★★★ প্রশ্ন : আমরা যাকে পীর মুরিদ করা বলে থাকি মানে হল বায়াত করা এবং হওয়া এর বিধান কি কোরআন হাদিসে কোথাও আছে?
উত্তর : ★ হে রাসূল! যেসব লোক আপনার নিকট বাইয়াত হচ্ছিল, তারা আসলে আল্লাহর নিকটই বাইয়াত হচ্ছিল। তাদের হাতের উপর আল্লাহর কুদরতের হাত ছিল।হে রাসূল! আল্লাহ মুমিনদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন তারা গাছের নীচে আপনার নিকট বাইয়াত হচ্ছিল। (সূরা ফাতহ ঃ ১৮)
★ অপর আয়াতে আল্লাহ বাইয়াত বা প্রতিশুতি বদ্ধ হওয়ার পর তা রক্ষাকারী সম্পর্কে বলেন :-
فَلْيُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللّهِ الَّذِينَ يَشْرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالآخِرَةِ وَمَن يُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللّهِ فَيُقْتَلْ أَو يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا
যে ব্যক্তি তার ওয়াদা (প্রতিশ্রুতি) পূর্ণ করবে এবং তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করবে, সে আল্লাহ পাকের প্রিয়জন হবে। আর নিশ্চিতভাবে আল্লাহ পাক মুত্তাকীদের ভালবাসেন। (সূরা আলে ইমরান ঃ ৭৬)
★ সহিহ হাদীসে আছে :-
عَنْ اِبْنِ عُمَرَ (رض) عَنِ النَّبِيْ (صلعم) قَالَ مَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِيْ عُنُقِه بَيْعَ’ُ مَاتَ مَيْتَةً جَاهِلِيْةً ـ (مسلم )
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) রাসূলে পাক (সা) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন,যে ব্যক্তি বাইয়াতের বন্ধন ছাড়াই মারা গেল সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল। (মুসলিম)
★ অপর হাদিসে আছে :-
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنْ دِيْنَارٍ (رض) اَنَّهُ سًمِعَ اللهِ بْنْ عُمَرَ (رض) يُقَوْلُ كُنَّا نَبَايِعْ رَسُوْلُ اللهِ (صلعم) عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ يَقًُوْلُ لََنَا فِيْهَا اِسْتَطَيْعْتُمْ ـ (مسلم)
★ আব্দুল্লাহ ইবনে দিনার (রা) হতে বর্ণিত, তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) কে বলতে শুনেছেন যে, আমরা রাসূল (সা) এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করতাম, শ্রবণ ও আনুগত্যের উপর এবং তিনি আমাদের সামর্থ্য উক্ত আমল করার অনুমতি দিয়েছেন। (মুসলিম)
★★★ পীরে-মুর্শিদ বা ওলী ধরতে হবে, এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআন পাকে বহু নির্দেশ বা ইংগিত আছে ।
** তবে পীর শব্দটি পবিত্র কোরআন পাকে নেই। কারন পীর শব্দটি ফার্সি ভাষা হতে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে । যেমনঃ নামাজ, রোজা, ফিরিস্তা, খোদা, ইত্যাদি শব্দগুলো কোরআন শরীফে-এ নেই। কারন উহা ফার্সি শব্দ, তবে এর প্রতিটি ফার্সি শব্দেরই প্রতিশব্দ কোরআন শরীফে আছে, যেমনঃ নামাজ-সালাত, রোজা-সাওম, ফিরিশ্তা-মালাকুন ইত্যাদি।
** আবার সালাত আরবি শব্দটি স্থান বিশেষ বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। অনুরূপ ভাবে পীর ফার্সি শব্দের প্রতিশব্দ পবিত্র কোরআন শরীফের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন শব্দে প্রকাশ করেছেন, যথাঃ 'অলি' বহুবচনে আউলিয়া, মুর্শিদ, ইমাম, বহুবচনে আইম্মা, হাদি, ছিদ্দিকিন, ইত্যাদি।
নিম্নে পবিত্র কোরআন শরিফের কিছু আয়াত অর্থসহ পেশ করা হলঃ-
(১) হে মুমিনগণ! তোমরা অনুস্মরণ কর, আল্লাহ্ পাক এর, তাঁর রাসুল পাক (সাঃ) এর এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর রয়েছে তাদের।
[সুরা ৪ নিসা: ৫৯]।
(উলিল আমর এর মানে হল ন্যায় বিচারক/ধর্মীয় নেতা/ওলি-আউলিয়া/পীর-মুর্শিদ ইত্যাদি শব্দ ধরা যেতে পারে)
(২) স্মরণ কর! সেই দিনকে যেদিন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাঁদের (ইমাম) ধর্মীয় নেতা সহ আহ্বান করব।
[সুরা ১৭ বনী-ইসরাঈল: ৭১]
★ যারা তোমাদের ধর্ম মতে চলবে, তাদের ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করবে না। বলে দিন নিঃসন্দেহে হেদায়েত সেটাই, যে হেদায়েত আল্লাহ করেন। আর এসব কিছু এজন্যে যে, তোমরা যা লাভ করেছিলে তা অন্য কেউ কেন প্রাপ্ত হবে, কিংবা তোমাদের পালনকর্তার সামনে তোমাদের উপর তারা কেন প্রবল হয়ে যাবে! বলে দিন, মর্যাদা আল্লাহরই হাতে; তিনি যাকে ইচ্ছা।
(৩) নিজের বিশেষ অনুগ্রহ দান করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। [সুরা ৩ ইমরান: ৭৩-৭৪] ।
(৪) অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত। [সুরা ৩৬ ইয়া-সীন: ২১]।
(এখানে রাসুলের কথা বলা হয়েছে রাসুলুল্লাহ (সা) এর দ্বীন প্রচারের সিলসিলা কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে আল্লাহর ওলীগন এ দ্বীন প্রচার করে যাচ্ছেন যেমন ইন্দুস্থানে হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতী আজমিরি (রহ) ৯০ লক্ষ মুসলমান করেছিল। বাংলাদেশে কোন নবী আসে নি সাহাবীও না ওলীগন দ্বারা কোটি কোটি মুসলমান হয়েছে। তাদের কাছে মুসলমানগন বায়াত গ্রহন করেছিল মুরিদ হয়েছিল।)
(৫) যে বিশুদ্ধ চিত্তে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো। [সুরা ৩১ লুকমান: ১৫]।
(এখানে কামেল পীরের কাছে বায়াত গ্রহন করার ইংগীত হয়েছে শরীয়ত বিরোধী কোন নামধারী পীর এর কাছে নয়)
(৬) অতএব তোমরা যদি না জান তবে যারা জানেন তাদের নিকট হতে জেনে নাও। [সুরা ২১ আম্বিয়া: ৭]।
★ কিয়ামতের আগে মানুষ মুর্খতা বশত জ্ঞানহীন মানুষ এর কাছ থেকে ফতোয়া জিজ্ঞেস করবে যারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট অন্যকেও পথভ্রষ্ট করবে।(আল-হাদিস)
তাই এমন কারো কাছ থেকে ইসলামকে জানার জন্য শিখার জন্য আল্লাহর হুকুম বা ইংগীত যাদের কাছে ইলমে লাদ্দুনি তথা আল্লাহর পক্ষ থেকে খাটি জ্ঞান রয়েছে আর ওলী তাদেরকেই বলা হয় যারা আল্লাহর বন্ধু যাদের নিকট ইলমে লাদ্দুনি রয়েছে তাদেরকে না যারা নাকি শরীয়ত বিরোধী মুর্খ তাই এখানে বর্তমানে কামেল ওলীর চাইতে উত্তম আর কে হতে পারে যার কাছে সঠিক জ্ঞান পাবে কারন নবী-রাসুল- সাহাবাগন তো এখন নেই)
(৭) হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং (ছাদেকিন) সত্যবাদীগণের সঙ্গী হয়ে যাও। [সুরা তাওবা: ১১৯]।
(কামেল পীর বা ওলী বুজুর্গ হওয়ার ১ম শর্ত সত্যবাদী বলা যায় আব্দুল কাদির জিলানী (রা) ছোট বেলায় ডাকাতের হামলার শিকার হয়েও মায়ের কথামত ওনার কাছে লুকানো স্বর্নের কথা গোপন করে নি ওনার সেই সত্য প্রকাশ করার পর ডাকাতরা ডাকাতি করতে এসে ভাল হয়ে ইমানদার হয়ে গেছিল। অন্য কারো এমন কারামত পাবেন না এটা পাওয়ার জন্য পীর-ফকির/ ওলী-দরবেশের কাছেই যেতে হবে)
(৮) নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাকের রহমত (মুহসিনিন) আউলিয়া কিরামগনের নিকটবর্তী । [সুরা ৭ আরাফ: ৫৬]।
(৯) আল্লাহ্ যাকে সৎপথে পরিচালিত করেন, সে সৎপথ প্রাপ্ত হয় এবং তিনি (আল্লাহ্) যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তাঁর জন্য কোন পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না। [সুরা কা’হফ: ১৭]।
(সিদ্ধান্ত আপনার কাছে আল্লাহর কোন হেদায়াতপ্রাপ্ত ওলীর কাছে যাবেন তাদের অনুগত থাকবেন নাকি জালিমের কাছে যাবেন)
(১০) সাবধান! নিশ্চয় আল্লাহর অলিগণের কোন ভয় নেই এবং তারা কোন বিষয় এ চিন্তিতও নহেন। তাঁদের জন্য আছে সুসংবাদ দুনিয়া ও আখেরাতে, আল্লাহর কথার কোন পরিবর্তন বা হের-ফের হয় না, উহাই মহা সাফল্য। [সুরা ১০ ইউনুস: ৬২-৬৪]।
(১১) হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্ পাককে ভয় কর এবং তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় বা ওয়াছিলা তালাশ কর।[সুরা ৫ মায়েদা: ৩৫]।
(বহু সহিহ হাদিসে আসছে যে সাহাবীগন রাসুলুল্লাহ (সা) এর উসিলা দিতেন বা ওনারা একে অন্যের উসিলা দিতেন এখন আমরা নবী-রাসুল, সাহাবী, ইমাম, ওলী-আউলিয়ার উসিলা দেই)
(১২) “যে দয়াময় আ̂ল্লাহর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছ, সে ব্যাতীত আর কেউ সুপারিশ করার অধিকারী হবে না”। [সুরা ১৯ মারঈয়াম: ৮৭]
- এখন জানতে হবে তাহলে কারা তারা যারা আমাদের জন্য শুপারিশ করবে?
তারা হলেন নবীজি রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, শহীদগন এবং আল্লাহর প্রিয় অলীগণ এবং অন্যন্য কারো কিছু সম্প্রদায়। তাহলে ওহাবীদের যদি ওলীগনের শুপারিসকে তুচ্ছ মনে হয় তাদের দরকার নেই কিন্তু আমাদের দরকার আছে সবার সুপারিশ। এ ব্যপারে বিস্তারিত জানতে চাইলে এখানে ভিজিট করুন বিশাল বড় একটা পোস্ট :-
★★★ প্রশ্ন : পীর- আউলিয়াগন কি শাফায়াত করতে পারবে?
উত্তর :
★ শাফায়েত যারা যারা করবেন (কুরআন ও হাদিসের আলোকে) :-
http://goo.gl/JSBAS6
পীর-আউলিয়াগনের শাফায়াত এর ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত বলে দিচ্ছি :-
★ “তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা আছে, তা তিনি (আ̂ল্লাহ) জানেন। তারা (নবীজি রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এবং আল্লাহর প্রিয় অলীগণ) শুধু তাদের জন্যে সুপারিশ করে, যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট এবং যারা আ̂ল্লাহর ভয়ে ভীত”। [সুরা ২১ আম্বিয়া: ২৮]
(Note: ব্রেকেট দিয়ে আয়াতের ব্যাখ্যা বুঝানোর জন্য কুরআন হাদিস বা এই আয়াতের সাথে সংগত কিছু আলাদা করে বুঝানো যায় এটা সকল মুফাসসিরে কেরাম করে থাকেন বুঝার সুবিধার জন্য। এখানে নিজের কথাকে আলাদা করা হয়েছে । এটা আয়াতের সাথে শুধুই সম্পর্কিত কিন্তু তা আয়াতের অন্তর্ভুক্ত না।)
★ “নিশ্চই আমি(আ̂ল্লাহ) আপনাকে(নবীজি রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে) কাওসার(জান্নাতের একটা নহর) দান করেছি”। [সুরা ১০৮ কাউসার: ১]
★ রাসুলুল্লাহ (সা) সর্ব প্রথম শাফায়াতে কুবরার অনুমতি পাবেন (মাকামে মাহমুদ শুধু রাসুলুল্লাহ (সা) এর জন্য) আর এর পরে আল্লাহ অনুমতিতে রাসুলুল্লাহ (সা) এর সম্মতিতে অন্যরা সুপারিশ করার ক্ষমতা পাবেন।)
★ হজরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহুতালা আনহু হতে বর্ণিতঃ আমি নবীজি রাসূলুল্লাহ্ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আমি হবো কিয়ামতের দিন আদম সন্তানের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি এবং আমিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যার কবর প্রথম খুলে যাবে, আমিই সর্বপ্রথম সুপারিশকারী এবং সর্বপ্রথম আমার সুপারিশ গ্রহনযোগ্য হবে’।
– (সাহহী মুসলিম শরীফ খন্ড ৭, পৃঃ ৩৫৩, হাদীস নং-৫৭৭২।)
★ ‘যখন আল্লাহর অলীগণ দেখবে যে তারা মুক্তি পেয়ে গেল, তখন তাদের মুমীন ভাইদের জন্য তারা আল্লাহর কাছে আবেদন করবে "হে আমার প্রতিপালক এরা আমাদের ভাই, যাদেরকে তুমি জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছ তারা আমাদের সাথে নামাজ পড়ত, আমাদের সাথে রোজা রাখত এবং আমাদের সাথে সতকাজ করত"। তখন আল্লাহ বলবেন "যাদের অন্তরে শুধুমাত্র এক দিনার ওজন পরিমাণও ঈমান পাবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আস। তাদের মুখমন্ডল তথা আকৃতিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দেওয়া হয়েছে"। অতঃপর তারা (অলীগণ) সেখানে জাহান্নামীদের নিকট যাবেন। সেখানে গিয়ে দেখবেন কেউ কেউ পা পর্যন্ত কেউ পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত আগুনে ডুবে আছে। এর মধ্যে যাদের তারা চিনবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসবে’।‘ (সহীহ বুখারী , খন্ড ২ পৃষ্ঠা ১১০৭ । হাদীস নং ৭০০১)
★ আমরা ওলীগন দের ভালবাসি আর তাদের কাছে বায়াত হলে ওহাবীরা আমাদের বিরোধীতা তো করেই ওলীগন দেরও ছাড়ে না। ওলীগনের শানে বিরোধীদের হুশিয়ারি আল্লাহ দিয়েছেন হাদিসে কুদসীতে :-
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: যে ব্যক্তি আমার অলীর সাথে শত্রুতা করে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করছি। আমার বান্দার প্রতি যা ফরয করেছি তা দ্বারাই সে আমার অধিক নৈকট্য লাভ করে। আমার বান্দা নফল কাজের মাধ্যমেও আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে। অবশেষে আমি তাকে ভালবেসে ফেলি। যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার কান হয়ে যাইযা দিয়ে সে শোনে, তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে এবং তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলাফেরা করে। সে আমার কাছে কিছু চাইলে, আমি তাকে তা দেই। সে যদি আমার নিকট আশ্রয় কামনা করে, তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি যা করার ইচ্ছা করি, সে ব্যাপারে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগি না কেবল মুমিনের আত্মার ব্যাপার ছাড়া। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার মন্দকে অপছন্দ করি। [বুখারী: ৬৫০২]
★ সাবধান! নিশ্চয় আল্লাহর অলিগণের কোন ভয় নেই এবং তারা কোন বিষয় এ চিন্তিতও নহেন। তাঁদের জন্য আছে সুসংবাদ দুনিয়া ও আখেরাতে, আল্লাহ্র কথার কোন পরিবর্তন বা হের-ফের হয় না, উহাই মহা সাফল্য। [সুরা ১০ ইউনুস: ৬২-৬৪]।
★ আল্লাহ পাক বলেন, “তোমরা সব আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও”। (সূরা ইমরান-৭৯)
(আর সেই আল্লাহ ওয়ালাদের সংগ ছাড়া কেমনে আল্লাহ ওয়ালা হবেন? কথায় আছে না "সত সংগে স্বর্গ বাস অসত সংগে সর্বনাশ" ওহাবীরা যদি শয়তানের সংগ চায় তাই করুক আমরা কামেল পীর-আউলিয়াগনের সংগ নিব)
★★★ এখন আসুন আমরা কাদের থেকে দ্বীন শিখব তা একটু জেনে নেই বুঝে নেই :-
১) এক ব্যক্তি এমন কোন বিদ্বানকে শিক্ষক হিসেবে ধরেছে যার কুরআন হাদিস জানা আছে ঠিকই কিন্তু ইলমে লাদ্দুনী নেই তাই সে যেভাবে বুঝে সেই ভাবেই ফতোয়া দেয়। নাকি
২) অপর ব্যাক্তি যে এমন একজন কামেল ওলীর কাছে দ্বীন শিখতে গিয়ে বায়াত হয়েছে যার আছে খোদা প্রদত্ত ইলমে লাদ্দুনী আছে আর যে তার কাশফকে (অন্তর চক্ষু বা বাতেনী চক্ষু) জাগ্রত করেছে।
কে সর্বাপেক্ষা উত্তম হবে?
★ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ করেন,
“প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য (দ্বীনের অপরিহার্য শরীয়তী) ইলম অর্জন করা ফরয।
(বায়হাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, শরহুত্ ত্বীবী, মোযাহেরে হক্ব, আশয়াতুল লুময়াত)
★ হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ইলম দু’প্রকার-
(১) ক্বল্বী ইলমে অর্থাৎ ইলমে তাছাউফ। আর এটাই মূলতঃ উপকারী ইলম।
(২) যবানী ইলম অর্থাৎ ইল্মে ফিক্বাহ্, যা আল্লাহ্ পাক,এর পক্ষ হতে বান্দার জন্য দলীল।
(দারিমী, তারগীব ওয়াত তারহীব, তারীখ, আব্দুল বার, দাইলামী, বায়হাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব)
★ কুরআন শরীফ-এ আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার রহমত মুহসিন বা আল্লাহওয়ালা গণদের নিকটে।” (সূরা আ’রাফ : আয়াত শরীফ ৫৬)
★ আল্লাহ পাক বলেন, “যদি তোমরা না জানো, তবে জ্ঞানীদেরকে (আহলে যিকির বা আল্লাহওয়ালাগণকে) জিজ্ঞেস করে জেনে নাও”। (সূরা নহল ৪৩ ও সূরা আম্বিয়া-৭)
★ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন শিক্ষা করছ, তাকে দেখে নাও”। (মুসলিম শরীফ)
এ আয়াতে কারীমায় সুষ্পষ্টভাবে আল্লাহর হেদায়াতপ্রাপ্ত বুযুর্গদের সাহচর্যে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে:-
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ
অনুবাদ- আমাদের সরল সঠিক পথ [সীরাতে মুস্তাকিম] দেখাও। তোমার নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দাদের পথ।{সূরা ফাতিহা-৬,৭}
★ সূরায়ে ফাতিহায় মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর নিয়ামাতপ্রাপ্ত বান্দারা যে পথে চলেছেন সেটাকে সাব্যস্ত করেছেন সীরাতে মুস্তাকিম।আর তার নিয়ামত প্রাপ্ত বান্দা হলেন –
الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ
অনুবাদ-যাদের উপর আল্লাহ তাআলা নিয়ামত দিয়েছেন, তারা হল নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ, ও নেককার বান্দাগণ।{সূরা নিসা-৬৯}
** আর নেককারদের মধ্যে এখন সর্বোত্তম কাউকে
খুজলে ওলী-আউলিয়া কামেল পির বুজুর্গ ছাড়া আর কাউকে পাবেন না কারন বারবার বলছি এখন নবী-রাসুল বা কোন সাহাবীকে তো আর পাচ্ছেন না।)
★ আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে নির্দেশ দিয়েছেন –
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ
অনুবাদ:- হে মুমিনরা! আল্লাহকে ভয় কর, আর সৎকর্মপরায়নশীলদের সাথে থাক।{সূরা তাওবা-১১৯)
আমরা আসলে পীরের হাতে হাত রেখে বা তাদের হক তরিকার উপর তখনি বাইয়াত হই যখন তা রাসুলুল্লাহ (সা) এর তরিকা অনুযায়ী হয়। মুলত আমরা তাদের কাছে বাইয়াত হচ্ছি না আমাদের মুল শিকর হল বিশ্বাস হল রাসুলের তরিকার উপর বাইয়াত হচ্ছি।
★★★ বাইয়াত শাব্দিক বিশ্লেষণ :
** “বাইয়াত” শব্দের উৎপত্তি হয়েছে, “বাইয়ুন” শব্দ থেকে।
** “বাইয়ুন” শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে “ক্রয়-বিক্রয়”
** এখানে এই “ক্রয়-বিক্রয়” মানে হচ্ছে আমার আমিত্বকে আল্লাহর রাহে (ওয়াস্তে) রাসূলের নিকট গিয়ে কোরবান করে দিলাম,বিলিন করে দিলাম,বিক্রি করে দিলাম।
★ আমার আমিত্ব, আমার যত অহংকার আছে, অহমিকা আছে, আমি আমি যত ভাব আছে সমস্তকিছু আল্লাহর রাসুলের কাছে গিয়ে আল্লাহর রাহে সম্পূর্ণরূপে উৎসর্গ করে দেয়া, কোরবান করে দেয়া, নিজেকে আল্লাহ্ তে সম্পূর্ণ রূপে আল্লাহর কাছে সমর্পন করে দেয়াই হল বাইয়াত ।
অন্য ভাষায় মুরিদ মানে হল বাইয়াত হওয়া।
★ হে রাসূল! যেসব লোক আপনার নিকট বাইয়াত হচ্ছিল, তারা আসলে আল্লাহর নিকটই বাইয়াত হচ্ছিল। তাদের হাতের উপর আল্লাহর কুদরতের হাত ছিল।হে রাসূল! আল্লাহ মুমিনদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন তারা গাছের নীচে আপনার নিকট বাইয়াত হচ্ছিল। (সূরা ফাতহ ঃ ১৮)
★ অপর আয়াতে আল্লাহ বাইয়াত বা প্রতিশুতি বদ্ধ হওয়ার পর তা রক্ষাকারী সম্পর্কে বলেন :-
فَلْيُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللّهِ الَّذِينَ يَشْرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالآخِرَةِ وَمَن يُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللّهِ فَيُقْتَلْ أَو يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا
যে ব্যক্তি তার ওয়াদা (প্রতিশ্রুতি) পূর্ণ করবে এবং তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করবে, সে আল্লাহ পাকের প্রিয়জন হবে। আর নিশ্চিতভাবে আল্লাহ পাক মুত্তাকীদের ভালবাসেন। (সূরা আলে ইমরান ঃ ৭৬)
★ সহিহ হাদীসে আছে :-
عَنْ اِبْنِ عُمَرَ (رض) عَنِ النَّبِيْ (صلعم) قَالَ مَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِيْ عُنُقِه بَيْعَ’ُ مَاتَ مَيْتَةً جَاهِلِيْةً ـ (مسلم )
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) রাসূলে পাক (সা) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন,যে ব্যক্তি বাইয়াতের বন্ধন ছাড়াই মারা গেল সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল। (মুসলিম)
★ অপর হাদিসে আছে :-
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنْ دِيْنَارٍ (رض) اَنَّهُ سًمِعَ اللهِ بْنْ عُمَرَ (رض) يُقَوْلُ كُنَّا نَبَايِعْ رَسُوْلُ اللهِ (صلعم) عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ يَقًُوْلُ لََنَا فِيْهَا اِسْتَطَيْعْتُمْ ـ (مسلم)
★ আব্দুল্লাহ ইবনে দিনার (রা) হতে বর্ণিত, তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) কে বলতে শুনেছেন যে, আমরা রাসূল (সা) এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করতাম, শ্রবণ ও আনুগত্যের উপর এবং তিনি আমাদের সামর্থ্য উক্ত আমল করার অনুমতি দিয়েছেন। (মুসলিম)
★ আর ওহাবীরা এগুলো জেনেও সাধারন মুসলমান ভ্রান্ত পথে টানছে গোমরাহী করছে যেমন :-
১) রাসুলের হাতে সমস্ত সাহাবীগন বাইয়াত হয়েছেন।
২) রাসুলুল্লাহ (সা) এর ওফাতের পর সমস্ত সাহাবীগন একে একে আবু বকর (রা), ওমর (রা), হযরত ওসমান (রা), হযরত আলী (রা) এই ভাবে সমস্ত সাহাবীগন তাদের যুগের নেতৃস্থানীয় যাকে উত্তম মনে করেছেন সবাই মিলে তার কাছে বাইয়াত হয়েছেন।
৩) অত:পর আহলে বাইয়াতের ইমামগনের নিকট যেমন : ইমাম হাসান (রা) , ইমাম হোসাইন (রা) এর নিকট মুসলমানগন বাইয়াত হয়েছেন।
ইয়াজিদ (লানতুল্লাহ) তার না-জায়েয ক্ষমতার উপর বাইয়াত হতে জোর জবরদস্তি করলে হক আর বাতিলকে প্রতিষ্টা করার জন্য তার বিরোদ্ধে কারবালায় যুদ্ধ করে ইমাম হোসাইন (রা) শহীদ হয়।
৪) সেই সিলসিলা অনুযায়ী ৪ মাযহাবের ইমামগন হকের উপর মুসলমানদের বাইয়াত করেছেন।
৫) তাদের পরবর্তীতেও এমন কোন হক পীর-বুজুর্গ বা জ্ঞানী পন্ডিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন না যারা কামেল পীর বা ইমামগনের নিকট বাইয়াত হন নি। এমনকি ওলীকুল সম্রাট গাউসুল আজম পীরানে পীর দস্তাগীর (রহ) তিনিও কামেল পীরের নিকট বাইয়াত হয়েছিলেন।
৬) বর্তমানেও সেই সিলসিলা জারি আছে কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। কামেল বেক্তির হাতে হাত রেখে ওয়াদা করা ও নিজেকে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল এর পথে সমারপিত করা জায়েজ।
(কারন কামেল বেক্তি অবশ্যই আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল (সঃ) এর প্রিয়)
★ এজাজতনামা :
এজাজত এর অর্থ অনুমতি সন্মতি ইত্যাদি এজাজতনামা অর্থঃ অনুমতিপত্র উদাহরনসহ বুঝিয়ে দিলাম এই এজাযতনামা যা নবীজি (স:)
★ প্রথম সাহাবীদের বাইয়াত করেন যেটি আকাবার শফত নামে আমরা জানি ,
★ পরবতীতে এটি খোলফায়ে রাশেদীন, তবেয়ী (ইমাম হাসান বসরী রঃ) তাবে তাবেয়ীন
★ এই ভাবে ওলীগনের বংশগত হক তরিকা অর্থাৎ বাইয়াত করার যোগ্যতা রাখে তাদের মাধ্যমে এই সিলসিলা চলতে থাকে।
★যেমনটা (জোনায়েদ বাগদাদী রঃ) মাধ্যমে আব্দুল কাদের জিলানী (রঃ) আসতে থাকে, এটির একটি লিখিত Permission আছে , এটিকে” এজাজত নামা ) বলে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন