ওহাবীরা মুর্খতার শেষ সীমানায় পোছে গেছে। তারা আজ-কাল প্রচার করে জিয়ারতের নিয়্যতে সফর করা নাকি হারাম। এসব প্রচার মুলত মাযার থেকে মানুষকে বিমুখ করার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। আসুন একটু বিশ্লেষন করে দেখি।
তাদের কাছে আমার প্রশ্ন হল "
১) নং :- জিয়ারত করা কি জায়েয নাকি নাজায়েয? তাদের জবাব হবে জায়েয।
২) নং :- জিয়ারত করা কি সওয়াবের কাজ নাকি গুনাহের কাজ? তাদের জবাব হবে সওয়াব।
৩) নং :- যদি জায়েয হয়ে থাকে আর সওয়াবের কাজ হয়ে থাকে তাহলে প্রত্যেক নেক কাজের জন্য নিয়্যত করে নেক কাজ করা সেটা কি হাদিসে আছে নাকি নাই? তাদের জবাব হবে আছে।
৪) নং :- যদি থেকে থাকে কোন মুর্খের মত এসব প্রশ্ন করেন যে নিয়্যত করে যাওয়া যাবে না? ঠাস করে বলে দিবে এর দলিল নেই।
৫) নং :- নেক কাজের জন্য নিয়্যত করা সেটাও তো এই কাজের দলিল তাই না? আর যে আল্লাহ আপনার মৃত্যু পর্যন্ত, আখিরাত পর্যন্ত জানেন তার কাছে কি লুকিয়ে লুকিয়ে অন্য কোন কাজের জন্য বের হতে পারবেন যা নাকি আল্লাহ জানেন না? (নাউযুবিল্লাহ) এ কত বড় পথভ্রষ্টতা। তাদের জবাব: নিশ্চুপ।
→→→ কবর জিয়ারত জায়েয এবং উত্তম সওয়াবের কাজ :
★ ” মিশকাত শরীফে ” কবর যিয়ারত প্রসঙ্গে ” যিয়ারাতুল কুবুর” বা কবর যিয়ারত নামক একটা অধ্যায় রচনা করা হয়েছে ! যেমন :-
عن بريدة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم كنت نهيتكم عن زيارة القبور فزوروها
অর্থ : হযরত বুরায়দা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমি তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা তা করতে পারো |’
দলীল-
* মুসলিম শরীফ
* মিশকাত শরীফ ১৬৭০।
★ অপর হাদিসে আছে :
كنت نهيتكم عن زيارة القبور فزوروها فا نها نزهد في الدنيا وتذكرة الاخرة
অর্থ : হযরত ইবনে মাসুদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত, নিশ্চয়ই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমি তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম , এখন তোমরা তা করতে পারো | কেননা উহা দুনিয়ার আসক্তি কমায় এবং আখিরাতকে স্মরন করায় !”
রেফারেন্সঃ
* ইবনে মাজাহ
* মিশকাত শরীফ ১৬৭৭
★ হযরত আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
ندب الزيارة وان بعد محلها
অর্থ: দূরবর্তী স্থানেও (কবর) যিয়ারতের জন্য গমন করা মোস্তাহাব।”
রেফারেন্সঃ
* শামী ২য় খন্ড ২৪২ পৃষ্ঠা।
★ হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ইমাম আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
وبزيارة القبور اي لا با با ءس بهابل تندب
অর্থ- কবর যিয়ারত এতে কোন অসুবিধা নেই, বরং এটা মোস্তাহাব!
রেফারেন্সঃ
* ফতোয়ায়ে শামী ২/২৪২
★ ইমামগন জীবনে একবার কবর যিয়ারত ওয়াজিব ফতোয়া দিয়েছেন। ইমাম ইবনে হাজম রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,-
“জীবনে একবার কবর যিয়ারত করা ওয়াজিব।”
রেফারেন্সঃ
* আইনী ৪র্থ খন্ড ৭৬ পৃষ্ঠা।
* ফতহুল মুলহীম ২য় খন্ড ৫১ পৃষ্ঠা।
* বজলুল মাজহুদ ৪ খন্ড ২১৪ পৃষ্ঠা।
প্রশ্ন : জিয়ারতের নিয়তের সফর করা জায়েয কিনা?
জবাব : শুধু জায়েযই নয় বরং উত্তম সওয়াবের কাজ।
→→ → জায়েয ও সওয়াবের কাজে নিয়্যত করাও সওয়াবের কাজ :
★ রাসূল ﷺ বলেন, إﻧﻤﺎ اﻷﻋﻤﺎل ﺑﺎﻟﻨﻴﺎ ت
প্রত্যেকটি আমল(কর্ম) নিয়তের উপর নির্ভরশীল বা সকল কাজের ফলাফল নিয়ত অনুযায়ী পাবে। (বুখারী ও মুসলিম)
★ হুমায়দী (রহঃ) আলকামা ইবনু ওয়াক্কাস আল-লায়সী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আমি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে মিম্বরের ওপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ প্রত্যেক কাজ নিয়তের সাথে সম্পর্কিত। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে।
Reference :
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১/ ওহীর সূচনা
হাদিস নম্বরঃ [1]
★ আরো একটি গুরুত্বপূর্ন সহীহ হাদীস শরীফে বর্নিত আছে-
قال رسول الله صلي الله عليه و سلم لامدينت بها قبري و بها بيتي و تربتي وحق علي كل مسلم زيارتها
অর্থ: হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মদীনা শরীফ আমার ঘর, আর আমার কবরও মদীনা শরীফই হবে। তাই প্রত্যেক মানুষের উচিত এর যিয়ারত করা।”
রেফারেন্সঃ
* মিশকাত শরীফ।
* মিরকাত শরীফ।
* আশয়াতুল লুময়াত।
* শরহূত ত্বীবি।
★ এসকল হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় আল্লামা মুহম্মদ ইউসুফ বিন নূরী বলেন-
دهب جمرة الامة الي ان ريارة قبره صلي الله عليه و سلم اعظع القربات
والسفر اليها جاءز بل مندوب مسر وعيتها محل اجماع بلا نزاع
অর্থ: জমহুর উম্মত এর মাযহাব হল রওজা মুবারক যিয়ারত করা উত্তম ইবাদত, আর নিয়ত করে সফর করা শুধু জায়েজই নয় বরং মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত এতে কোন প্রকার অসুবিধা নেই।”
রেফারেন্সঃ
* শরহে তিরমিযী ৩য় খন্ড ৩২৯ পৃষ্ঠা।
* মা’আরিফুস সুনান।
★ এ প্রসংগে আল্লামা আব্দুর রহমান যাফীরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
ولا فرق في الزيارة بين كون المقابر قريبة او بعيدة
অর্থ: কবর যিয়ারতের ক্ষেত্রে নিকট ও দূরের কোন পার্থক্য নাই।”
রেফারেন্সঃ
* কিতাবুল ফিক্বাহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া ১ম খন্ড ৫৪০ পৃষ্ঠা।
★ কবর মুবারক যিয়ারতের ইচ্ছা পোষণকারীর জন্য কবর যিয়ারতের সাথে সাথে মসজিদে নববী যিয়ারতের ও তাতে নামায আদায়ের নিয়্যাত রাখা উচিৎ।
দলিল-
(শরহুয যুকরানী আ’লাল মাওয়াহিব-১২/১৮৩-১৮৪)।
★ হযরত আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
ندب الزيارة وان بعد محلها
অর্থ: দূরবর্তী স্থানেও (কবর) যিয়ারতের জন্য গমন করা মোস্তাহাব।”
রেফারেন্সঃ
* শামী ২য় খন্ড ২৪২ পৃষ্ঠা।
★ হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ইমাম আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
وبزيارة القبور اي لا با با ءس بهابل تندب
অর্থ- কবর যিয়ারত এতে কোন অসুবিধা নেই, বরং এটা মোস্তাহাব!
রেফারেন্সঃ
* ফতোয়ায়ে শামী ২/২৪২
★ বিখ্যাত হাদীস শরীফ বিশারদ, হাফিজে হাদীস আল্লামা হযরত বদরুদ্দীন আইনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেছেন-
لان السيدة فاطمة رضي الله عنها كنت تزور قبر حمز كل جمعة و كانت عايشة رضي الله عنها تزور قبر اخيها عبد الرحمن بمكة كذا
অর্থ: হযরত সাইয়্যিদা ফাতিমাতুয যুহরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা প্রতি শুক্রবার হযরত হামজা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার কবর যিয়ারত করতে যেতেন, অনুরূপ ভাবে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা স্বীয় ভাই আব্দুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার কবর যিয়ারত করার জন্য মক্কা শরীফ যেতেন।”
রেফারেন্সঃ
* উমদাতুল ক্বারী ফি শরহে বুখারী ৮ম খন্ড ২৫০ পৃষ্ঠা।
★ শুধু তাই নয় ওহুদ যুদ্ধে শহীদ গনের মাজার শরীফ যিয়ারত করার জন্য স্বয়ং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই প্রতি বছর ওহুদ প্রঙ্গনে যেতেন ! যেটা বর্নিত আছে —
وفيه يستحب ان يزور شهداء جبل احد لماروي ابن ابي شيبة ” ان النبي صلي الله عليه وسلم كان ياء تي قبور الشهداء باحد علي رأس كل حول فيقول السلا عليكم بما صبرتم فنعم عقبي الدار
অর্থ : ওহুদ পাহাড়ের শহীদগনের ( কবর) যিয়ারত করা মোস্তাহাব | ইবনে আবী শায়বা হতে বর্নিত আছে , হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি বৎসরান্তে ওহুদের শহীদগনের কবর যিয়ারত করতে আসতেন | অতঃপর বলতেন, তোমাদের প্রতি সালাম , যেমন তোমরা ধৈর্য ধারন করেছিলে তেমনি পরকালে উত্তম বাস স্থান লাভ করেছ |”
রেফারেন্সঃ
* ফতোয়ায়ে শামী ২য় খন্ড ২৩৪ পৃষ্ঠা !
★ শুধু তাই নয় শাফেঈ মাযহাবের ইমাম, ইমাম শাফেয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজে ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ যিয়ারত করার জন্য আসতেন ! যেটা ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি নিজেই বলেন —
اني لاتبرك بابي حنيفة واجءي الي قبره فاذا عرضت لي حاجة صليت ر كعتين و ساءلت الله تعالي عند قبره فتقضي سريعا
অর্থ : নিশ্চয়ই আমি ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি হতে বরকত হাসিল করি |যখন আমার কোন সমস্যা দেখা দেয় তখন আমি উনার মাজার শরীফে এসে প্রথমে দুই রাকাত নামাজ আদায় করি | অতঃপর উনার উসীলা দিয়ে আল্লাহ পাকের নিকট সমস্যা সমাধানের জন্য প্রর্থনা করি | তা অতি তাড়াতাড়ি সমাধান হয়ে যায় |”
রেফারেন্সঃ
* ফতোয়ায়ে শমী, মুকাদ্দিমা ১ম খন্ড ৫৫ পৃষ্ঠা !
★ বিখ্যাত ওলী আল্লাহ মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি সুলত্বনুল হিন্দ হাবীবুল্লাহ খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী আজমেরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযার শরীফ যিয়ারত করতে গিয়েছিলেন। এতে যিয়ারত ভিন্ন আর অন্য কোন উদ্দেশ্যে ছিলো না।”
রেফারেন্সঃ
* সিরাতে মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
★ আর এ প্রসংগে ওহাবীদের ইমাম আশরাফ আলী থানবী ফতোয়া দিয়েছে-
“পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব। যিয়ারত অর্থ দেখাশুনা। সপ্তাহে অন্ততঃ একদিন কবর যিয়ারত করা উচিত। সেদিন শুক্রবার হওয়াই সবচাইতে ভালো। বুজুর্গানে দ্বীনের কবর যিয়ারত করার জন্য সফরে যাওয়াও জায়েজ আছে।”
রেফারেন্সঃ
* ইমদাদুল ফতোয়া।
★ দেওবন্দী সকল গুরুদের পীর হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজির মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার “যিয়াউল ক্বুলুব” কিতাবের শেষে তার অনুসারীদের জন্য “কতিপয় বিশেষ উপদেশ” অনুচ্ছেদে লিখেন-
” মাশায়েখ ও পীর আওলিয়াগনের মাজার যিয়ারত করবেন। অবসর সময় তাদের মাজারের পার্শ্বে এসে রূহানিয়াতসহ মুতাওয়াজ্জুহ হবে এবং স্বীয় পীর মুর্শিদের সরতে তাদের ধ্যান করবে ও ফয়েজ হাসিল করতে সচেষ্ট হবে। কারন তারা আল্লাহ ও রসূলেরকে লাভ করেছে। আর এসবই বরকতময় কর্ম।”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন