ্বলে। আসুন এটা যাচাই করি :-

ওহাবীদের ভাষ্য :- একটি বহুল প্রচলিত জাল হাদীসঃ

"আদম(আঃ) যখন গুনাহ করে ফেললেন, তিনি বললেনঃ হে আমার প্রভু! তোমার নিকট মুহাম্মাদকে সত্য জেনে প্রার্থনা করছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও। আল্লাহ্‌ বললেনঃ হে আদম! তুমি কিভাবে মুহাম্মাদকে চিনলে, অথচ আমি তাঁকে সৃষ্টি করিনি? আদম বললেনঃ হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে যখন আপনার হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছিলেন এবং আমার মধ্যে আপনার আত্মা থেকে আত্মার প্রবেশ ঘটান, তখন আমি আমার মাথা উচু করেছিলাম। অতঃপর আমি আরশের স্তম্ভগুলোতে লেখা দেখেছিলাম "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ"। আমি জেনেছি যে, আপনার কাছে সর্বাপেক্ষা ভালবাসার সৃষ্টি ব্যতিত অন্য কাউকে আপনি আপনার নামের সাথে সম্পৃক্ত করবেন না। সত্যই বলেছ হে আদম! নিশ্চয়ই তিনি আমার নিকট সর্বাপেক্ষা ভালবাসার সৃষ্টি। তুমি তাঁকে হক জানার দ্বারা আমাকে ডাক। আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিবো। মুহাম্মাদ যদি না হত আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না।"

এটি লোকমুখে হাদীসে কুদসি হিসাবে যথেষ্ট প্রসিদ্ধ। অথচ হাদীস বিশেষজ্ঞরা এ ব্যপারে একমত যে, এটি ভিত্তিহিন রেওয়ায়েত, মিথ্যুকদের বানানো কথা। রাসুল(সাঃ) এর হাদীসের সাথে এর সামান্যতম সম্পর্কও নেই।


 Lets See :-

★★আরশের খুটিতে লেখা আছে- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ [ﷺ]

হাদিসটি পড়ুন, প্লিজ,,↓

★হাদীস নং- 1

روى سيدنا عبد الله بن عمر رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم (لما اقترف آدم الخطيئة قال: يا رب أسألك بحق محمد إلا غفرت لي فقال الله تعالى يا آدم كيف عرفت محمدا ولم أخلقه؟ قال: يا رب إنك لما خلقتني رفعت رأسي فرأيت علي قوائم العرش مكتوبا لا إله إلا الله محمد رسول الله فعلمت أنك لم تضف إلى اسمك إلا أحب الخلق إليك فقال الله تعالى صدقت يا آدم إنه لأحب الخلق إلى وإذ سألتني بحقه فقد غفرت لك ولو لا محمد ما خلقتك

অনুবাদঃ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল [সাﷺ] বলেছেন, যখন আদম আলাইহিস সালামের নিকট তাঁর নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষণের বিষয়টি ধরা পড়ল, তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ, আমি মুহাম্মাদের [ﷺসা] ওয়াসীলা নিয়ে তোমার দরবারে ফরিয়াদ করছি, আমাকে ক্ষমা করে দাও।

অতঃপর আল্লাহ বললেন, হে আদম, তুমি মুহাম্মাদকে কীভাবে চিনলে, এখনো যাকে সৃষ্টি করি নাই?
তিনি বললেন, হে আল্লাহ, তুমি যখন আমাকে সৃষ্টি করেছিলে, আমি তখন আমার মাথা উঠিয়েছিলাম। তখন দেখতে পেয়েছিলাম, আরশের খুটিগুলোর উপর লেখা, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম, সমগ্র সৃষ্টির মধ্য সবচেয়ে প্রিয় না হলে তুমি তাঁর নাম তোমার নামের সাথে মিলাতে না।

অতঃপর আল্লাহ বললেন, হে আদম তুমি ঠিকই বলেছ। নিশ্চয়ই সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে সে আমার সবচেয়ে প্রিয়, আর যেহেতু তুমি তাঁর ওয়াসীলা নিয়ে আমার নিকট দোয়া করেছ, তাই তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। আর(জেনে রাখ) মুহাম্মাদকে সৃষ্টি না করলে আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না।

রেফারেন্সঃ


১-আল্লামা কাসতাল্লানী রহঃ {আল মাওয়াহেবুল লাদুনিয়্যাহ-২/৫২৫}
২-ইমাম বায়হাকী রহঃ {দালায়েলুন নাবায়িয়্যাহ}
৩-ইমাম হাকেম রহঃ {মুসতাদরাকে হাকেম}
৪-আল্লামা সুবকী রহঃ {শেফাউস সিকাম}
আরো বর্নিত আছে:-
৫-আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৬৫০২,
৬-আল মুজামুস সগীর লিত তাবরানী, হাদীস নং-৯৯২,
৭-আবু নুআইম রহ:
৮-আদ দুরার কিতাবে ইবনে আসাকীর রহঃ,
৯-মাযমাউজ যাওয়ায়েদ কিতাবে।
১০-ফাযায়েলে আমাল, ৪৯৭


যে সকল মুহাদ্দিসীন এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেনঃ

১-★★ ইমাম হাকিম বলেছেন হাদিসটি সহীহ।
আল মুস্তাদরাক-২/৬১৫

২- ইমাম তকি উদ্দীন সুবকী বলেন, হাদিসটি হাসান।
শিফাউস সিকাম, পেইজ-১২০

৩- ইমাম তকী উদ্দীন দামেশকী বলেন, হাদীসটি বিশুদ্ধ।
দাফউ শুবহাহঃ ১/৭২

৪-★★ ইমাম কুস্তালানী (রহ) বলেন, হাদিসটি বিশুদ্ধ।
মাওয়াহিবুল লাদুনিয়াহঃ১/১৬

৫- ইমাম সামহুদী বলেন, হাদিসটি সহীহ।
ওয়াফাউল ওয়াফাঃ২/৪১৯

৬- ★★ ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী বলেন, বিভিন্ন সনদে বর্ণিত এ হাদিসটি বিশুদ্ধ।
আল খাসাইসঃ১/৮

৭- ইবনু তাইমিয়্যাহ এ হাদীসটি দলীল হিসাবে তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
মাজমাউল ফাতাওয়াঃ২/১৫৯

সুতরাং প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসগণের এসব মন্তব্যের পর আর কোন সন্দেহ থাকল না, নিঃসন্দেহে বলা যায় হাদিসটি সহীহ।


★ হাদীস নং- 2


আর এই পবিত্র কালিমা শরীফ সহীহ সনদে হাদীস শরীফে বর্নিত আছে। আসুন আমরা সনদ সহ হাদীস শরীফখানা লক্ষ্য করি-

حدثنا علي بن حمشاد العدل املاء هرون بن العباس الهاشمي ثنا جندل بن والق ثنا عمرو بن أوس الانصاري
حدثنا سعيد بن ابي عروبة عن قتادة عن سعيد بن المسيب عن ابن عباس رضي الله عنه قال اوحي الله الي عيسي عليه السلام يا عيسي امن بمحمد صلي الله عليه و سلم وامر من ادركه من امتك ان يؤمنوا به فلو لا محمد صلي الله عليه و سلم ما خلقت ادم عليه السلام ولولا محمد صلي الله عليه و سلم ما خلقت الجنة و النار ولقد خلقت العرش علي الماء فضطرب فكتبت عليه "لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم فسكن. هذا حديث صحيح الاسناد

অর্থ: হযরত ইমাম হাকিম নিসাবুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস শরীফ বর্ননা করেছেন হযরত আলী বিন হামশাদ আদল ইমলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস শরীফ বর্ননা করেছেন হারূন বিন আব্বাস হাশেমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস শরীফ বর্ননা করেছেন জানদাল বিল ওয়াকিল রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন আমাদের কাছে হাদীস শরীফ বর্ননা করেছেন হযরত আমর বিন আউস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু।

সনদ পরিবর্তন/ দ্বিতীয় সনদ :

হযরত ইমাম হাকিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস শরীফ বর্ননা করেছেন :-
★হযরত সাঈদ বিন আবু উরূবাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ,
★তিনি হযরত ক্বাতাদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে।
★ তিনি সাঈদ বিন মুসাঈয়িব রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে,
★তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে।

তিনি বলেন-

" মহান আল্লাহ পাক তার রসূল হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম কে ওহী করলেন। হে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ! আপনি মুহাম্মাদ [সাﷺ] এর প্রতি ঈমান আনুন এবং আপনার উম্মতের মধ্যে উনাকে যারা পেতে চায় তাঁদের নির্দেশ করুন, তাঁরা যেন উনার প্রতি ঈমান আনে। যদি মুহাম্মদ [সাﷺ] না হতেন তবে আদম আলাইহিস সালাম কে সৃষ্টি করতাম না, যদি মুহাম্মদ [সাﷺ] সৃষ্টি না হতেন তবে জান্নাত এবং জাহান্নাম সৃষ্টি
করতাম না। আর যখন আমি পানির উপর আরশ সৃষ্টি করলাম তখন তা টলমল করছিলো, যখনই আরশের মধ্যে

لا اله الا الله محمد رسول الله [ﷺ]

লিখে দেই তৎক্ষণাৎ আরশ স্থির হয়ে যায়।"
এই হাদীস শরীফের সনদ সহীহ।"

দলীল-
★আল মুসতাদরাক আলাছ ছহীহাঈন লিল হাকীম নিসাবূরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, - ★কিতাবু তাওয়ারীখিল মুতাক্বাদ্দিমীন- যিকরু আখবারী সাইয়্যিদুল মুরসালীন ওয়া খাতামুন নাব্যিয়িন মুহম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব মুছতাফা ছলাওয়াতুল্লাহি আলাইহি ওয়া আলিহীত ত্বহীরিন ৪র্থ খন্ড ১৫৮৩ পৃষ্ঠা।
★মুখতাছারুল মুসতাদরাক ২য় খন্ড ১০৬৭ পৃষ্ঠা


★• হাদীস নং-3


বিখ্যাত ইমাম হাফিজে হাদীস আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেন-

عن ابن عباس رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلي الله عليه و سلم ما في الجنة شجرة عليها ورقة الا مكتوب عليها لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم

অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, তিনি বলেন- হুজুর পাক [ﷺ] ইরশাদ মুবারক করেন, জান্নাতের এমন কোন গাছ নেই যার পাতার মধ্যে

لا اله الا الله محمد رسول الله [ﷺ]

এ বরকতময় কালিমা শরীফ লিখিত নেই। "

দলীল-
★খাছায়েছুল কুবরা ১ম খন্ড ১৩ পৃষ্ঠা।
★আল হিলইয়া লি আবু নুয়াইম রহমাতুল্লাহি আলাইহি।


★ হাদীস নং- 4


হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহমাতুল্লাহি আলাইহি আরো বর্ননা করেন,-

عن حضرت جابر رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلي الله عليه و سلم مكتوب علي باب الجنة لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم

অর্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ননা করেন, হুজুর পাক [ﷺসা] ইরশাদ মুবারক করেন, জান্নাতের দরজা মুবারকে লিখা রয়েছে-

لا اله الا الله محمد رسول الله [ﷺ]

দলীল-
★খাছায়িছুল কুবরা ১ম খন্ড


★ হাদীস নং- 5


কিতাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বর্ননা রয়েছে-

عن حضرت ابي الحسن علي بن عبد الله الهاشمي الرقي رحمة الله عليه قال : دخلت بلاد الهند، فرايت في بعض قرأها شجرة ورد اسود ينفتح عن وردة كبيرة طيبة الراءحة سوداء عليها مكتوب بخط ابيض لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم ابو بكرن الصديق عليه السلام عمر الفاروق رضي الله عنه فشككت في ذاك وقلت انه معمول فعمدت الي حبة لم تفتح ففتحتها فرايت فيها كما رايت في ساءر الورد في البلد منه شيء كثير

অর্থ: হযরত ইবনে আসাকির রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইবনে নাজ্জার রহমাতুল্লাহি আলাইহি দু'জন স্বীয় ইতিহাসগ্রন্থে হযরত আবুল হাসান আলী ইবনে আব্দুল্লাহ আল হাশীমি আররক্বী রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি ভারতবর্ষের কোন এক এলাকায় পৌঁছে একটি কালো রঙ্গের গোলাপ গাছ দেখলাম। এর অকটি ফুল অনেক বড়, যার রঙ কালো, সুগন্ধিনয় এবং অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর ছিলো। ঐ ফুলটির গায়ে সাদা হরফে লিখা ছিলো-

لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم ابو بكرة صديق رضي الله غنه عمر الفاروق رضي الله عنه

আমি মনে মনে চিন্তা করলাম এবং আমার বিশ্বাস হলো নিশ্চয়ই এটা কারো কাজ হবে। তাই আমি অন্য একটি বন্ধ কলি খুলে দেখলাম। আশ্চর্যের বিষয় তাতেও এরূপ লিখা ছিলো। এধরনের গোলাপ গাছ সেখানে প্রচুর পরিমান ছিলো। " সুবহানাল্লাহ্ !!

দলীল-
★ইবনে আসাকির
★ইবনে নাজ্জার।


উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য দলীল থেকে প্রমানিত হলো কালিমা শরীফ হচ্ছে " লা'ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলাল্লাহ [সাﷺ]

অথচ সালাফী ওহাবীপন্থী মুরতাদরা বলছে এধরনের কোন কালিমা শরীফ নাকি ইসলামে নাই। নাউযুবিল্লাহ !!

শুধু তাই নয় জামাতের মুরতাদ তারেখ মনোয়ার বলেছে কালিমা শরীফে " লা'ইলাহা ইল্লাল্লাহু " এই বাক্যের পাশাপাশি "মুহম্মদুর রসূলাল্লাহ [সাﷺ] লিখা শিরক। নাউযুবিল্লাহ !!


♦শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ এর হাদীস আল্লাহ তাআলার বাণীরই ব্যাখ্যা হয়ে থাকে। আমরা কুরআনের ব্যাখ্যা সর্ব প্রথম রাসূল সাঃ এর হাদীস দ্বারাই গ্রহণ করে থাকি।
কুরআনে কারীমে একথা রয়েছে যে, হযরত আদম আঃ কে কিছু কালিমা আল্লাহ তাআলা শিক্ষা দিয়েছেন, যা পড়ার দরূন তার তওবা কবুল হয়েছে। আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হযরত আদম আঃ কে তওবার ওসীলা কালিমা শিক্ষা দেয়াটা ছিল একটি নেয়ামত। আর নেয়ামত সাধারণত কোন নেক আমলের কারণে পাওয়া যায়। হযরত আদম আঃ এর পাওয়া তওবার অসীলা সেসব কালিমা শিখতে পাওয়ার নেয়ামত কোন নেক আমলের কারণে পেয়েছিলেন? তা কুরআনে বর্ণিত নেই।
হাদীসের মাঝে সেই নেক আমলের কথাটি বর্ণনা করা হয়েছে। সেই নেক আমলটি হল, হযরত আদম আঃ রাসূল সাঃ এর ওসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ করেছিলেন। সুতরাং এ হাদীসটি কুরআনে কারীমের বিপরীত অর্থবোধক রইল কিভাবে?
রেফারেন্স :-
★ শাহ আব্দুল আজীজ মুহাদ্দেসে দেহলবী রহঃ প্রণীত তাফসীরে ফাতহুল আজীজ-১/১৮৩।


এ হাদীসের মূল বক্তব্যের উপর আরো দু’টি হাদীস রয়েছে। যথা-

عن عبد الله بن شقيق ؛ أن رجلا سأل النبي صلى الله عليه وسلم : متى كنت نبيا ؟ قال : كنت نبيا وآدم بين الروح والجسد (مصنف ابن ابى شيبة، كتاب المغازى، ما جاء في مبعث النبي صلى الله عليه وسلم، رقم الحديث-৩৭৭০৮)

অনুবাদ-আব্দুল্লাহ বিন শাকিক থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ কে এক লোক প্রশ্ন করল-আপনি কখন থেকে নবী? তিনি বললেন-আমি তখন থেকেই নবী যখন আদম আঃ রুহ ও শরীরের মাঝামাঝি ছিলেন।
Reference :-
★মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩৭৭০৮,
★মাশকিলুল আসার লিত তাহাবী, হাদীস নং-৫২২২,
★কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল ★আফআল, হাদীস নং-৩১৯১৭,
★জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-১৫৮৩৫


عن العرباض بن سارية الفزاري قال : سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول : ( إني عند الله مكتوب بخاتم النبيين وإن آدم لمنجدل في طينته (صحيح ابن حبان، كتاب التاريخ، باب من صفته صلى الله عليه و سلم وأخباره، رقم الحديث-৬৪০৪)

অনুবাদ-হযরত ইরবায বিন সারিয়্যা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন-নিশ্চয় আমি আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বশেষ নবী হিসেবে লিপিবদ্ধ ছিলাম তখন, যখন আদম আঃ মাটিতে মিশ্রিত ছিলেন।
Reference :-
★সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬৪০৪,
★মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭১৬৩,
★মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৪১৯৯,
★মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-১৪৫৫,
★শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩২২২,
★মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদীস নং-৫৭৫৯,
★আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৬৩১

সুতরাং এ বর্ণনাটিকে জাল বলাটা বাড়াবাড়ি আর কিছু নয়।


→→→→→→→→→→→→→→→

STEP 3 :-
"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ" এর ব্যাপারে সহীহ সনদে অনেক হাদীস হাদীসের কিতাব সমূহে সহীহ সনদে বিদ্যমান আছে। আমি ভিন্ন করে নোট আকারে লিখবো ইনশাআল্লাহ্‌। আপাততো দুইটি হাদীস পেশ করছি।


পুরো lecture এর মুলনীতি :-

রিসালাতের ঘোষনা :- এ নিয়ে অনেক হাদিস আছে।
যেখান থেকে আমি [মাসুম বিল্লাহ সানি (আল্লাহর কসম! আমি যেহেতু খুজে বের করেছি আমিই নিজেই ১০০% এইসব Reference এর সত্যতার স্বীকৃতি দিচ্ছি ) এমন কিছু হাদিসের reference দিচ্ছি যেগুলোতে স্পস্টভাবে বিভিন্নভাবে একি সাথে তাওহীদ ও রিসালাতের ঘোষনা অর্থাত মুলত এইসব হাদিসে কালেমা তাইয়্যেবাহ ও কালেমা শাহাদাত এর সাক্ষ্য দেয়া হয়েছে ঠিক এই ভাবে:- 


(প্রথম)  :-
""""" আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মদ(সাঃ) আল্লাহর রাসুল এ কথার সাক্ষ্য দান।

(দ্বিতীয়)  :-

মুহাম্মদ(সা) বলেছেন যে, "আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসুল।

(তৃতীয়)  :-

সাহাবিগন বলেছেন,"আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসুল।""""

(চতুর্থ) :-

কালেমা শাহাদাত এ রিসালাতের এর সাক্ষ্য:-

আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, তাঁর কোন শারীক নাই, তিনি একক এবং আমি আরো সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রসূল।

সবগুলোর একই উদ্দেশ্য যে, "

১) """আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই"" এই কথা দারা তাওহিদের ঘোষনা দেয়া সাথে সাথে

২) """মুহাম্মদ(সা) আল্লাহর রাসুল""" এই বলে রিসালাতের সাক্ষ্য প্রমান করা।

একসাথে এতগুলো হাদিস আমি post করতে পারছি না আর আপনাদের পড়ারও আগ্রহ থাকবে না তাই শুধু অধ্যায় সহ reference দিচ্ছি কেউ চাইলে check করতে পারেন।আমি একটা একটা করে সব হাদিস check করে দিয়েছি।


Name: Sahih Bukhari (সহীহ বুখারি)
publication: Islamic foundation Bangladesh

অধ্যায়:হাদিস নং
ইমান: ৭,২৪,৫১,
ইলম: ৮৭,১৩০,
সালাত: ৪৪৮
সালাতের ওয়াক্তসমুহ: ৪৯৮
আযান: ৭৯৬(শ)
তাহাজ্জুত: ১১২৯(শ)
জানাযা: ১২৪৭(শ),১২৮৫,১২৯১(শ)
যাকাত: ১৩১৩,১৪০৯
হজ্জ: ১৭৬০
ক্রয় বিক্রয়: ২০২৩
অংশিদারিত্ত: ২৩২২
জিহাদ: ২৬৯৮,২৭৭৪,২৮৪০,২৮৪৬(শ)
আম্বিয়া কেরাম(আ) : ৩১৯৩(শ),৩০৯৪,৩২৬৮(শ),৩৬৫৪,
যুদ্ধাভিযান: ৩৮৮৮,৩৮৯২,৪০০৯,৪০৩৩
তফসির : ৪১২৮,৪৫৪০
আহার: ৫০৪৯
রক্তপন: ৬৪১২
খবরে ওয়াহিদ: ৬৭৭০

Note: যেসব হাদিসের পাষে ""(শ)"" লিখলাম সেগুলোতে কালেমা শাহাদাত এর সাক্ষ্য রয়েছে।

Name: Sahih Muslim(সহীহ মুসলিম)
publication: Islamic foundation bangladesh

অধ্যায়: হাদিস নং
ইমান: ১,২১,২৩,২৪,৩৬,৪৫,৪৬,৪৭(শ),৪৯,৫৫,৫৬,২০৬(শ),২০৭,২২১
তাহারাত বা পবিত্রতা: ৪৪৪(শ),৪৪৫(শ),
সালাত: ৭২৬,৭৩৫,৭৮০(All=শ)
জুমুয়া: ১৮৮১(শ)
কসম: ৪২২৮,৪২৩০
জিহাদ: ৪৪৩৭,৪৭৬১(All= শ)
সাহাবীগনের ফজিলত: ৬০০৪,৬১৩৮,৬১৭১(শ)
জান্নাত ও জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীদের বিবরন: ৬৯৫২(শ)
ফিতনা সমুহ ও কিয়ামতের নিদর্শন: ৭০৮২,৭০৯০

Note: যেসব হাদিসের পাষে ""(শ)"" লিখলাম সেগুলোতে কালেমা শাহাদাত এর সাক্ষ্য রয়েছে।

Name: Sonanu Nasai (সুনানু নাসাই)
Publication : Islamic foundation Bangladesh

অধ্যায়: হাদিস নং
পবিত্রতা: ১৪৮,১৮৯,
আযান: ৬৭৯
সুর্য ও চন্দ্র গ্রহন: ১৪৮৭(কালেমা তাইয়েবা)
জানাযা: ২০৫৪,২০৫৫,২১১৬,২১১৭
All=কালেমা শাহাদাত সম্পর্কিত হাদিস।

Note: যেসব হাদিসের পাষে ""(শ)"" লিখলাম সেগুলোতে কালেমা শাহাদাত এর সাক্ষ্য রয়েছে।

Name: Ibne Majah(ইবনে মাজাহ)
Publication : Islamic foundation Bangladesh
অধ্যায়:
রাসুল(সা) এর সুন্নতের অনুসরন: ৬৩,৭১,৭২,৮৭
পবিত্রতা ও এর সুন্নতসমুহ : ৪১৯,৪৬৯(শ)
আযান ও এর সুন্নত: ৭০৬,৭০৮,৭০৯,৭২১(শ),৮৯৯(শ)
সালাত কায়েম ও এর নিয়মকানুন: ৯০০,৯০১(শ)

Note: যেসব হাদিসের পাষে ""(শ)"" লিখলাম সেগুলোতে কালেমা শাহাদাত এর সাক্ষ্য রয়েছে।

Name:Musnade Ahmmad (মুসনাদে আহমদ):
হাদিস নং: ২১(শ),২২,২৩,৩৫

Name: Sahih Tirmizi(সহিহ তিরমিযি)
অধ্যায় : হাদিস নং
পবিত্রতা: ৫৫(শ)
সালাত: ২৮৯(শ), ২৯০
যাকাত: ৬২৩
রোজা: ৬৮৮
দাফন কাফন: ১০৭১(শ)
বিবাহ: ১১০৫(শ)
রক্তপন: ১৪০৬
Note: যেসব হাদিসের পাষে ""(শ)"" লিখলাম সেগুলোতে কালেমা শাহাদাত এর সাক্ষ্য রয়েছে।

Name: Riyadussalehin (রিয়াদুস সালেহীন)
হাদিস সংকলক: ইমাম নববী(রহ:)
Publication: তাওহীদ
হাদিস নং:
১/৬১,
৫/৭৯,
৮/৯৫,
৬/২১৩


→→→→→→→→→→→→→→→

STEP 4 :-

এ সম্পর্কে কিছু হাদিস তারপরও বর্ননা করা খুব দরকার বোধ করছি :
রিসালাত এর ঘোষনা দিয়ে ইমান আনা :-

1) “যেকোনো লোক মন থেকে সত্য জেনে এ-সাক্ষ্য দিবে যে,
আল্লাহ ব্যতীত হক কোন মা’বুদ নেই আর মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও
রাসূল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করেছেন।“
[বুখারি, হাদিস নং ১২৮; মুসলিম : (১/৬১)]


রিসালাতের ঘোষনা আছে আযানে ও সালাতে :-


2) আযান ও ইকামতের সময় বলা হয়ঃ

"আশহাদু আল্লা ই-লাহা ইল্লাল্লাহ"।

"আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ"।

" লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ"।

***মুত্বাফাক্ব আলাইহ; আবু দাউদঃ ৫০০-০১, ৫০৪; আওনুল মা'বুদ, আবু মাহযুরাহ হ'তে, হা/৪৯৬; মিশকাতঃ ৬৪১,৬৪৫, ইবনু রাসনাল, আমীরুল ইয়ামানী ও শায়খ আলবানীঃ সুবুলুস সালামঃ ১৬৭; ১/২৫০; তামামুল মিননাহ ১৪৭ পৃঃ; লাজনা দায়েমাহ- ফতওয়া নম্বরঃ ১৩৯৬।


3) "সালাতের বৈঠকে"

আমরা সালাতের বৈঠকের সময় তাশাহহুদের/আত্বাহিয়াতুর মধ্যে পড়িঃ

"আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু"।

***মুত্বাফাক আলাইহ; মিশকাতঃ ৯০৯- সালাত অধ্যায়।


4) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,

এরপর আলী ইবনু আবূ তালেব (রাঃ) তাশাহুদ তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য বানী পাঠ করলেন, তারপর বললেনঃ, হে আবূ বাকর! আপনার মর্যাদা এবং আল্লাহ তা’আলা আপনাকে যে সম্মান প্রদান করেছেন, তা আমরা জানি। আর আল্লাহ তা আলা আপনাকে যে নিয়ামত প্রদান করেছেন, তাতে আমার কোন ঈর্ষা নেই।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন | সহীহ মুসলিম
অধ্যায়ঃ ৩২/ জিহাদ ও এর নীতিমালা | হাদিস নাম্বার: 4428

5) তাওহীদ ও রিসালাতের উপর যথাযতভাবে ইমান আনয়নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে :-

 উমার ইবনুল খাত্তাব থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে কোন মুসলিম ব্যাক্তি উত্তমরূপে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করার পর বলে (কালিমা শাহাদাত): আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, তাঁর কোন শারীক নাই, তিনি একক এবং আমি আরো সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রসূল, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সে যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছা তাতে প্রবেশ করবে।

সুনানে ইবনে মাজাহ
অধ্যায়ঃ ২/ পবিত্রতা ও তার সুন্নাতসমূহ | হাদিস নাম্বার: 470
তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: তিরমিযী ৫৫, নাসায়ী ১৪৮, আহমাদ ১৬৯৪২।

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

6) আবূ খায়সামা যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়া’মার (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন "
জিবরীল রসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস ইসলাম সম্পর্কে।

وَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ أَخْبِرْنِي عَنْ الْإِسْلَامِ.
فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم الْإِسْلَامُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَتُقِيمَ الصَّلَاةَ، وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ، وَتَصُومَ رَمَضَانَ، وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إنْ اسْتَطَعْت إلَيْهِ سَبِيلًا.
قَالَ: صَدَقْت

তিনি [জিবরীল] বললেন, "হে মুহাম্মদ, আপনি আমাকে ইসলাম সম্পর্কে অবহিত করুন।"

রসূলুল্লাহ (সঃ) বললেন, "ইসলাম হচ্ছেঃ আপনি সাক্ষ্য দিবেন যে "লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহ" এবং "মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ" [অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া ইবাদত পাওয়ার যোগ্য আর কেউ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল], তুমি সালাত কায়েম করবে, যাকাত দান করবে, রমজানে রোজা রাখবে এবং আল্লাহর ঘরের হজ্জ করবে যদি সে পর্যন্ত যাওয়ার সক্ষমতা রাখ।"

এছাড়াও সূরা ফাতহ (৪৮ নং সূরা) এর ২৯ নং আয়াত আল্লাহ শুরু করেছেন "মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ" বলে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন | সহীহ মুসলিম
অধ্যায়ঃ ১/ কিতাবুল ঈমান | হাদিস নাম্বার: 1

7) তাওহীদ ও রিসালাতের ঘোষনা ইসলামের ৫টি ভিত্তির মধ্যে ১টির অন্তর্ভুক্ত :-

حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى، قَالَ أَخْبَرَنَا حَنْظَلَةُ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ، عَنْ عِكْرِمَةَ بْنِ خَالِدٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ ".

পরিচ্ছদঃ ২/ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর বানীঃ ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি
৭। উবায়দুল্লাহ্ ইবনু মূসা (রাঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি।

১। আল্লাহ্ ছাড়া ইলাহ্ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ আল্লাহ্‌র রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য দান।
২। সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করা
৩। যাকাত দেওয়া
৪। হাজ্জ (হজ্জ) করা এবং
৫। রামাদান এর সিয়াম পালন করা।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন | সহীহ বুখারি (ইফা)
অধ্যায়ঃ ২/ ঈমান | হাদিস নাম্বার: 7

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)


8) আবূ সালামা ইয়াহইয়া ইবনু খালাফ বাসরী (রহঃ) আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি কোন ইলাহ নেই আল্লাহ্ ছাড়া, আর মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও তাঁর রাসূল।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন | জামে তিরমিজী
অধ্যায়ঃ ১০/ কাফন-দাফন | হাদিস নাম্বার: 1071


9) মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) আবূ জামরা (রহঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসুল(সা) বললেনঃ তা হল এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ্ ছাড়া ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল , সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করা, যাকাত দেওয়া এবং রমযান এর সিয়াম পালন করা আর তোমাদের গনীমাতের মাল থেকে এক-পঞ্চমাংশ দান করবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন | সহীহ বুখারি (ইফা)
অধ্যায়ঃ ৩/ ইলম বা জ্ঞান | হাদিস নাম্বার: 87


10)  ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, "
যে কোন বান্দা আন্তরিকতার সাথে এ সাক্ষ্য দেবে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল ’ তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন | সহীহ বুখারি (ইফা)
অধ্যায়ঃ ৩/ ইলম বা জ্ঞান | হাদিস নাম্বার: 130


11) আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল ”।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন | সহীহ বুখারি (ইফা)
অধ্যায়ঃ ৮/ সালাত | হাদিস নাম্বার: 448

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)


12-14) হাফস ইবনু উমর রহ বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মু'মিন ব্যাক্তিকে যখন তার কবরে বসানো হয় তখন তার কাছে উপস্থিত করা হবে ফিরিশতাগণকে। তারপর (ফিরিশতাগণের জিজ্ঞাসার জওয়াবে) সে সাক্ষ্য প্রদান করে যে == আল্লাহ ব্যতিত কোন ইলাহ নেই আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল। ঐ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করেছে আল্লাহর কালাম- আল্লাহ পার্থিব জীবনে ও আখিরাতে অবিচল রাখবেন সে সকল লোককে যারা ঈমান এনেছে শ্বাশ্বত বাণীতে(কালেমা তাইয়েবা)। (১৪:২৭)

ইসলামিক ফাউন্ডেশন | সহীহ বুখারি (ইফা)
অধ্যায়ঃ ২০/ জানাযা | হাদিস নাম্বার: 1285

ইসলামিক ফাউন্ডেশন | সহীহ বুখারি (ইফা)
অধ্যায়ঃ ২০/ জানাযা | হাদিস নাম্বার: 1291

ইসলামিক ফাউন্ডেশন | সহীহ বুখারি (ইফা)
অধ্যায়ঃ ২১/ যাকাত | হাদিস নাম্বার: 1313



হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)


15-17) আবূ ‘আসীম যাহ্হাক ইবনু মাখলাক (রাঃ)… ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয (রাঃ) কে (শাসকরূপে) ইয়ামান অভিমুখে প্রেরণকালে বলেন, সেখানের অধিবাসীদেরকে আল্লাহ ব্যতিত কোন ইলাহ নেই এবং আমি (মুহাম্মদ) আল্লাহর রাসূল - এ কথার সাক্ষ্যদানের দাওয়াত দিবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন | সহীহ বুখারি (ইফা)
অধ্যায়ঃ ৯/ সালাতের ওয়াক্তসমূহ | হাদিস নাম্বার: 498

ইসলামিক ফাউন্ডেশন | সহীহ বুখারি (ইফা)
অধ্যায়ঃ ১০/ আযান | হাদিস নাম্বার: 796

ইসলামিক ফাউন্ডেশন | সহীহ বুখারি (ইফা)
অধ্যায়ঃ ১৯/ তাহাজ্জুদ বা রাতের সালাত | হাদিস নাম্বার: 1129


18) আরো বর্নিত আছে :-

عن انس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم دخلت الجنة فرأيت فى عارضتى الجنة مكتوبا ثلاثة اسطر بالذهب السطر الاول لاإله الا الله محمد رسول الله والسطر الثانى ما قدمنا وجدنا وما أكلنا ربحنا وما خلفنا خسرنا والسطر الثالث امة مذنبة ورب غفور- (رواه الرافعى وابن النجار وهو حديث صحيح الجامع الصغير-১/৬৪৫
হযরত আনাস র. বর্ণনা করেন যে, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি জান্নাতে প্রবেশ করে জান্নাতের উভয় পার্শে ৩টি লাইন লিখা দেখলাম।
১ম লাইন :- لاإله الا الله محمد رسول الله অর্র্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ নাই মুহাম্মাদ (স.) আল্লাহ তাআ’লার রসুল।
২য় লাইন :- যা আমরা আগে পাঠিয়েছি তার প্রতিদান পেয়েছি, যা দুনিয়াতে পানাহার করেছি তা দ্বার লাভবান হয়েছি, আর যা দুনিয়াতে ছেড়ে এসেছি তাতে আমরা খতিগ্রস্ত হয়েছি।
৩য় লাইন :- উম্মত গুনাহগার এবং রব ক্ষমাকারী। (হাদিসটি সহীহ। রাফেঈ, ইবনে নাজ্জার, জামে সগীর))


19) অপর হাদিসে আছে :-

 روى الامام يونس بن بكير فى زيادات المغازى عن يوسف بن صهيب عن عبدالله بن بريدة عن ابيه قال انطلق ابو ذر ونعيم بن عم ابى ذ ر و انا معهم يطلب رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو مستتر با لجبل فقال له ابو ذر يا محمد اتيناك لنسمع ما تقول قال اقول لااله الا الله محمد رسول الله فآمن به ابوذروصاحبه – الاصابة -৬/৪৬৩ اسناده صحيص ورجاله ثقات

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুরায়দা তার পিতা হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, আবু যর এবং তার চাচাত ভাই নুআইম নবী করিম স. কে তালাশ করছিলেন আর আমি তাদের সাথে ছিলাম। নবী করিম (স.) কে তখন পাহাড়ে লুকিয়েছিলেন। হযরত আবু যর তখন আওয়াজ দিয়ে বললেন ‘হে মুহাম্মাদ (স.) আমরা আপনার কথা শোনার জন্য আপনার নিকট এসেছি। তখন নবী করিম (স.) ইরশাদ করলেন, আমি তোমাদেরকে বলছি لااله الا الله محمد رسول الله অর্র্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ নাই মুহাম্মাদ (স.) আল্লাহ তাআ’লার রসুল। অতঃপর আবু যর এবং তার সাথি এ কথার উপর ঈমান আনলেন।
(আল ইসাবা-৬/৪৬৩) উল্লোখ্য :- হাদিসটি সনদ সহীহ এবং বর্ণনাকারীগণ সকলেই নির্ভশীল।


20) আনাস ইবনু মালিক থেকে বর্ণিত,

 নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে কোন মুসলিম ব্যাক্তি উত্তমরূপে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করার পর তিনবার বলে (কালিমা শাহাদাত): আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, তাঁর কোন শারীক নাই, তিনি একক এবং আমি আরো সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রসূল, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সে যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছা তাতে প্রবেশ করবে।

★আবূল হাসান ইবুন সালামাহ আল-কাত্তান, ইব্রাহীম ইবনু নাস্র, আবূ নুআয়ম (রহঃ) থেকে এ সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: আহমাদ ১৩৩৮১ , আবূ দাঊদ ১০৫০ সহীহ, জামি সগীর ৬১৬৮, মাজাহ ১০৯০ সহীহ, তিরমিযী ৪৯৮ সহীহ, মিশকাত ১৩৮৩ সহীহ, ইরওয়াহ ৯৬, সহীহ আবূ দাউদ ১৬২, সহীহ তারগীব ২১৯
★ সুনানে ইবনে মাজাহ
অধ্যায়ঃ ২/ পবিত্রতা ও তার সুন্নাতসমূহ | হাদিস নাম্বার: 469


শুক্রবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৫

অমুসলিমদের প্রতি ইসলামের উদারতা

“হে মানবগোষ্ঠী! আমি তোমাদেরকে একজন পরুষ এবং একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যেন তোমরা পরস্পরকে চিনতে পার। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সেই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক মুত্তাকী।” (সূরা হুজরাতঃ১৩)


দ্বীনের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই (সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৫৬)


আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ ﻟَّﺎ ﻳَﻨۡﻬَﻯٰﻜُﻢُ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻦِ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻟَﻢۡ ﻳُﻘَٰﺘِﻠُﻮﻛُﻢۡ ﻓِﻲ ﭐﻟﺪِّﻳﻦِ ﻭَﻟَﻢۡ ﻳُﺨۡﺮِﺟُﻮﻛُﻢ ﻣِّﻦ
ﺩِﻳَٰﺮِﻛُﻢۡ ﺃَﻥ ﺗَﺒَﺮُّﻭﻫُﻢۡ ﻭَﺗُﻘۡﺴِﻄُﻮٓﺍْ ﺇِﻟَﻴۡﻬِﻢۡۚ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻳُﺤِﺐُّ ﭐﻟۡﻤُﻘۡﺴِﻄِﻴﻦَ ٨
﴾ [ ﺍﻟﻤﻤﺘﺤﻨﺔ : ٨ ]

‘আল্লাহ নিষেধ করেন না ওই লোকদের সঙ্গে সদাচার ও ইনসাফপূর্ণ ব্যবহার করতে যারা তোমাদের সঙ্গে ধর্মকেন্দ্রিক
যুদ্ধ করে নি এবং তোমাদের আবাসভূমি হতে তোমাদের বের করে দেয় নি। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন। {সূরা আল-মুমতাহিনা, আয়াত : ৮}


إِنَّمَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ قَاتَلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَأَخْرَجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ وَظَاهَرُوا عَلَى إِخْرَاجِكُمْ أَن تَوَلَّوْهُمْ وَمَن يَتَوَلَّهُمْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ

অর্থাৎ”আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম”।
(সূরা মুমতাহিনা, আয়াত-৯)


“যখন তোমরা মানুষের মাঝে বিচার কার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার করবে। আল্লাহ্ তোমাদেরকে যে উপদেশ দেন তা কতই না উত্তম।” (সুরা নিসাঃ ৫৮)

অন্য আয়াতে ইয়াহুদীদের প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তাঁর রাসুলকে নির্দেশ দিয়েছেন এই বলে যেঃ

“যদি ফয়সালা করেন তবে ন্যায়ভাবে ফয়সালা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ্ সুবিচারকারীকে ভালবাসেন।” (মায়িদাঃ ৪২)



অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তোমার কর্তব্য তো কেবল সুস্পষ্ট বাণী পৌঁছে দেয়া মাত্র। বানী পৌঁছে দিয়ে শক্তি-প্রয়োগ চলে না।আমাদের এর বেশি কাজ নেই , শক্তি প্রয়োগ পরের কথা। তবে কেউ আক্রমণ করলে প্রতিহত করা ইসলামে দায়িত্ব। (সূরা নাহল, আয়াত-৮২)


তোমার পালনকর্তার পথের দিকে আহবান কর প্রাজ্ঞতা, বিচক্ষণতা ও ভাল উপদেশ শুনিয়ে এবং তাদের সাথে আলোচনা কর উত্তম পন্থায়। (সূরা নাহল, আয়াত-১২৫)


আল্লাহ তাআলা বলেন:
“আর তোমরা উত্তম
পন্থা ছাড়া আহলে কিতাবদের
সাথে বিতর্ক করো না। তবে তাদের
মধ্যে ওরা ছাড়া, যারা জুলুম
করেছে।”
[সূরা আনকাবুত, আয়াত: ৪৬]


আল্লাহ
তাআলা বলেন: “আর যদি মুশরিকদের
কেউ তোমার কাছে আশ্রয় চায়,
তাহলে তাকে আশ্রয় দাও,
যাতে সে আল্লাহর কালাম
শুনতে পারে। অতঃপর
তাকে পৌঁছিয়ে দাও তার নিরাপদ
স্থানে।”
[সূরা তওবা, আয়াত: ৬]


“তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার
করতে আমি আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ
আমাদের ও তোমাদের রব। আমাদের
কর্ম আমাদের এবং তোমাদের কর্ম
তোমাদের;
আমাদের ও তোমাদের মধ্যে কোন
বিবাদ-বিসম্বাদ নেই; আল্লাহ
আমাদেরকে একত্র করবেন
এবং প্রত্যাবর্তন তাঁরই কাছে।”
[সূরা আশ-শুরা, আয়াত:১৫]





আল্লাহ ইরশাদ করেন,

﴿ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺴُﺒُّﻮﺍْ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺪۡﻋُﻮﻥَ ﻣِﻦ ﺩُﻭﻥِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻴَﺴُﺒُّﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻋَﺪۡﻭَۢﺍ ﺑِﻐَﻴۡﺮِ ﻋِﻠۡﻢٖۗ ﻛَﺬَٰﻟِﻚَ
ﺯَﻳَّﻨَّﺎ ﻟِﻜُﻞِّ ﺃُﻣَّﺔٍ ﻋَﻤَﻠَﻬُﻢۡ ﺛُﻢَّ ﺇِﻟَﻰٰ ﺭَﺑِّﻬِﻢ ﻣَّﺮۡﺟِﻌُﻬُﻢۡ ﻓَﻴُﻨَﺒِّﺌُﻬُﻢ ﺑِﻤَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍْ ﻳَﻌۡﻤَﻠُﻮﻥَ
١٠٨ ﴾ [ ﺍﻻﻧﻌﺎﻡ : ١٠٨ ]

‘তারা আল্লাহ তা‘আলার বদলে যাদের ডাকে, তাদের
তোমরা কখনো গালি দিয়ো না, নইলে তারাও শত্রুতার কারণে না জেনে আল্লাহ তা‘আলাকেও গালি দেবে, আমি প্রত্যেক জাতির কাছেই তাদের কার্যকলাপ সুশোভনীয় করে রেখেছি, অতঃপর সবাইকে একদিন তার মালিকের কাছে ফিরে যেতে হবে, তারপর তিনি তাদের বলে দেবেন, তারা দুনিয়ার
জীবনে কে কী কাজ করে এসেছে’।
{সূরা আল আন‘আম, আয়াত : ১০৮}

♦ইসলাম কেবল সেই সমস্ত কাফির মুশরিকের বিরোদ্ধে যুদ্ধ করতে বলে যারা মুসলমান ও ইসলামের ক্ষতি করত্র চায় আর ইসলামের বিরোদ্ধে যুদ্ধ করে নিরিহ অমুসলিমকে মারতে বলে নি। যেমন

আয়াতের ভাষ্য হলো – ‘অবিশ্বাসীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করো না, ওরা মুসলমানদের অমঙ্গল কামনা করে ।’  [৩/১১৮]
এ ধরণের একই কথা বলা হয়েছে এই আয়াতগুলিতেও – ৪/১৪৪;  ৫/৫১,৫৭;  ৬০/১  ।

তাদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে – ‘ ... নিশ্চয় কাফেরগণ তোমাদের শত্রু ।’  [৪/১০১]

 – ‘যে আল্লাহর, ফিরিস্তাদের, রাসূলদের, জিব্রাইলের ও মিকাঈলের শত্রু হয়, [সে জানিয়া রাখুক] আল্লাহ কাফিরদের শত্রু ।’ [২/৯৮]


হাবীব ইবন অলীদ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৈন্যদল প্রেরণকালে বলতেন,

« ﺍﻧْﻄَﻠِﻘُﻮﺍ ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ، ﻭَﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﺗُﻘَﺎﺗِﻠُﻮﻥَ ﻣَﻦْ ﻛَﻔَﺮَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ،
ﺃَﺑْﻌَﺜُﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥْ ﻟَﺎ ﺗَﻐُﻠُّﻮﺍ، ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺠْﺒُﻨُﻮﺍ، ﻭَﻟَﺎ ﺗُﻤَﺜِّﻠﻮﺍ، ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﺍ ﻭَﻟِﻴﺪًﺍ، ﻭَﻟَﺎ
ﺗَﺤْﺮِﻗُﻮﺍ ﻛَﻨِﻴﺴَﺔً، ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻌْﻘِﺮُﻭﺍ ﻧَﺨْﻠًﺎ »

‘তোমরা আল্লাহ ও আল্লাহর নামে আল্লাহর পথে যাত্রা কর। তোমরা আল্লাহর প্রতি কুফরকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। আমি তোমাদের কয়েকটি উপদেশ দিয়ে প্রেরণ করছি-
(যুদ্ধক্ষেত্রে) তোমরা বাড়াবাড়ি করবে না, ভীরুতা দেখাবে না, (শত্রুপক্ষের) কারো চেহারা বিকৃতি ঘটাবে না, কোনো শিশুকে হত্যা করবে না, কোনো গির্জা জ্বালিয়ে দেবে না এবং কোন গাছ
উৎপাটন করবে না।’
[আবদুর রাযযাক, মুসান্নাফ : ৯৪৩০]


এদিকে মু'তার যুদ্ধে রওনার প্রাক্কালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর
বাহিনীকে নির্দেশ দেন :

« ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﺍ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓً ﻭَﻻَ ﺻَﻐِﻴﺮًﺍ ﺿَﺮَﻋًﺎ ﻭَﻻَ ﻛَﺒِﻴﺮًﺍ ﻓَﺎﻧِﻴًﺎ ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﻄَﻌُﻦَّ ﺷَﺠَﺮَﺓً ﻭَﻻَ
ﺗَﻌْﻘِﺮُﻥَّ ﻧَﺨْﻼً ﻭَﻻَ ﺗَﻬْﺪِﻣُﻮﺍ ﺑَﻴْﺘًﺎ ».

'তোমরা কোনো নারীকে হত্যা করবে না, অসহায় কোনো শিশুকেও না; আর না অক্ষম বৃদ্ধকে। আর কোনো গাছ উপড়াবে না, কোনো খেজুর গাছ জ্বালিয়ে দেবে না। আর কোনো গৃহও ধ্বংস করবে না।’
[মুসলিম : ১৭৩১]

আরেক হাদীসে আছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

« ﻛَﺎﻥَ ﺇﺫَﺍ ﺑَﻌَﺚَ ﺟُﻴُﻮﺷَﻪُ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﺍ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏَ ﺍﻟﺼَّﻮَﺍﻣِﻊِ ».

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কোনো বাহিনী প্রেরণ করলে বলতেন,
‘তোমরা গির্জার অধিবাসীদের হত্যা করবে না।’
[ইবন আবী শাইবা, মুসান্নাফ : ৩৩৮০৪; কিতাবুল জিহাদ,
যুদ্ধক্ষেত্রে যাদের হত্যা করা নিষেধ
অধ্যায়]


আবূ বকর রাদিআল্লাহু আনহুও একই
পথে হাঁটেন। আপন খিলাফতকালে প্রথম
যুদ্ধের বাহিনী প্রেরণ
করতে গিয়ে তিনি এর
সেনাপতি উসামা ইবন যায়েদ রাদিআল্লাহু
আনহুর উদ্দেশে বলেন,

ﻳﺎ ﺃﻳﻬﺎ ﺍﻟﻨﺎﺱ، ﻓﻘﻮﺍ ﺃﻭﺻﻴﻜﻢ ﺑﻌﺸﺮ ﻓﺎﺣﻔﻈﻮﻫﺎ ﻋﻨﻲ : ﻻ ﺗﺨﻮﻧﻮﺍ ﻭﻻ ﺗﻐﻠﻮﺍ ﻭﻻ
ﺗﻐﺪﺭﻭﺍ، ﻭﻻ ﺗﻤﺜﻠﻮﺍ ﻭﻻ ﺗﻘﺘﻠﻮﺍ ﻃﻔﻼً ﺻﻐﻴﺮﺍً، ﻭﻻ ﺷﻴﺨﺎً ﻛﺒﻴﺮﺍً ﻭﻻ ﺍﻣﺮﺃﺓ، ﻭﻻ
ﺗﻌﺰﻗﻮﺍ ﻧﺨﻼً ﻭﻻ ﺗﺤﺮﻗﻮﻩ، ﻭﻻ ﺗﻘﻄﻌﻮﺍ ﺷﺠﺮﺓ ﻣﺜﻤﺮﺓ، ﻭﻻ ﺗﺬﺑﺤﻮ ﺷﺎﺓ ﻭﻻ ﺑﻘﺮﺓ،
ﻭﻻ ﺑﻌﻴﺮﺍً ﺇﻻ ﻟﻤﺂﻛﻠﻪ. ﻭﺳﻮﻑ ﺗﻤﺮﻭﻥ ﺑﺄﻗﻮﺍﻡ ﻗﺪ ﻓﺮﻏﻮﺍ ﺃﻧﻔﺴﻬﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻮﺍﻣﻊ
ﻓﺪﻋﻮﻫﻢ ﻭﻣﺎ ﻓﺮﻏﻮﺍ ﺃﻧﻔﺴﻬﻢ ﻟﻪ .

‘হে লোক সকল, দাঁড়াও আমি তোমাদের
দশটি বিষয়ে উপদেশ দেব। আমার পক্ষ
হিসেবে কথাগুলো তোমরা মনে রাখবে।
কোনো খেয়ানত করবে না,
বাড়াবাড়ি করবে না,
বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, (শত্রুদের) অনুরূপ
করবে না, ছোট বাচ্চাকে হত্যা করবে না,
বয়োবৃদ্ধকেও না আর নারীকেও না। খেজুর
গাছ কাটবে না কিংবা তা জ্বালিয়েও
দেবে না। কোনো ফলবতী গাছ কাটবে না।
আহারের প্রয়োজন ছাড়া কোনো ছাগল, গরু
বা উট জবাই করবে না। আর তোমরা এমন
কিছু লোকের সামনে দিয়ে অতিক্রম
করবে যারা গির্জাগুলোয় নিজেদের
ছেড়ে দিয়েছে। তোমরাও তাদেরকে তাদের
এবং তারা যা ছেড়ে নিজেদের জন্য
তাতে ছেড়ে দেবে।
[মুখতাসারু
তারীখি দিমাশক : ১/৫২; তারীখুত
তাবারী]


কোনো মুসলিম যদি কোনো অমুসলিমের
প্রতি অন্যায় করেন, তবে রোজ
কিয়ামতে খোদ নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বিপক্ষে লড়বেন
বলে হাদীসে এসেছে। একাধিক
সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« ﺃَﻟَﺎ ﻣَﻦْ ﻇَﻠَﻢَ ﻣُﻌَﺎﻫِﺪًﺍ، ﺃَﻭِ ﺍﻧْﺘَﻘَﺼَﻪُ، ﺃَﻭْ ﻛَﻠَّﻔَﻪُ ﻓَﻮْﻕَ ﻃَﺎﻗَﺘِﻪِ، ﺃَﻭْ ﺃَﺧَﺬَ ﻣِﻨْﻪُ ﺷَﻴْﺌًﺎ
ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﻃِﻴﺐِ ﻧَﻔْﺲٍ، ﻓَﺄَﻧَﺎ ﺣَﺠِﻴﺠُﻪُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ »

‘সাবধান! যদি কোনো মুসলিম
কোনো অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন
চালিয়ে তার অধিকার খর্ব করে, তার
ক্ষমতার বাইরে কষ্ট দেয় এবং তার
কোনো বস্তু জোরপূর্বক নিয়ে যায়,
তাহলে কিয়ামতের দিন আমি তার
পক্ষে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ উত্থাপন
করব।’
[আবূ দাঊদ : ৩০৫২]

অপর এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আবদুল্লাহ
ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু
‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« ﻣَﻦْ ﻗَﺘَﻞَ ﻣُﻌَﺎﻫَﺪًﺍ ﻟَﻢْ ﻳَﺮِﺡْ ﺭَﺍﺋِﺤَﺔَ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔِ، ﻭَﺇِﻥَّ ﺭِﻳﺤَﻬَﺎ ﺗُﻮﺟَﺪُ ﻣِﻦْ ﻣَﺴِﻴﺮَﺓِ ﺃَﺭْﺑَﻌِﻴﻦَ
ﻋَﺎﻣًﺎ»

‘যে মুসলিম কর্তৃক নিরাপত্তা প্রাপ্ত
কোনো অমুসলিমকে হত্যা করবে,
সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ তার
ঘ্রাণ পাওয়া যায় চল্লিশ বছরের পথের দূরত্ব
থেকে’।
[বুখারী : ৩১৬৬]


আরেক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
আবী বাকরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« ﻣَﻦْ ﻗَﺘَﻞَ ﻣُﻌَﺎﻫِﺪًﺍ ﻓِﻲ ﻏَﻴْﺮِ ﻛُﻨْﻬِﻪِ ﺣَﺮَّﻡَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ »

‘যে ব্যক্তি চুক্তিতে থাকা কোনো অমুসলিম
হত্যা করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত
হারাম করে দেবেন’।
[আবূ দাঊদ : ২৭৬০;
নাসাঈ : ৪৭৪৭, শাইখ
আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]


বিভিন্ন সাদকা মুসলিমদের উপরই কেবল ধার্য হইবে। অমুসলিমদের উপর নামে মাত্র জিযিয়া ছাড়া অন্য কোন কিছু ধার্য করা যাবেনা।

যতদিন তাহারা (অমুসলিমগণ) ইসলামীরাষ্ট্রের সন্ধিকৃত এলাকায় বসবাস করিবে, তাহাদের উপর জিযিয়া ব্যতীত আর কিছুই ধার্য হইবে না।

(মুয়াত্তা মালিক :: যাকাত অধ্যায়)


“আবদুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ নুফায়লী (র.)...মু'আয (রা) থেকে বর্ণিত । রাসূলুল্লাহ (সা) যখন মু'আয (রা)-কে ইয়ামনে প্রেরণ করেন, তখন তাঁকে এরূপ নির্দেশ দেন যে, প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির নিকট হতে এক দীনার অথবা এক দীনার মূল্যের মু'আফিরী নামক কাপড়, যা ইয়ামনে উৎপন্ন হয় (তা জিযিয়া হিসাবে গ্রহণ করবে)।” (সুনান আবু দাউদ: কর, খাজনা, অনুদান ও প্রশাসনিক দায়িত্ব অধ্যায়। হাদিস নং ৩০৩৮


কিছু হাদিসে আমরা মুহাম্মদ সাঃ এর সময়কার কিছু জিনিসের মূল্য দীনারে উল্লেখ করতে দেখি।

সুনানে নাসাঈ শরীফ :: কাসামহ্ অধ্যায় : অধ্যায় ৪৫ :: হাদিস ৪৮০৫-এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আমলে ছোট বড় মিলিয়ে ১০০ উটের মূল্য ৮০০ দিনার পর্যন্ত হতো।


একশত উটনীর মূল্য= ৮০০ দীনার হলে

একটির গড় মূল্য = ৮ দীনার।

সে সময় আরব দেশে উট অত্যন্ত সহজলভ্য ছিলো।

সেযুগে ভালো উটের দাম ছিলো প্রায় ৮ দীনার ।

আর এ যুগে ভালো উটের দাম - ৪০০ ডলার।

সুতরাং ৮ দিনার=৪০০ ডলার

অতএব ১ দিনার= ৪০০/৮=৫০ ডলার

এটা বাৎসরিক জিজিয়া । তাহলে মাসিক জিজিয়া হবে = ৫০/১২=৪.১৭ ডলার।


''আমি তাঁকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এর জিম্মিদের (অর্থাৎ জিম্মাধীন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়) বিষয়ে ওয়াসিয়াত করছি যে, তাদের সাথে কৃত অঙ্গীকার যেন পুরা করা হয়। (তারা কোন শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে) তাদের পক্ষাবিলম্বে যেন যুদ্ধ করা হয়, তাদের শক্তি সামর্থ্যের অধিক জিযিয়া (কর) যেন চাপানো না হয়।'' [সহীহ বুখারি (ইফা) অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ) । নাম্বার: ৩৪৩৫]


আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ ﻣَﻦ ﻗَﺘَﻞَ ﻧَﻔۡﺴَۢﺎ ﺑِﻐَﻴۡﺮِ ﻧَﻔۡﺲٍ ﺃَﻭۡ ﻓَﺴَﺎﺩٖ ﻓِﻲ ﭐﻟۡﺄَﺭۡﺽِ ﻓَﻜَﺄَﻧَّﻤَﺎ ﻗَﺘَﻞَ ﭐﻟﻨَّﺎﺱَ ﺟَﻤِﻴﻌٗﺎ
ﻭَﻣَﻦۡ ﺃَﺣۡﻴَﺎﻫَﺎ ﻓَﻜَﺄَﻧَّﻤَﺂ ﺃَﺣۡﻴَﺎ ﭐﻟﻨَّﺎﺱَ ﺟَﻤِﻴﻌٗﺎۚ ﴾ [ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٣٢ ]

‘যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা যমীন
সৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করল,
সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। আর
যে তাকে বাঁচাল, সে যেন সব
মানুষকে বাঁচাল’।
{সূরা আল-মায়িদা,
আয়াত : ৩২}


আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ ﻭَﭐﻟۡﻔِﺘۡﻨَﺔُ ﺃَﺷَﺪُّ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻘَﺘۡﻞِۚ ﴾ [ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ١٩١ ]

‘আর ফিতনা হত্যার চেয়ে কঠিনতর’।
{সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৯১}


আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻛُﻮﻧُﻮﺍْ ﻗَﻮَّٰﻣِﻴﻦَ ﻟِﻠَّﻪِ ﺷُﻬَﺪَﺁﺀَ ﺑِﭑﻟۡﻘِﺴۡﻂِۖ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺠۡﺮِﻣَﻨَّﻜُﻢۡ ﺷَﻨََٔﺎﻥُ
ﻗَﻮۡﻡٍ ﻋَﻠَﻰٰٓ ﺃَﻟَّﺎ ﺗَﻌۡﺪِﻟُﻮﺍْۚ ﭐﻋۡﺪِﻟُﻮﺍْ ﻫُﻮَ ﺃَﻗۡﺮَﺏُ ﻟِﻠﺘَّﻘۡﻮَﻯٰۖ ﻭَﭐﺗَّﻘُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَۚ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﺧَﺒِﻴﺮُۢ ﺑِﻤَﺎ
ﺗَﻌۡﻤَﻠُﻮﻥَ ٨ ﴾ [ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٨ ]

‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের
সাথে সাক্ষদানকারী হিসেবে সদা দণ্ডায়ম
হও। কোনো কওমের প্রতি শত্রুতা যেন
তোমাদেরকে কোনোভাবে প্ররোচিত
না করে যে, তোমরা ইনসাফ করবে না।
তোমরা ইনসাফ কর, তা তাকওয়ার নিকটতর।
এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়
তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ
অবহিত’।
{সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ৮}



সর্বশেষে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
বল,
‘হে কিতাবীগণ, তোমরা এমন কথার
দিকে আস, যেটি আমাদের মধ্যে ও
তোমাদের মধ্যে সমান যে,
আমরা একমাত্র আল্লাহ
ছাড়া কারো ইবাদত করব না। তার
সাথে কোন কিছুকে শরীক করব
না এবং আমাদের কেউ আল্লাহ
ছাড়া কাউকে রব হিসাবে গ্রহণ করব
না। তারপর যদি তারা বিমুখ হয়
তবে বল, ‘তোমরা সাক্ষী থাক যে,
নিশ্চয় আমরা মুসলিম’।
[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬৪]







বৃহস্পতিবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৫

ইমামের পিছনে মুকতাদী সূরা ফাতিহা পড়বে না

এই পুরো পোস্টের এর সার সংক্ষেপ :

১) আল-কুরআন ও তফসির থেকে প্রমান
২) সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমান
৩) সাহাবীগনের আমল
৪) তাবেয়ীগনের আমল
৫) পাঠ করা ফরজ এই বিষয়ে আহলে হাদিসের ব্যবহার করা হাদিসের উল্টাপাল্টা ব্যবহারের সঠিক ব্যাখ্যা

কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, জামাআতের নামাযে মুকতাদী ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা বা অন্য কোন সূরা পড়বে না।

অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেঈনের মতও হলো সূরা ফাতিহা না পড়া। হযরত ইমাম আবু হানিফা রহ.,হযরত ইমাম মালেক রহ. ও হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. এই তিন জন ইমাম এ ব্যপারে একমত যে মুকতাদীর জন্য সুরা ফাতিহা পড়া জরুরী নয়।

কিন্ত বর্তমান জমানায় মাযহাব বিরোধী তথাকথিত আহলে হাদীস সম্প্রদায়ের লোকেরা এ ব্যপারে খুব বাড়াবাড়ির শিকার। সর্ব সাধারণকে তারা এ বলে ধোকা দিচ্ছে যে, সুরা ফাতিহা না পড়লে কোন মুকতাদীর নামাযই হবে না।
মুকতাদীর জন্য বিধান হলো সূরা ফাতিহা না পড়া এ সম্পর্কে দলীল প্রমাণ নিম্নে পেশ করা হল।


♦♦কুরআনের বক্তব্য:♦♦


★ মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজিদে ইরশাদ করেন,


“আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখ এবং নিশ্চুপ থাক যাতে তোমাদের উপর রহমত হয়। ”

(সুরা আ’রাফ : ২০৪)


এ আয়াতের ব্যাপারে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম , ফুকাহায়ে এজাম, আইম্মায়ে মুযতাহিদীন , মুহাদ্দিসীন ও আইম্মায়ে মুফাসসিরীন তখা তাফসীর শাস্ত্রের ইমামগণের সম্মিলিত মত হচেরছ যে, উক্ত আয়াতটি নামায সম্পর্কে অবতীর্ন হয়েছে। এবং এর মাঝে মুক্তাদীগণের কর্তব্য সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ নামাযে যখন কিরাত পড়া হবে তখন মুক্তাদীর কর্তব্য হচ্ছে অত্যন্ত মনোযোগ ও একাগ্রতার সাথে ইমামের কিরাত শুবণ করা।

★★★ সাহাবীগনের তফসীর :-

★ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের (রা.) তাফসীর:

সাহাবাগণের মাঝে যারা কুরআনে কারিমের শিক্ষক ছিলেন তাদের মাঝে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের (রা) নাম ছিল সর্বাগ্রে। রাসূল (সা) ইরশাদ করেন,

«اسْتَقْرِئُوا القُرْآنَ مِنْ أَرْبَعَةٍ مِنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، وَسَالِمٍ مَوْلَى أَبِي حُذَيْفَةَ، وَأُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ، وَمُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ»
صحيح البخاري (5/ 28)

অর্থাৎ তোমরা এই চার সাহাবা থেকে কুরআনুল কারিমের শিক্ষা গ্রহণ কর। আব্দুল্লাহ মিইবনে মাসউদ, সালেম মাওলা আবি হুযাইফা, উবাই ইবনে কাব এবং মুআয ইবনে জাবাল (রা)।
এবার আলোচ্য আয়াত সম্পর্কে এ মহান সাহাবীর তাফসীর লক্ষ্য করুন।

★তাফসীরে ইবনে জারীরে বর্ণিত রয়েছে:-

صلی ابن مسعود رضی اللہ عنہ فسمع انا سایقرءون مع الامام فلما انصرف قال اما ان لکم ان تفھموا۔ اما ان لکم ان تعقلوا واذا قرئ القرآن فاستمعوا لہ وانصتوا کم امرکم اللہ تعالی۔

অর্থাৎ একদা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) নামায পড়ছিলেন তখন কিছু লোককে নামাযে ইমামের সাথে কিরত পাঠ করতে শুনলেন। তখন তিনি নামাযান্তে বললেন- তোমাদের এখনো কি বুঝ জ্ঞান হয়নি? যখন কুরআন পড়া হয় তখন তোমরা মনোযোগের সাথে তা শ্রবণ করবে এবং নীরব থাকবে ঠিক যেমন আল্লাহ তোমাদের আদেশ করেছেন। এই রেওয়ায়েতে তিনি সুস্পষ্টভাবে মুক্তাদীদের ইমামের পিছনে কোন কিছু পড়তে নিষেধ করে দিলেন।

বুঝা গেল হযরত ইবনে মাসউদের (রা:) মতে উক্ত আয়াতটি নামাযে মুক্তাদীদের কিরাত পাঠ প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে।


★ মুফসসীরকুল শিরোমণি হযরত ইবনে আব্বাসের (রা তাফসীর: উবনে আব্বাস (রা:) সম্পর্কে রাসূলে করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন,

اللهم فقهه فى الدين و علمه التاويل

অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি তাকে (ইবনে আব্বাসকে) দ্বীনের সঠিক বুঝ দান কর এবং কুরআনের সঠিক ব্যাখ্যা অনুধাবনের যোগ্যতা দগান কর।

এই মহান সাহাবী আলোচ্য আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে বলেন,

অর্থাৎ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত। তিনি وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ এ আয়াত সম্পর্কে বলেন যে, উক্ত আয়াতটি ফরজ নামাযের ক্ষেত্রেই অবতীর্ণ। তার এ বর্ণনা থেকেও সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, আয়াতের সম্পর্ক ফরজ নামাযে কিরাত পাঠের সাথে। সুতরাং فَاسْتَمِعُوا لَهُ (কান পেতে শ্রবণ কর) এবং وَأَنْصِتُوا (নীরব থাক) বলে আয়াতে মুক্তাদীর কতব্য বলে দেয়া হয়েছে যে, তারা ইমামের কিরাত শ্রবণ করতে থাকবে এবং নীরব থাকবে।


★★★ উক্ত আয়াত সম্পর্কে তাবেঈগণের ব্যাখ্যা:-

★ হাফেজ ইবনে কাছির বলেন-কুরআনুল কারিমের তাফসীরের ক্ষেত্রে কুরআন, হাদীস ও সাহাবার (রা:) পরই তাবেঈগণের তাফসীর প্রামাণ্য ও গ্রহণযোগ্য।

★ নবাব সিদ্দীক হাসান খাঁন সাহেব লিখেছেন, وهذا تفسير التابعى حجة অর্থাৎ এমনিভাবে তাবেঈগনের তাফসীর ও শরীয়তের দলীল।

★ হযরত মুজাহিদ ইবনে জাবর (র.) এর তাফসীর:
তাবেঈগণের মধ্যে সবচেয়ে বড় মুফাস্সীর ছিলেন মুযাহিদ ইবনে জাবর (র.)। তিনি তাঁর জামানায় তাফসীর শাস্ত্রের সবচেয়ে বড় ইমাম ছিলেন । তাঁর সম্পর্কে সুফিয়ান ছাউরীর (র.) একটি বাণী প্রসিদ্ধ রয়েছে। তিনি বলতেন,

اذا جائكم التفسير عن مجاهد فحسبكم به

অর্থাৎ “তোমাদের নিকট যখন মুযাহিদের (র.) তাফসীর এসে যাবে তখন তোমাদের অন্য কোন তাফসীরের প্রয়োজন হবে না।

এই প্রক্ষাত মুফাস্সীর আলোচ্য আয়াতের তাফসীরে বলেন,

عن مجاهد فى قوله تعالى: واذا قرئ القران فاستمعوا له وانصتوا في الصلوة.

অর্থাৎ মুজাহিদ (র.)বলেন যে,   واذا قرئ القران  এই আয়াতটি নামায সম্পর্কে অবতীর্ণ।

★ অন্যান্য বিশিষ্ট তাবেঈগণের তাফসীর:

قال الضحاك رح وابراهيم النخعى رح وقتادة رح الشعبى رح والسدى رح وعبد الرحمن ابن زيد بن اسلم ان المراد بذلك الصلوة

অর্থাৎ হযরত যহহাক, ইব্রাহীম নাখাঈ, কত্বাদাহ, শাবী, সূদ্দী এবং আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম (র.) প্রমুখ ইমামগণ বলেন যে, উক্ত আয়াতের মতলব হচ্ছে নামায অর্থাৎ এ আয়াত নামা সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে।


★★★ উল্লিখিত সাহাবা ও তাবেঈগণের বর্ণনা ছাড়াও আরো অনেক প্রখ্যাত মুফাস্সীরগণ যথা-

★ তাফসীরে কাশশাফের গ্রন্থকার তাঁর কিতাবের ১ম খন্ডের ৫২৩ পৃষ্ঠায়,
★ তাফসীরে বাইজাবীর গ্রন্থকার আল্লামা কাজী বাইজাবী ৩০৮ পৃষ্ঠায়
★ রুহুল মা’আনীর গ্রন্থকার ৯ম খন্ডের ১৫১ পৃষ্ঠায় এবং
★ আবুস সাউদ ৪র্থ খন্ডের ৫০৩ পৃষ্ঠায় একথঅ উল্লেখ করেছেন যে ,

উক্ত আয়াত নামায সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে অর্থাৎ আয়াতের মাঝে فاستمعوا له (কান পেতে শ্রবণ করা) এবং وانصتوا (নীরব থাক) এ হুকুম মুক্তাদীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যে, ইমামের পিছনে সে কিছুই পাঠ করবে না।

আলোচ্য আয়াতের এ সকল নির্ভরযোগ্য তাফসীরের দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে , জাহরী বা সিররী কোন নামাযেই মুক্তাদী ইমামের পিছনে কিরাত পাঠ করবে না।


♦♦হাদীসের আলোকে ইমামের পিছনে মুক্তাদরি ফাতিহা না পড়া♦♦


১ নং হাদীস:



মুসলিম শরীফের ১ম খন্ডের ১৭৮ নং পৃষ্ঠায় হযরত আবূ মূসা আশ’আরী (রা.) থেকে বর্ণিত:-

 তিনি বলেন, অর্থাৎ একদা রাসূল (সা.) আমাদেরকে ওয়াজ করেন। তখন তিনি আমাদেরকে সুন্নত শিকষা দিলেন। এবং নামাযের পদ্ধতি বর্ণনা করে বললেন, যখন তোমরা নামাযে দাড়াবে তখন কাতার ঠিক করে নিবে । এরপর তোমাদেরই একজন ইমাম হবে। আর সে (ইমাম) যখন তাকবীর বলবে। তোমরাও তখন কাতবীর বলবে। তবে সে যখন কেরাত পড়বে তোমরা তখন নীরব থাকবে।

★ইমাম মুসলিম (র.) তাঁর কিতাব “সহীহ মুসলিমে” হাদীসটির মানদন্ড উল্লেখকরে বলেছেন هو عندي صحيح এটি আমার নিকট বিশুদ্ধতম হাদীস।

★এছাড়াও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র.) এবং ইমাম তবারী (র.) একে সহীহ (বিশুদ্ধ হাদীস) বলেছেন।

★ইমাম তবারী তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ তাফসীরে তবারীর ৯ম খন্ডের ১১২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন।

وقد صح الخبر عن رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم من قولہ اذا قرا فانصتوا۔

অর্থাৎ রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত হাদীস اذا قرا فانصتوا (যখন ইমাম কিরাত পড়বে তখন তোমরা চুপ থাকবে) এটা সহীহ বা বিশুদ্ধ।

★ ★ লা-মাযহাবীদের পক্ষ থেকে উক্ত হাদীসের উপর প্রশ্ন ও তার জবাব:

প্রিয় পাঠক! বর্ণিত হাদীসটি লা-মাযহাবী ভাইদের (তথাকথিত আহলে হাদীস সম্প্রদায়ের) বিপক্ষে যাওয়ায় এ দলীলটি খন্ডন করার উদ্দেশ্যে তারা এর উপর প্রশ্ন উত্থাপন করে থাকেন যে,

উক্ত হাদীসের সনদে বা বর্ণনাসূত্রে রয়েছেন ক্বাতাদার ছাত্র “সুলাইমান তাইমী।”
আর একমাত্র তিনিই হাদীসের এ অংশটি اذا قرا فانصتوا (ইমাম যখন কিরাত পড়ে তখন তোমরা চুপ থাক) বর্ণনা করেছেন। অন্য কারো হাদীসে এই অতিরিক্ত অংশটি পাওয়া যায় না। এতএব এ বর্ধিত অংশটি গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং এর দ্বারা দলীল পেশ করাও ঠিক নয়।

প্রথমেই বলা দরকার যে, আপনাদের প্রশ্ন ‘ক¦তাদার ছাত্র “সুলাইমান তাইমী” ছাড়া হাদীসের এই অংশ। اذا قرا فانصتوا (ইমাম যখন কিরাত পড়ে তোমরা তখন নীরব থাক) অন্য কোন হাদীসের পাওয়া যায় না। এ কথাই সম্পূর্ণ গলত ও ভ্রান্ত। কারণ:-

★ ইমাম আবু ‘আওয়ানাহ তার গ্রন্থ সহীহ আবি আওয়ানায় উক্ত হাদীসটি এই বর্ধিত অংশ اذا قرا فانصتوا সহ বর্ণনা করেছেন। উক্ত হাদীসের সনদে রয়েছে কাতাদারই অন্য এক ছাত্র আবু উবাইদাহ।

পাঠকদের অবগতির জন্য সহিহ আবি আওয়ানায় বর্ণিত হাদীসটি নিয়ে হুবহু সনদসহ পেশ করা হল।

★ এই হাদীসটি সহী আবি আওয়ানায় বর্ণিত অংশ তথা اذا قرا فانصتوا (যখন ইমাম কিরাত পড়ে তোমরা তখন চুপ থাক) সহ হাদীসটি
** ওমর ইবনুল আমের এবং
** সাঈদ ইবনে আবী আরুবাহ বর্ণনা করেছেন।
★ তাছাড়া এহাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকেও সহীহ ও বিশুদ্ধ সুত্রে বর্ণিত আছে। মুসলিম, আবু দাউদ,নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ প্রমুখ হাদীসটি উল্লেখ করেছে।

সুতরাং এসকল সহীহ গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণিত থাকায় প্রমাণিত হল যে, আমাদের পেশকৃত হাদীসের বর্ধিত অংশ اذا قرا فانصتوا সম্পূর্ণ সহীহ।

★ আর আপনাদের কথা অনুযায়ী যদি মেনেও নেয়া হয় যে, “সুলাইমান তাইমী”শুধু একই এ হাদীসে اذا قرا فانصتوا অংশটি উল্লেখ করেছেন অন্য কেউই করেননি। তবুও কোন সমস্যা নেই। কারণ “সুলাইমান তাইমী’ তো সর্বসম্মতিক্রমে একজন নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী।
আর মুহাদ্দীসগণের স্বীকৃত মূলনীতি হচেছ যে, হাদীসের মাঝে কোন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর অতিরিক্ত বর্ণনা বা বর্ধিত অংশ গ্রহনযোগ্য। যেমন যুগ শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দীস আল্লামা খতীব বাগদাদী রহ. বলেন,

قال الجمھور من الفقھاء واصحاب الحدیث زیادۃ الثقۃ مقبولۃ اذا انفردبھا

অর্থাৎ ফুক্বাহা ও মুহাদ্দীসিনদের নিকট (নিয়ম হচ্ছে যে,) কোন নির্ভরযোগ্য রাবী যদি একাকী হাদীসের কোন অতিরিক্ত অংশ বর্ণনা করেন(এবং অন্য কেহই ঐ অংশটি বর্ণনা না করেন) তবুও তার এই বর্ধিত অংশ গ্রহণযোগ্য।

সুতরাং সুলাইমান তাইমীর (র.) হাদীসের মাঝে অতিরিক্ত বর্ণনা যে, “ইমাম যখন কিরাত পড়ে তোমরা তখন নীরব থাক,” নি:সন্দেহে বিশুদ্ধ। এবং এ হাদীস দিয়ে দলীল দেওয়াও যথোপযুক্ত।



২নং হাদীস:



★ হযরত যাবের (র.) থেকে বর্ণিত,

عن جابر رضی اللہ عنہ قال قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم: من کان لہ امام فقراءۃ الامام لہ قراءۃ-

অর্থাৎ হযরত যাবের (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (সা:) বলেন, “যে ব্যক্তির ইমাম রয়েছে(অর্থাৎ যে ইমামের পিছনে নামায পড়বে) তার ইমামের কিরাতই তার কিরাতের জন্য যথেষ্ট হবে।
এ হাদীসটি সম্পূর্ণ সহীহ এবং আমাদের মাসআলায় সর্বাধিক সুস্পষ্ট। হাদীসটির মাঝে একটি মূলনীতি বলে দেয়া হয়েছে যে, নামায (জিহরী) বা সরব হোক অথবা (সীররী) নীরব হোক সর্বাবস্থায় ইমামের কিরাতই মুক্তাদীর কিরাতের জন্য যথেষ্ট। সুতরাং মুক্তাদীর কিরাত পড়ার কোন প্রয়োজন নেই।

হাদীসটি বিভিন্ন সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে এবং সনদের প্রত্যেক বর্ণনাকারীই অত্যান্ত নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত।

★ আলোচ্য হাদীস সম্পর্কে শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানীর উক্তি:
নাছীরুদ্দিন আলবানী (র.) তাঁর রচিত গ্রন্থ “নবী (সা:) এর সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি এর ৮৫ পৃষ্ঠায় আলোচ্য হাদীসটি من کان لہ امام فقراءۃ الامام لہ قراءۃ- উল্লেখ করে এর মানদন্ড ও বিশুদ্ধতা সম্পর্কে ্উক্ত পৃষ্ঠার ১ নং টীকায় লিখেছেন-

“শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ একে শক্তিশালী বলেছেন। ইবনু আবী শাইবাহ (১/৯৭/১) দ্বারাকুত্বনী, এবনু মাজাহ, ত্বাহাবী ও আহমদ একে মুসনাদ ও মুরসালভাবে অনেকসুত্রে(সনদে) বর্ণনা করেছেন।



৩নং হাদীস:



★ অপর হাদিসে বর্নিত আছে:-

عن جابر (رض) عن النبی سلی اللہ علیہ و سلم قال من سلی رکعۃ لم یقرا فیھا بام القرآن فلم یسل الا ان یکون وراء الامام-

অর্থাৎ হযরত যাবের (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি নামাযের এক রাকাত আদায় করে ফেলল অথচ সূরা ফাতিহা পড়ল না সে যেন নামাযই পড়ল না। তবে ইমামের পিছনে থাকলে ফাতিহা পড়বে না।

★ হাদীসটিকে ইমাম তিরমীযী (র.) সহীহ এবং হাসান বলেছেন।
★ ইমাম ত্বহাবী (র.) ও হাদীসটি সহীহ, সনদে তাঁর রচিত কিতাব “শরহু মাআনীল আছারে’ উল্লেখ করেছেন। এহাদীস থেকেও সুস্পষ্ট বুঝা গেল যে, ইমামের পিছনে মুক্তাদী ফাতিহা পাঠ করবে না।



৪নং হাদীস:



★ অপর হাদিসে আছে:-

عن عبد اللہ بن بحینۃ عن النبی صلی اللہ علیہ وسلم قال ھل قرا احدمنکم معی انفا قالوا نعم قال انی اقول مالی انازغ القرآن فانتھی الناس عن القراءٹ معہ حین قال ذلک۔

অর্থাৎ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুহাইনা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (সা.) বলেন, তোমাদের মদ্যে কেই কি এই মাত্র আমার সাথে কিরাত পড়েছে? তাঁরা বললেন হ্যাঁ, তখন রাসূল (সা.) বললেন, তাই তোম আমি ভবলা, কি ব্যাপার কিরাত নিয়ে আমার সাথে ঝগড়া করা হচ্ছে কেন? একথা রাসূল (সা.) যখন বললেন তখন থেকেই সাহাবায়ে কেরাম তাঁর (রাসূল সা.) এর সাথে কিরাত পড়া থেকে বিরত রইলেন।

★ উক্ত হাদীসে জেহরী বা সরব নামাযের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়নি। এবং লক্ষণীয় বিষয় হল যে, রাসূলের (সা.) এই কথা শ্রবণের পর থেকেই সাহাবায়ে কেরাম সকল নামাযেই ইমামের পিছনে ক্বিরাত পড়া থেকে বিরত রইলেন।



৫নং হাদীস:


★ আরো বর্নিত আছে:-

عن ابی ھریرۃ (رض) ان رسول اللہ صلی اللہ علیہ و سلم قال من ادرک رکعۃ من الصلوۃ فقد ادرکھا قبل ان یقیم الامام صلبہ۔

অর্থাৎ হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ইমাম সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পূর্বেই যে ব্যক্তি নামাযের একটি রুকু পেল সে পূর্ণ ঐ রাকাতটিই পেল।

★ এ হাদীস সম্পূর্ণ সহীহ। যার দ্বারা সুস্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে যে, ব্যক্তি ইমামকে রুকু অবস্থায় পেয়ে যাবে সে ঐ রাকাতটিই পূর্ণরূপে পেয়ে যাবে। অর্থাৎ তার ঐ রাকাতটি হয়ে যাবে।
আর একথা অস্পষ্ট নয় যে, ইমাম সূরা ফাতিহা পড়ার পরই রুকুতে গিয়েছেন। অথচ মুক্তাদী ঐমুহুর্তে সূরা ফাতিহা না পড়েই ইমামের সাথে রুকুতে শরীক হয়েছেন। এতদসত্যেও রাসূল (সা.) বলছেন যে, তার ঐ রাকাত হয়ে যাবে। এথেকেই সুস্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়া ফরজ নয়। যদি তাই হত তাহলে ঐ ব্যক্তির এই রাকাতটি আদায় হত না।



★ আবু হুরাইরা (রঃ) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, “ইমাম বানানো হয় তাঁর অনুসরণ করার জন্য।অতএব, সে যখন তাকবীর বলবে, তোমরাও তাকবীর বলবে।যখন সে তিলাওয়াত করবে, চুপ থাকবে এবং যখন সে ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদা’ বলবে, তখন তোমরা বলবে ‘রব্বানা লাকাল হামদ্’। ”

(আবু দাঊদ ৯৬ : ১ ; নাসাঈ শরীফ ৪৬)



৬নং হাদীস:


 হযরত আবূ বাকরা (রা.) থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত বুখারীর অন্য একটি হাদীস থেকে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হবে,

عن ابی بکرۃ رض انہ انتھی الی النبی صلی اللہ علیہ و سلم وھو راکع فرکع قبل ان یصل الی الصف فذکر ذلک للنبی صلی اللہ علیہ و سلم فقال زادک اللہ حرصا ولا تعد۔

অর্থাৎ হযরত আবূ বাকরা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, তিনি একদা রাসূল (সা.) এর নিকট গমন করলেন। (অন্য বর্ণনায় , তিনি মসজিদে প্রবেশ করলেন। ) তখন রাসূল (সা.) কে রুকু অবস্থায় পেয়ে নামাযের কাতারে পৌছার পূর্বৈই তিনি (নিজ স্থানে) রুকুতে চলে গেলেন। (নামায শেষে) রাসূল (সা.) বলা হলে তিনি বললেন, “আল্লাহ তা’আলা (নামাযের প্রতি) তোমার আগ্রহ আরো বৃদ্ধি করুন , তবে পুনরায় এরূপ করবে না। (অর্থাৎ কাতারে শামীল না হয়ে একাকী আলাদাভাবে নামাযে দাঁড়াবে না।”)
{বুখারী খন্ড-১পৃ.১০৮, সুনানে কুবরা খন্ড-১ পৃ. ৯০)


★ এ হাদীস থেকে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেল যে, হযরত আবূ বাকরা (রা.) সূরা ফাতিহা না পড়েই রুকুতে চবলে গেলেন। অতছ তাঁর ঐ রাকাতও আদায় হয়ে গেল। এবং রাসূল (সা.) তার নামাযকে পরিপূর্ণ এবং সহীহ সাব্যস্ত করলেন। উক্ত নামায পুনরায় পড়ে নেওয়ারও নির্দেশ দিলেন না। যদি মুক্তদীর উপর সূরা ফাতিহা পড়া ফরজই হত তাহলে আবূ বাকরা (রা.) এর নামায কিভাবে সহীহ হল? আর কেনইবা রাসূল (সা.) তাঁকে নামায পুনরায় আদায় করার নির্দেশ প্রদান করলেন না? বুঝা গেকল, সূরা ফাতিহা পড়া মুক্তাদীর উপর অত্যাবশ্যক বা ফরজ নয়।


৭ম হাদিস :-

আবু সাঈদ আল খুদরী বর্ণনা করেন, “রসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন।তিনি আমাদেরকে নিয়মকানুন স্পষ্ট করে বলে দিলেন এবং আমাদেরকে নামায পড়া শিক্ষা দিলেন আর নির্দেশ দিলেন, তোমরা যখন নামায পড়বে, তোমাদের কাতারগুলো ঠিক করে নিবে।অতঃপর তোমাদের কেউ তোমাদের ইমামতি করবে।সে যখন তাকবীর বলবে, তোমরাও তাকবীর বলবে।সে যখন তিলাওয়াত করবে, চুপ করে থাকবে।সে যখন ‘গইরিল মাগদুবি আ’লাইহিম ওয়ালাদদল্লীন’ বলবে, তোমরা তখন ‘আমীন’ বলবে।আল্লাহ তোমাদের ডাকে সাড়া দিবেন। ”

(সহীহ মুসলিম শরীফ ১৭৪ : ১)



হাদীস নং ৮:


★ ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) মুয়াত্তা শরীফে ইমাম আবূ হানীফা থেকে,
★ তিনি মূসা ইবনে আবি আয়িশা থেকে,
★ তিনি আবদুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ থেকে,
★ তিনি জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাদ্বি.) থেকে বর্ণনা করেন:

اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ كَانَ لَهَ اِمَامٌ فَقِرَاءَةُ الْاِمَامِ لَهُ قِرَأءَة قَالَ مُحَمَّدَبْنِ مَنِيْعٍ وَاِبْنُ الْهُمَامِ هَذَا الْاِسْنَادُ صَحِيْحٌ عَلى شَرْطِ الشّيْخَيْنِ

“অর্থাৎ নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন- যার ইমাম আছে সে ইমামের ক্বিরাআত হচ্ছে তার ক্বিরাআত। মুহাম্মদ ইবনে মুনী ও ইমাম ইবনুল হুমাম বলেন- এ হাদীসের সনদ বিশুদ্ধ”।


(মুয়াত্তা মুহাম্মদ ৯৮; ই’লা’উস সুনান ৭০ : ৪)


৯ম নং হাদিস :-

“এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রসূলুল্লাহ (সঃ), প্রত্যেক নামাযে কি কোন কেরাত আছে?’ রসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ’।লোকদের মধ্যে থেকে কেউ একজন বলে উঠল, ‘(এটার অর্থ হল) এটি জরুরী।’ রসূলুল্লাহ (সঃ) বললেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছি, ইমামের কেরাত যথেষ্ট(মুক্তাদীর জন্য)।’ ”

(মজমা উজ জাওয়াইদ ১১০ : ২ )


১০ম নং হাদিস:-

ইমরান ইবনে হুসাইন (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে যোহরের নামায পড়াচ্ছিলেন তখন একজন তাঁর পিছনে ‘সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা’ তিলাওয়াত করছিল।নামায শেষে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কে আমার পিছনে সূরা ‘সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা’ পাঠ করেছ? এক ব্যক্তি বলল, আমি।তিনি বললেন, আমি অনুমান করেছি তোমাদের মধ্যে কেউ আমার কাছ থেকে (কুরআন) পাঠ ছিনিয়ে নিচ্ছ (আমার সাথে কুরআন পাঠে প্রতিযোগিতা করছ) ।”

(সহীহ মুসলিম শরীফ ১৭২ : ই’লা’উস সুনান ৫৬ : ৪)


১১নং হাদিস :-


আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রঃ) বর্ণনা করেন যে, সাহাবীগণ রসূলুল্লাহ (সঃ) এর পিছনে তিলাওয়াত করতেন, তখন রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, তোমরা আমাকে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতে দ্বন্দে বা বিভ্রান্তিতে ফেলে দাও।

(মজমা উয যাওয়াইদ ১ ১০ : ২; আল জাওহারুন নাকীহ ১৬২ : ১ )


১২নং হাদিস :-

আবু হুরাইরা (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একদা রসূলুল্লাহ (সঃ) উচ্চস্বরে কেরাত পাঠের মাধ্যমে নামায আদায়ের পর পিছনে ঘুরলেন (আমাদের দিকে)।তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘তোমাদের কেউ এখন আমার সাথে (নামাযের মধ্যে) কেরাত পাঠ করেছ কি?’জবাবে এক ব্যক্তি বললেন, ‘হ্যাঁ, আল্লাহর নবী (সঃ)।’তখন নবী করীম (সঃ) বলেন, ‘আমি অবাক হচ্ছিলাম(মনে মনে খুঁজছিলাম), আমার কি হল যে কোরআন পাঠের সময় আমার কষ্ট হচ্ছিল।’ ”

রসূলুল্লাহ (সঃ) হতে এরূপ শোনার পর লোকেরা উচ্চস্বরে কেরাত পঠিত নামাযে তাঁর পিছনে কেরাত পড়া হতে বিরত থাকেন।

(তিরমিযী ৭১ : ১; মালিক ৫১; নাসাঈ ১৪৬ : ১; আবু দাঊদ ১৪৬ : ১; ইবনে মাজাহ ৬১, বায়হাকী ১৫৭ : ২)


১৩নং হাদিস :-


হযরত ইবনে মাসঊদ (রঃ) সম্পর্কে আরও একটি হাদীস বর্ণনা করেন যে, ইবনে মাসঊদ (রঃ) নামায পড়তেছিলেন, তখন তিনি কিছু মানুষকে ইমামের পিছনে তিলাওয়াত করতে শুনলেন। শেষ (নামায) করার পর তিনি বললেন, “সে সময় কি এখনও আসেনি যাতে তোমরা বুঝতে পার? সে সময় কি এখনও আসেনি যাতে তোমরা বুঝতে পার যে - যখন কোরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাক যেভাবে আল্লাহ পাক তোমাদের আদেশ দিয়েছেন?”

(ইলাউস সুনান ৪৩ : ৪; তাবারী ৩৭৮ : ১১)


হাদিস নং ১৪


মুসলিম শরীফ, ‘বাবু সুজূদিত তিলাওয়াতি’-এ আতা বিন য়াসার থেকে বর্ণিতঃ

أَنَّهُ سَألَ زَيْدَ اِبْنَ ثَابِتٍ عَنِ الْقِرَاءَةِ مَعَ الْاِمَامِ فَقَالَ لَاقِرَاءَة مَعَ الْاِمَامِ فِي شَىْئٍ

তিনি যায়দ বিন ছাবিত-এর কাছে ইমামের সাথে কিরাআতের হুকুম সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। তিনি বললেন ইমামের সাথে কিছুতেই কিরাআত পড়া জায়েয নেই।


হাদিস নং ১৫


তাহাবী শরীফে হযরত আনাস (রাদ্বি.) হতে বর্ণিত :

قَالَ صَلَّى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ اَقْبَلَ بِوَجْهِه فَقَالَ اَتَقْرَءُوْنَ وَالْاِمَامُ يَقْرَأُ فَسَكَتُوْا فَسَألَهُمْ ثَلَاثًا فَقَالُوْا اِنَّا لَنَفْعَلُ قَالَ فَلَا تَفْعَلُوْا

হযরত আনাস (রাদ্বি.) বলেন- একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামায পড়ালেন। এরপর তিনি সাহাবায়ে কেরামের দিকে ফিরে বললেন, ইমামের ক্বিরাআতের সময় তোমরাও কি তিলাওয়াত করো? সাহাবায়ে কেরাম চুপ থাকলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ প্রশ্ন তিনবার করলেন। অতঃপর সাহাবায়ে কেরাম উত্তর দিল হ্যাঁ, আমরা তা করি। রাসূলে করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা  তা করো না। (অর্থাৎ তোমরা ইমামের পিছে তিলাওয়াত করবে না)


হাদিস নং ১৬

 ইমাম তাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ, যায়দ বিন সাবিত, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ, হযরত আলক্বামা, হযরত আলী মুরতাদ্বা, হযরত ওমর (রাদ্বি.) প্রমুখ সাহাবায়ে কেরাম থেকে পরিপূর্ণ সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন যে, এ সমস্ত হযরাতে কেরাম ইমামের পিছে কিরাআতের সম্পূর্ণ বিরোধী। উনাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, যে ইমামের পিছে তিলাওয়াত করবে, তার মুখে আগুন দেয়া হবে। কেউ কেউ বলেন, তার মুখে পাথর। আবার অনেকে বলেন, তা স্বভাব বিরুদ্ধ। আর আমরা লেখার কলেবর বৃদ্ধির আশংকা না থাকলে ঐ সব রেওয়ায়াত এখানে উল্লেখ করতাম।



হাদিস নং ১৭

ইমাম মুহাম্মদ মুয়াত্তায়, আবদুর রাযযাক স্বীয় মুছান্নাফে হযরত ওমর (রাদ্বি.) থেকে বর্ণনা করেন-

قَالَ لَيْتَ فِىْ فَمِ الَّذِىْ يَقْرَأُ خَلْفَ الْاِمَامِ حَجرًا

যে ইমামের পিছে তিলাওয়াত করে তার মুখে পাথর হোক।

(আবদুর রাজ্জাক ১২৮ : ২)

হাদিস নং ১৮


মালিক নাফি (রঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রঃ) কে প্রশ্ন করা হত, ইমামের পিছনে কেউ কুরআন পঠ করিবে কি? তিনি বলিতেন, তোমাদের কেউ যখন ইমামের পিছনে নামায পড়ে তখন ইমামের কেরাতই তাহার জন্য যথেষ্ট। আর একা নামায পড়িলে অবশ্য কুরআন পাঠ করিবে (নিজে নিজে) ।বর্ণনাকারী বলেন যে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রঃ) নিজেও ইমামের পিছনে কুরআন পাঠ করিতেন না।

(মালিক মুয়াত্যা ৫১ ; ই’লা’উস সুনান ৭৬ : ৪)



হাদিস নং ১৯


উবায়দুল্লাহ ইবনে মুকসিম বর্ণনা করেন যে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উমর, যায়েদ ইবনে সাবিত এবং জাবির ইবনে আবদিল্লাহ (রঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন (এই বিষয়ে) ।তাঁরা বলেন যে, ইমামের পিছনে কোন সালাতেই কেউ তিলাওয়াত করবে না।

(আতারুস সুনান ১১৬ : ১ ; ই’লা’উস সুনান ৮১ : ৪ )


হাদিস নং ২০


আলকামাহ বর্ণনা করেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রঃ) বলেন, ইমামের পিছনে কেরাত পড়া লোকের মুখ মাটি (ইট বা পাথরের টুকরা) দিয়ে পূর্ণ করা হবে।

(আতারুস সুনান ১১৬ : ১ ; ই’লা’উস সুনান ৮১ : ৪ ; সুদাদ ৮৭ : ৪)


হাদিস নং ২১


আবু জামরাহ বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, ইমাম যখন আমার সামনে থাকবে তখন কি আমি তিলাওয়াত করব? তিনি উত্তর দিলেন, না।

(আতারুস সুনান ১১৬ : ১ ; ই’লা’উস সুনান ৮১ : ৪ ৯)


হাদিস নং ২২


ইবনে আব্বাস (রঃ) জানিয়েছেন যে (মত প্রকাশ করেছেন) ইমামের কেরাত তোমাদের জন্য যথেষ্ট, সেখানে ইমাম নীরবে পড়ুক অথবা জোরে পড়ুক।

(দারুন কুতনী ৩৩১ : ১ ; ই’লা’উস সুনান ৮২ : ৪ )


হাদিস নং ২৩


মুসা ইবনে আকাবাহ জানিয়েছেন যে রসূলুল্লাহ (সঃ), হযরত আবু বকর, হযরত উমর এবং হযরত উসমান (রঃ) ইমামের পিছনে কেরাত পড়তে নিষেধ করতেন।

(উমদাতুল ক্বারী ৬৭ : ৩ ; ই’লা’উস সুনান ৮৪ : ৪)


হাদিস নং ২৪


মুসা ইবনে সা’দ ইবনে জায়েদ তাবিত তাঁর দাদা জান থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি (তাঁর দাদা জান)বলেন, যে ইমামের পিছনে কেরাত পড়ে তার জন্য কোন নামায নেই(তার নামায হল না)।

(মুয়াত্যা মুহাম্মদ ১০০ ; ই’লা’উস সুনান ৮৭ : ৪)


হাদিস নং ২৫


ইব্রাহীম নাখাঈ বলেন, “(ধর্মে) প্রথম সৃষ্টি নতুন বিষয় হল ইমামের পিছনে কেরাত পড়া। সাহাবারা ইমামের পিছনে কেরাত পড়তেন না। ”

(আল জাওহারুন নাকিহ ১৬৯ :৪)

ইব্রাহীম নাখাঈ বলেন, ইমামের পিছনে কেরাত পড়া প্রথম ব্যক্তি একজন দোষী বা অভিযুক্ত (বেদাত সৃষ্টিকারী) ।

(মুয়াত্যা মুহাম্মদ ১০০ ; ই’লা’উস সুনান ৮৯ : ৪)

মুহাম্মদ ইবনে সিরীন আমাদের বলেনঃ

“সুন্নাহের আলোকে ইমামের পিছনে কেরাত পড়াকে আমি অনুমোদন করি না ।”

(ইবরি আবি শাইবাহ ৩৭৭ : ১; ই’লা’উস সুনান ৯০ : ৪)


হাদিস নং ২৬

আবদুল্লাহ ইবনে যাইদ ইবনে ইসলাম তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ (সঃ) এর ১০ জন সাহাবী ইমামের পিছনে কেরাত পড়াকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।তারা হলেনঃ আবু বকর সিদ্দীক(রঃ), উমর ফারুক(রঃ), উসমান বিন আফফান(রঃ), আলী ইবনে আবি তালিব(রঃ), আবদুর রহমান ইবনে আউফ(রঃ), সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস(রঃ), আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রঃ), যাইদ ইবনে তাবিত(রঃ), আবদুল্লাহ ইবনে উমর(রঃ) এবং আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রঃ)।

(ক্বলায়দুল আযহার ৪২ : ২)


হাদিস নং ২৭


হযরত আলী (রঃ) বর্ণনা করেন, “যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে তিলাওয়াত করল, তার নামায শুদ্ধ হল না। ”

অন্য একটি হাদীসে তিনি বলেন, “সে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেল। ”

(আল জাওহারুন নাকিহ ২১৮ : ২, ইবনে আবি শাইবাহ ৩৭৬ : ১)


হাদিস নং ২৮


সা’দ (রঃ) বলেন, “I would like a burning ember (জ্বলন্ত কয়লা) to be in the mouth of the one who recites behind the Imaam.”

(আবদুর রাজ্জাক ১৩৮ : ২ ; ইবনে আবি শাইবাহ ৩৭৬ : ২)


হুযুরে পাক (সঃ) এর এরকম মহান ও মর্যাদাপূর্ণ সাহাবীগণ যারা স্কলারও ছিলেন, আবু বকর (রঃ), উমর (রঃ), উসমান (রঃ), আলী (রঃ), আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রঃ), যাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রঃ), আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রঃ), আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রঃ), সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রঃ), আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রঃ) এবং বড় বড় তাবেঈন যেমন মুহাম্মদ ইবনে সিরীন (রহঃ), ইবরাহীম ইবনে নাখাঈ (রহঃ), আওযায়ী (রহঃ) ইত্যাদি – সমস্ত বুযুর্গরা একই মত প্রকাশ করেছেন।

“ইমামের পিছনে মুক্তাদীর জন্য কোন কেরাত নেই।



♦♦নামাযে মুক্তাদীগণের সূরা ফতিহা পাঠ সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্য ও আমল♦♦


★ আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী র. তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীতে” প্রায় ৮০ জন সাহাবার আমল ও বক্তব্যের কথা উল্লেখ করেছেন যাদের কেউই ইমামের পিছনে সূরা ফাতেহা পড়ার পক্ষপাতি ছিলেন না।

তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনের কথা উল্লেখ করা হল:-


১. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের রা. ভাষ্য:

عن ابی وائل قال جاء رجل الی ابن مسعود (رض) فقال اقرا خلف الامام، قال انصت للقرآن فان فی الصلوۃ شغلا و سیکفیک ذلک الامام۔

অর্থাৎ হযরত আবু ওয়াযেল থেকে বর্ণিত যে, জনৈক ব্যক্তি ইবনে মাসউদ রা. এর নিকট এসে বলল আমি কি ইমামের পিছনে ক্বিারাত পড়বে? ইবনে মাসউদ রা. বললেন তুমি কুরআনেরন সম্মানে চুপ থাক। কেননা, নামাযে রয়েছে বিশেষ কাজ। (অর্থাৎ কুরআন শ্রবণ করা) আর তোমার জন্য উক্ত ইমামের ক্বিরাতই যথেষ্ট।
★আল্লামাহ হাইছামী র. বলেন, হাদীসটি ইমাম তবরানী র. কাবীর ও আওছাতে বর্ণনা করেছেন। এবং এর সমস্ত বর্ণনা কারী নির্ভরযোগ্য।


২. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. এর বক্তব্য:

مالک عن نافع ان عبد اللہ بن عمر (رض) کان اذا سئل ھل یقرءاحد خلف المام قال اذا صلی احدکم خلف الامام فحسبہ قراءۃ الامام و اذا صلی وحدہ فلیقرء قال وکان عبد اللہ بن عمر لا یقرا خلف الامام

অর্থাৎ ইমাম নাফে থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. কে যদি জিজ্ঞাসা করা হত যে, ইমামের পিছনে কি কেউ ক্বিরাত পড়বে? তাহলে তিনি বলতেন: তোমাদের মধেক্য যখন কেউ ইমামের পিছনে নামায আদাকয় করবে তখন ইমামের ক্বিরাতই তার জন্য যথেষ্ট । আর যদি কেউ একাকী নামায আদায় করে তাহলে সে যেন ক্বিরাত পড়ে। (নাফে বলেন) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) ইমামের পিছনে ক্বিরাত পড়তেন না।


৩. মুহাম্মদ ইবনে আজলান বলেন:

قال علی (رض) من قرا مع الامام فلیس علی الفطرۃ

অর্থাৎ হযরত আলী (রা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমামের সাথে সাথে ক্বিরাত পড়ে সে পৃকৃত স্বভাব বিরোধী কাজ করে।


৪. আতা ইবন ইয়াসার:

وعن عطاء بن یسار انہ سئل زید بن ثابت (رض( عن القراءۃ مع الامام فقال: لا قراءۃ مع الامام فی شئ(روہ مسلم فی باب سجود التلاوۃ)

অর্থাৎ আতা ইবন ইয়াসার থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত যায়দ ইবনে ছাবেত (রা.) কে জিজ্ঞেস করেছিলেন ইমামের সঙ্গে কেরাত পড়া সম্পর্কে। উত্তরে তিনি বলেছেন- ইমামের সঙ্গে কোন রকম কেরাত পড়া যাবে না।
(সহীহ মুসলিম শরীফ ২১৫ : ১)
তাহাবী শরীফে বিশুদ্ধ সূত্রে হযরত ইবন উমর ও জাবির (রা.) থেকেও অনুরূপ ফতওয়া উল্লেখ করা হয়েছে। (দ্র. আসারূস সুনান, পৃ.১১৬)


৫. আবূ জামরা বলেন:

عن ابی جمرۃ: قلت لابن عباس اقرا والامام بین یدی فقال: لا (رواہ الطحاوی)

অর্থাৎ আবূ জামরা বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (রা.) কে জিজ্ঞেস করলাম, ইমাম যখন আমার সামনে থাকবেন তখন কি আমি কেরাত পড়ব? তিনি বললেন, না। (তাহাবী শরীফ)
হাদীসটির সনদ হাসান। ( আসারুস সূনান, পৃ:১১৬)


♦♦৭০ জন বদরী সাহাবার আমল:♦♦


قال الشعبی ادرکت سبعین بدریا کلھم یمنعون المقتدی عن القراۃ خلف الامام۔

অর্থাৎ ইমমি শাবী (র.) বলেন আমি ৭০ জন বদরী সাহাবী পেয়েছি। তাঁদের প্রত্যেকেই মুক্তাদীকে ইমামের পিছনে ক্বিরাত পড়া থেকে বাঁধা প্রদান করতেন।

সুতরাং , ৭০ জন বদরী সাহাবী ও উল্লিখিত বিশিষ্ট সাহাবাগণের আমল এবং বক্তব্য থেকে একথা সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, সাহাবায়ে কিরাম ও ইমামের পিছনে ক্বিরাত না পড়ার প্রবক্তা ছিলেন।



♦♦তাবেঈগণের আমল♦♦


১. হযরত আলক্বামা ইবনে ক্বায়সের আমল:

عن ابراھیم قال ما قرا علقمۃ بن قیس قط فیما یجھر فیہ ولا فیما لا یجھر فیہ ولا فی الرکعتین الاولیین ولا فی الاخرتین ام القرآن و لا غیرھا خلف الامام۔

অর্থাৎ হযরত ইব্রাহীম নাখাঈ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-হযরত আলক্বামা ইবনে কায়স কখনো ইমামের পিছনে ক্বিরাত পড়তেন না। জেহরী(সরব) নামাযেও না এবং সিররী (নীরব) নামাযেও না। প্রথম দুই রাকাতেও না শেষের দুই রাকাতেও না। সূরা ফাতেহাও না বা অন্য কোন সূরাও না।
হাদীসটির সনদ খুব মযবুত।


২. আসওয়াদ ইবনে ইয়াজিদের সতর্কবাণী:

عن الاسود قال وددت ان الذی یقرا خلف الامام ملی فاہ ترابا۔

অর্থাৎ হযরত আসওয়াদ থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন আমার ইচ্ছে হয় যে, যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে ক্বিারআত পড়ে তার মুখ মাটিতে পূর্ণ হয়ে যাক।

আল্লামা ওসমানী লিখেন যে, এ হাদীসের সনদ সহীহ। এর সনদে উল্লিখিত রাবীগণ থেকে অনেক মুহাদ্দিস হাদীস বর্ণনা করেছেন। এছাড়াও আনো অনেক তাবেঈনদের কথা সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে যারা ইমামের পিছনে ক্বিরআত পড়তেন না। উল্লিখিত তাবেঈনের আমল দ্বারাও সুস্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, তাঁদের আমল ও মাযহাব ছিল ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা না পড়া।


★ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের উক্তি :-

আল্লামা ইবনে কুদামা মুগনী গ্রন্থে ১ম খন্ডের ৬০২ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন:

قال احمد: ما سمعنا احدا من اھل الاسلام یقول ان الامام اذا جھر بالقراءۃ لا تجزی صلوۃ من خلفہ اذا لم یقرء۔ وقال ھذا النبی صلی اللہ علیہ و سلم و اصحابہ و التابعون، وھذا مالک فی اھل الحجاز و ھذا الثوری فی اھل العراق وھذا الاوزاعی فی اھل الشام وھذا الیث فی اھل مصر ماقالوا الرجل صلی خلف الامام قرء امامہ و لم یقراھو صلوتہ باطلۃ۔

অর্থাৎ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বাল (র.) বলেন- আমরা আহলে ইসলাম তথা মুসলমানদের কাউকেই বলতে শুনিনি যে, ইমাম উচ্চস্বরে ক্বিরাত পড়ল অথচ তার পিছনে মুক্তাদীগণ ক্বিারাত না পড়ার কারণে তাদের নামায যথেষ্ট হল না। তিনি আরো বলেন যে,এই তো নবী, (সা.) তাঁর সাহাবী ও তাবেঈগণ, হিজাজের অধিবাসী ইমাম মালেক (র.) ইরাকে ইমাম সাউরী, (র.) শামে ইমাম আওয়াজাঈ (র.) মিশরে ইমাম লাইস (র.) তাঁরা কেউ একথা বলেননি ওয, কোন ব্যক্তি ইমামের পিছনে নামায পড়ল আর ইমাম ক্বিারআত পড়ল কিন্তু সে কেরাত পড়ল না তাহলে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে।



★ জাবীর (রঃ) বর্ণনা করেন, “যার কোন ইমাম আছে, তার জন্য তার ইমামের কেরাতই যথেষ্ট।”

(আল জাওহারুন নিকাহ ১৫৯ : ২, ই’লা’উস সুনান ৬১ : ৪, ইবনে আবি শাইবাহ ৩৭৭ : ১)

ইমাম মুহাম্মদের কাছ থেকেও শব্দের কিছু ভিন্নতার মাধ্যমে এই হাদীসটির বর্ণনা পাওয়া যায়।

★ রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “কেউ ইমামের পিছনে নামায পড়লে ইমামের কেরাতই তার কেরাত (অর্থাৎ তার জন্য এটিই যথেষ্ট)।”

(উমদাতুল ক্বারী ১২ : ৩, মুয়াত্তা মুহাম্মদ ৯৬, ই’লা’উস সুনান ৬১ : ৪)



♦♦ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠের সপক্ষে♦♦

মাযহাববিরোধীদের দলীল ও তার জবাব

১নং হাদীস ও তার জবাব:

وعن عطاء بن یسار انہ سئل زید بن ثابت (رض( عن القراءۃ مع الامام فقال: لا قراءۃ مع الامام فی شئ(روہ مسلم فی باب سجود التلاوۃ)

অর্থাৎ হযরত উবাদা ইবনে সামেত থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা ফাতেহা পড়ল না তার নামাযই হল না। (বুখারী , মুসলিম) এবং মুসলিমের এক বর্ণনায় রয়েছে“যে ব্যক্তি উম্মুল কুরআন (ফাতিহা) পড়ল না।

তাদের পেশকৃত এ হাদীসটি নি:সন্দেহে সহীহ হাদীস এবং বুখারী ও মুসলিম উত্যাদি গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে।
কিন্তু কুরআনের সুস্পষ্ট আয়াত ও অন্নান্য একাধিক সহীহ । হাদীসের আলোকে প্রতিয়মান হয় যে, উক্ত হাদীসটি শুধু একাকী নামায আদায়কারী (মুনফারিদ) এবং ইমামের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। মুক্তাদীর ক্ষেত্রে কখনো প্রযোজ্য নয়।


★ আমরা আমাদের এ ব্যাখ্যার সমর্থন পাই ইমাম তিরমিযী (র.) এর বর্ণনা থেকে।
তিনি সুনানে তিরমিযীর ১ম খন্ডের ৭১ পৃষ্ঠায় ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের একটি বর্ণনা উল্লেখ করেন.

واما اھمد بن حنبل فقال معنی قول النبی صلی اللہ علیہ و سلم لا صلوۃ لمن لم یقرء بفاتحۃ الکتاب اذا کان وحدہ واحتج بحدیث جابر بن عبد اللہ (رض) حیث قال من صلی رکعۃ لم یقرء فیھا بام القراًن فلم یصل الا ان یکون وراء الامام۔ قال احمد فھذا رجل من اصحاب النبی سلی اللہ علیہ وسلم تاول قول النبی سلی اللہ علیہ وسلم لا صلوۃ لمن لم یقرء بفاتحۃ الکتاب ان ھذا اذا کا وحدہ۔

অর্থাৎ ইমাম তিরমিযী বলেন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র.) বলেন: রাসূল (সা:) এর বার্ণী “যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করল নাতার নামায হবে না।” ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যে ব্যক্তি একাকী নামায আদয় করে।
তিনি (আহমদ) একথার সপক্ষে দলীল পেশ করেন হযরত যাবির (রা.) এর হাদীস দিয়ে যে, তিনি বলেছেন যে ব্যক্তি এক রাকাত নামায আদায় করল অথচ সূরা ফাতিহা পড়ল না তার নামাযই হল না, হ্যা তবে ইমামের পিছনে থাকলে ফাতিহা পড়বে না।”
তিনি আরো বলেন যে, এই তো রাসূল (সা.) এর এক সাহাবী যিনি রাসূল (সা.) এর বাণী “ যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পড়ে না তার নামায হয় না” এর উদ্দেশ্য বুঝে নিলেন যে এটি একাকী নামায আদায়কারীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

★ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের এই বক্তব্য দ্বারাও স্পষ্ট হয়ে গেল যে,
হাদীসটি মুক্তাদীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় । সুতরাং এ হাদীস এবং এধরনের হাদীস সহীহ হলেও এর দ্বারা মুক্তাদীর উপর ফাতিহা পড়ার হুকুম সাব্যস্ত করা যায় না।


২. হাদীস ও তার জবাব:

عن عبادۃ بن الصامت (رض) قال صلی رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم الصبح فثقلت علیہ القراءۃ فلما انصرف قال انی اراکم تقرۃون وراء امامکم قال قلنا یا رسول اللہ ای وللہ قال لا تفعلوا الابام القرآن فانہ لاصلوۃ لمن لم یقرءبھا۔

অর্থাৎ হযরত উবাদা ইবনে ছামিত (রা.) থেকে বর্ণিত যে, একদা রাসূল (সা.) ফজরের নামায আদকয় করছিলেন। তখন আমাদের ক্বিরাআতের কারনে তার কিরাত পড়তে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। অতপর নামায শেষে আমাদেরকে বললেন সম্ভবত তোমরা তোমাদের ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পড়েছ? তিনি বলেন, আমরা বললাম হ্যাঁ ইয়া রাসূলাল্লাহ! (সা.) তখন তিনি বললেন: তোমরা এরূপ করবে না, তবে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে কেননা, যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করে না তার নামায হয় না।

★ উক্ত হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে সে ইমামের পিছনে মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে।
তবে হাদীসটি মোটেই সহীহ নয়। এটি সনদ ও মতন উভয় দিক থেকেই দোষ-ক্রুটি যুক্ত।
★  ইবনে তাইমিয়্যাসহ,
★ ইমাম আহমদ,
★ হাফেজ ইবনে আব্দুল বারী , এবং আরো বড় বড় মুহাদ্দিসীনে কেরাম হাদীসটিকে অতি দুর্বল সাব্যস্ত করেছেন।

★ এ হাদীস সম্পর্কে ইমাম ইবনে তাইমিয়্যার বক্তব্য দেখুন । তিনি তাঁর প্রন্থ “ফাতওয়া ইবনে তাইমিয়্যা” ২৩ তম খন্ডের ২৮৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ্য করেন-

وھذا الحدیث معلل عند ائمۃ الحدیث بامور کثیرۃ ضعفہ اھمد وغعرہ من الائمۃ وقد بسط الکلام علی ضعفہ فی غیر ھذا الموضع۔

অর্থাৎ হাদীস শাস্ত্রের ইমামগণের নিকট এ হাদীসটি বিভিন্ন কারণে এবং বিভিন্ন দিক থেকে দোষ-ক্রুটি য্ক্তু। ইমাম আহমদ সহ অন্যান্য ইমামগণ এটিকে দুর্বল (যয়িফ) সাব্যস্ত করেছেন। এহাদীসের দুর্বলতা ও অগ্রহনীয়তা সম্পর্কে অন্য স্থানে বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে।

৩নং হাদীস ও তার জবাব:

عن ابی ھریرۃ (رض) عن النبی صلی اللہ علیہ وسلم انہ قال من صلی صلوۃ لم یقرا فیھا بام القرآن فھی خداج ثلاثا غیر تمام فقیل لابی ھریرۃ (رض) انا نکون وراء الامام فقال اقرء بھا فی نفسک۔

অর্থাৎ হযরত আবূ হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেন, রাসূল(সা:) বলেছেন যে ব্যক্তি নামাযে সূরা ফাতিহা পড়ল না তার নামায অসম্পূর্ণ (একথা তিনি তিনবার বললেন। এর পর আব হুরাইরাকে বলা হল আমরা ইমামের পিছনে থাকলে কি করব? তিনি বললেন – তা মনে মনে পড়ে নিবে।
পাঠক! হাদীসটির প্রতি লক্ষ করুন। এ হাদীসে দুটি অংশ রয়েছে। প্রথম অংশে শুধু এতটুকু বর্ণিত হয়েছে যে,“ফাতিহা ছাড়া নামায পূর্ণ হয় না।”

এবং এতটুকুই হচ্ছে রাসূল (সা:) এর বাণী।

আর দ্বিতীয় যে অংশটি রয়েছে সেটি হচ্ছে আবূ হুরাইরা (রা.) এর ফতোয়া বা ইযতিহাদ। সুতরাং প্রথম অংশ, যা রাসূল (সা.)থেকে মারফু” হিসেবে বর্ণিত যে, ফাতিহা ছাড়া নাময হবে না, তা কুরআন ও অন্যান্য সহীহ হাদীসের আলোকে একাকী নামাযী ও ইমামের জন্য প্রযোজ্য।
আর দ্বিতীয় অংশটি যেহেতু আবু হুরাইরা (রা.) এর নিজস্ব ইজতিহাদ। তাই এটি (মুহাদ্দিসগণের মূলনীতির ভিত্তিতে) রাসূলের (সা.) অন্যান্য সরাসরী হুকুমের মোকাবেলায় দলীল রূপে সাব্যস্ত নয়। সুতরাং এ হাদীসটি দিয়েও দলীল পেশ করা সম্ভব নয়।


★শেষে  আহলে হাদিস দের গুরু ইবনে তাইমিয়্যা এর একটি উক্তি :

فالنزاع من الطرفین لکن الذین ینھون عن القراءۃ خلف الامام جمھور السلف و الخلف ومعھم الکتاب و السنہ الصحیحۃ

অর্থাৎ উভয় পক্ষেরই মতানৈক্য সৃষ্টি হয়েছে। তবে যারা বলেন যে, ইমামের পিছনে ক্বিরাত পড়া যাবে না তারা হলেন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ওলামায়ে কেরামগণের একটি বিরাট অংশ এবং সপক্ষে রয়েছে আল্লাহর কিতাব এবং সহীহ হাদীস সমূহ।





মাযহাবের তাকলিদ বা অনুসরন :-


সকল মাযহাবই সঠিক পথের অনুসারী এবং মানুষকে সঠিকভাবে পথ প্রদর্শন করে গেছেন:-

আল্লাহ তায়ালার কাছে ফুক্বাহাদের মর্যাদা
আল্লাহ তায়ালা কতটা মর্যাদা দিয়েছেন ফুক্বাহায়ে কিরামকে, হাদীস কুরআনের বিভিন্ন বর্ণনা দেখলেই তা আমাদের বুঝে আসে।

عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ فَأَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ فَأَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ

হযরত আমর বিন আস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-“যখন কোন বিশেষজ্ঞ হুকুম দেয়, আর তাতে সে ইজতিহাদ করে তারপর সেটা সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদ করে ভুল করে তাহলে তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব। {সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৬৯১৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৩৫৭৬, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৪৫৮৪}

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-

وَلَكِنَّ الْمُنافِقِينَ لا يَفْقَهُونَ} [المنافقون:7]

অর্থাৎ মুনাফিকরা ফক্বীহ হতে পারেনা। [সুরা মুনাফিকুন-৭]
সুতরাং ফক্বীহ কখনো মুনাফিক হতে পারেনা।

আর রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-একজন ফক্বীহ শয়তানের উপর একশত আবেদের চেয়ে’ বেশি কষ্টকর। [সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-২২২]

“সোজা রাস্তায় যারা চলবে তারা হবে সফলকাম। আর যারা বাকি আঁকাবাঁকা রাস্তায় চলবে তারা হবে ধ্বংস”। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১১}

আল্লামা ইমাম কুরতুবী রঃ তাফসীরে কুরতুবীতে লিখেন-

وقد مضى في "آل عمران" معنى قوله عليه السلام : "تفرقت بنو إسرائيل على اثنتين وسبعين فرقة وأن هذه الأمة ستفترق على ثلاث وسبعين" . الحديث. وقد قال بعض العلماء العارفين : هذه الفرقة التي زادت في فرق أمة محمد صلى الله عليه وسلم هم قوم يعادون العلماء ويبغضون الفقهاء ، ولم يكن ذلك قط في الأمم السالفة.( الجامع لأحكام القرآن
المؤلف : أبو عبد الله محمد بن أحمد بن أبي بكر بن فرح الأنصاري الخزرجي شمس الدين القرطبي (المتوفى : 671)

প্রথম উম্মতের মাঝে ইজতিহাদ ছিলনা। তাই ইজতিহাদের দুশমনও ছিলনা। এই উম্মতের মাঝে ইজতিহাদ আছে। তাই ইজতিহাদের দুশমনও আছে। আর এই উম্মতের অতিরিক্ত জাহান্নামী ফিরক্বা হল ইজতিহাদের দুশমন ফুক্বাহায়ে কিরামের দুশমন দল। {তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীর সূরাতুল আনআম}


আহলে হাদিস নেতা ইমাম তাইমিয়া এর মতে- ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ) সাধারন লোকদেরকে ইসহাক, আবু উবাইদা, আবু সাওর ও আবু মুসয়াব প্রমুখ ইমামের তাকলীদ করার নির্দেশ দিতেন। ইমাম আবু দাউদ, উসমান বিন সাইদ ইরাহীম আর হারবী,আবু বাকার আল-আসরম, আবু যরয়া, আবু হাতিম সিজিস্তানী, ইমাম মুসলিম প্রমুখ ছাত্রদেরকে তাকলীদের ব্যাপারে  বলতেন- তোমাদের জন্য শরীয়তের উৎস আকড়ে ধরাই ওয়াজিব।
( ফাতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া)

এখন বলুন শরীয়তের উতস কি? নিশ্চই কুরআন হাদিস। হাদিস কারা সংকলন করেছে? নিশ্চই তাবেয়ী তাবে-তাবেয়ীগন নাকি লা-মাযহাবীদের জন্য নাজিল হয়েছিল আলাদাভাবে? তাহলে কোনটা সঠিক হাদিস বুঝেছি কিভাবে? যারা সংকলন করেছে তারা বলেছে এটা উমুখ উমুখ বর্ননা করেছে এটা বিশ্বাসযোগ্য এটা সহীহ। আমরা তাদের কথামতই মেনে নিয়েছিলাম প্রথমে সহিহ কি দুর্বল কি আর জাল কি? আর আজ লা- মাযহাবী শয়তান গুলো তাদের থেকে শিখে গুরো কে চিনে না,বাহ!!!

হানাফী মাযহাব এর তাক্বলিদ সম্পর্কে বলি কেন এই মাযহাবের তাক্বলিদ করব :-

ভাই জাকির নায়েক কি ধারনা আবু হানিফা রহ. কুরআন ও হাদীস জানতেন না
বা কুরআন ও হাদীস বাদ দিয়ে বাইবেল ও গীতা থেকে মাসআলা বের করেছে !!!!!

1. ইমাম বোখারীর অন্যতম উস্তাদ মক্কী বিন ইব্রাহীম (রহ.) (মৃতু- 215 হিঃ) যার সনদে ইমাম বুখারী (রহ.) অধিকাংশ ‘সুলাসিয়্যাত হাদীস’ বর্ণনা করেছেন। এই মক্কী বিন ইব্রাহীম (রহ.) ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর ছাত্র। তিনি ইমাম আবু হানীফা (রহ.) সম্পর্কে বলেন,
“আবু হানীফা তাঁর সময়কালের শ্রেষ্ঠ আলেম ছিলেন” - মানাক্বেবে ইমাম আজম রহ. 1/95

আবার হাফিয মযযী (রহ.) বলেন: মক্কী বিন ইব্রাহীম ইমাম আবু হানীফা (রহ.) সম্পর্কে বলেন,
“তিনি তাঁর কালের সবচে’ বড় আলিম ছিলেন” – তাহ্যীবুত তাহযীব-এর টিকা- 10ম খন্ড, 452পৃ.

(এখানে একটি কথা বিশেষভাবে স্মরণ রাখতে হবে, প্রাচীন আলিমগণ ‘ইলম’ বলতে ‘ইলমে হাদীস’ই বুঝাতেন। তাই ইমাম আবু হানীফা (রহ.) কে বড় আলিম বলার অর্থ- ‘হাদীস শাস্ত্রের বড় আলিম’ এতে কোন সন্দেহ নেই।)

2. ইমাম আবু দাউদ বলেন,
নিঃসন্দেহে আবু হানীফা ছিলেন একজন শেষ্ঠ ইমাম।- তাহজীব 1/445

3. জরহে তাদিলের (সনদ পর্যালোচনা শাস্ত্র) অন্যতম ইমাম ইয়াহ্‌ইয়া ইবনে মুঈন (মৃতু- 233হিঃ) বলেন,
“আবু হানীফা ছিলেন হাদীস শাস্ত্রের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি”- তাহবীবুত্তাহজীব 5/630

4. আলী ইবনে মাদানী (মৃতু- 234 হিঃ) বলেন,
“আবু হানীফা হাদীস শাস্ত্রে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। তার মধ্যে কোন দোষক্রুটি ছিল না। - জামঈ বয়ানিল ইল্ম 2/1083

5. প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস হাফিজ ইয়াহ্ইয়া বিন হারুন (মৃতু- 206 হিঃ) বলেন,
“আবু হানীফা ছিলেন সমকালীন শ্রেষ্ঠতম জ্ঞানী ও সত্যবাদী” –আহবারে আবু হানীফা 36

6. আল্লামা হাফিয ইবনে হাজার আসক্বালানী রহ. বলেন-
“ইমাম আবু হানীফা রহ.-র মুত্যু সংবাদ শুনে ফিক্বাহ ও হাদীস শাস্ত্রের সুপ্রসিদ্ধ ইমাম, শাফঈ মাযহাবের প্রধানতম সংকলক হযরত ইবনে জরীহ রহ. গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছিলেন,
“আহ! ইলমের কি এক অফুরন্ত খনি আজ আমাদের হাতছাড়া হলো”। -


তাহযীবুত্তাহযীব খন্ড ১, পৃ: ৪৫০)

7: একবার হযরত ইয়াহয়া ইবনে মুঈনকে প্রশ্ন করা হলো- হাদীসশাস্ত্রে আবু হানীফা রহ. কি আস্থাভাজন ব্যক্তি? সম্ভবতঃ প্রচ্ছন্ন সংশয় আঁচ করতে পেরে দৃপ্তকন্ঠে তিনি উত্তর দিলেন- হ্যা, অবশ্যই তিনি আস্থাভাজন! অবশ্যই তিনি আস্থাভাজন! (মানাকিবুল ইমামমুল আ’যামি লিলমাওয়াফিক- খন্ড:1, পৃষ্ঠা 192)

দেখুন ওনারা কি কখনো হাদিসের বহির্ভুত জ্ঞান কাউকে প্রচার করতেন কিনা?
১- ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর নসিহত :

(ক) ‘যখন ছহীহ হাদীছ পাবে, জেনো সেটাই আমার মাযহাব’।(হাশিয়াহ ইবনে আবেদীন ১/৬৩।)
(খ) ‘আমরা কোথা থেকে গ্রহণ করেছি, তা না জেনে আমাদের কথা গ্রহণ করা কারো জন্য বৈধ নয়’।(ঐ ৬/২৯৩।)
(গ) ‘যে ব্যক্তি আমার দলীল জানে না, আমার কথা দ্বারা ফৎওয়া প্রদান করা তার জন্য হারাম’।(ড. অছিউল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আব্বাস, আত-তাক্বলীদ ওয়া হুকমুহু ফী যুইল কিতাব ওয়াস-সুন্নাহ, পৃঃ ২০।)
(ঘ) ‘নিশ্চয়ই আমরা মানুষ। আমরা আজকে যা বলি, আগামীকাল তা থেকে ফিরে আসি’।(ঐ।)
(ঙ) ‘তোমার জন্য আফসোস হে ইয়াকুব (আবু ইউসুফ)! তুমি আমার থেকে যা শোন তাই লিখে নিও না। কারণ আমি আজ যে মত প্রদান করি, কাল তা প্রত্যাখ্যান করি এবং কাল যে মত প্রদান করি, পরশু তা প্রত্যাখ্যান করি’।(ঐ।)
(চ) ‘আমি যদি আল্লাহর কিতাব (কুরআন) ও রাসূলুললাহ (ছাঃ)-এর কথার (হাদীছ) বিরোধী কোন কথা বলে থাকি, তাহ’লে আমার কথাকে ছুঁড়ে ফেলে দিও’।(ছালেহ ফুল্লানী, ইক্বাযু হিমাম, পৃঃ ৫০।)


২- ইমাম মালেক (রহঃ)-এর নসিহত :

(ক) ‘আমি একজন মানুষ মাত্র। আমি ভুল করি, আবার ঠিকও করি। অতএব আমার সিদ্ধান্তগুলো তোমরা যাচাই কর। যেগুলো কুরআন ও সুন্নাহর অনুকূলে হবে সেগুলো গ্রহণ কর। আর যেগুলো কুরআন ও সুন্নাহর প্রতিকূলে হবে তা প্রত্যাখ্যান কর’।(ইমাম ইবনু হাযম, আল-ইহকাম ফী উছূলিল আহকাম, ৬/১৪৯।)
(খ) ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পরে এমন কোন ব্যক্তি নেই, যার সকল কথাই গ্রহণীয় বা বর্জনীয়, একমাত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ব্যতীত’।(ঐ ৬/১৪৫।)


৩- ইমাম শাফেঈ (রহঃ)-এর নসিহত :

(ক) ‘যদি তোমরা আমার বইয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাহ বিরোধী কিছু পাও, তাহ’লে রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী বল এবং আমার কথাকে প্রত্যাখ্যান কর’। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা রাসূল (ছাঃ)-এর কথারই অনুসরণ কর এবং অন্য কারো কথার দিকে দৃকপাত কর না’।(ইমাম নববী, আল-মাজমূ, ১/৬৩।)
(খ) ‘আমি যেসব কথা বলেছি, তা যদি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছহীহ হাদীছের বিপরীত হয়, তবে রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছই অগ্রগণ্য। অতএব তোমরা আমার তাক্বলীদ কর না’।(ইবনু আবী হাতেম, পৃঃ ৯৩, সনদ ছহীহ।)
(গ) ‘রাসূলুললাহ (ছাঃ)-এর প্রত্যেকটি হাদীছই আমার কথা, যদিও আমার নিকট থেকে তোমরা তা না শুনে থাক’।(ঐ।)


৪- ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ)-এর নসিহত :

(ক) ‘তুমি আমার তাক্বলীদ কর না এবং তাক্বলীদ কর না মালেক, শাফেঈ, আওযাঈ ও ছাওরীর। বরং তাঁরা যে উৎস হ’তে গ্রহণ করেছেন, সেখান থেকে তোমরাও গ্রহণ কর’।(ইলামুল মুওয়াক্কি’ঈন, ২/৩০২।)
(খ) ‘যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হাদীছকে প্রত্যাখ্যান করল, সে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেল’।(মুকাদ্দামাতু ছিফাতি ছালাতিন নাবী (ছাঃ), পৃঃ ৪৬-৫৩।)

এইগুলো পড়ে কি মনে হচ্ছে যে তারা কুরআন সুন্নাহ বিরোধী মতামতকে গ্রহন করতে কখনো বলেছেন? নাকি দিয়েছেন?



ভারতবর্ষের গাইরে মুক্বাল্লিদ্ ও পৃথিবীর অন্যান্য গাইরে মুক্বাল্লিদ্দের মধ্যে যোগসূত্র নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোন থেকে নেয়া :-



১।



তৃতীয় শতাব্দীর শুরু লগ্নে ২০২ হিজরীতে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস দাউদে যাহেরীর জন্ম। তিনি শরীয়তের সকল পর্যায়ে কিয়াস বর্জন করে কেবল কুরআন-হাদীসের প্রত্যক্ষ ও যাহেরী অর্থের ভিত্তিতে চলার মতবাদ রচনা করেন। তাঁর মতে ক্বিয়াস শরীয়তের কোন দলীল হতে পারে না। যদিও এ ক্বিয়াস কোরআন-হাদীসের আলোকে এবং কোন বিষয়ে কুরআন-হাদীসের স্পষ্ট উক্তি না থাকা সত্ত্বেই হোক না কেন! এ জন্যই তাকে দাউদে যাহেরী বা “ প্রত্যক্ষদর্শী ” এবং তাঁর অনুসারীদেরকে যাহেরিয়া বলা হয়।



( মু’জামুল মুয়াল্লিফিন, উমর রেজাঃ পৃ-১/৭০০ জীবনী নং-৫২৪০ ও আল-আলম খাইরুদ্দীনঃ পৃ-২/৩৩৩ )


২।



চতুর্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ৩৮৪ হিজরীতে আল্লামা ইবনে হাযাম যাহেরীর জন্ম হয়। তিনি প্রথমে ছিলেন শাফেয়ী মায্হাবের অনুসারী। পরবর্তীতে তিনি দাউদে যাহেরীর মায্হাব অবলম্বন করেন এবং এক পর্যায়ে সকল মায্হাব ত্যাগ করে তাক্বলীদ্কে হারাম বলতে আরম্ভ করেন। এমনকি মুজতাদিহ ইমামগণকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও লাগামহীনভাবে তাদের প্রতি কটুক্তি করতে থাকেন। তার এ বাড়াবাড়ির অসংখ্য নযীর তার রচনাবলীতে বিদ্যমান রয়েছে।

৩।



হিজরী ৮ম শতাব্দীর ইমাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা  (মৃতঃ ৭২৮ হিজরী) ও হাফেজ ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রহঃ) (মৃতঃ ৭৫১ হিঃ) হাম্বলী মায্হাবের অন্যতম অনুসারী ছিলেন। তবে কিছু কিছু ইজতেহাদী বিষয়ে তাদের ব্যতিক্রমধর্মী মতামত তথা যাহেরিয়াদের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা ছিল।



এ কারণেই আল্লামা ইবনে বতুতা (রহঃ) ইবনে তাইমিয়্যা সম্বন্ধে লিখেনঃ



“ ইবনে তাইমিয়্যা কিছু বিষয়ে দক্ষতার সাথে আলোচনা করেন, তবে তার মাথায় কিছু ব্যতিক্রমধর্মী (বাতিল) চিন্তা-চেতনাও রয়েছে। ”



( তুহ্ফাতুন নাজ্জার থেকে মাওলানা ইসমাইল সাম্বলী প্রনীত তাক্বলীদে আইম্মাঃ পৃ-৫৩ )

এবং হাফেজ যাহাবী (রহঃ) ইবনুল ক্বাইয়্যিম সম্বন্ধে লিখেনঃ



“ তিনি নিজস্ব মতেই আত্নতৃপ্ত। মাথায় কিছু বৈচিত্র্য রয়েছে, যার ফলে গর্হিত অনেক কিছু প্রকাশ পেয়েছে। ”



( আলমু’জাম থেকে তাক্বলীদে আইম্মাঃ পৃ-৫৪ )


৪।



দ্বাদশ শতাব্দীর প্রখ্যাত আলিম মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহ্হাব নজদী (মৃতঃ ১২০৬ হিঃ) মূলত হাম্বলী মায্হাবেরই মুক্বাল্লিদ্ ছিলেন।

তবে অনেক বিষয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির ফলে তাঁর সঙ্গে তদানীন্তন সউদী আলেম উলামাদের মহামতানৈক্য সৃষ্টি হয়। তিনিই মহানবী (সঃ) এর রওজার উপর বিস্তৃত গম্বুজটি ভেঙ্গে দেয়ার পরিকল্পনা করেন এবং ভিন্ন মতাবল্মীদেরকে পবিত্র হজ্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন ও তাদেরকে কাফির, মুশরিক ইত্যাদি জঘন্যতম আখ্যায় আখ্যায়িত করতে থাকেন। ফলে ভয়াবহ ফিৎনা-ফাসাদ ও বিশ্ব মুসলিম সমাজে পারস্পরিক কোন্দলের সূচনা হয়। পক্ষান্তরে যারা তার মতবাদের তাক্বলীদ করতে থাকে তাদেরকে মুসলমানগণ ওহ্হাবী বলে আখ্যায়িত করতে থাকেন। এদিকে ভারতবর্ষের লা-মায্হাবীরাও যেহেতু নিছক ঝগড়া-বিবাদ ও মুসলমানদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্র হিসেবে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহ্হাব নজদীর অন্তঃসারশূণ্য বিচিত্র মতবাদ গ্রহণ করে যেত, তাই তাদেরকেও মুসলমানগণ ওহ্হাবী বলে আখ্যায়িত করতে থাকেন। আর তারা নিজেদেরকে মুহাম্মদী বা আহলে হাদীস বলে প্রচারের চেষ্টায় মেতে উঠে।




৫।



এ ধারার শেষ ব্যক্তি ক্বাযী শাওকানী (মৃতঃ ১২৫৫ হিজরী) মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহ্হাব নজদীরই সমসাময়িক ছিলেন। তিনি প্রথমতঃ ছিলেন শিয়া মতালম্বী। তার রচনাবলী প্রায়ই পরস্পর বিরোধপূর্ণ ও নিরপেক্ষতাহীন মতামতে ভরপুর।



দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যেতে পারে হানাফী মায্হাব অনুযায়ী “ বিতর ” নামায্ ওয়াজীব। এ মতামত খন্ডন করার জন্য ইমাম শাওকানী হাদীসে মুয়া’য্ (রঃ) পেশ করেছেন, যাতে বলা হয়েছে যে, “ আল্লাহপাক রাত্র দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামায্‌ ওয়াজিব্‌ তথা ফরয করেছেন ” এ ছাড়াও তিনি হাদীসে আ’রাবী পেশ করেছেন, যাতে মহানবী (সঃ) গ্রাম্য লোকটিকে মাত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামায্‌ আদায় করতে বলায় তিনি প্রশ্ন করেন যে আমার উপর এ ছাড়া কি আর কোন নামায্‌ আছে? তদুত্তরে মহানবী (সঃ) ইরশাদ করেন “ না, এ ছাড়া সমস্তই নফল। ”



এ হাদীস দু’টির মাধ্যমে শাওকানী সাহেব প্রমাণ করেন যে, পাঁচ ওয়াক্ত নামায্‌ ব্যতীত আর কোন নামায্‌ই ওয়াজিব বা ফরয নয়। তাই “ বিতর ” নামায্‌ও পাঁচ ওয়াক্তের বহির্ভূত বিধায় ওয়াজিব হতে পারে না বরং নফল নামাযেরই অন্তর্ভূক্ত।



( নাইলুল আওতারঃ পৃ - ৩/৩১ )



কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপ ও হাস্যকর বিষয় হল যে, তিনি মাত্র এর কয়েক পৃষ্ঠা পরই “ তাহিয়্যাতুল মসজিদ ” নামাযের বর্ণনায় উপরোক্ত হাদীসগুলো দৃষ্টিগোচর করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের বহির্ভূত “ তাহিয়্যাতুল মসজিদ ” নামায্‌কে ওয়াজিব প্রমাণের ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। অথচ তিনি নিজেও “ তাহিয়্যাতুল মসজিদ ” সুন্নত হওয়ার পক্ষে সকল উলামায়ে কিরামের ইজ্‌মা (সর্বসম্মত রায়) নকল করেছেন।



( নাইলুল আওতারঃ পৃ - ৩/৬৮ )



সুতরাং তার এ ধরণের কর্মকাণ্ড পক্ষপাতিত্ব, অনিরপেক্ষতা ও নিছক গোঁড়ামি বৈ আর কি?



৬) উল্লেখ্য যে, ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ, ইবনুল ক্বাইয়্যিম ও মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহ্‌হাব  তারা ছিলেন হাম্বলী মাযহাবের মুক্বাল্লিদ ও অনুসারী। যদিও তাদের মধ্যে কিছু বিতর্কিত বিষয়ও ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমান গাইরে মুক্বাল্লিদ্‌রা তাদের গুণগত বিষয়গুলো উপেক্ষা করে কেবল বিতর্কিত বিষয়গুলো অবলম্বন করতঃ মুসলমানদের মধ্যে ফিৎনা-ফাসাদ ও মতানৈক্যের যোগান দিচ্ছে।




গাইরে মুক্বাল্লিদ্দের বিচিত্র নাম ও এর রহস্যঃ



১।



নবজাত শিশুর যেমন প্রথমেই কোন নাম থাকে না, কিছু দিন পর তার একটা নাম রাখা হয়, পছন্দ না হলে প্রয়োজনে তাও আবার পরিবর্তন করা হয়, অনুরুপভাবে ভারতবর্ষে নবজন্মা গাইরে মুক্বাল্লিদ নামক বিদ্‌য়া’ত ও ভয়াবহ ফিৎনাটিরও প্রাথমিক পর্যায়ে কোন নাম ছিল না। তাদের ভ্রান্ত তৎপরতা লক্ষ্য করে জনগণ যখন তাদেরকে “ ওহ্‌হাবী ” বা “ লা-মায্‌হাবী ” বলতে থাকে তখন তারা নিজেদেরকে “ মুহাম্মদী ” বলে ঘোষণা করে এবং পর্যায়ক্রমে সুবিধামত “ মুয়াহ্‌হিদ ” “ গাইরে মুক্বাল্লিদ ” “ আহ্‌লে হাদীস ” ইত্যাদি নাম বরাদ্দ করতে থাকে। সউদী আরবে তেল, পেট্রোলের পয়সা জমজমাট হওয়ার মুরাদে আরবীদেরকে ধোঁকা দিয়ে পেট পালার ব্যবস্থা হিসেবে বর্তমানে তারাই “ সালাফী ” নামে আত্নপ্রকাশ করেছে।


২।



এ ব্যাপারে গাইরে মুক্বাল্লিদ্‌দেরই অন্যতম ব্যক্তি মৌলভী মুহাম্মাদ শাহজাহানপুরীর উক্তি ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া তাদের অনেকেরই বই-পুস্তকে এর অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। তন্মধ্য হতে গাইরে মুক্বাল্লিদ আলিম মৌলভী আসলাম জিরাজপুরী তার বিশিষ্ট রচনা “ নাওয়াদিরাতে ” লিখেন,



“ প্রথমত এ জামাত নিজেদের বিশেষ কোন নাম রাখেনি। মাও: ইসমাইল শহীদ (রহ.) এর শাহাদাতের পর প্রতিপক্ষের লোকেরা যখন দুর্নাম করা জন্য তাদেরকে ওহ্হাবী বলতে শুরু করে, তখন তারা নিজেরদেকে “ মুহাম্মাদী ” বলতে থাকে, অত:পর এ নামটি পরিহার করে “ আহলে হাদীস ” উপাধি চয়ন করে যা আজ পর্যন্ত বলবৎ রয়েছে। ”



(নাওয়াদিরাতঃ পৃ: ৩৪২)


মুহাম্মাদী কে?




ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে যে, ১২৪৬ হিজরীর পর এই উপমহাদেশে সৃষ্ট বিদ্‌য়া’ত ও নতুন ফিরক্বাটিকে মুসলমানগণ যখন ওহ্‌হাবী বলে আখ্যায়িত করতে থাকেন তখন তারা নিজেদেরকে মুহাম্মাদী বলে দাবী করে। সে হিসেবে মৌলভী আব্দুল হক্ব বেনারসী ও মৌঃ নজীর হুসাইন ভারতবর্ষের প্রথম মুহাম্মাদী নামের দাবীদার। অনুরূপ ভাবে তাদের তদানীন্তন অনুসারীরাও মুহাম্মাদী নামেই আত্নপ্রকাশ করতো। এ ধারায় নবাব ছিদ্দিক্ব হাসান খান ১২৮৫ হিজরীতে মৌঃ আব্দুল হক্ব বেনারসী থেকে লিখিত ভাবে মুহাম্মাদী উপাধি লাভ করেন।



( মায্‌হাবে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহঃ পৃ – ৩৬ )












মুহাম্মাদী নামের রহস্য



১।



মুহাম্মাদী বলে তারা বুঝাতে চায় যে, তারা সরাসরি নবী মুহাম্মাদ (সঃ) এর অনুসারী, তারা কোন মায্‌হাবের তাক্বলীদ বা অনুসরণ করে না তাই তারা হানাফী নয়, নয় শাফেয়ী, মালেকী বা হাম্বলী; বরং তারা মুহাম্মাদী। কিন্তু প্রশ্ন জাগে মুহাম্মাদ (সঃ) এর সত্যিকার অনুসারীদেরকেই যদি মুহাম্মাদী বলতে হয়, তাহলে হযরত সাহাবায়ে কিরাম (রঃ) ও তাবেয়ীনই তো এর সর্ব প্রথম ও সর্বাধিক উপযুক্ত ধারক ও বাহক, তাঁরা কেন তা গ্রহণ করেননি? তাঁদের উপাধি মুহাম্মাদী নয় কেন? এ শব্দের ব্যবহার ও প্রয়োগের সূচনা ১২০০ হিজরীর পরে কেন?



২।



নবাব ছিদ্দিক্ব হাসান খান অবশ্য এ প্রশ্নের উত্তর দিতে যেয়ে চতুর্থ শতাব্দীর শেষার্ধের মুহাদ্দিস আবু হাফস উমার বিন আহমদ ইবনে শাহীন এর কথা উল্লেখ করেছেন যে, ইবনে শাহীনের নিকট কোন মায্‌হাবের আলোচনা আসলে তিনি বলতেনঃ “ আমি মুহাম্মাদী মায্‌হাবের ”।



( তাযকিরাতুল হুফ্‌ফাজঃ পৃ – ৩/১৮৪; হেদায়াতুল মাসাইল ছিদ্দিক্ব হাসান খানঃ পৃ - ৫২৫)



কিন্তু মুহাদ্দিস ইবনে শাহীনের এ উক্তি নকল করার দ্বারা তাদের কী লাভ? তিনিও তো ৪র্থ শতাব্দীর শেষার্ধের লোক। তাঁর মৃত্যু ৩৮৫ হিজরীতে। আর চার ইমামের অনুসরণের ধারা তো এর অনেক পূর্বেকার। সুতরাং তাদের বক্তব্য অনুযায়ী তারাই ৪র্থ শতাব্দীর শেষার্ধে বিদ্‌য়া’তের সূচনাকারী দল। এ ছাড়া, ইবনে শাহীন তো কেবল মাত্র একজন বিশেষজ্ঞ আলিম ছিলেন। শরীয়তের সর্বক্ষেত্রে অনুসরণ যোগ্য হিসেবে মুসলিম উম্মাহ তাকে গ্রহণ করেননি। হাফেয যাহাবী (রহঃ) তাঁর অসংখ্য ভুল ত্রুটির এক বিরাট দাস্তান উল্লেখ করেছেন।



( তাযকিরাতুল হুফ্‌ফাজঃ পৃ – ৩/১৮৪ )

তিনি তো কোন সাহাবী ছিলেন না, তাবেয়ীও ছিলেন না। গাইরে মুক্বাল্লিদ্‌রা কি কোন সাহাবী বা তাবেয়ী অথবা হুজুর (সঃ) এর পবিত্র হাদীসে উল্লেখিত উত্তম যুগ তথা স্বর্ণযুগের কারও উপাধি মুহাম্মাদী প্রমাণ করতে পারবেন? সকল মুহাম্মাদী নামের ধব্জাধারীরা একত্রিত হয়েও যদি সক্ষম হবেন বলে মনে করেন তবে প্রমাণ করে দিন।






বুধবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৫

ইয়াজিদ, যিয়াদ ও কারবালা যুদ্ধের হিংস্র নরপশুদের করুন পরিনতি

পাপাত্না ইয়াজিদের মন সর্বদাই এ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার ভালোবাসায় মদমত্ত ছিলো। তাই সে দুনিয়ার লোভ লালসায় উন্মাদ হয়ে প্রভূত্ব,আধিপত্য,যশ-খ্যাতির ফাঁদে আটকা পড়েছিলো। সে নিজের করুন পরিণতির কথা ভুলে গিয়ে হযরত ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ও তাঁর সঙ্গীদের নির্দয়ভাবে শহীদ করে তাঁদের রক্ত দ্বারা নিজ হস্ত রন্ঞ্জিত করেছিলো। যে নেতৃত্ব ও আধিপাত্যের জন্য সে কারবালাতে জুলুম নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের তান্ডবলীলা চালিয়েছিলো। সে নেতৃত্ব আধিপত্যও বেশি দিন তাঁর কাছে স্থায়ী ছিলোনা। বদ-নসীব ইয়াজিদ মাত্র তিন বৎসর ছয়মাস ক্ষমতার মসনদে বসে শাসনের নামে লাম্পট্য বদমাশি করে অবশেষে রবিউন নূর শরীফ, ৬৪ হিজরিতে শাম রাজ্যের হামস শহরে হুওয়ারিন অঞ্চলে ৩৯ বছর বয়সে সে অপমৃত্যুর মূখে পতিত হয়। [আল-কামেল ফিত তারিখ,খন্ড-৩য়, পৃষ্টা-৪৬৪]

পাপাত্না ইয়াজিদের অপমৃত্যুর একটি কারণ ইহাও বলা হয়ে থাকে যে, সে একজন রোমান বংশোদ্ভূত যুবতী মহিলার প্রেমের ফাঁদে আটকা পড়েছিলো। কিন্তু সে মহিলা তাঁকে মনে-প্রাণে ঘৃণা করতো। একদিন আমোদ-প্রমোদের বাহানা করে সে মহিলা ইয়াজিদকে একাকী সুদূর এক মরুভূমিতে নিয়ে গেলো। সে মরুভূমির ঠান্ডা ও শীতল আবহাওয়া ইয়াজিদকে কাহিল ও অবসন্ন করে ফেললো। তাই সে মাতালের মতো মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। আর মহিলাও এ সুযোগ হাতছাড়া করলো না। যে পাপিষ্ঠ নিমকহারাম তাঁর নবীর প্রিয় দৌহিত্রের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে কুণ্ঠিত হয়নি, সে আমার প্রতি কতোটুকু ওফাদার হতে পারে। এ বলে সে যুবতী মহিলা তাঁর চিকচিকে শানিত খঞ্জর দ্বারা ইয়াজিদের মাংসল দেহ খন্ডিত বিখন্ডিত করে তা মরুভূমিতে ফেলে চলে আসলো। কয়েকদিন যাবত্ তাঁর মৃতদেহটি চিল কাকের খোরাকে পরিণত ছিলো। অবশেষে খবর পেয়ে তাঁর অনুচরেরা তথায় পোঁছে তাঁর ক্ষতবিক্ষত লাশ একটি গর্তে মাটি চাপা দিয়ে চলে আসলো। [আওরাকে গম, পৃষ্ঠা-৫৫০]
ইবনে জিয়াদের করুণ পরিণতি:

হতভাগা ইয়াজিদের পদলেহী কুকুর চাটুকার ইবনে জিয়াদ, যে কারবালার প্রান্তরে গুলশানে রিসালাতের মাদানী পুষ্পদের ধুলিমলিন ও রক্তরঞ্জিত করেছিলো, তারও করুণ পরিণতি হয়েছিলো। পাপাত্না ইয়াজিদের পরে সবচেয়ে বেশি অপরাধী ছিলো, কুফার সে নিষ্ঠুর বর্বর, স্বেচ্ছাচারী শাসনকর্তা ওবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ। সে নরাধমেরই নির্দেশে হযরত ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ও আহলে বায়েতদেরকে জুলুম নির্যাতনের নির্মম শিকারে পরিণত করেছিল। কিন্তু কালের বিবর্তন সে নরাধমকেও রেহাই দিলো না। যুগের আবর্তন বিবর্তনের করাল গ্রাসে নিপতিত হয়ে সে নরাধমও ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলো। মুখতার সাখফীর নির্দেশে তাঁর সেনাপতি ইব্রাহিম বিন মালিক আস্তারের বাহিনীর হাতে ফোরাত নদীর তীরে কারবালার ঘটনার মাত্র ৬ বংসর পর ১০ই মুহাররামুল হারাম ৬৭ হিজরীতে সে নরাধম ইবনে জিয়াদ নির্মমভাবে নিহত হলো। সৈন্যরা তাঁর মস্তক কর্তন করে ইব্রাহিমের নিকট নিয়ে এলো, আর ইব্রাহিম সে মস্তক কুফায় মুখতারের নিকট পাঠিয়ে দিলো। [সাওয়ানেহে কারবালা, পৃষ্ঠা-১২৩, সংক্ষেপিত]
কুফায় শাহী প্রাসাদ তাঁর মস্তক সজ্জিত করা হলো এবং যেখানে ৬ বত্সর পূর্বে ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর পবিত্র শির মোবারক রাখা হয়েছিলো সেখানেই ইবনে জিয়াদের অপবিত্র মস্তক রাখা হলো। সে হতভাগ্য পাষন্ডের জন্য কান্নাকাটি করার মতো কেউ ছিলো না। বরং তাঁর অপমুত্যুতে সবাই আনন্দ উৎসব করেছিলো।
সহীহ হাদীসে ইমারাহ বিন উমাইর হতে বর্ণিত আছে, "যখন উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদের মস্তক তাঁর সাথীদের মস্তকের সাথে রাখা হয়েছিলো তখন আমি সে মস্তকগুলো দেখার জন্য গিয়েছিলাম। হঠাৎ শোরগোল ও হৈ চৈ পড়ে গেলো,আমি দেখলাম একটি ভয়ংকর সাপ এসে মাথাগুলোর মাঝখানে অবস্থিত ইবনে জিয়াদের মস্তকের নাকের ছিদ্রে ঢুকে গেলো এবং সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করে বের হয়ে সাপটি অদৃশ্য হয়ে গেলো। অতঃপর আবার শোরগোল পড়ে গেলো, দুই - তিনবার এরূপ ঘটনা ঘটলো। [সুনানে তিরমিজি খন্ড ৫ম, পৃষ্ঠা-৪৩১, হাদীস নং- ৩৮০৫, দারুল ফিকর, বৈরুত]

ইবনে জিয়াদ, ইবনে সা'দ, সীমার, কায়েস বিন আসআছ, কন্দী, খাওলী বিন ইয়াজিদ, সিনান বিন আনাস নখয়ী, আব্দুল্লাহ বিন কায়েস, ইয়াজিদ বিন মালেক প্রমূখ হতভাগা পাষন্ডরা যারা হযরত ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)কে শহীদ করার জন্য অংশ নিয়েছিলো এবং যারা কারবালায় এই নির্মম বর্বরতার কাজের সাথে জড়িত ছিলো, তাদেরকে বিভিন্ন রকমের শাস্তির মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছিলো এবং তাদের লাশ সমূহ ঘোড়ার পা দ্বারা পদদলিত করা হয়েছিলো। [সাওয়ানেহে কারবালা, পৃষ্ঠা-১৫৮]
ডাউনলোড করুন
এয়াযীদ সম্পর্কে আহলুস্ সুন্নাহর সিদ্ধান্ত
ডাউনলোড লিঙ্কঃ http://www.mediafire.com/download/6yrgsvlb38cidb7/Yazid+Sompork.pdf