রবিবার, ২১ জুন, ২০১৫

প্রশ্নোত্তরে রোজা (পর্ব ২) :-


             ৮ম অধ্যায়
সিয়াম অবস্থায় যা অবশ্য করণীয়



প্রশ্ন ১৭: সিয়াম পালনের ক্ষেত্রে কী কী কাজ ও আমল অত্যাবশ্যক?


উত্তর : সিয়াম অবস্থায় অত্যাবশ্যকীয় আমলসমূহ :
[১] পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত আদায় করা। কোন শরয়ী উযর না থাকলে সালাত মাসজিদে গিয়ে জামাআতের সাথে আদায় করা। জামাআতে সালাত আদায়কে বিজ্ঞ ওলামায়ে কিরাম ওয়াজিব বলেছেন। যারা জামাআতের সাথে সালাত আদায় করে না তারা ২৭ গুণ সাওয়াব থেকে বঞ্চিততো হয়ই, উপরন্তু ফজর ও ঈশার জামাআত পরিত্যাগকারীকে হাদীসে মুনাফিকের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যারা অবহেলা করে বিনা ওযরে সালাত দেরী করে আদায় করে তার সালাত একশবার পড়লেও তা কবুল হবে না বলে উলামায়ে কিরাম মন্তব্য করেছেন। আর মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় থেকে বিরত থাকতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্ধ ব্যক্তিকেও অনুমতি প্রদান করেন নি।
[২] মিথ্যা না বলা।
[৩] গীবত না করা- আর তা হলো অসাক্ষাতে কারো দোষত্রুটি বা সমালোচনা করা
[৪] চোগলখোরী না করা- আর তা হলো এক জনের বিরুদ্ধে আরেকজনকে কিছু বলে ক্ষেপিয়ে তোলা ও ঝগড়া লাগিয়ে দেয়া।
[৫] ক্রয় বিক্রয় ও অন্যান্য কাজে কাউকে ধোঁকা না দেয়া। গান গাওয়া ও বাদ্যযন্ত্র বাজানো থেকে বিরত থাকা, মধুর কণ্ঠে গাওয়া যৌন উত্তেজনামূলক গান থেকে আরো বেশি সাবধান থাকা।
[৬] সকল প্রকার হারাম কাজ-কর্ম পরিহার করা।
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন,

إِذَا صُمْتَ فَلْيَصُمْ سَمْعُكَ وَبَصَرُكَ وَلِسَانُكَ عِنْدَ الْكَذِبِ وَالْمَحَارِمِ وَدَعْ عَنْكَ أَذَى الْجَارِ وَلْيَكُنْ عَلَيْكَ وَقَار وَسَكِيْنَة وَلاَ يَكُنْ يَوْمُ صَوْمِكَ وَيَوْمُ فِطْرِكَ سَوَاء

যখন তুমি রোযা রাখবে তখন যেন তোমার কর্ণ, চক্ষু এবং জিহবাও মিথ্যা ও হারাম কাজ থেকে রোযা রাখে। তুমি প্রতিবেশিকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকো। আত্মমর্যাদা ও প্রশান্তভাব যেন তোমার উপর বজায় থাকে এমন হলে তোমার রোযা রাখা ও না রাখা সমান হবে না। (ইবন আবী শাইবা : ৮৮৮০)


[৭] রোযা রাখা (ও অন্যান্য ইবাদত) একমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য করা। আল্লাহ বলেন,

﴿ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ ... ﴾ [البينة: ٥]

‘‘মানুষকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তাদের ইবাদত যেন শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য হয়।’’ (বাইয়্যেনাহ : ৫)


[১১] সিয়াম ভঙ্গের সহায়ক কাজ-কর্ম পরিহার করা স্বামী-স্ত্রীর আলিঙ্গন, চুম্বন বা একত্রে শয়ন জায়েয হলেও তা যেন রোযা ভঙ্গের পর্যায়ে নিয়ে না যায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকা।
[১২] অন্তরে ভয় ও আশা পোষণ করা।
কোন অজানা ভুলের জন্য রোযাটি ভেঙ্গে যায় কিনা এ ধরনের ভয় থাকা এবং আল্লাহর কাছে এর প্রতিদান পাবো এ আশাও পোষণ করা। অন্তরকে এ দু’য়ের মধ্যে সামঞ্জস্য করে রাখতে হবে।




৯ম অধ্যায়
সিয়ামের সুন্নাত আদব



[১] সাহরী খাওয়া।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِي السَّحُورِ بَرَكَةً

(ক) তোমরা সাহরী খাও, কারণ সাহরীতে বরকত রয়েছে। (বুখারী : ১৯২৩; মুসলিম : ১০৯৫)

مَا بَيْنَ صِيَامِنَا وَصِيَامِ أَهْلِ الْكِتَابِ أَكْلَةُ السَّحَرِ

(খ) আমাদের (মুসলিমদের) ও ইয়াহূদী-নাসারাদের সিয়ামের মধ্যে পার্থক্য হল সাহরী খাওয়া। (মুসলিম : ১০৯৬)

অর্থাৎ আমরা সিয়াম পালন করি সাহরী খেয়ে, আর ইয়াহূদী-নাসারারা রোযা রাখে সাহরী না খেয়ে।

نِعْمَ سَحُورُ الْمُؤْمِنِ التَّمْرُ

(গ) মু’মিনের সাহরীতে উত্তম খাবার হল খেজুর। (আবূ দাঊদ : ২৩৪৫)

السَّحُورُ أَكْلُهُ بَرَكَةٌ فَلاَ تَدَعُوهُ وَلَوْ أَنْ يَجْرَعَ أَحَدُكُمْ جُرْعَةً مِنْ مَاءٍ فَإِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ وَمَلاَئِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الْمُتَسَحِّرِينَ

(ঘ) (রোযাদারদের জন্য) সাহরী হল একটি বরকতময় খাবার। তাই কখনো সাহরী খাওয়া বাদ দিও না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরী খেয়ে নাও। কেননা সাহরীর খাবার গ্রহণকারীকে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর ফেরেশতারা স্মরণ করে থাকেন। (আহামদ : ১০৭০২)

[২] সাহরী দেরী করে খাওয়া।
অর্থাৎ তা শেষ ওয়াক্তে খাওয়া উত্তম। রাতের শেষাংশে গ্রহণকৃত খাবারকে সাহরী বলা হয়।

[৩] সাহরীর সময়কে ইবাদতে কাজে লাগানো। প্রতিরাতের শেষ তৃতীয়াংশ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরশ থেকে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। আর বান্দাদেরকে এই বলে আহবান করেন :

مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ وَمَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ وَمَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ

‘‘এখন যে ব্যক্তি আমার কাছে দু‘আ করবে আমি তা কবূল করব, যা কিছু আমার কাছে এখন চাইবে আমি তাকে তা দিব এবং যে আমার কাছে এখন মাফ চাইবে আমি তাকে মাফ করে দিব। (বুখারী : ৬৩২১;  মুসলিম : ৭৫৮)

অতএব তখন কুরআন অধ্যয়ন, তিলাওয়াত, তাহাজ্জুদের সালাত আদায়, তাওবাহ-ইস্তিগফার ও দু‘আ কবূলের জন্য এটা এক উত্তম সময়। তাদের প্রশংসায় আল্লাহ বলেন :

﴿ وَبِٱلۡأَسۡحَارِ هُمۡ يَسۡتَغۡفِرُونَ ١٨ ﴾ [الذاريات: ١٨]

‘‘তারা শেষ রাতে জেগে উঠে তাওবাহ-ইস্তিগফার করে।’’ (সূরাহ যারিয়াত-১৮)

[৪] সূর্য অস্ত যাওয়ামাত্র ইফতার করা অর্থাৎ তাড়াতাড়ি ইফতার করা। অতিরঞ্জিত সাবধানতার নামে ইফতার বিলম্ব না করা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

لاَ يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْفِطْرَ

(ক) অর্থাৎ মানুষ যতদিন পর্যন্ত তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে। (বুখারী : ১৯৫৭; মুসলিম : ১০৯৮)

لاَ يَزَالُ الدِّينُ ظَاهِرًا مَا عَجَّلَ النَّاسُ الْفِطْرَ لِأَنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى يُؤَخِّرُونَ

(খ) যতদিন মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন দীন ইসলাম বিজয়ী থাকবে। কেননা, ইয়াহূদী ও নাসারাদের অভ্যাস হল ইফাতর দেরীতে করা। (আবূ দাঊদ : ২৩৫৩)

ثَلاَثَةُ مِنْ أَخْلاَقِ النَّبُوَّةِ : تَعْجِيْلُ الإِفْطَارِ وَتَأْخِيْرُ السَّحُوْرِ وَوَضْعِ الْيَمِيْنِ عَلَى الشِّمِالِ فِي الصَّلاَةِ

(গ) তিনটি বিষয় নাবী চরিত্রের অংশ : সময় হওয়ামাত্র ইফতার করে ফেলা, সাহরী শেষ ওয়াক্তে খাওয়া এবং সালাতে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ১০৫)

كَانَ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ -صلى الله عليه وسلم- أَسْرَعُ النَّاسَ إِفْطَارًا وَأَبْطَأُهُمْ سُحُوْرًا

(ঘ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবীগণ সকলের আগে তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন এবং সকলের চেয়ে দেরীতে সাহরী খেতেন। (মুসান্নাফ আঃ রাযযাক : ৭৫৯১)


৫. তবে পেট ভর্তি করে খাওয়া ইসলাম সমর্থন করে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
مَا مَلأُ ابْنُ آدَمَ وِعَاءُ بَطْنِهِ

‘‘যে ব্যক্তি পেট ভর্তি করে খানা খায় তার ঐ পেট (আল্লাহর কাছে) একটি নিকৃষ্ট পাত্র।’’ (তিরমিযী : ২৩৮০)

সুন্নাত হল পেটের তিন ভাগের একভাগ খাবার খাবে, আর তিনভাগের একভাগ পানি পান করবে। বাকী এক তৃতীয়াংশ শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য খালী রেখে দিবে। (তিরমিযী : ২৩৮০)


৬. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতারের সময় নিম্নের এ দুআটি পাঠ করতেন :

ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللهُ

অর্থ : ‘‘পিপাসা নিবারিত হল, শিরা উপশিরা সিক্ত হল এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পুরস্কারও নির্ধারিত হল।’’ (আবূ দাউদ : ২৩৫৭, দারাকুতনী : ২২৭৯ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)



[৭] বেশি বেশি কুরআন পাঠ করা, সালাত আদায়, যিকর ও দু‘আ করা।
রমযান যেহেতু কুরআন নাযিলের মাস সেহেতু এ মাসে কুরআন তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন অন্য সময়ের চেয়ে বেশি করা উচিত।
রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَقُولُ الصِّيَامُ أَيْ رَبِّ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ وَيَقُولُ الْقُرْآنُ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ قَالَ فَيُشَفَّعَانِ

সিয়াম ও কুরআন কিয়ামতের দিন (আল্লাহর কাছে) মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম বলবে, হে রব! দিনের বেলায় আমি তাকে পানাহার ও যৌন উপভোগ থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবূল কর।
কুরআনও বলবে, হে রব! (রাতে কুরআন পাঠের কারণে) রাতের নিদ্রা থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই এ পাঠকের ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ মঞ্জুর কর। তিনি বলেন, অতঃপর উভয়েরই সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। (আহমাদ : ৬৫৮৯)


[৮] ইয়াতীম, বিধবা ও গরীব মিসকীনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও বেশি বেশি দান খয়রাত করা।
তাদেরকে যাকাত, ফিত্‌রা ও সাদাকাহ দেয়া। হাদীসে এসেছে :

كَانَ رَسُولُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- أَجْوَدَ النَّاسِ بِالْخَيْرِ وَكَانَ أَجْوَدَ مَا يَكُونُ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল আর রমাযানে তাঁর এ দানশীলতা আরো বেড়ে যেত। (মুসলিম : ২৩০৮)

[৯] উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা।
রমযান ধৈর্যধারনের মাস। আর সিয়াম হল এ কার্য প্রশিক্ষণের ইনিষ্টিটিউট। কাজেই এ সময় আমাদেরকে সুন্দর চরিত্র গঠনের অনুশীলন করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

فَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفُثْ يَوْمَئِذٍ وَلاَ يَصْخَبْ فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَائِمٌ

‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোযা রাখে, সে যেন তখন অশ্লীল কাজ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। রোযা রাখা অবস্থায় কেউ যদি তার সাথে গালাগালি ও মারামারি করতে আসে সে যেন বলে, ‘‘আমি রোযাদার’’। (মুসলিম : ১১৫১)




১০ম অধ্যায়
نية الصوم ووقته وطريقته
সিয়ামের নিয়ত : সময় ও পদ্ধতি

প্রশ্ন ১৮: ফরয রোযার নিয়ত কখন করতে হয়?

উত্তর : ফজর উদয় হওয়ার আগেই অর্থাৎ রাতের মধ্যেই নিয়ত করে ফেলতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

مَنْ لَمْ يُجْمِعْ الصِّيَامَ قَبْلَ الْفَجْرِ فَلاَ صِيَامَ لَهُ

১. যে ব্যক্তি ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগেই সিয়াম পালনের নিয়ত করল না তার সিয়াম শুদ্ধ হল না। (আবূ দাঊদ : ২৪৫৪)

مَنْ لَمْ يَبِيْتِ الصِّيَامَ مِنَ اللَّيْلِ فَلاَ صِيَامَ لَهُ

২. যে ব্যক্তি রাতের মধ্যেই সিয়ামের নিয়ত করল না তার সিয়াম শুদ্ধ হল না। (এ নির্দেশ শুধুমাত্র ফরয রোযার ক্ষেত্রে) (নাসাঈ : ৪/১৯৬)



১১শ অধ্যায়
أقسام الصيام
সিয়ামের প্রকারভেদ


প্রশ্ন ১৮ : সিয়াম কত প্রকার ও কী কী?
উত্তর : চার প্রকার। যথা ১. ফরজ, ২. নফল, ৩. মাকরূহ ৪. হারাম।
প্রথমত : ফরয সিয়াম :
(ক) রমযান মাসের সিয়াম
(খ) কাযা সিয়াম
(গ) কাফফারার সিয়াম
(ঘ) মান্নত সিয়াম
দ্বিতীয়ত : নফল সিয়াম
(ক) শাওয়াল মাসের ছয়টি সিয়াম
(খ) যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশকের সিয়াম
(গ) আরাফাতের দিনের সিয়াম
(ঘ) মুহাররম মাসের সিয়াম
(ঙ) আশুরার সিয়াম
(চ) প্রতি চন্দ্রমাসের ১৩. ১৪, ১৫- এ তিন দিনের সিয়াম
(ছ) সাপ্তাহিক সোম ও বৃহস্পতিবারের সিয়াম
(জ) শাবান মাসের সিয়াম
(ঝ) দাঊদ (আঃ)’র সিয়াম
(ঞ) বিবাহে অসামর্থ ব্যক্তিদের সিয়াম।
তৃতীয়ত : মাকরূহ সিয়াম
(ক) হাজ্জ পালনরত অবস্থায় আরাফাতের দিনের সিয়াম
(খ) বিরতীহীনভাবে সিয়াম পালন
(গ) পানাহার বিহীন সিয়াম
(ঘ) কেবলমাত্র জুমুআর দিনের সিয়াম
(ঙ) শুধুমাত্র শনিবারে সিয়াম
চতুর্থত : হারাম সিয়াম :
(ক) দু’ ঈদের দিন এবং কুরবানীর ঈদের পরবর্তী ৩ দিন
(খ) সন্দেহ পূর্ণ দিনের (৩০শে শাবান) সিয়াম
(গ) স্বামীর বিনা অনুমতিতে স্ত্রীর নফল সিয়াম
(ঘ) মহিলাদের হায়েয নিফাসকালীন সময়ের সিয়াম
(ঙ) গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সিয়াম।




প্রশ্ন ১৯ : কেউ যদি ভুলক্রমে সামান্য কিছু খেয়ে ফেলে তবে কি তার সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে?
উত্তর : না, ভাঙ্গবে না।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

إِذَا نَسِيَ فَأَكَلَ وَشَرِبَ فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ فَإِنَّمَا أَطْعَمَهُ اللَّهُ وَسَقَاهُ

১. যদি কেউ ভুলক্রমে পানাহার করে তবে সে যেন তার সিয়াম পূর্ণ করে নেয়, কেননা আল্লাহ তা‘আলাই তাকে এ পানাহার করিয়েছেন (অর্থাৎ এতে তার রোযা ভাঙ্গেনি)। (বুখারী : ১৯৩৩; মুসলিম : ১১৫৫)

مَنْ أَفْطَرَ فِيْ رَمَضَانَ نَاسِيًا فَلاَ قَضَاءَ عَلَيْهِ وَلاَ كَفَّارَةَ

২. যে ব্যক্তি ভুল বশতঃ রমাযানের দিনে বেলায় কিছু খেয়ে ফেলল : সেজন্য কোন কাযা ও কাফফারা দিতে হবে না। (দারাকুতনী : ২৪; বায়হাকী : ৭৮৬৩)



আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

﴿ وَلَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٞ فِيمَآ أَخۡطَأۡتُم بِهِۦ وَلَٰكِن مَّا تَعَمَّدَتۡ قُلُوبُكُمۡۚ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمًا ٥ ﴾ [الاحزاب: ٥]

‘ভুলক্রমে কোনকিছু করে ফেললে এতে কোন গুনাহ হবে না। তবে জেনে শুনে ইচ্ছাকৃত ভাবে কোন অপরাধ করলে অবশ্যই এতে গুনাহ হবে। আল্লাহ তা‘আলা অতিশয় ক্ষমাশীল ও মেহেরবান’। (আহযাব : ৫)


অযু গোসলের সময় অসাবধানতা বশতঃ হঠাৎ করে কিছু পানি গলায় ঢুকে গেলে বা জোরপূর্বক খাওয়ানো হলে সিয়াম কি ভঙ্গ হয়ে যাবে?
উত্তর : না, ভঙ্গ হবে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

إِنَّ اللهَ وَضعَ عَنْ أُمَّتِى الْخَطَأ وَالنِّسْيَانَ وَمَا اسْتَكْرَهُوْا عَلَيْهِ

‘‘আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মাতের ভুল-ভ্রান্তি ও বাধ্য হয়ে ঘটে যাওয়া পাপরাশি মাফ করে দিবেন। (ইবন মাজা : ২০৪৫)



প্রশ্ন ২০ : সিয়াম অবস্থায় কেউ যদি ইচ্ছাকৃত বমি করে তাহলে তাকে কী করতে হবে?
উত্তর : এ সিয়াম আবার কাযা করতে হবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

مَنْ ذرعه قىء فَلَيْسَ عَلَيْهِ قَضَاءً وإن استقاء فليقض

যে ব্যক্তি অনিচ্ছা বমি করল তাকে উক্ত সিয়াম কাযা করতে হবে না। কিন্তু যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় বমি করল তাকে উক্ত সিয়াম অবশ্যই কাযা করতে হবে। (আবূ দাঊদ : ২৩৮০)



প্রশ্ন ২১ : ঋতুবর্তী মহিলারা কি কাযা করবে?

উত্তর : শুধুমাত্র সিয়াম কাযা করবে। সালাত কাযা করতে হবে না।

 আয়িশাহ (রা) বলেন :

كَانَ يُصِيبُنَا ذَلِكَ فَنُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّوْمِ وَلاَ نُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّلاَةِ

আমাদের (যখন) এটা ঘটত (অর্থাৎ মাসিক হতো)। তখন আমরা শুধু সিয়াম কাযা করতে আদিষ্ট হতাম। কিন্তু সালাত কাযা করতে আদিষ্ট হতাম না। (মুসলিম : ৩৩৫)



সিয়াম সম্পর্কে শরয়তী বিধান বুঝার জন্য আরো কিছু হাদিস নিম্নে দেয়া হল :

بَالِغْ فِي الاِسْتِنْشَاقِ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ صَائِمًا

(ক) সিয়াম অবস্থায় না থাকলে অযুর সময় নাকের ভিতর উত্তমরূপে পানি টেনে নেবে। (তিরমিযী : ৭৮৮)

كان رَسُولُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- يَصُبُّ الْمَاءَ عَلَى رَأْسِهِ وَهُوَ صَائِمٌ مِنْ الْعَطَشِ أَوْ مِنْ الْحَرِّ

(খ) সিয়াম অবস্থায় তাপ বা পিপাসার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মাথায় পানি ঢালতেন। (আবূ দাঊদ : ২৩৬৫)

لاَ بَأْسَ أَن يَّذُوْقَ الْخَلَّ أَوِ الشَّيْءَ مَالَمْ يَدْخُلْ حَلْقِهِ وَهُوَ صَائِمٌ

(গ) গলার ভিতর প্রবেশ না করলে সিয়াম অবস্থায় তরকারী বা খাদ্যের স্বাদ দেখতে কোন অসুবিধা নেই। (বুখারী : ৯২৭৭)

لَمْ يَرَ أَنَسٌ وَالْحَسَنُ وَإِبْرَاهِيْمُ بِالْكُحْلِ لِلصَّائِمِ بَأْسًا

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু, হাসান ও ইবরাহীম (রহ.) সিয়াম পালনকারীদের জন্য সুরমা ব্যবহার কোনরূপ অসুবিধা মনে করতেন না। (বুখারী : ১৯২৯)

كَانَ النَّبِيُّ -صلى الله عليه وسلم- يُقَبِّلُ وَيُبَاشِرُ وَهُوَ صَائِمٌ وَلكِنْ كَانَ أَمْلَكَكُمْ لِإِرْبِهِ

(ঘ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম অবস্থায় (স্ত্রী) চুম্বন করতেন, শরীরে শরীর স্পর্শ করতেন। কেননা, তিনি তার প্রবৃত্তির (যৌন চাহিদা) উপর তোমাদের চেয়ে অধিক নিয়ন্ত্রক ছিলেন। (বুখারী : ১৯২৭) অর্থাৎ তিনি পবিত্র অন্তরে ভালবাসতেন তাই আমরা যেহেতু ওনার মত না তাই পারবও না নিজেদের নিয়ন্ত্রন রাখতে এজন্য বিরত থাকাই ভাল।

أَنَّ النَّبِيَّ -صلى الله عليه وسلم- احْتَجَمَ وَهُوَ صَائِمٌ

(ঙ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম অবস্থায় নিজের শরীরে শিঙ্গা লাগিয়েছেন। (বুখারী : ১৯৩৮)




১৩শ অধ্যায়
أحكام القضاء والكفارة
সিয়ামের কাযা ও কাফফারার বিধান

প্রশ্ন ২২ : সিয়ামের কাযা ও কাফফারা কী জিনিস? এগুলো কীভাবে আদায় করতে হয়?
উত্তর : অনিচ্ছাকৃত বা উযরবশত ছুটে যাওয়া সাওমের বদলে কাযা, আর উযরছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেয়া সাওমের বদলে দিতে হয় কাফফারা। কাযা হলে সম পরিমাণ সাওম আদায় করতে হয়। আর কাফ্ফারা হলে, সাওম না রাখার কারণে সুনির্দিষ্ট কিছু কর্তব্য পালন করতে হয়। কাফফারা তিন ধরনের।

(১) গোলাম আযাদ করা, আর তা সম্ভব না হলে
(২) একাধারে ৬০টি রোযা রাখা, আর সেটিও সম্ভব না হলে
(৩) ৬০ জন মিসকীনকে এক বেলা খানা খাওয়ানো।



প্রশ্ন ২৩ : যে ব্যক্তি বিনা উযরে বিনা করণে অতীতে সিয়াম ভঙ্গ করেছে সে কীভাবে কাযা ও কাফফারা আদায় করবে?
উত্তর : এক রমযানের সাওম তাকে পরবর্তী রমযানের আগে আদায় করতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয় তবে সারা জীবনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা কাযা করে নিতে হবে। এবং প্রতি রোযার বদলে একটি রোযা পালন করতে হবে। আর তা রাখতে শারীরিকভাবে অক্ষম হলে একজন মিসকীনকে এক বেলা খানা খাওয়াতে হবে।



প্রশ্ন ২৪ : সিয়াম পালনে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু রোগীর কোন ক্ষতির আশঙ্কা নেই- কি করবে?
উত্তর : এ রোগী সিয়াম ভেঙ্গে ফেলবে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দার প্রতি অতিশয় দয়ালু। অবশ্য পরে এটা কাযা করে নেবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

﴿ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ ١٨٥ ﴾ [البقرة: ١٨٥]

‘‘কাজেই তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ (রমযান) মাস পাবে, সে যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে আর যে পীড়িত কিংবা সফরে আছে, সে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করবে, আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান, যা কষ্টদায়ক তা চান না যেন তোমরা মেয়াদ পূর্ণ করতে পার। (বাকারা : ১৮৫)



১৩শ অধ্যায়
অতি বৃদ্ধ, অচল ও চিররোগীদের সিয়াম


﴿ وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُۥ فِدۡيَةٞ طَعَامُ مِسۡكِينٖۖ ﴾ [البقرة: ١٨٤]
অর্থাৎ ‘‘শক্তিহীনদের উপর কর্তব্য হচ্ছে ফিদ্য়া প্রদান করা, এটা একজন মিসকীনকে অন্নদান করা।’’ (আল-বাকারা : ১৮৪)



১৪শ অধ্যায়
মুসাফিরের সিয়াম

প্রশ্ন ২৫ : মুসাফির কাকে বলে?
উত্তর : যে ব্যক্তি ভ্রমণ বা সফর করে তাকে সফররত অবস্থায় মুসাফির বলে। আবার যখন নিজ বাড়ী বা বাসভবনে চলে আসে তখন শরীয়াতের পরিভাষায় তাকে বলে মুকীম। মুকীম অর্থ হলো নিজ বাসস্থানে অবস্থানকারী ব্যক্তি অর্থাৎ মুসাফির নন।

পশ্ন ২৬ : কমপক্ষে কী পরিমাণ দূরত্ব অতিক্রম করলে অর্থাৎ সফর করলে একজন ভ্রমণকারী বা যাত্রীকে মুসাফির বলা যায়?
উত্তর : হানাফী মাযহাবে কমপক্ষে ৪৮ মাইল। অন্যান্য মাযহাবে সফরের নিম্নতম দূরত্ব আরো কম।

প্রশ্ন ২৭: মুসাফির অবস্থায় সিয়াম ও সালাতের নিয়ম কি?
উত্তর : মুসাফির অবস্থায় সিয়াম ভঙ্গ করা জায়েয এবং চার রাকআত বিশিষ্ট ফরয সালাতগুলো ২ রাকআত করে পড়বে। সে সময় ফরয নামাযের আগে বা পরে যে সমস্ত সুন্নাতে রাতেবাহ আছে সেগুলো পড়তে হবে না।



প্রশ্ন ২৮ : মুসাফিরের রোযা ভঙ্গ করলে পরবর্তীকালে তা কাযা করবে কি না?
উ: হ্যাঁ, কাযা করতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

﴿ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۚ ﴾ [البقرة: ١٨٤]

‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অসুস্থ কিংবা মুসাফির সে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করে (কাযা করে) নিবে। (বাকারা : ১৮৪)

প্রশ্ন ২৯: সফরে সিয়াম ভঙ্গ করা কি বাধ্যতামূলক নাকি ইচ্ছাধীন?
উত্তর : ইচ্ছাধীন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

صُمْ إِنْ شِئْتَ وَأَفْطِرْ إِنْ شِئْتَ

‘‘ইচ্ছা করলে সিয়াম পালন কর এবং চাইলে ভেঙ্গেও ফেলতে পার।’’ (মুসলিম : ১১২১)

প্রশ্ন ৩০ : সফরে সিয়াম পালন করা উত্তম না ভঙ্গ করা উত্তম।
উত্তর : মুসাফিরের জন্য যেটা সহজ সেটাই উত্তম। সফররত অবস্থায় সিয়াম পালন যদি কষ্টকর হয়ে যায় তাহলে ভেঙ্গে ফেলাই উত্তম। অতি বেশি কষ্টকরে সিয়াম পালন করা ঠিক নয়।

(ক) আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

﴿ يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ ﴾ [البقرة: ١٨٥]

‘‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ চান, কঠিন চান না।’’ (বাকারাহ : ১৮৫)

(খ) মাক্কাহ বিজয়ের বৎসর মাক্কার উদ্দেশ্যে কুরা আলগামীম নামক স্থানে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের সামনে আসর বাদ সিয়াম ভঙ্গ করে পানি পান করলেন। (মুসলিম : ১১১৪)

(গ) জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু’র এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, সফরে কষ্ট হওয়ার পর ও একদল লোক সিয়াম পালন করেই যাচ্ছে। বিষয়টি জানার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

أُولَئِكَ الْعَصَاةُ أُولَئِكَ الْعَصَاةُ

‘‘তারা পাপী তারা পাপী।’’ (মুসলিম : ১১১৪)


উপরোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সফররত অবস্থায়- অতিমাত্রায় কষ্ট করে সিয়াম পালন করা পরহেজগারীর কাজ নয়, বরং এটা পাপের কাজ।

(ঘ) একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজায়গায় কিছু মানুষের ভীড় দেখে এগিয়ে দেখলেন যে, এক লোককে ছায়া দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেলেন, সে কে? লোকেরা বলল, এ ব্যক্তি রোযাদার। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন :

لَيْسَ مِنَ الْبِرِّ اَلصِّيَامُ فِي السَّفَرِ

‘‘সফরে সিয়াম পালন করা ভালকাজ নয়। (বুখারী : ১৯৪৬; মুসলিম : ১১১৫)

এসব দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয় যে, সফর কষ্টকর হলে রোযা না রাখাই শ্রেয়। আর ভ্রমণ যদি খুব বেশি কষ্টের না হয় তাহলে সিয়াম পালন করাই উত্তম।


১৫শ অধ্যায়
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের সিয়াম


প্রশ্ন ৩১ : গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীরা কি সিয়াম পালন করবে নাকি ভঙ্গ করবে?

উত্তর : গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারীণী সিয়াম পালন করলে নিজের বা সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকুক বা না থাকুক উভয় অবস্থায় তাদের সিয়াম ভঙ্গ করা জায়েজ আছে এবং পরে তা কাযা করে নেবে। পরে করলে তারা সিয়াম পালনও করতে পারে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

إِنَّ اللهَ تَعَالَى وَضَعَ عَنْ الْمُسَافِرِ الصَّوْمَ وَشَطْرَ الصَّلاَةِ وَعَنْ الْحَامِلِ أَوْ الْمُرْضِعِ الصَّوْمَ أَوْ الصِّيَامَ

‘‘আল্লাহ রববুল ‘আলামীন মুসাফিরদের সালাত অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছেন এবং গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের সিয়াম না রেখে পরে আদায় করার অবকাশ দিয়েছেন। (তিরমিযী : ৭১৫)
তাদের বিষয়টি সাধারণ রোগী ও মুসাফিরের সিয়ামের মাসআলার অনুরূপ।


প্রশ্ন ৩২ : ফিদইয়ার পরিমাণ কত?
উত্তর : এক মুদ (৫১০ গ্রাম) পরিমাণ গম।

تُفْطِرُ وَتُطْعِمُ مَكَانَ كُلِّ يَوْمٍ مِسْكِيْنًا مُدًّا مِنْ حِنْطَةٍ

অর্থাৎ প্রতি একদিনের রোযার বদলে একজন মিসকীনকে এক মুদ (৫১০ গ্রাম) পরিমাণ গম (ভাল খাবার) প্রদান করবে। (বাইহাকী : ৪/৩৮৯)


প্রশ্ন ৩৩ : হায়েয ও নিফাস থেকে পবিত্র হওয়ার পর সালাত, রোযা কীভাবে কাযা করবে?
উত্তর : সালাত কাযা করতে হবে না। তবে এ কারণে যতটা রোযা ভাঙ্গা গেছে ঠিক ততটা রোযাই আবার কাযা করতে হবে।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন :

فَنُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّوْمِ وَلاَ نُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّلاَةِ

‘‘সিয়াম কাযা করতে আমাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছিল, কিন্তু সালাত কাযা করতে আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয় নি।’’ (মুসিলম : ৩৩৫)


প্রশ্ন ৩৩ : হায়েয ও নিফাসওয়ালী মহিলা কীভাবে বুঝবে যে সে ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হয়ে গেছে?
উত্তর : যখন দেখবে যে তার ঋতুস্রাব সাদা রঙে পরিণত হয়ে গেছে, তখন বুঝবে সে পাক হয়ে গেছে।

আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলতেন :

لاَ تَعْجَلْنَ حَتَّى تَرَيِنَّ الْقِصَّةَ الْبَيْضَاءَ

‘‘তোমরা তাড়াহুড়া করে হায়েয বন্ধ হয়ে গেছে মনে করো না। যতক্ষণ না শুভ্র পানি দেখতে পাও।’’ (বুখারী : ৩১৯)







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন