শুক্রবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

নারী ও পুরুষের নামাজের মধ্যে পার্থক্য :-



০) * নারীর জন্য আযান-ইকামত নেই পুরুষের জন্য তা ওয়াজিব :-

★ পুরুষ :-

সালাতের কার্যাদি শুরু করার প্রাথমিক ধাপ আযান দেওয়া । এ প্রসঙ্গে অসংখ্য হাদীস শরীফ বর্নিত হয়েছে । তন্মধ্যে দু-একটি উল্লেখ করছি । ইমাম বুখারী (রহঃ) বর্ননা করেন, নবী করিম (সঃ) বলেন

যখন সালাতের সময় উপস্থিত হবে তখন তোমাদের একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মাঝের বড়জন ইমামতি করবে ।
— সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২৮
ইমাম আহমাদ (রহঃ) বর্ননা করেন- নবীজি (সঃ) বলেন

কোন গ্রামে তিনজন থাকাকালে আযান ও জামা’আত অনুষ্ঠিত না হলে শয়তান তাঁদের উপর বিজয়ী হয় ।
— আহমদ ,হাদিস নং ২১৭১০, সকল ইমামের মতে হাদিসখানা গ্রহনযোগ্য । লা-মাযহাবীদের মান্যবর মুহাদ্দিস শুয়াইব আল আরনাউত এ হাদীসকে হাসান(উত্তম) বলেছেন

★ নারী :-

ইমাম বায়হাকী (রহঃ) সহীহ্‌ সনদে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ননা করেন নবীজী (সঃ) বলেছেন

মহিলাদের উপর আযান ও ইকামত কোনটিই নেই ।
— সুনানে কুবরা, হাদীস নং ১৯২০,
কাজী শাওকানী হাদীসখানাকে সহিহ বলেছেন  নাইলুল আওতার ২/৩৯
আরো সহিহ হাদীসে রয়েছে

মহিলাগন অষ্পষ্টভাষী ও আচ্ছাদিত থাকার বস্ত । সুতরাং তোমরা তাঁদের অস্পষ্টতাকে চুপ থাকার দ্বারা এবং ঘরে থাকার দ্বারা তাদের গোপনীয়তাকে রক্ষা কর ।
— তারতীবুল আমালী , হাদিস নং ২০১



১) তাকবীরে তাহ্‌রীমার সময় পুরুষ চাদর ইত্যাদি হইতে হাত বাহির করিয়া কান পর্যন্ত উঠাইবে, যদি শীত ইত্যাদির কারণে হাত ভিতরে রাখার প্রয়োজন না হয় । স্ত্রীলোক হাত বাহির করিবে না, কাপড়ের ভিতরে রাখিয়াই কাঁধ পর্যন্ত উঠাইবে । - তাহ্‌তাবী

★ সালাতে পুরুষগণ কান বরাবর হাত উত্তোলন করবে । এ বিষয়ে অনেক হাদীস শরীফ বর্নিত হয়েছে । ইমাম দারা কুতনী (রহঃ) বর্ননা করেন হযরত আনাস (রাঃ) বলেন,

রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন সালাত শুরু করতেন তাকবীর বলে দু’হাত এমনভাবে উঠাতেন যে দু’বৃদ্ধাঙ্গুলী কান বরাবর হত ।
— দারা কুতনী, হাদীস নং ১১৪৮, তিন বলেন এ সনদের সকল বর্ননাকারী নির্ভরযোগ্য

কেউ কেউ এ কথা বলতে চেষ্টা করেন যে, হাদীসে তো পুরুষ অথবা নারী কারো কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা নেই বিধায় এটা সকলের জন্য প্রযোজ্য । কিন্তু হুজুরে আকরম (সঃ) মহিলাদেরকে আলাদাভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা বুক বরাবর হাত উত্তোলন করবে ।

★ ইমাম তাবরানী (রহঃ) মু’জামুল কাবীরে হাসান সনদে হাদীস শরীফ বর্ননা করেছেন যে,

হযরত ওয়াইল বিন হুজর (রাঃ) নবীজি (সঃ) এর দরবারে আসলে তিনি তাকে বললেন হে ওয়াইল বিন হুজর তুমি যখন সালাত আদায় করবে তখন দু’হাত কান বরাবর উত্তোলন করবে আর মহিলা তার বুক বরাবর হাত উত্তোলন করবে ।

— তাবরানী (রহঃ) মু'জামুল কাবীর, মাজমাউয যাউয়াইদ হাদিস নং ২৫৯৪ , ইমাম হাইসামী (রহঃ) বলেন এই হাদিসে উম্মু ইয়াহইয়া ব্যতীত সকল রাবী সিকা

★ সাহাবীর আমলঃ
মহিলা সাহাবী হযরত উম্মু দারদা (রাঃ) তাকবীরে তাহরীমাতে কাঁধ বরাবর হাত উঠাতেন । ইমাম বুখারী (রহঃ) বর্ননা করেন

তিনি সালাতে কাঁধ বরবর হাত উঠাতেন ।
— জুযঊ রফউল ইয়াদাইন , হাদিস নং ৫০

★ বিখ্যাত তাবেঈ ইমাম ইবনু শিহাব যুহরী (রহঃ) বলেন

মহিলা তার দু হাত কাঁধ বরাবর উঠাবে
— মুসান্নাফে ইবনু আবি শাইবা, হাদিস নং ২৪৭২, হাদিসখানা গ্রহনযোগ্য

★ প্রসিদ্ধ তাবেঈ ইমাম আত্বা ইবনু আবি রাবাহ (রঃ) এর ফাতাওয়াঃ

তাকে জিজ্ঞেস করা হলো যে, মহিলা সালাতে হাত কিভাবে উঠাবে ? তিনি বলেন, তার বুক বরাবর ।
— মুসান্নাফে ইবনু আবি শাইবা , হাদিস নং ২৪৭১

★ প্রখ্যাত তাবেঈ ইমাম ইবনু সীরিন (রহঃ) এর কন্যা হাফসা (রহঃ) থেকেও উক্ত আমল প্রমানিত । ইমাম ইবনু শাইবা (রহঃ) বর্ননা করেন

হাফসা বিনতে সীরিন (রহঃ) বুক বরাবর হস্তদ্বয় উঠিয়ে তাকবীর বললেন ।
— মুসান্নাফে ইবনু আবি শাইবা , হাদিস নং ২৪৭৫





২) তাকবীরে তাহ্‌রীমা বলিয়া পুরুষ নাভির নিচে হাত বাধিবে । স্ত্রীলোক বুকের উপর (স্তনের উপর ) হাত বাঁধিবে । - তাহ্‌তাবী -


★ মহিলাগণ তাকবীরে তাহরীমা বলে তাদের হাতকে বুকের উপর জড়সড় অবস্থায় রাখবে । ইমাম ইবন আবি শাইবা (রহঃ) সহীহ সনদে বর্ণনা করেন

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) কে মহিলাদের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন- খুব জড়সড় ও অঙ্গের সাথে মিলিয়ে সালাত আদায় করবে ।মুসান্নাফে ইবনু আবি শাইবা
— হাদিস নং ২৭৭৮, হাদীসখানা সহীহ
এ হাদীসখানা দ্বারা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, মহিলারা তাকবীরে তাহরীমা বলা হপর হাত দুখানা বুকে রাখবে ।

★ তাবেঈর বক্তব্য
ইবনু জুরাইজ হযরত আত্বা (রঃ) হতে বর্ননা করেন, তিনি বলেছেন-

মহিলাগণ দাঁড়ানো অবস্থায় সাধ্যমত তার দু’হাত একত্রিত করে রাখবে ।
— মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং ৫০৬৭
একটু চিন্তা করলেই বুঝা সম্ভব যে, দু’হাত সাধ্যমত মিলিয়ে রাখা তখনই সম্ভব যখন তা একত্রিতবস্থায় বুকের উপরে থাকবে ।




৩) পুরুষ হাত বাঁধিবার সময় ডান হাতের বৃদ্ধা ও কনিষ্ঠা অঙ্গুলী দ্বারা হালকা বানাইয়া বাম হাতের কব্জি ধরিবে এবং ডান হাতের অনামিকা, মধ্যমা ও শাহাদত অঙ্গুলী বাম হাতের কলাইর উপর বিছাইয়া রাখিবে । আর স্ত্রীলোক শুধু ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতার পিঠের উপর রাখিয়া দিবে, কব্জি বা কলাই ধরিবে না । -দুররুল মুখতার

৪) রুকু করিবার সময় পুরুষ এমনভাবে ঝুঁকিবে যেনো মাথা, পিঠ ও চুতড় এক বরাবর হয় । স্ত্রীলোক এই পরিমাণ ঝুঁকিবে যাহাতে হাত হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে ।

৫) রুকুর সময় পুরুষ হাতের আঙ্গুলগুলি ফাঁক ফাঁক করিয়া হাঁটু ধরিবে । আর স্ত্রীলোক আঙ্গুল বিস্তার করিবে না বরং মিলাইয়া হাত হাঁটুর উপর রাখিবে ।

৬) রুকুর অবস্থায় পুরুষ কনুই পাঁজর হইতে ফাঁক রাখিবে । আর স্ত্রীলোক কনুই পাঁজরের সঙ্গে মিলাইয়া রাখিবে । -মারাকী


৭) সিজদায় পুরুষ পেট উরু হইতে এবং বাজু বগল হইতে পৃথক রাখিবে । পক্ষান্তরে স্ত্রীলোক পেট রানের সঙ্গে এবং বাজু বগলের সঙ্গে মিলাইয়া রাখিবে ।
৮) সিজদায় পুরুষ কনুই মাটি হইতে উপরে রাখিবে । পক্ষান্তরে স্ত্রীলোক মাটির সঙ্গে মিলাইয়া রাখিবে ।-মারাকী-

★ ৭ ও ৮ একসাথে :-

পুরুষগণ সিজদা করার সময় হাতকে পেট, উরু ও জমিন হতে উঠিয়ে রাখবে । আর মহিলাগণ একটিকে অন্যটির সাথে মিলিয়ে জমিনে লাগিয়ে দেবে ।

নবী পাক (সঃ) এর নির্দেশঃ
ইমাম আবু দাউদ, বায়হাকী বর্ণনা করেন

ইয়াযিদ বিন আবি হাবিব (রাঃ) হতে বর্ণিত নিশ্চয় রাসুলুল্লাহ (সঃ) সালাতরত দু’জন মহিলাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় বললেন- তোমরা যখন সিজদা করবে তখন শরীর জমিনের সাথে মিলিয়ে দিবে । কেননা মহিলারা এ ক্ষেত্রে পুরুষের মত নয় ।
— আবু দাউদ মারাসিল হাদিস নং ৮০, বায়হাকী হাদিস নং ৩৩২৫

এ হাদীসের ক্ষেত্রে সালাফী দাবীদারগণের অবস্থান
পাক ভারত উপমহাদেশের প্রসিদ্ধ লা-মাজহাবী আলেম মাওলানা নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান সাহেব বলেন- উল্লেখিত হাদীসখানা সকল ইমামের উসূল অনুযায়ী দলিল প্রদানের যোগ্য । আওনুল বারী শরহে বুখারী ১/৫২০ এমনকি আলবানী সিলসিলাতুল আহাদিস দ্বয়িফাতে এ হাদীসের ব্যাপারে শুধুমাত্র ইরসাল ছাড়া অন্য কোন দোষ বর্ণনা করতে পারেন নি ।

ইমাম বায়হাকী (রঃ) হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন নবীজী (সঃ) বলেছেন

যখন মহিলা সিজদা করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে যা তার সতরের জন্য অধিক উপযোগী । সুনানে কুবরা, হাদিস নং ৩১৯৯
— হাদিসটি হাসান
সাহাবীর বক্তব্য
ইমাম আব্দুর রাজ্জাক হযরত আলী (রাঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন

মহিলা যখন সিজদা করবে তখন যেন খুব জড়সড় হয়ে উরুদ্বয়কে পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে । মুসান্নাফ
— হাদিস নং ৫০৭২
তাবেঈর বক্তব্য
হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন

মহিলা সিজদার সময় এক অংগ অন্য অঙ্গের সঙ্গে মিলিয়ে জড়সড় হয়ে সিজদা করবে ।
— মুসান্নাফ ইবন আবি শাইবা , হাদিস নং ২৭৯৭


৯) সিজদার মধ্যে পুরুষ পায়ের আঙ্গুলগুলি কেবলার দিকে মোড়াইয়া রাখিয়া তাহার উপর ভর দিয়া পায়ের পাতা দুইখানা খাড়া রাখিবে; পক্ষান্তরে স্ত্রীলোক উভয় পায়ের পাতা ডান দিকে বাহির করিয়া মাটিতে বিছাইয়া
রাখিবে ।-মারাকী

১০) বসার সময় পুরুষ ডান পায়ের আঙ্গুলগুলি কেবলার দিকে মোড়াইয়া রাখিয়া তাহার উপর ভর দিয়া পায়ের পাতাটি খাড়া রাখিবে এবং বাম পায়ের পাতা বিছাইয়া তাহার উপর বসিবে । আর স্ত্রীলোক পায়ের উপর বসিবে না বরং চুতড় নিতম্ব) মাটিতে লাগাইয়া বসিবে এবং উভয় পায়ের পাতা ডান দিকে বাহির করিয়া দিবে; এবং ডান রান বাম রানের উপর এবং ডান নলা বাম নলার উপর রাখিবে ।-মারাকী

১১) স্ত্রীলোকের জন্য উচ্চ শব্দে কেরাআত পড়িবার বা তকবীর বলিবারও এজাযত নাই । তাহারা সব সময় সব নামাজের কেরাআত (তকবীর, তাস্‌মী ও তাহ্‌মীদ) চুপে চুপে পড়িবে -শামী

অভিশপ্ত ইয়াজিদ (লানতুল্লাহ) সম্পর্কে ভবিষ্যৎবানী :-

Related Topics :-

কারবালার ক্রিমিনাল কুখ্যাত ইয়াজিদ ড. জাকির নায়েকের চোখে হিরো ! (Mega post)

http://goo.gl/2aqwdm 

কাফির ইয়াজিদ কি ন্যায়সঙ্গত উত্তরাধিকারী? 

http://goo.gl/hyGvBy 

ইয়াযীদ সম্পর্কে মহানবী(সাঃ) এর ভবিষ্যত বাণী :-

# তৃতীয় শতাব্দীর এক বিখ্যাত মুহাদ্দীস ইমাম আবু ইয়া’আল(রঃ) তাঁর মুসনাদ(ভলি. ২, পেজ ৭১) সহীহ চেইনে উল্লেখ করেনঃ
হযরত আবু উবায়দাহ বিন জারাহ(রাঃ) থেকে বর্ণীত, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেন – “মুসলিম উম্মাহ এর যাবতীয় কাজ কারবারে ততক্ষণ পর্যন্ত ন্যায়পরায়ণতা পরিলক্ষিত হবে যখন বনি উম্যায়াহ গোত্রের এক জন এসে দ্বীনের মধ্যে ফাটল ধরাবে। তার নাম হবে ইয়াজিদ”
হাদীসটির বর্ণনাকারীর সকলেই সৎ এবং নির্ভরযোগ্য।

# আরেক বিখ্যাত মুহাদ্দীস ইমাম সাহাবুদ্দীন আহমেদ বিন হাজর হায়তামী(রঃ) তাঁর আস-সাবাক আল-মুহরিকা গ্রন্থের ১৩২ পৃঃ একই হাদীস উল্লেখ করেছেন।
হযরত আবু দারদা(রাঃ) বলেছেন, “আমি শুনেছিলাম রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেন – আমার সুন্নাহকে পরিবর্তনকারী প্রথম ব্যক্তি হবে বনি উম্যায়াহ গোত্রের ইয়াজিদ”।

# হাফিজ ইবন কাথীর(রঃ) একই হাদীস উল্লেখ করেছেন তাঁর সুবিখ্যাত আল-বিদ্যায়াহ আন-নিহ্যায়াহ গ্রন্থের ভলি. ৬, পেজ ২৫৬ তে হযরত আবুযার ঘিফারী(রাঃ) থেকে। এই বর্ণনায় ‘যার নাম ইয়াজিদ হবে’ এই কথাটি অনুপস্থিত।

# হাদীসটি এই গ্রন্থেও বর্ণীত আছে
মুসান্নাফ ইবন আবি শায়বা- ভলি. ৮, পেজ ৩৪১, হাদীস নং ১৪৫; দালাইল উন নবুয়্যাত লিল বায়হাকী আবওয়াব ঘাজওয়া তাবুক- হাদীস নং ২৮০২; মাতালিব আল-আলিয়্যাহ- হাদীস নং ৪৫৮৪।

# আমর বিন ইয়াহিয়া সায়ে’দ বিন আমর বিন সায়ে’দ তাঁর দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, আমি হযরত আবু হুরায়রা(রাঃ) এর সাথে মসজিদে নববীতে বসেছিলাম এবং মারওয়ান আমাদের সাথে ছিলেন। হযরত আবু হুরায়রা(রাঃ) বলেছিলেনঃ “আমি শুনেছিলাম রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেন, কুরাইশ বংশের কিছু যুবকদের দ্বারা আমার উম্মত ধ্বংস প্রাপ্ত হবে”। মারওয়ান বলেন, আল্লাহ এই ধরণের যুবকদের অভিশাপ দেন। হযরত আবু হুরায়রা(রাঃ) বলেন, আমি বলতে পারি অমুক, অমুকের পুত্র অমুক, তমুকের পুত্র তমুক যদি আমি চাই। হযরত আমর বিন ইয়াহিয়া বলেন, আমি আমার দাদার সাথে বনী মারওয়ানে গিয়েছিলাম যখন তারা সিরিয়া নিয়ন্ত্রণ করছিল এবং এক জন যুবককে দেখতে পেলাম। আমার দাদা বললেন তারাও তাদের একজন হবে। আমরা বললাম তা আপনি ভাল বলতে পারবেন।
[সহীহ বুখারী ভলি. ২, কিতাবুল ফিতনা]

# হযরত আবু হুরায়রা(রাঃ) সূত্রে বর্ণীত, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেন- আল্লাহ তা’আলার সাহায্য প্রার্থনা কর ৭০ দশক হতে এবং এক যুবকের রাজত্বকাল হতে।
[মুসনাদ ইমাম আহমদ, হাদীস নং ৩৮০০]

# সহীহ বুখারী শারীফের ব্যাখ্যাকারী এবং ফাতহুল বারীর লেখক হাফিজ আহমদ বিন হাজর আসকলানী(রঃ) মুসান্নাফ ইবন আবি শায়বা সূত্রে বর্ণনা করে লিখেন, মুসান্নাফ ইবন আবি শায়বার হাদীসে বলা আছে, হযরত আবু হুরায়রা(রাঃ) বাজারে যাওয়ার সময় প্রার্থনা করত ‘ও আল্লাহ, আমাকে ৬০ A.H. এবং যুবকের রাজত্বকাল পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখ না’


হাফিজ ইবন হাজর আসকলানী(রঃ) এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, এই হাদীসে ৬০A.H. এ এক জন শাসকের কথা বলা হয়েছে। হাদীস অনুসারে তাই ঘটে। ইয়াজিদ বিন মুয়্যাবিয়্যা এই বছরেই শাসনে বসেন ৬৪A.H. পর্যন্ত এবং এই সময়ে মারা যান।

# সহীহ বুখারীর বর্ণোনাকারী ইমাম বদরুদ্দীন আইনি(রঃ) সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেন, ‘প্রথম বালক যে শাসন করবে’ এই কথা দ্বারা ইয়াজিদকে বুঝানো হয়েছে।
[উমদাত উল কাদরী ভলি. ১৬, পেজ ৩৩৩]

মূলত এই কারণে আগেরকার যুগের বড় বড় আলেমগণ ইয়াজিদ বিন মুয়্যাবিয়্যার নামের শেষে ‘আল্লাহ এর লানত বর্ষিত হোক’ কথাটি লিখতেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েক জন হলেন –

# Imam Ibn Hajr (rah) made the whole title in his book al-Imta bil al-Arb’ain as “SENDING LANAH ON YAZID (لعن يزيد)”
وأما المحبة فيه والرفع من شأنه فلا تقع إلا من مبتدع فاسد الاعتقاد فإنه كان فيه من الصفات ما يقتضي سلب الإيمان عمن يحبه لأن الحب في الله والبغض في الله من الإيمان والله المستعان
Translation: Loving and glorifying him (Yazid) is not done “EXCEPT BY A HERETIC” who has void belief because he (Yazid) had such characteristics that his lover deserves to be faithless, because to love and hate just for the sake of God is a sign of faith. [Publisher’s name: Dar ul Kutb al iLmiyyah, Beirut, Lebanon, Book name: al-Imta bil al-Arba’in al-Matbainatus Samah (الإمتاع بالأربعين المتباينة السماع), Author: Imam Ibn Hajr al Asqalani (rah), Publication date: 1997, Page No. 96]

قال يحيـى بن عبد الملك بن أبـي غنية أحد الثقات، ثنا نوفل بن أبـي عقرب ثقة قال: كنت عند عمر بن عبد العزيز فذكر رجل يزيد بن معاوية، فقال: قال أمير المؤمنين يزيد، فقال عمر: تقول أمير المؤمنين يزيد، وأمر به فضرب عشرين سوطاً
Translation: Yahya bin Abdul Mulk bin Abi Ghania “WHO WAS AMONGST THIQA NARRATORS” he heard from Nawfl bin Abi Aqrab “WHO IS THIQA” he narrates: Once in the gathering of Umar Bin Abdul Aziz [R.A] people talked about Yazid bin Muawiya, someone among the people mentioned Yazid with the title of Ameer ul Momineen, hearing this Hadrat Umar bin Abdul Aziz [ra] replied (in anger): You have called Yazeed Amir Ul Mominein? Then he gave order of 20 lashes to be given to the person [Imam Ibn Hajr al Asqalani in Tahdhib ut Tahdhib, Volume No. 6, Page No. 313].

# নবম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি(রঃ) তাঁর সুবিখ্যাত ইতিহাসগ্রন্থ “তারিখ উল খুলাফা” গ্রন্থে ইয়াজীদ সম্পর্কে লিখেনঃ
“You (Imam Hussain – Radhi Allaho Anho) were martyred and your head was brought to Ibn Ziyad on a plate. “May Allah’s Lanah (Curse) be upon the person who killed you, also Ibn Ziyad “AND UPON YAZID” [As-Suyuti in Tarikh ul Khulafa, Page No. 165]”
আরবী বই এর স্ক্যান কপিঃ

http://www.ahlus-sunna.com/index.php?option=com_content&view=article&id=46&Itemid=29&limitstart=31

# হাম্বলী মাযহাবের প্রবর্তক এবং ফিকাহ শাস্ত্রের সুবিখ্যাত ইমাম আহমদ বিন আহমদ(রঃ) যখন ইয়াজিদ বিন মুয়্যাবিয়্যার নামের শেষে ‘আল্লাহ এর লানত বর্ষিত হোক’ বললেন তখন থেকেই তার নামের শেষে তা বলা চালু হয় এবং সেটাই পরবর্তিতে ৪ মাযহাবের ইযমা হিসেবে সাব্যস্থ হয়।
The Proof of sending Lanah upon Yazid is derived from this (ayah), as was mentioned by Al-Barzanji (rah) in his Al-Ashaat and Imam Haythami (rah) in As-Sawaiq from Imam Ahmed (rah) that his son Abdullah asked him about sending Lanah on Yazid, and how sending Lanah upon him is mentioned in the book of Allah (i.e. Quran). Imam Ahmed (rah) in proof of (sending Lanah upon Yazid) mentioned these verses:Would ye then, if ye were given the command, work corruption in the land and sever your ties of kinship? Such are the men whom Allah has cursed…(47:22-23), So could there be a greater fitnah than the actions committed by Yazid? [Ruh ul Ma’ani by Imam Al-Alusi, Volume 9 Under Surah Muhammad 22-23]

# Allama Alusi said: And I say what is prevalent over my mind that (Yazid) Khabith did not testify to the messengership of the Holy Prophet (Peace Be Upon Him). According to me it is correct to curse a person like Yazid, although one cannot imagine a Fasiq like him and apparently he never repented, the possibility of his repentance is weaker than the possibility of his faith (Iman). Along with Yazid, Ibn Ziyad, Ibn Sa’ad and his group shall also be included. Verily, may Allah’s curse be upon all of them, their friends, their supporters, their group and upon everyone who inclines towards them until Qayamah and until an eye sheds a tear for Abu Abdullah Hussain (ra). [Tafsir Ruh al-Ma’ani, Volume 26, Page No. 73]
আরবী বই এর স্ক্যান কপিঃ

http://www.ahlus-sunna.com/index.php?option=com_content&view=article&id=46&Itemid=29&limitstart=43

অথচ এই শেষ যুগে এসে ওহাবী/সালাফী/আহলে হাদীস নামের দলটির নেতারা এই ব্যক্তির নামের শেষে ‘আল্লাহ এর রহমত বর্ষিত হোক’ কথাটি ব্যবহার করে চলেছে। সত্যিই প্রসংশা করার মতো তাদের প্রতিভা ও ধর্মজ্ঞান! যেই ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর প্রাণপ্রিয় নাতির হত্যাকারী তার নামের শেষে ……., এটা ভাবতেও যে কি কষ্ট তা কাউকে বলে বুঝানো যাবে না। তার থেকেও বড় কথা এই সব থেকে বড় ফিতনা ফাসাদের যুগে এসে ইতিহাস বিকৃত করে নতুন নতুন ইতিহাস রচণা করে মুসলিম উম্মার ইজমাকে বাতিল প্রমানের চেষ্টা করা এবং এর মাধ্যমে দেশের যুব সমাজকে মিথ্যা ইতিহাস জানানোর চেষ্টা করা কতটা দুঃসাহসের ব্যাপার তা ভাবলেই অবাক হই!

আল্লাহ তা’আলা আমাদের রক্ষা করুন এদের হাত থেকে। সুম্মা আমীন

NB: আমাদের কাছে আপাতত বাংলায় রচিত ইতিহাস বই এর ডাউনলোড লিঙ্ক নেই। কেউ ইংরেজীতে ইতিহাস জানতে চেলে দেখুনঃ
১. http://salafiaqeedah.blogspot.com/2010/12/yazid-laanati.html
২. http://salafiaqeedah.blogspot.com/2010/12/yazid-la-and-city-of-caesar.html
৩. http://salafiaqeedah.blogspot.com/2010/12/yazid-may-allah-give-him-what-he.html

নবম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি(রঃ) তাঁর সুবিখ্যাত ইতিহাসগ্রন্থ “তারিখ উল খুলাফা” গ্রন্থ এখান থেকে ডাউনলোড করে পড়ে দেখুন।

http://www.mediafire.com/?3tichlnnj84p0nb

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাউকে ভালবাসার ফজিলত :-




★ রাসূলুল্লাহ (ﷺসা ) বলেন,

إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَيْنَ الْمُتَحَابُّونَ بِجَلَالِي الْيَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِي ظِلِّي يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلِّي

‘‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, আমার মহত্ত্বের নিমিত্তে পরস্পর ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপনকারীরা কোথায় ? আজ আমি তাদেরকে আমার বিশেষ ছায়ায় ছায়া দান করব। আজ এমন দিন, যে দিন আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া নেই।’’

(মুসলিম, কিতাবুল বিররি ওয়াস-সিলাহ, হাদিস নং৪৬৫৫)



★ রাসূলুল্লাহ (সাﷺ) বলেন,

إِنَّ أَحَبَّ الْأَعْمَالِ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ الْحُبُّ فِي اللَّهِ وَالْبُغْضُ فِي اللَّهِ

‘‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ আমল হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসা এবং শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কারো সাথে শত্রুতা রাখা।’’

(আহমদ, মুসনাদুল আনসার, হাদিস নং২০৩৪১)



★ রাসূলুল্লাহ (সাﷺ) ইরশাদ করেছেন যে, "

إِنَّ مِنْ عِبَادِ اللَّهِ لَأُنَاسًا مَا هُمْ بِأَنْبِيَاءَ وَلَا شُهَدَاءَ يَغْبِطُهُمُ الْأَنْبِيَاءُ وَالشُّهَدَاءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِمَكَانِهِمْ مِنَ اللَّهِ تَعَالَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ تُخْبِرُنَا مَنْ هُمْ قَالَ هُمْ قَوْمٌ تَحَابُّوا بِرُوحِ اللَّهِ عَلَى غَيْرِ أَرْحَامٍ بَيْنَهُمْ وَلَا أَمْوَالٍ يَتَعَاطَوْنَهَا فَوَ اللَّهِ إِنَّ وُجُوهَهُمْ لَنُورٌ وَإِنَّهُمْ عَلَى نُورٍ لَا يَخَافُونَ إِذَا خَافَ النَّاسُ وَلَا يَحْزَنُونَ إِذَا حَزِنَ النَّاسُ..

‘‘নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছে যারা নবীও নয় শহীদও নয়; কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে তাঁদের সম্মানজনক অবস্থান দেখে নবী এবং শহীদগণও ঈর্ষান্বিত হবে। সাহাবিগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ! আমাদেরকে বলুন, তারা কারা ? তিনি বলেন, তারা ঐ সকল লোক, যারা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই একে অপরকে ভালবাসে। অথচ তাদের মধ্যে কোন রক্ত সম্পর্কও নেই, এবং কোন অর্থনৈতিক লেন-দেনও নেই। আল্লাহর শপথ! নিশ্চয় তাঁদের চেহারা হবে নূরানি এবং তারা নূরের মধ্যে থাকবে। যে দিন মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে,সে দিন তাঁদের কোন ভয় থাকবে না। এবং যে দিন মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকবে, সে দিন তাঁদের কোন চিন্তা থাকবে না..।’’

(সুনানু আবী দাঊদ, কিতাবুল বুয়ূ‘, হাদিস নং ৩০৬০)



★ তিনি বলেন,

لَا تَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلَا تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا أَوَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ أَفْشُوا السَّلَامَ بَيْنَكُمْ..*

‘‘তোমরা বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার না হবে, তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য স্থাপন করবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ের কথা বলব না, যা করলে তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠিত হবে ? সাহাবীগণ বললেন, নিশ্চয় ইয়া রাসূলাল্লাহ ! (তিনি বললেন) তোমাদের মধ্যে বহুল পরিমাণে সালামের প্রচলন কর।’’

(মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, হাদিস নং ৮১)

সোমবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

ইমাম তিরমিজি (রহঃ) এর সংখিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত :-

★ ইমাম তিরমিযি (রহ.)এর আসল নাম মুহাম্মদ, উপনাম আবু ঈসা, নিসবতি নাম তিরমিজি ও বুগি। আর বাবার নাম ছিল ঈসা ইবনে সুরাত। তাঁর উপাধি ছিল আল-ইমাম। তিনি বর্তমান উজবেকিস্তানের জিহুন নদীর বেলাভূমিতে অবস্থিত বিখ্যাত শহর তিরমিজের ‘বুগ’ নামক পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন ২০৯ হিজরি মোতাবেক ৮২৪ খ্রিস্টাব্দে।

★ ইমাম তিরমিজি (রহ.)-কে তাঁর জন্মস্থানের সঙ্গে সম্পর্ক করে তিরমিজি ও বুগি বলা হয়। ইমাম তিরমিজির পূর্বপুরুষরা ‘মুরাদ’ নামক শহরের বাসিন্দা ছিলেন। অতঃপর তাঁরা উজবেকিস্তানের তিরমিজ শহরে হিজরত করেন। তিরমিজ ছিল অসংখ্য মুহাদ্দিস ও বিজ্ঞ আলেমের জন্মস্থান। ইমাম তিরমিজি (রহ.) পারিবারিক পরিমণ্ডলে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। খুব অল্প বয়সেই ইমাম তিরমিজি (রহ.) প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ সম্পন্ন করে ইলমে হাদিসের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন দেশ সফর করেন।

★ ইলমে হাদিসে উচ্চতর জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে ইমাম তিরমিজি (রহ.) খুব অল্প বয়সেই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। তিনি হিজাজ, মিসর, বসরা, কুফা, শাম, খুরাসান, বাগদাদসহ বহু দেশ ও শহর ভ্রমণ করেন। তিনি তৎকালীন সব বিখ্যাত মুহাদ্দিসের কাছ থেকে হাদিস সংগ্রহ করেন এবং ইলমে হাদিসে গভীর জ্ঞান লাভ করেন।

★ ইমাম তিরমিজি (রহ.) ১০০০ এর ও বেশি মুহাদ্দিসের কাছ থেকে হাদিস সংগ্রহ করেন। তাঁর ওস্তাদদের মধ্যে প্রসিদ্ধ কয়েকজন হলেন_ইমাম বুখারি, ইমাম মুসলিম, ইমাম আবু দাউদ সিজিস্তানি, আইমাদ বিন মুনা, মুহাম্মদ বিন মুছান্না, মুহাম্মদ বিন বাশ্শার, হান্নাদ বিন সুরি, কুতাইবা বিন সাঈদ, মাহমুদ বিন গায়লান, ইসহাক বিন মুসা আনসারী প্রমুখ মুহাদ্দিস।

★ ইমাম তিরমিজি (রহ.) ইমাম বুখারি (রহ.)-এর ছাত্র ছিলেন, আবার তিনি ইমাম বুখারি (রহ.)-এর ওস্তাদও ছিলেন। কারণ ইমাম বুখারি (রহ.) ইমাম তিরমিজি (রহ.) থেকে কিছু হাদিস গ্রহণ করেছেন। ইমাম বুখারি (রহ.) বিভিন্ন সময়ে ইমাম তিরমিজি (রহ.)-কে লক্ষ করে বলতেন, ‘তুমি আমার থেকে যতটুকু উপকৃত হয়েছ, তার থেকে বেশি উপকৃত হয়েছি আমি তোমার থেকে।’

★ ইমাম তিরমিজি (রহ.) তিরমিজি শরিফে দুটি হাদিসের ক্ষেত্রে লিখেছেন_ইমাম বুখারি (রহ.) আমার কাছ থেকে অত্র হাদিস গ্রহণ করেছেন। মুহাদ্দিসরা তাঁকে ইমাম বুখারির খলিফা বলে উল্লেখ করেছেন।

★ ইমাম তিরমিজি (রহ.)-এর অসাধারণ স্মৃতিশক্তি : ইমাম তিরমিজি (রহ.) ছিলেন অসাধারণ এবং বিস্ময়কর স্মৃতিশক্তির অধিকারী। এ বিষয়ে শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দেসে দেহলভি (রহ.) বুসতানুল মুহাদ্দিসিনে একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন।

**  ইমাম তিরমিজি (রহ.) কোনো এক মুহাদ্দিসের কাছ থেকে হাদিসের দুটি পাণ্ডুলিপি ইজাজাতান লাভ করেছিলেন। অর্থাৎ ওই মুহাদ্দিস তাঁকে পাণ্ডুলিপি দুটিতে লিপিবদ্ধ হাদিসগুলো বর্ণনা করার অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ইমাম তিরমিজি (রহ.)-এর আকাঙ্ক্ষা ছিল পাণ্ডুলিপি দুুটির বিষয়ে সরাসরি ওস্তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া। একবার এক সফরে ওই ওস্তাদের সঙ্গে ইমাম তিরমিজি (রহ.)-এর সাক্ষাৎ হলে তিনি নিজের বাসনার কথা তাঁকে জানান। ওস্তাদ বললেন ঠিক আছে, পাণ্ডুলিপি দুটি নিয়ে এসো। ইমাম তিরমিজি (রহ.) নিজ অবস্থানস্থলে গিয়ে তালাশ করে পাণ্ডুলিপি পেলেন না। তিনি বুঝতে পারলেন হাদিসের পাণ্ডুলিপি বাড়িতে রয়ে গেছে, তার পরিবর্তে তিনি সাদা কাগজ নিয়ে এসেছেন।

তিনি খুবই পেরেশান হলেন। অতঃপর সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয়ে ইমাম তিরমিজি (রহ.) পাণ্ডুলিপিসদৃশ সাদা কাগজ নিয়ে ওস্তাদের সামনে বসে গেলেন। ওস্তাদ হাদিস পড়তে লাগলেন আর ইমাম তিরমিজি (রহ.) ওই কাগজের ওপর এমনভাবে চোখ ঘোরাতে লাগলেন, যেন তিনি ওস্তাদের পঠিত হাদিসের সঙ্গে পাণ্ডুলিপি মিলিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু একসময় ওস্তাদ বিষয়টি বুঝতে পারলেন। তিনি রেগে গিয়ে বললেন, তুমি আমার সঙ্গে মজা করছ? ইমাম তিরমিজি (রহ.) অত্যন্ত আদবের সঙ্গে ঘটনা বিস্তারিত বর্ণনা করে বললেন, হজরত, আপনার পঠিত সব হাদিসই আমার স্মৃতিতে গেঁথে গেছে। আমি মুখস্থ করে নিয়েছি। ওস্তাদ তখন তাঁকে হাদিসগুলো শোনাতে বললেন। তখন তিনি সব হাদিস নির্ভুলভাবে শুনিয়ে দিলেন। অতঃপর ওস্তাদ তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য অতিরিক্ত আরো ৪০টি হাদিস শোনালেন। ইমাম তিরমিজি (রহ.) সেগুলোও হুবহু শুনিয়ে দিলেন। ওস্তাদ আশ্চর্য হয়ে বললেন, ‘তোমার মতো আর কাউকে আমি কোনো দিন দেখিনি।’


★ ইমাম তিরমিজি (রহ.) ইলমে হাদিসের যে বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার আত্দস্থ করেছিলেন, তা দিয়ে তিনি অসংখ্য যোগ্য মুহাদ্দিস তৈরি করে রেখে গেছেন। একই সময়ে তাঁর হাদিসের দারসে হাজারো উচ্চতর জ্ঞানপিপাসু উলামায়ে কেরাম উপস্থিত হতেন। এক বর্ণনা থেকে জানা যায়, ইমাম তিরমিজি (রহ.)-এর কাছ থেকে ৯০ হাজার মুহাদ্দিস ইলমে হাদিসের শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। ইমাম তিরমিজির ছাত্রদের মধ্যে প্রসিদ্ধ কয়েকজন হলেন_মুহাম্মদ ইবনে সাহর, আহমাদ ইবনে ইউসুফ আন্ নাসাফি, দাউদ ইবনে নসর আল বায়জাবি ও মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ প্রমুখ। ইমাম তিরমিজি (রহ.) ইলমে হাদিসের শিক্ষাদানের পাশাপাশি বহু মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করে গেছেন। তাঁর রচনাবলির মধ্যে জামে তিরমিজি, ‘কিতাবুশ শামায়িল’ ও ‘কিতাবুল ইলাল’ আজও জ্ঞানপিপাসুদের পিপাসা নিবারণ করে চলেছে। ইবনে নাদিম ও হাফেজ ইবনে কাসার (রহ.) লিখেছেন যে ইমাম তিরমিজি (রহ.) তাফসির ও ইতিহাস বিষয়েও গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। ইমাম মুহাম্মদ বিন ঈসা প্রণীত জামে তিরমিজি একটি অতুলনীয়, বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ও প্রসিদ্ধ হাদিস গ্রন্থ।

★ ইমাম তিরমিজি (রহ.) তাঁর স্মৃতিবদ্ধ লাখ লাখ হাদিসের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে সংকলন করেছেন। তিরমিজি শরিফে মোট ৪৬টি অধ্যায় ও দুই হাজার ১১৪ পরিচ্ছেদে তিন হাজার ৯৫৬টি হাদিস সনি্নবেশিত হয়েছে। এ জামে গ্রন্থটিতে হাদিসের পুনরুল্লেখ খুবই কম হয়েছে। ইমাম তিরমিজি (রহ.) অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে হাদিস নির্বাচন করেছেন। তিনি তিরমিজি শরিফ রচনার পর সমকালীন বিখ্যাত মুহাদ্দিসদের সামনে উপস্থাপন করেন। তাঁদের কাছ থেকে গ্রন্থে সংকলিত হাদিসগুলোর বিশুদ্ধতার স্বীকৃতি পাওয়ার পরই তিনি চূড়ান্তভাবে গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। এ সম্পর্কে ইমাম তিরমিজি (রহ.) নিজেই বলেছেন, আমি সহিহ সনদযুক্ত এ গ্রন্থখানা প্রণয়ন সম্পন্ন করে হিজাজের হাদিসবিদদের সামনে উপস্থাপন করলাম। তাঁরা এটা দেখে খুবই পছন্দ করলেন ও সন্তোষ প্রকাশ করলেন। অতঃপর আমি এটাকে খুরাসানের হাদিসবিদদের সামনে পেশ করলাম। তাঁরাও এটাকে খুবই পছন্দ করলেন এবং সন্তোষ প্রকাশ করলেন। তিরমিজি শরিফ অত্যন্ত উঁচুমানের একটি হাদিস গ্রন্থ। শায়খুল ইসলাম হাফেজ ইমাম আবু ইসমাইল আবদুল্লাহ আনসারি (মৃ. ৪৮১ হি.) তিরমিজি শরিফ সম্পর্কে বলেছেন, আমার দৃষ্টিতে তিরমিজি শরিফ বুখারি ও মুসলিম গ্রন্থদ্বয় অপেক্ষা অধিক ব্যবহারোপযোগী। কেননা বুখারি ও মুসলিম এমন হাদিস গ্রন্থ যে শুধু বিশেষ পারদর্শী আলেম ছাড়া অন্য কেউ তা থেকে ফায়দা লাভ করতে পারে না। কিন্তু ইমাম আবু ঈসা তিরমিজির গ্রন্থ থেকে যে কেউ ফায়দা গ্রহণ করতে পারে।

★ জামে তিরমিজি হাদিস গ্রন্থখানা একাধারে জামে এবং সুনান। জামে বলা হয় ওইসব হাদিস গ্রন্থকে, যেগুলোর মধ্যে আটটি বিষয়ের হাদিস সনি্নবেশিত হয়েছে।

ওই আটটি বিষয় হলোঃ

1. আকাইদ,
2. ইতিহাস,
3. তাফসির,
4. শিষ্টাচার,
5. ফিতান বা উম্মতের মধ্যে উদ্ভূত বাতিল মতবাদ,
6. আহকাম বা শরীয় বিধান,
7. কিয়ামতের নিদর্শন ও
8. সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদাবিষয়ক।

★ এই তিরমিযি শরীফের কিছু বিশেষত্ব্য :-

1. যেগুলো ইলমে ফিকাহর ধারাবাহিকতায় বিন্যাস করা হয়েছে। ইমাম তিরমিজি (রহ.) স্বীয় হাদিস গ্রন্থখানা ফিকাহ ধারায় বিন্যাস করায় উম্মতের মধ্যে এর গ্রহণযোগ্যতা বহু মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে।

2. তিরমিজি শরিফের অনন্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আরো একটি হলো, ইমাম তিরমিজি (রহ.) সব মুজতাহিদের মৌলিক দালিলিক হাদিসগুলোকে একত্রিত করেছেন।

3. ইমাম তিরমিজি (রহ.) স্বীয় কিতাবে ফকিহদের মতামত উল্লেখ করেছেন। যার ফলে এটি হাদিসের কিতাব হওয়া সত্ত্বেও ইলমে ফিকাহর ভিত্তিতে পরিণত হয়েছে।

4. ইমাম তিরমিজি (রহ.) হাদিসের দালিলিক ভিত্তি বর্ণনা করেছেন এবং সনদ সম্পর্কে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন।

5. ইমাম তিরমিজি (রহ.) প্রত্যেক পরিচ্ছদের শুরুতে এমন একটি, দুটি অথবা তিনটি হাদিস সংকলন করেছেন, যেগুলো অন্য কোনো ইমাম থেকে সংকলিত হয়নি। অতঃপর তিনি ‘ওয়া ফিল্ বাবি’ বলে বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য হাদিস সংকলন করেছেন। ইমাম তিরমিজির এই ‘ওয়া ফিল্ বাবি’-এর ওপর অনেকেই স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন।

6. দীর্ঘ হাদিসের মধ্য থেকে ইমাম তিরমিজি (রহ.) শুধু বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত অংশ তাঁর কিতাবে সংকলন করেছেন।

7. ইমাম তিরমিজি (রহ.) সন্দেহপূর্ণ বর্ণনার ক্ষেত্রে রাবির নাম, উপনাম, উপাধি ইত্যাদি বর্ণনা করেছেন, যাতে কোনো সন্দেহ অবশিষ্ট না থাকে।
জামে তিরমিজির বিন্যাস খুবই চমৎকার। এর থেকে হাদিস খুঁজে বের করা খুবই সহজ।

8. তিরমিজি শরিফে বর্ণিত সব হাদিসের ওপর উম্মতে মুসলিমা আমল করে। কিতাবটিতে এমন কোনো হাদিস নেই, যার ওপর পৃথিবীর কোনো না কোনো মাজহাবের লোক আমল করে না।

9. সিহাহ সিত্তার মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রে তিরমিজি শরিফের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। এমনকি ওহাবী দেওবন্দি উলামায়ে কেরাম তিরমিজি শরিফকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দাওরায়ে হাদিসের ক্লাসে পাঠদান করে থাকেন।

★ ইমাম তিরমিজি (রহ.)-এর সংকলিত হাদিস গ্রন্থে কিছু মওজু হাদিস আছে বলে অভিযোগ করা হয়।

আল্লামা ইবনে জাওজি (রহ.) বলেছেন, তিরমিজি শরিফের মধ্যে মোট ২৩টি মওজু হাদিস রয়েছে।

কিন্তু বাস্তব সত্য হলো, তিরমিজি শরিফে কোনো মওজু হাদিস নেই। কারন ইবনে জাওজি ইমাম তিরমিযি (রহ) থেকে বড় কোন মুহাদ্দিস ছিলেন না আর ইমাম তিরমিযি এত বড় মুহাদ্দিস হয়েও কি ভাবে তিনি জাল হাদিস লিপিবদ্ধ করতে পারেন is it possible?যে তিনি না জেনে হাজার হাজার হাদিস থেকে বেছে কিছু জাল হাদিস ওনার সহিহ কিতাবে ওঠাবেন?

ইমাম তিরমিজি অত্যন্ত উচ্চমার্গের জাহেদ ও আবেদ ছিলেন।
তিনি সারা রাত ইবাদতে রত থাকতেন। তিনি মহান আল্লাহর দরবারে এত বেশি কাঁদতেন যে এ কারণেই শেষ বয়সে তিনি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।

★ মৃত্যুঃ ইলমে হাদিসের এ মহান ইমাম ১৩ রজব ২৭৯ হিজরি মোতাবেক ৮২৪ খ্রিস্টাব্দে তিরমিজে ইন্তেকাল করেন এবং সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়।



সহিহ হাদিসের আলোকে ঘুমের সুন্নাত আমলসমুহ :-


আসুন দেখি আমাদের আদর্শ আমাদের একমাত্র পথ প্রদর্শক নুরে মুজাসসাম রাহ্মাতাল্ললিল আলামিন হুযুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে সুন্নতি তরিকায় ঘুমাতেন।

1. ঘুমিয়ে যাওয়ার আগে এই দোয়াটি পড়বেন, আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু আহইয়া অর্থাৎ হে আল্লাহ্! আপনার নামে মৃত্যুবরণ করছি এবং আপনার নামেই পুর্নজীবিত হই.বুখারী -6312।

2. ঘুম থেকে জেগে উঠে এই দোয়া পড়বেনঃ আলহামদুলিল্লাহি ললাজি আহইয়ানা বা’দামা আমাতানা ওয়া ইলাইহিননুশুর. অর্থাৎ সমস্ত প্রসংশা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে মৃত্যুর পর জীবিত করেছেন,আমরা পুর্নজীবিত হয়ে তার নিকটেই ফিরে যাবো. বুখারী -6312।

3. দুই হাতের তালু একত্রে করে এর মধ্যে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস তিনবার করে পাঠ করে ফু দিবে.পরে পুরো শরীর মুছে দিবেন, যতদুর সমভব(মাথা ও মুখ মনডল সহ) বুখারী -5017।

4. আয়াতুল কুরসী পাঠ করা.বুখারী -3275. ফজিলত -একজন ফিরেসতা নিয়োগ করে দেন।

5. ডান কাতে শুয়ে ও ডান হাত গালের নিচে দিয়ে নিচের দোয়াটি পড়বেন. আল্লাহুম্মা কিনি’ই আযা-বাকা ইয়াওমা তাবআসু ইবাদাকা অর্থাৎ হে আল্লাহ্! যেদিন আপনি আপনার বান্দাগণকে পুর্নজীবিত করবেন. সে দিনের(পরকালীন) আযাব হতে আমাকে বাচান. তিনবার পড়তে হবে. আবু দাউদ -5045.তিরমিযী -3398।

6. শোয়ার সময় সুবহানাল্লাহ 33 বার আলহামদুলিল্লাহ 33 বার ও আল্লাহু 34 বার পড়তে হবে. বুখারী-5362 ও মুসলিম-2728।

7. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করা.বুখারী ও মুসলিমে আছে,যে বেক্তি এই দুই আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য এই আয়াত দুটোই যতেষ্ট হবে মানে বিপদাপদ ও শয়তানের অনিষ্ঠ থেকে রক্ষা পাবে.বুখারী -5009 ও মুসলিম-807।

8. অযু অবস্থায় ঘুমাবেন ‘মুসলিম-27…

9. ডান কাত হয়ে ঘুমাবেন, বুখারী -247 ও মুসলিম-2710।

10. ডান হাত গালের নিচে দিয়ে ঘুমাবেন. আবু দাউদ -5045।

11. বিসমিল্লাহ্ বলে বিছানা ঝেরে নিবেন বা (পরিষ্কার করার জন্য একটু ঝাড়ু) দিবেন, বুখারী-6320 ও মুসলিম 2714।

12. সুরা কাফিরুন পাঠ করা. আবু দাউদ 5055, তিরমিজি ও আহমাদ।

৭ প্রকার লোকের দোষত্রুটি বর্ণনা করলে, তা গীবত হয় না।


৭ প্রকার লোকের দোষত্রুটি বর্ণনা করলে, তা গীবত হয় নাঃ হুজ্জাতুল ইসলাম ( ৩ লক্ষ হাদিসের হাফিজ) , মুজাদ্দিদে মিল্লাত, হাকিমুল হাদীস হযরত ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সুপ্রসিদ্ধ ‘কিমিয়ায়ে সাআদাত’ কিতাবে পবিত্র কুরআন সুন্নাহ শরীফ মুতাবিক বর্ননা করেছেন – ৭ প্রকার ব্যক্তির দোষত্রুটি বর্ণনা করলে সেটা গীবত হয় না।

নিচে এই সাত প্রকার গিবতের বর্ণনা করা হলওঃ-

1. এক নম্বরে বলা হয়েছে, কোনো লোক যদি কোনো কাজী সাহেবের কাছে যায় বিচারের জন্য, বিচারপ্রার্থী হয়ে ও বিচারের জন্য যদি সে সত্য কথা বলতে গিয়ে বিপরীতপক্ষের দোষত্রুটি বর্ণনা করে, তাহলে সেটা গীবত হবে না।

2. দুই নম্বরে বলা হয়েছে, সে যদি কোনো মুফতী সাহেবের কাছে যায় ফতোয়ার জন্য, তখন সে ফতোয়ার জন্য যেটা সত্য সেটাই বলবে, এতে তার গীবত হবে না।

3. তিন নম্বরে বলা হয়েছে, যারা রাজা-বাদশাহ, আমীর-ওমরাহ শাসক গোস্ঠি তাদের ইছলাহ বা সংশোধন করার জন্য দোষত্রুটিগুলি যদি ধরিয়ে দেয়া হয়, তাহলে সেটা গীবত হবে না।

4. চার নম্বরে বলা হয়েছে, অহরহ পাপে লিপ্ত ফাসিকদের দোষত্রুটি বর্ণনা করলে, সেটা গীবত হয় না। ফাসিক বলা হয় যে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা হামেশা তরক করে তাদেরকে ।

5. পাঁচ নম্বরে বলা হয়েছে, যারা লুলা-ল্যাংড়া, বোবা-তোতলা নামে মশহূর তাদেরকে লুলা-ল্যাংড়া, বোবা-তোতলা বলে ডাকা হলে, সেটা গীবত হবে না।

6. ছয় নম্বরে বলা হয়েছে, যদি কোনো পিতা তার ছেলেকে বিয়ে করাতে চায় বা মেয়েকে বিয়ে দিতে চায়, বিপরীত পক্ষের কাছে গিয়ে সেই ছেলে বা মেয়ের প্রতিবেশীর কাছে যদি, ঐ ছেলে বা মেয়ে সম্বন্ধে সংবাদ নেয় আর প্রতিবেশীর লোকেরা যদি সত্য কথা বলে অর্থাৎ সেই ছেলে বা মেয়ের দোষত্রুটিগুলি বলে দেয়, তাহলে সেটা গীবত হবে না। কারণ এখানে একজনের জীবন নিয়ে প্রশ্ন।

7. আর সপ্তম যেটা বলা হয়েছে, যারা উলামায়ে ‘সূ’ বা দুনিয়াদার ধর্মব্যবসায়ী নামধারী আলিম পীর স্কলার যারা দ্বীনকে বিক্রি করে দুনিয়া অর্জন করে, তাদের দোষত্রুটি বর্ণনা করলে সেটা গীবত হবে না।

মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে সঠিক বিষয়টি বুঝার তৌফিক দান করুন-আমীন! এখন আপনি যদি ইমাম গাজ্জালি থেকে নিজেকে বড় আলেম বড় জ্ঞানি মনে করেন তাহলে আমার কিছু বলার নাই।

যিনা কি ? ইসলামে যিনার শাস্তি কি ?

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ “নারীদের পুরোটাই হচ্ছে “আওরাহ” বা সতর (শরীরের যে অংশ ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক)। যখন সে ঘর থেকে বের হয় শয়তান তাকে চোখ তুলে দেখে। নারী ঘরের মধ্যে অবস্থানকালেই আল্লাহর বেশি নৈকট্য প্রাপ্ত থাকে।”(সুনানে আত-তিরমিজি ও ইবনে হিব্বান)

এই যদি হয় রাসূল ﷺ বাণী তা হলেতো বর্তমানে যা দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ মেয়েরা বের্পদা ভাবে চলা চল করে এবং কি খোলা মেলা চলা ফেরা করতে পছন্দ করে। এবার দেখি ইসলাম কি বলে যিনার ব্যাপারে।

পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফের মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন,

وَلاَ تَقْرَبُواْ الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاء سَبِيلاً

অর্থ: “আর তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয়ো না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট পন্থা।” (পবিত্র সূরা বনী ইসরাঈল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩২)

দুনিয়াতে তাদের জন্য কি শাস্তি- সে সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِئَةَ جَلْدَةٍ وَلَا تَأْخُذْكُم بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ

অর্থ: “ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী, এদের প্রত্যেককে তোমরা একশ করে চাবুক মারবে। মহান আল্লাহ পাক উনার (শাস্তির) বিধান কার্যকর করতে তোমরা যেন তাদের প্রতি দয়ার বশবর্তী না হও। যদি তোমরা মহান আল্লাহ পাক ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাকো। আর মু’মিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।” (পবিত্র সূরা নূর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)



রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ “কোন বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া চোখের যিনা, অশ্লীল কথাবার্তা বলা জিহ্বার যিনা, অবৈধভাবে কাউকে স্পর্শ করা হাতের যিনা, ব্যাভিচারের উদ্দেশ্যে হেঁটে যাওয়া পায়ের যিনা, খারাপ কথা শোনা কানের যিনা আর যিনার কল্পণা করা ও আকাংখা করা মনের যিনা। অতঃপর লজ্জাস্থান একে পূর্ণতা দেয় অথবা অসম্পূর্ণ রেখে দেয়”। সহীহ আল-বুখারী, সহীহ আল-মুসলিম,সুনানে আবু দাউদ, সুনানে আন-নাসায়ী।

যিনা হারামঃ আল্লাহ তাআ’লা যিনাকে হারাম ঘোষণা করে বলেনঃ “তোমরা যিনার কাছেও যাবে না। কেননা তা অত্যন্ত নির্লজ্জ এবং খারাপ কাজ”। সূরা বনী ইসরাঈলঃ ৩২।

কোরআন শরিফ থেকে যিনার শাস্তিঃ আল্লাহ পাক যিনাকারী পুরুষ ও নারীর শাস্তির কথা ঘোষণা করে বলেন “যিনাকার যিনাকারী পুরুষ এদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে কোন দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হও। আর তাদের শাস্তি প্রদানকালে যেন মুসলমানদের একটি দল উপস্থিত হয়।” (সূরা-নূর, আয়াত-২)

যিনার শাস্তি হাদিস শরিফ থেকেঃ রাসুল ﷺ বলেছেনঃ “আমি স্বপ্নে একটি চুলা দেখতে পেলাম যার উপরের অংশ ছিল চাপা আর নিচের অংশ ছিল প্রশস্ত আর সেখানে আগুন উত্তপ্ত হচ্ছিল, ভিতরে নারী পুরুষরা চিল্লাচিল্লি করছিল। আগুনের শিখা উপরে আসলে তারা উপরে উঠছে, আবার আগুন স্তিমিত হলে তারা নিচে যাচ্ছিল, সর্বদা তাদের এ অবস্থা চলছিল, আমি জিবরীল আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলামঃ এরা কারা? জিবরাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললঃ তারা হল, অবৈধ যৌনচারকারী নারী ও পুরুষ। সহীহ আল-বুখারী।

যিনার শাস্তি হাদিস শরিফ থেকেঃ হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) ও যায়দ ইবনে খালিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। দুই ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট অভিযোগ উত্থাপন করল। একজন বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব মোতাবেক ফয়সালা করে দিন। অপরজন ছিল অধিক বুদ্ধিমান। সেও বলল, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব মোতাবেক ফয়সালা করে দিন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আচ্ছা বল। লোকটি বলল, আমার ছেলে এই ব্যক্তির কাজ করত। সে তার স্ত্রীর সাথে যিনা করল। তখন তারা আমাকে বলল যে, আমার ছেলেকে প্রস্তর নিক্ষেপ করে হত্যা করা হবে। তখন আমি আমার ছেলের মুক্তিপণ হিসেবে একশত বকরী ও আমার একটি বাঁদী দিয়ে দিলাম। তারপর আমি আলেমদের জিজ্ঞাসা করলাম। তাঁরা বলল, আমার ছেলেকে একশত বেত্রাঘাত করতে হবে এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর করতে হবে। আর তার স্ত্রীকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করতে হবে।
তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, শোন, আমার জান যার হাতে তার শপথ করে বলছি, আমি অবশ্যই তোমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব মোতাবেক ফয়সালা করব। তোমার বকরী এবং বাঁদী তোমার নিকট ফিরিয়ে দেয়া হবে। তোমার ছেলেকে একশত বেত্রাঘাত করে হবে এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর করা হবে। তারপর উনায়স আসলামী (রাঃ) কে বললেন, হে উনায়স! এই লোকের স্ত্রীর নিকট যাও। যদি সে স্বীকার করে, তবে তাকে প্রস্তর নিক্ষেপ করে হত্যা করো। তারপর মহিলাটি যিনার কথা স্বীকার করলে তাকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করা হল।” (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, মুয়াত্তা মালিক, দায়িমী)

হে নারী ও পরুষ সাবধান হও অবাধ যৌনচার থেকে….কারণ কেয়ামতের দিন নিজেদের বুঝা নিজেকেই উঠাতে হবে কেউ কারো গুনাহের বুঝা উঠাবে না….!!! আল্লাহ আমাদের সহী বুঝ দান করুক আমীন….!!


দৃষ্টিকে সংযত রাখার ব্যাপারে :-



আল্লাহ্ সুবহানু ওয়া তা’লা ইরশাদ মুবারক করেন যে “মুমিন পুরুষদের বলঃ তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে; এটাই তাদের জন্য উত্তম; তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ্‌ অবহিত।” (পবিত্র সুরাহ আন-নূর শরিফ, আয়াত শরিফ ৩০)

ব্যাখ্যাঃ আল্লাহ্‌ তা’আলা নির্দেশ দিচ্ছেন যেগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করা হারাম করেছি ওগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করোনা। হারাম জিনিস হতে চক্ষু নীচু করে নাও। যদি আকস্মিক ভাবে পড়েই যায় তবে দৃষ্টি ফিরিয়ে নাও।

হযরত জারীর ইবনে আবদিল্লাহ বাজালী (রা) হতে বর্ণীত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে হঠাত দৃষ্টি পড়ে যাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “সাথে সাথেই দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবে” [এই হাদীসটি ইমাম মুসলিম (র) বর্ণনা করেছেন]

হযরত বুরাইদা (রা) হতে বর্ণীত, রাসূল (সা) আলী (রা) কে বলেনঃ “হে আলী! দৃষ্টির উপর দৃষ্টি ফেলো না। হঠাত যে দৃষ্টি পড়ে ওটা তোমার জন্যে ক্ষমার্হ, কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি তোমার জন্যে ক্ষমার যোগ্য নয়। [এই হাদীসটি ইমাম আবূ দাঊদ (র) বর্ণনা করেছেন]

হযরত আবূ উমামা (রা) হতে বর্ণীত, তিনি রাসূল (সা) কে বলতে শুনেছেন যে, তোমরা ছয়টি জিনিসের দায়িত্ব নাও তাহলে আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের দায়িত্ব নিচ্ছি। ছটি জিনিস হলোঃ কথা বলার সময় মিথ্যা বলবেনা, আমানতের খিয়ানত করবেনা, ওয়াদা ভঙ্গ করবেনা, দৃষ্টি নিম্নমুখী রাখবে, হাতকে যুলুম করা হতে বাঁচিয়ে রাখবে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে। [এই হাদীসটি আবুল কাসেম আল বাগাভী (র) বর্ণনা করেছেন]

রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যাক্তি তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের (রক্ষার) দায়িত্ব নেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব নেবো। [এই হাদীসটি ইমাম বুখারী (র) বর্ণনা করেছেন]

হযরত আবূ উমামা হতে বর্ণীত, রাসূল (সা) বলেছেন, “হয় তোমরা তোমাদের দৃষ্টি নিম্নমুখী রাখবে, নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখবে এবং মুখমণ্ডলকে সোজা রাখবে, না হয় আল্লাহ্‌ তোমদের চেহারা বদলিয়ে দিবেন। [এই হাদীসটি ইমাম তিবরানী (র) বর্ণনা করেছেন]

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) হতে বর্ণীত, রাসূল (সা) বলেছেনঃ দৃষ্টি শয়তানী তীরসমূহের মধ্যে একটি তীর। যে ব্যাক্তি আল্লাহ্‌র ভয়ে নিজের দৃষ্টিকে সংযত রাখে, আল্লাহ্‌ তার অন্তরে এমন ঈমানের জ্যোতি সৃষ্টি করে দেন যে, সে ওর মজা উপভোগ করতে থাকে।

আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণীত, রাসূল (সা) বলেছেনঃ ইবনে আদমের জন্য ব্যাভিচারের একটি নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এটা সে নিঃসন্দেহে পাবেই। দু’চোখের যিনা হল দেখা, দু’কানের যিনা হল যৌন উত্তেজক কথাবার্তা শ্রবণ করা, মুখের যিনা হল আলোচনা করা, হাতের যিনা হল স্পর্শ করা, পায়ের যিনা ঐ উদ্দেশ্যে যাতায়ত করা। অন্তর ঐ কাজের কুপ্রবৃত্তিকে জাগ্রত করে এবং তার আকাংখা সৃষ্টি করে। আর যৌনাংগ এমন অবস্থাকে সত্যায়িত বা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। [এই হাদীসটি ইমাম বুখারী (র) বর্ণনা করেছেন]

আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণীত, রাসূল (সা) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন প্রত্যেক চোখই কাঁদবে, শুধুমাত্র ঐ চোখ কাঁদবে না যেই চোখ আল্লাহর হারামকৃত জিনিস না দেখে বন্ধ থেকেছে, আর ঐ চোখ যা আল্লাহ্‌র পথে জেগে থেকেছে এবং আল্লাহ্‌র ভয়ে কেঁদেছে, যদিও এ চোখের অশ্রু মাছির মাথার সমানও হয়। {তাফসীর ইবনে কাসীর}

তারাবির নামাজ ২০ রাকাত (পর্ব ১) :

পবিত্র রমযান মাসে তারাবী’র নামায কতো রাকাত পড়তে হয়, তা নিয়ে যথেষ্ট বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে বর্তমানে। ড জাকির নায়েক এর ফতোয়া অনুযায়ী নামধারী আহলে হাদিস ফিরকা এই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাই মুসলমানদের ভালো করে জানা আবশ্যক যে বিগত ১৪’শ বছর ধরে মুসলিম উম্মাহ ন্যূনতম ২০ রাকাত তারাবী নামায পড়ে আসছেন (এমনকি হারামাইন শরীফাইনেও)।



মুল আলোচনায় যা রয়েছে : পর্ব :-

১) আহলে হাদিস দের ৮ রাকাতের পক্ষে যেসব হাদিস দেয় সেগুলো

২) সেই হাদিস গুলোর ব্যখ্যা ও সমাধান (সংক্ষেপে)

৩) স্পষ্ট সহিহ হাদিসে ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজের উল্লেখ আছে তা।

৪) আহলে হাদিসরা যেসব হাদিস পড়ে তারাবিহ ৮ রাকাত বলে সে সম্পর্কে আবার বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়েছে।



                         ★★★  প্রথম পর্ব :



উত্তর: তারাবীহ নামাজ ২০ রাকআত। যারা বলে ৮ রাকাআত তাদের বক্তব্য সঠিক নয় । মুলত ধর্মপ্রান সাধারন মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির লক্ষে আহলে হাদীস বা লামাজহাবী সম্প্রদায় ৮ রাকাআত তারাবীহ এই মতামতের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে ।

* সংশয় নিরসনের জন্য ৮ রাকআত বা এসংক্রান্ত বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্নিত হাদীস ও তার সঠিক মর্ম নিম্নে তুলে ধরা হল।

প্রথম হাদীসঃ-
আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন , রমজানে রাসুল (সাঃ) এর নামাজ কেমন ছিল? উত্তরে তিনি বললেন , রাসুল (সাঃ) রমজানে ও অন্যান্য মাসে বিতির সহ এগার রাকআতের বশী পড়তেন না।
(বুখরী শরীফ হাঃ নং ১১৪৭)

দ্বিতীয় হাদীসঃ-
ইয়াহইয়া ইবনে আবু সালামা (রঃ) বলেন আমি রাসুল (সঃ) এর রাত্রী কালীন নামাজ সম্পর্কে আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম । উত্তরে তিনি বললেন, রাসুল(সঃ) রাত্রে তের রাকআত নামাজ আদায় করতেন । প্রথমে আট রাকাত পড়তেন , এর পর বিতির পড়তেন, তার পর দুই রাকত নামাজ বসে আদায় করতেন ।
( মুসলিম শরীফ- হাঃ নং ১৭২৪)

এজাতীয় হাদীস দ্বারা লা মাজহাবী সম্প্রদায়- তারাবীহ ৮ রাকাত এর উপর দলীল পেশ করে থাকে।



                      ★★★ দ্বিতীয় পর্ব :



উপরোক্ত হাদীস সমূহের উত্তরঃ-

প্রথম উত্তর: আয়েশা (রাঃ) থেকে উপরোক্ত হাদীস দুটি যেমনি ভাবে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে ঠিক তেমনি মুসলিম শরীফেই আয়েশা (রাঃ) থেকে দশ রাকাতের হাদীস ও বর্ণিত আছে। যেমন:

হাদীসঃ-
কাসেম ইবনে মুহাম্মদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন , আমি আয়েশা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসুল (সাঃ) রাত্রিতে দশ রাকাত নামাজ, এক রাকাত বিতির ,ও ফজরের দুই রাকাত সুন্নত সহ মোট ১৩ রাকাত পড়তেন।
( মুসলিম শরীফ- হাঃ নং ১৭২৭)

এমন কি আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হদীস গুলোর প্রতি লক্ষ করলে বোঝা যায় রাসুল (সাঃ) রাত্রীকালীন নামাজ- কোন রাত্রীতে ১১ রাকাত ,কখনো ১৩ রাকাত কখনো ৯ রাকাত, আবার কখনো ৭ রাকাত ও, আদায় করতেন । সুতরাং আয়েশা (রাঃ) এর হাদীস দ্বারা কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট করা সম্পুর্ন অযৌক্তিক।

দ্বিতীয় উত্তরঃ-
প্রকৃত পক্ষে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস গুলো তাহাজ্জুদ সম্পর্কিত , তারাবীহ সম্পর্কিত নয় । একারনেই হাদীস গ্রন্থাকারগন এজাতীয় হাদীসকে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন , তারাবীর অধ্যায়ে উল্লেখ করেননি।

তৃতীয় উত্তরঃ-
আহলে হাদীসগন তারাবী ৮ রাকাত হওয়ার স্বপক্ষে যে হাদীসগুলো পেশ করে থাকেন, সে অনুযায়ী তারা নিজেরাই আমল করেন না। কেননা হাদীসে রমজান ও অন্যান্য মাসের কথাও উল্লেখ রয়েছে , অথচ তারা তাদের হাদীস অনুযায়ী অন্যান্য মাসে তারাবীহ পড়ে না।

Clearify :



“তারাবীহ নামায ৮ রাকায়াত” এ বাতিল দাবীর দলীল ভিত্তিক খন্ডন :

প্রথমতঃ যারা বলে তারাবীহ নামায আট রাকায়াত পড়া সুন্নত, তারা দলীল হিসাবে বুখারী শরীফ প্রথম জিলদ ১৫৪ পৃষ্ঠার বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফ উল্লেখ করে থাকে। হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে, হযরত আবূ সালমাহ ইবনে আব্দুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে জিজ্ঞাস করলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রমাদ্বান শরীফ মাসে কত রাকায়াত নামায পড়তেন? তখন উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন,“সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রমাদ্বান শরীফ মাসে ও রমাদ্বান শরীফ মাস ব্যতীত অন্য মাসে এগার রাকায়াতের অধিক নামায পড়তেন না। আর তিনি তা চার,চার রাকায়াত করে পড়তেন।”

জবাবঃ কয়েকটি কারণে উপরোক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা কখনোই তারাবীহ নামায ৮ রাকায়াত প্রমাণিত হয়না।প্রথম কারণঃ  উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এ “রমাদ্বান শরীফ মাসে” এর সাথে সাথে “রমাদ্বান শরীফ মাস ব্যতীত অন্য মাসে” একথাও উল্লেখ আছে। অর্থাৎ বলা হয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অন্য মাসে যেরূপ এগার রাকায়াত নামায পড়তেন তদ্রূপ রমাদ্বান শরীফ মাসেও এগার রাকায়াত নামায পড়তেন। এখন প্রশ্ন হলো- রমাদ্বান শরীফ মাসে নাহয় তারাবীহ নামায পড়েছেন কিন্তু গায়রে রমাদ্বান শরীফ (রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্য মাসে) তারাবীহ নামায পড়বেন কিভাবে? তারাবীহ নামায শুধু মাত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে পড়তে হয়। মূলতঃ এ হাদীছ শরীফ-এ তারাবীহ নামাযের কথা বলা হয়নি বরং তাহাজ্জুদ নামাযের কথা বলা হয়েছে। কেননা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সারা বৎসরই তাহাজ্জুদ নামায আদায় করতেন।

★ এ প্রসংগে বিখ্যাত মুহাদ্দিস, আল্লামা শায়খ শামসুদ্দীন কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা তাহাজ্জুদ নামাযকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আবূ সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রশ্ন ও উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার জবাব তাহাজ্জুদ নামাযের সাথে সম্পৃক্ত ছিল।”

Reference :
(কাওকাবুদ দুরারী শরহে বুখারী)

★ উক্ত হাদীছ শরীফ এর ব্যাখ্যায় ইমামুল মুহাদ্দিছীন হযরত শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “বিশুদ্ধ বা সহীহ মত এটাই যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিতরসহ যে এগার রাকায়াত নামায পড়েছেন, তা তাহাজ্জুদ নামায ছিল”

Reference :
(আশয়াতুল লুময়াত)

★ এ প্রসংগে ইমামুল মুহাদ্দিছীন হযরত শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা তাহাজ্জুদ নামাযের সাথে সম্পর্কিত, যা রমাদ্বান শরীফ ও গায়রে রমাদ্বানে একই সমান ছিল।”

Reference :
(মুজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে আযীয)

★ আর হুজ্জাতুল ইসলাম, ৩ লক্ষ হাদিসের হাফিজ ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ব্যাখ্যায় বলেন,“সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক, তিন, পাঁচ, সাত, নয় এবং এগার রাকায়াত বিতর নামায আদায় করতেন। তের রাকায়াতের বর্ণনাটি পরিত্যাজ্য, আর একখানা হাদীছ শরীফ এর মধ্যে সতের রাকায়াতের কথাও উল্লেখ আছে। আর এসকল নামাযের রাকায়াত যার সাথে আমি বিতর শব্দটি ব্যবহার করেছি, তা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাত্রি বেলায় আদায় করতেন। আর এটাই হলো তাহাজ্জুদ নামায।”

Reference :
(ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন)

উম্মতের জন্য যেন ফরজ না হয়ে যায় সেই কারনে :-

★ হাদীছ শরীফ এ আরো ইরশাদ হয়েছে, “হাফিযুল হাদীছ, ইবনে হাজর আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম রাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লোকদের সাথে দু’রাত্রি বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়লেন। যখন তৃতীয় রাত্রি আসলো, তখন লোকজন একত্রিত হলো, কিন্তু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নিকট আসলেন না। অতঃপর বললেন, আমারা আশংকা হচ্ছে যে, এটা তোমাদের উপর ফরয যায় কিনা। আর যদি এটা ফরয হয়ে যায়, তাহলে তোমরা তা আদায় করতে সক্ষম হবেন না।” এই হাদীছ শরীফ খানা সহীহ হওয়ার ক্ষেত্রে সকলেই একমত।

Reference :

* তালখীছুল হাযির ফি তাখরীজে আহাদীছির রাফিয়িল কাবীর,
* লামিউদদুরারী শরহে ছহীহিল বুখারী,
* মিরকাত শরহে মিশকাতে বর্ণিত আছে


★ তাছাড়া উক্ত হাদীছ শরীফখানা যে তাহাজ্জুদ নামায সম্পর্কিত তার আরো একটি অকাট্য দলীল হলো এই যে, হাদীছ শরীফ-এর জমহুর ইমামগণ উক্ত হাদীছ শরীফখানা উনাদের স্ব স্ব কিতাবে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। যেমনঃ

** ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুসলিম শরীফ-এর ১ম জিলদ ২৫৪ পৃষ্ঠায়,
** ইমাম আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুনানে আবূ দাউদের ১ম জিলদ ১৯৬ পৃষ্ঠায়,
** ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তিরমিযী শরীফ-এর ১ম জিলদ ৫৮ পৃষ্ঠায়,
** ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নাসাঈ শরীফ-এর ১ম জিলদ ১৫৪ পৃষ্ঠায় এবং
**  ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুয়াত্তায়ে ইমাম মালেকের ৪৭ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদীছ শরীফকে ````````তাহাজ্জুদের``````` অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন।



★ তারা ৮ রাকায়াতের স্বপক্ষে দলীল হিসাবে নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফখানা পেশ করে থাকে। হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে যে, মুহম্মদ ইবনে হুমাইদুর রাযী, ইয়াকুব ইবনে আব্দুল্লাহ উনার থেকে, তিনি ঈসা ইবনে জারিয়া হতে, তিনি হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রমাদ্বান শরীফ মাসে আট রাকায়াত নামায পড়েছেন এবং বিতর নামায আলাদা আদায় করেছেন। (ক্বিয়ামুল লাইল)

★★★ জবাবঃ কয়েকটি কারণে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত উক্ত হাদীছ শরীফখানা আট রাকায়াত তারাবীহ নামাযের পক্ষের দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

*** প্রথম কারণঃ মুহাদ্দিসগণের মতে উক্ত হাদীছ শরীফখানা জঈফ বলে প্রমাণিত। কেননা উক্ত হাদীছ শরীফ-এর `````তিনজন রাবী জঈফ````` বলে প্রমাণিত হয়েছেন। তার মধ্যে

→→ একজন হলেন- মুহম্মদ ইবনে হুমাইদুর রাযী সম্পর্কে কিতাবে নিম্নোক্ত মত পেশ করা হয়েছে-

১। হাফেজ যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মুহম্মদ ইবনে হুমাইদুর রাযী জঈফ রাবী।
২। হযরত ইয়াকুব ইবনে শায়বা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি অনেক মুনকার হাদীছ বর্ণনাকারী।
৩। ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,তার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে।
৪। ইমাম আবূ যুরা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি মিথ্যাবাদী।
৫। ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি গ্রহণযোগ্য নন। (মিযানুল ই’তেদাল)

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফখানার প্রথম রাবী মুহম্মদ ইবনে হুমাইদুর রাযী জঈফ।



উক্ত হাদীছ শরীফ-এর

→→ দ্বিতীয় জঈফ রাবী হলেন- ইয়াকুব ইবনে আব্দুল্লাহ্,উনার প্রসংগে ইমাম দারে কুৎনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি শক্তিশালী রাবী নন (বরং দূর্বল)।

→→ তৃতীয় রাবী হলেন- ঈসা ইবনে জারিয়া, তিনিও জঈফ রাবী। উনার প্রসংগে বলা হয় যে,
১। হযরত ইবনে মুঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তার নিকট বহু মুনকার হাদীছ রয়েছে।
২। ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি মুনকার হাদীছ বর্ণনাকারী
৩। ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন, তার হাদীছগুলো পরিত্যাজ্য।
৪। “মিযানুল ই’তেদাল” কিতাবে তাকে জঈফ রাবীদের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা জঈফ। কাজেই জঈফ হাদীছকে সহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামাযের বিরুদ্ধে দলীল হিসাবে পেশ করা আহমকী ও জিহালত বৈ কিছুই নয়।



*** দ্বিতীয় কারন,  এছাড়া কিতাবে উল্লেখ আছে যেসব হাদিসে মত বিরোধ সেখানে সাহাবীগনের আমল এর দিকে লক্ষ করে আমল করা -

১। ইমাম হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,“যখন দুই হাদীছ শরীফ-এর মধ্যে বিরোধ দেখা দিবে, তখন লক্ষ্য করতে হবে হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কোন হাদীছ শরীফ-এর উপর আমল করেছেন। অর্থাৎ হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যে হাদীছ শরীফ মুতাবিক আমল করবেন, ওটাই গ্রহণযোগ্য হবে।” (আবূ দাউদ)

২। ইমাম হযরত মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে উল্লেখ করেন যে, “যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে কোনো বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়, আর তার মধ্য হতে একটির উপর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম ও হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনার আমল প্রমাণিত হয়, তখন যে হাদীছ শরীফখানার উপর উনাদের আমল থাকবে, সেটাই দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবে।”

৩। ইমামুল মুজতাহিদীন হযরত আবূ বকর জাছছাছ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “যখন কোনো বিষয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে দু’টি বিরোধপূর্ণ হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়, আর তার মধ্যে কোনো একটির উপর সলফে সালেহীনগণ আমল করেছেন বলে যদি প্রমাণিত হয়, তবে যে হাদীছ শরীফ-এর উপর সলফে সালেহীনগণ আমল করেছেন, সেটাই উত্তম দলীল হিসাবে সাব্যস্ত হবে। (আহকামুল কুরআন)




                 ★★★  তৃতীয় পর্ব  :



২০ রাকাত তারাবীহ এর স্পষ্ট দলীল সমুহ :



★ হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান: “তোমরা আমার সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরো এবং আমার সঠিক পথের অনুসারী খলীফাবৃন্দের সুন্নাহকেও।” [সুনানে আবু দাউদ, ২য় খণ্ড, ৬৩৫ পৃষ্ঠা, সুনানে তিরমিযী, ২য় খণ্ড, ১০৮ পৃষ্ঠা, সুনানে দারিমী, ১ম খণ্ড, ৪৩ পৃষ্ঠা, ইবনে মাজাহ ও অন্যান্য]


                          ★ দলিল-১:


★ হযরত সাঈব ইবনে ইয়াযীদ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) বলেন, “খলীফা হযরত উমর ফারূক (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর আমলে (রমযান মাসে) মুসলমান সমাজ ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায এবং বিতরের নামাযও পড়তেন।”

Reference :

* ইমাম বায়হাকী প্রণীত ‘মা’রেফত-উস-সুনান ওয়াল্ আসার’, ৪র্থ খণ্ড, ৪২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৫৪০৯]
* মুয়াত্তায়ে ইমাম মালিক
* তালীকুল হাসান
* ই’লাউস সুনান,
* তাহাবী শরহে মায়ানিয়িল আছার
* আইনী শরহে বুখারী,
* উমাদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী,
* ফাতহুল মুলহিম শরহে মুসলিম


`````````হাদিসের মান সম্পর্কে :


★ ইমাম বায়হাকী (রহ:) অপর এক সনদে অনুরূপ একখানি রওয়ায়াত লিপিবদ্ধ করেছেন।

হযরত সাঈব ইবনে ইয়াযীদ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) বলেন, “খলীফা হযরত উমর ইবনে আল-খাত্তাব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর শাসনামলে রমযান মাসে মুসলমানগণ ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায পড়তেন।” তিনি আরও বলেন, “তাঁরা মি’ঈন পাঠ করতেন এবং খলীফা হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর শাসনামলে (নামাযে) দণ্ডায়মান থাকার অসুবিধা থেকে স্বস্তির জন্যে তাঁরা নিজেদের লাঠির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন।” [ইমাম বায়হাকী রচিত ‘সুনান আল-কুবরা’, ২য় খণ্ড, ৬৯৮-৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৪৬১৭] ইমাম নববী (রহ:) বলেন, “এটির এ সনদ সহীহ।”  [‘আল-খুলাসাতুল আহকাম’, হাদীস নং ১৯৬১]

★ ইমাম বদরুদ্দীন আয়নী (রহ:) বলেন, “ইমাম বায়হাকী (রহ:) সহীহ সনদে সাহাবী হযরত সাঈব ইবনে এয়াযীদ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) থেকে বর্ণনা করেছেন যে খলীফা হযরত উমর ফারূক (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর শাসনামলে মুসলমান সমাজ ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায পড়তেন এবং তা খলীফা হযরত উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর শাসনামলেও প্রচলিত ছিল।” [’উমদাতুল ক্কারী শরহে সহীহ আল-বোখারী’, ৫ম খণ্ড, ২৬৪ পৃষ্ঠা; দারুল ফিকর, বৈরুত, লেবানন হতে প্রকাশিত]

★ ’সালাফী’ আলেম আল-মোবারকপুরীও এই হাদীসটির সনদকে ’সহীহ’ বলেছে এবং এর পক্ষে ইমাম নববী (রহ:)-এর সমর্থনের কথা উদ্ধৃত করেছে।  [’তোহফাতুল আহওয়াযী’, ৩য় খণ্ড, ৪৫৩ পৃষ্ঠা; দারুল ফিকর, বৈরুত, লেবানন থেকে প্রকাশিত] ইমাম নববী (রহ:) বলেন, “এই এ সনদে সকল রাবী তথা বর্ণনাকারী ’সিকা’ বা নির্ভরযোগ্য।” [‘আসার আল-সুনান’, ২:৫৪]


                           ★ দলিল-২:


★ ইয়াযীদ ইবনে রুমান বলেছেন, “খলীফা হযরত উমর ইবনে আল-খাত্তাব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর শাসনামলে মুসলমানবৃন্দ রমযান মাসের (প্রতি) রাতে ২৩ রাকআত (তারাবীহ ২০ ও বিতর ৩) নামায পড়তেন।”

Reference :

[ইমাম মালেক প্রণীত ‘মুয়াত্তা মালেক’, সালাত অধ্যায়, মা জা’আ ফী কায়ামে রমযান, ১ম খণ্ড, ১৫৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৩৮০]



                           ★ দলিল-৩:



★ হযরত আবদুল আযীয বিন রাফি’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “হযরত উবাই ইবনে কাআব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) মদীনা মোনাওয়ারায় রমযান মাসে ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামাযের জামা’তে ইমামতি করতেন।”

Reference :

 [মোসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ৫ম খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা, ৭৭৬৬ নং হাদীস]



                            ★ দলিল-৪:



★ আবদুর রহমান সুলামী বর্ণনা করেন যে হয়রত আলী (কাররামাল্লাহু ওয়াযহু) রমযান মাসে কুরআন মজীদ তেলাওয়াতকারী হাফেযদের ডেকে তাদের মধ্যে একজনকে ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায পড়াতে বলেছিলেন এবং নিজে বিতরের নামাযে ইমামতি করতেন।

Reference : [ইমাম বায়হাকী কৃত ’সুনান আল-কুবরা’, ২য় খণ্ড, ৬৯৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৪৬২০]

★ হযরত আবুল হাসান রহমতুল্লাহি উনার থেকে বর্নিত আছে, “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম একজন সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ইমাম নিযুক্ত করে উনাকে নির্দেশ দিলেন, তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত পড়াবেন।”

Reference : মুছান্নাফ-ইবেন আবী শায়বা


                            ★ দলিল-৫:


★  হযরত হাসান বসরী (রহ:) বলেন: “খলীফা উমর ফারূক (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) রমযান মাসের (তারাবীহ) নামাযে হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম)-এর ইমামতিতে মানুষদেরকে জামা’তে কাতারবদ্ধ করেন এবং তিনি (ইবনে কা’ব) ২০ রাকআত নামায পড়ান।” [‘সিয়ার আল-আ’লম ওয়াল নুবালাহ’, ১ম খণ্ড, ৪০০-১ পৃষ্ঠা, হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা:)-এর জীবনী] ইমাম নববী (রহ:) ওপরের বর্ণনা সম্পর্কে বলেন: “এর সনদ সহীহ।” [‘আল-খুলাসাত আল-আহকাম’, হাদীস নং ১৯৬১]


                            ★ দলিল-৬:


★ হযরত আবূল হাসনা বর্ণনা করেন যে হযরত আলী (কাররামাল্লাহু ওয়াযহু) জনৈক ব্যক্তিকে রমযান মাসে ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামাযে ইমামতি করার নির্দেশ দেন।”

Reference :

* মোসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা’, ৫ম খণ্ড, ২২৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৬৩
* সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী,
* আল জাওহারুন নক্বী,
* কানযূল উম্মাল,
* ই’লাউস সুনান,
* উমদাতুল ক্বারী, আইনী শরহে বুখারীতে বর্ণিত আছে।


                            ★ দলিল-৭ :


★ হযরত নাফে’ ইবনে উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) থেকে ওয়াকী’ বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “হযরত ইবনে আবি মুলাইকা (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম) রমযান মাসে আমাদের জামা’তের ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামাযে ইমামতি করতেন।”

Reference :

[মোসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ৫ম খণ্ড, ২২৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৬৫]


                           ★ দলিল-৮ :


★ হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম) বর্ণনা করেন যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে (প্রতি রাতে) নিজে নিজে ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায আদায় করতেন এবং এরপর ৩ রাকআত বেতরের নামাযও পড়তেন।

Reference :

[‘সুনান আল-বায়হাকী, হাদীস নং ১২১০২]


                            ★ দলিল ৯ :


★ হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) বর্ণনা করেন যে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায আদায় করতেন এবং এরপর ৩ রাকাত বেতরের নামাযও আদায় করতেন।

Reference :

[’মোসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা’, ২য় খণ্ড, হাদীস নং ৭৬৯২]


                           ★ দলিল ১০ :


★ হযরত আয়েশা (আলাইহিস সালাম) থেকে বর্ণিত, বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই রাতে ২০ রাকআত নামায মানুষের সাথে আদায় করেন; কিন্তু তিনি তৃতীয় রাতে আর বের হননি। তিনি বলেন, আমি আশংকা করি যে এটি তোমাদের (সাহাবা-এ-কেরামের) প্রতি আবার বাধ্যতামূলক না হয়ে যায়।

Reference :

[ইবনে ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) কৃত ‘আল-তালখীস আল-হাবীর’, ২য় খণ্ড, হাদীস নং ৫৪০]

বি:দ্র: ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) এই হাদীস উদ্ধৃত করার পরে বলেন, “সকল মোহাদ্দেসীন (হাদীসের বিশারদ) হযরত আয়েশা (আলাইহিস সালাম) হতে এই বর্ণনার নির্ভরযোগ্যতার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেন, তবে রাকআতের সংখ্যার ক্ষেত্রে নয়।


                           ★ দলিল ১১ :


★ আল-হারিস (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) বর্ণনা করেন যে তিনি রমযান মাসে ২০ রাকআত তারাবীহ নামায আদায় করতেন, আর ৩ রাকআত বেতরের নামাযেও ইমামতি করতেন এবং রুকূর আগে কুনুত পড়তেন।

Reference :

 [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, ৫ম খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৬৭]


                           ★ দলিল ১২ :


★ তারাবীহ’র সংজ্ঞাঃ হযরত আবূ আল-বখতারী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) থেকে বর্ণিত যে তিনি রমযান মাসে জামাআতে ‘৫ তারভিয়াত’ (অর্থাৎ, ২০ রাকআত তারাবীহ) নামাযের এবং ৩ রাকাত বেতরের নামাযের ইমামতি করতেন।

Reference :

[মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, ৫ম খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৬৮]

বি:দ্র: তারাবীহ নামাযে প্রতি ৪ রাকআতে এক ‘তারভিহ’ (বিশ্রামের সময়)। পাঁচ ’তারভিহাত’ হলো ৫*৪=২০ রাকআত।


                           ★ দলিল ১৩ :


★ হযরত আতা’ ইবনে রুবাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) বলেন: আমি সব সময়-ই মানুষদেরকে ২৩ রাকআত (তারাবীহ) পড়তে দেখেছি, যা’তে অন্তর্ভুক্ত ছিল বেতরের নামায।

Reference :

* মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, ৫ম খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৭০
* ক্বিয়ামুল লাইল,
* লাইলুল আওতার,
* ফাতহুল বারী শরহে বুখারী


                           ★ দলিল ১৪ :


★ হযরত শায়তার ইবনে শাকী হতে প্রমাণিত যে তিনি রমযান মাসে ২০ রাকআত তারাবীহ নামাযের জামাআতে এবং বেতরের নামাযেও ইমামতি করতেন।

Reference :

[মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ৫ম খণ্ড, ২২২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৬২]


                           ★ দলিল ১৫ :


★  হযরত সাঈদ বিন উবাইদ বর্ণনা করেন যে হযরত আলী বিন রাবিয়াহ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) তাঁদেরকে ৫ তারভিহাত (২০ রাকআত তারাবীহ) নামাযে এবং ৩ রাকআত বেতরের নামাযেও ইমামতি করতেন।

Reference :

 [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, ৫ম খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৭২]


                           ★ দলিল ১৬ :


★ ইবনে কুদামাহ (রহ:) ২০ রাকআত তারাবীহ নামাযের পক্ষে যে ‘এজমা’ হয়েছে, সে সম্পর্কে প্রমাণ পেশ করতে গিয়ে লিখেন:

আবূ আবদিল্লাহ (ইমাম আহমদ হাম্বল)-এর দৃষ্টিতে প্রতিষ্ঠিত দলিল হলো ২০ রাকআত (তারাবীহ); এ ব্যাপারে একই মত পোষণ করেন সর্ব-হযরত সুফিয়ান সাওরী (রহ:), ইমাম আবূ হানিফা (রহ:) ও ইমাম শাফেঈ (রহ:)। ইমাম মালেক (রহ:)-এর মতে এটি ৩৬ রাকআত। তিনি মদীনাবাসীর রীতি অনুসরণ করেন। কেননা, সালেহ বলেন তিনি সেখানকার মানুষকে দেখেছিলেন ৪১ রাকআত কেয়ামুল্ লাইল (তারাবীহ) পালন করতে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ৫ রাকআত বেতরের নামায। কিন্তু আমাদের প্রামাণ্য দলিল হচ্ছে খলীফা হযরত উমর ফারূক (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) মানুষদেরকে সমবেত করে হযরত ইবনে কা’ব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর ইমামতিতে ২০ রাকআত তারাবীহ’র নামায জামাআতে আদায় করিয়েছেন। হযরত হাসসান (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর সূত্রে এও বর্ণিত হয়েছে যে খলীফা হযরত উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) এভাবে ২০ রাত হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর ইমামতিতে মানুষদেরকে জামাঅাতে নামায আদায় করিয়েছিলেন; আর তিনি (হযরত কা’ব) রমযানের নিসফে (ওই সময়) শেষ দশ দিন তারাবীহ নিজের ঘরে পড়তেন। এই বর্ণনা ইমাম আবূ দাউদ (রহ:) ও হযরত সাইব ইবনে এয়াযীদ (রা:)-এর প্রদত্ত। ইমাম মালেক (রহ:) এয়াযীদ ইবনে রুমান থেকে এও বর্ণনা করেছেন যে, খলীফা হযরত উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর শাসনামলে মানুষেরা ২৩ রাকআত তারাবীহ আদায় করতেন, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ৩ রাকআত বিতর।

★ ইবনে কুদামাহ আরও লিখেন: হযরত আলী (কাররামাল্লাহু ওয়াযহু) হতে এও বর্ণিত হয়েছে যে তিনি জনৈক ব্যক্তিকে ২০ রাকআত তারাবীহ’র জামাআতে ইমামতি করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। অতএব, ২০ রাকআত তারাবীহ’র ব্যাপারে এজমা’ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে। অধিকন্তু, সালেহ যে মদীনাবাসীদেরকে ৪১ রাকআত নামায পড়তে দেখেছিলেন, সে সম্পর্কে বলবো, সালেহ দুর্বল এবং আমরা জানি না ৪১ রাকআতের এই বর্ণনা কে দিয়েছিলেন। হতে পারে যে সালেহ কিছু মানুষকে ৪১ রাকআত পড়তে দেখেছিলেন, কিন্তু এটি তো হুজ্জাত (প্রামাণ্য দলিল) হতে পারে না। আমরা যদি ধরেও নেই যে মদীনাবাসী ৪১ রাকআত তারাবীহ (বেতরের ৫ রাকআত-সহ) পড়তেন, তবুও হযরত উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর নির্দেশ, যা তাঁর সময়কার সকল সাহাবা-এ-কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগন) অনুসরণ করেছিলেন, তা-ই অধিকতর অনুসরণযোগ্য। কয়েকজন উলামা বলেন যে মদীনাবাসী মুসলমানগণ ৩৬ রাকআত তারাবীহ পড়তেন যাতে মক্কাবাসী মুসলমানদের সাথে তা মিলে যায়; কেননা, মক্কাবাসীরা প্রতি রাকআত পড়ার পর তাওয়াফ করতেন এবং এভাবে তাঁরা ৭ বার তাওয়াফ করতেন। মদীনাবাসী মুসলমানগণ ওই সময়ের মধ্যে (অর্থাৎ, একেক তওয়াফে) ৪ রাকআত আদায় করে নিতেন (নওয়াফিল)। কিন্তু আমরা যেহেতু জানি যে সাহাবা-এ-কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম) ২০ রাকআত তারাবীহ পড়েছেন, সেহেতু আমাদের তা-ই মান্য করা আবশ্যক।

Reference :

[ইবনে কুদামাহ প্রণীত আল-মুগনী, ২য় খণ্ড, ৬০৪ পৃষ্ঠা]



                           ★ দলিল ১৭ :


★ আল-গুনিয়াতুত্ তালেবীন গ্রন্থে লেখা আছে: তারাবীহ নামাযের অন্তর্ভুক্ত ২০ রাকআত। প্রতি দুই রাকআতে প্রত্যেকের উচিত বৈঠকে সালাম ফেরানো; ফলে এ নামায ৫ তারউইহাত-বিশিষ্ট, যার প্রতি ৪ রাকআতে একটি তারভি (অর্থাৎ, ৫ বার চার রাকআত =২০)।

Reference :

[বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (রহ) : আল-গুনিয়াতুত্ তালেবীন, ২য় খণ্ড, ২৫ পৃষ্ঠা]


                           ★ দলিল ১৮ :


★ ইমাম বোখারী (রহ:) তাঁর ‘আল-কুনা’ পুস্তকে রওয়ায়াত করেন: হযরত আবূ আল-খুসাইব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) বর্ণনা করেন যে হযরত সুওয়াইদ বিন গাফালাহ (রা:) সব সময়-ই রমযান মাসে আমাদেরকে নিয়ে জামাআতে ২০ রাকআত তারাবীহ নামাযে ইমামতি করতেন।

Reference :

* ইমাম বুখারী : আল-কুনা, ২য় খণ্ড, হাদীস নং ২৩৪

* সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী,
* মুছান্নিফ ইবনে আবী শাইবা,
* আল্‌ জাওহারুন নক্বী,
* আছারুস সুনান,
* ই’লাউস সুনান,
* বজলুল মাজহুদ,
* শরহে আবূ দাউদ




                           ★ দলিল ১৯ :


★ হযরত ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত- নিশ্চয়ই হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি এক ব্যক্তিকে সকল লোকদের নিয়ে বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন।

Reference :

* মুছান্নিফ ইবনে আবী শা’ইবা,
* ই’লাউস সুনান,
* ফিক্বহুস সুনানে ওয়াল আছার,
* ফাতহুল মুলহিম শরহে মুসলিম


                            ★ দলিল ২০ :


★ হযরত যায়িদ ইবনে ওহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রমাদ্বান শরীফ মাসে তারাবীহ নামায পড়াতেন। হযরত আ’মাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তিনি বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়াতেন এবং তিন রাকায়াত বিতর পড়াতেন।” হাদীছ শরীফ এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়তেন বিতর নামায ব্যতীত। অর্থাৎ তারাবীহ বিশ রাকায়াত এবং বিতর রাকায়াত মোট তেইশ রাকায়াত।”

Reference :

* মুছান্নাফ- ইবনে আবী শায়বাহ


                            ★ দলিল ২১ :


★ মুহম্মদ ইবনে কা’ব রহমতুল্লাহি উনার থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, “লোকেরা (হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার যামানায় (খিলাফতকালে) রমাদ্বান শরীফ মাসে বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামাযপড়েন।”

Reference :

(ক্বিয়ামুল লাইল, পৃষ্ঠা-৯১)


                            ★ দলিল ২২ :


★ হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার এক সাথী হযরত শুতাইর ইবনে শেকাল রহমতুল্লাহি আলাইহি রমাদ্বান মাসে ২০ তারাবীহ ও তিন রাকায়াত বিতর নামায পড়েন।

Reference :

* সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী,
* মুছান্নিফ ইবনে আবী শাইবা,
* আল জাওহারুন নক্বী,
* মিরক্বাত শরহে মিশকাতে উল্লেখ আছে



                            ★ দলিল ২৩ :



★ হযরত আবুল বুখতারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত, “তিনি রমাদ্বান শরীফ মাসে পাঁচ তারবীহা অর্থাৎ বিশ রাকায়াত তারাবীহ ও তিন রাকায়াত বিতর নামায পড়তেন।” (মুছান্নিফ ইবনে আবী শাইবা)


★ হাফিযুল হাদীছ, ইবনে আব্দুল বার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হারিছ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আবু জুবার রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সায়িব ইবনে ইয়াযীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, “আমীরুল মু’মিনীন, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার সময় তেইশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়া হতো। হযরত আব্দুল বার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উহার তিন রাকায়াত বিতর নামায।” (আইনী শরহে বুখারী)


★ আল্লামা ইবনে হাজর মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেই একমত যে, তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত।তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত এ বিষয়ে কোন সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দ্বিমত পোষণ করেন নি। হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই কথা বর্ণনা করেছেন- বিশ রাকায়াত তারাবীহ। এটাই সহীহ বর্ণনা।(উমাদুল ক্বারী, শরহে বুখারী)



এতএব উপরের এতসব দলিলাজিল্লাহ দ্বারা প্রমানিত হলো যে তারাবির নামাজ ২০ রাকাত ই পড়া সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতামত তাই এখন যদি কেউ ৮ রাকাত পড়ে তাহলে আল্লাহু রাব্বুল আলামিন ই ভালো জানেন তার ফায়ছালা তিনি কিভাবে করবেন। নিশ্চই যারা সাহাবা (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম) গনের বিপক্ষে নিজের মনগড়া মতামত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পছন্দ করবেন না আর যা তিনি অপছন্দ করবেন তা আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন ও অপছন্দ করেন।



                                       ★★ পর্ব ৪ :


                               যারা হাদিসই না বুঝে তারাবিহ ৮ রাকাত বলে তাদের
                              জন্য সেই হাদিস গুলো বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হল :



আহলুল বেদআহ (বেদআতী গোষ্ঠী) আনন্দে আটখানা হয়ে বলে, দেখো, ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) এই হাদীসটিকে সহীহ হিসেবে গ্রহণ করেছেন, কিন্তু রাকআতের সংখ্যার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। অতএব, তারাবীহ’র নামাযের রাকআতের সংখ্যা কতো তা প্রতিষ্ঠিত নয়।

জবাব: প্রথমতঃ ইমাম ইবনে হাজর (রহ:)-এর এই কথা আমাদের বিরুদ্ধে নয়, বরং বেদআতীদের বিরুদ্ধে যায়। কেননা, তারাবীহ নামায ২০ রাকআত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পক্ষে আমাদের কাছে একচেটিয়া দালিলিক প্রমাণ আছে। অথচ তারা দুটো দলিলকে বিকৃত করে কপটতার সাথে দাবি করে যে তারাবীহ’র নামায মাত্র ৮ রাকআত।

★ তারাবীহ নামায সম্পর্কে বেদআতীদের প্রদর্শিত মূল দলিল হচ্ছে বোখারী শরীফের একখানা হাদীস, যা’তে বিবৃত হয়েছে:

সহীহ বোখারী, তাহাজ্জুদ-বিষয়ক বই, ২য় খণ্ড, ২১তম বই, হাদীস নং ২৪৮

হযরত আবূ সালমা বিন আবদির রহমান (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন: আমি মা আয়েশা (আলাইহিস সালাম)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রমযান মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামায কেমন ছিল? তিনি জবাবে বলেন, “আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান, বা অন্যান্য মাসে কখনোই এগারো রাকআতের বেশি নামায পড়েন নি; তিনি চার রাকআত পড়তেন, সেগুলোর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করো না; অতঃপর চার রাকআত পড়তেন, সেগুলোর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কেও আমাকে প্রশ্ন করো না; এবং এরপর তিনি তিন রাকআত নামায পড়তেন।” মা আয়েশা (আলাইহিস সালাম) আরও বলেন, “আমি বল্লাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! বেতরের নামায পড়ার আগে কি আপনি ঘুমোন? তিনি উত্তরে বলেন, ’ওহে আয়েশা! আমার চোখ ঘুমোয়, কিন্তু আমার অন্তর (কলব্) জাগ্রত থাকে’।”

এবার আমরা সহিহ (বোখারী ও মুসলিম) হতে দালিলিক প্রমাণগুলো যাচাই করবো।

★ সহীহ বোখারী, ২য় খণ্ড, ২১তম বই, হাদীস নং ২৬১

হযরত আয়েশা (আলাইহিস সালাম) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের নামাযে তেরো রাকআত পড়তেন এবং ফজরের নামাযের আযান শোনার পর তিনি দুই রাকআত (হাল্কা, দীর্ঘ নয়) নামায আদায় করতেন।

এই হাদীস প্রমাণ করে তাহাজ্জুদ (বেতর ছাড়াই) অন্ততপক্ষে ১০-১২ রাকআত-বিশিষ্ট নামায। অথচ এই বেদআতীরা ৮ রাকআতকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ হিসেবে মনে করে। এই কারণেই ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) হযরত আয়েশা (আলাইহিস সালাম) থেকে উপরোক্ত ২০ রাকআতের বর্ণনাসম্বলিত হাদীসটিকে ’সহীহ’ বলেছেন, কিন্তু রাকআতের সংখ্যার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেন নি।


★ সহীহ বোখারী, ২য় খণ্ড, ২১তম বই, হাদীস নং ২৪০

মাসরুখ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) বর্ণনা করেন, আমি মা আয়েশা (আলাইহিস সালাম)-কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাতের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “ফজরের দুই রাকআত (অর্থাৎ সুন্নাহ) ছাড়াও ওই নামায ছিল সাত, নয় বা এগারো রাকআত-বিশিষ্ট।”

এটিও হযরত আয়েশা (আলাইহিস সালাম)-এর হাদীসে ‘এদতেরাব’ প্রমাণ করে (মানে সাত, নয়, নাকি এগারো তা স্থিরকৃত নয়); আর তারাবীহ কখনোই ৮ রাকআত বলে বিবেচনা করা যায় না, কারণ এর ২০ রাকআত হবার ব্যাপারে ঐকমত্য রয়েছে।

★ সহীহ মুসলিম, ৪র্থ বই, হাদীস নং ১৬১১

হযরত আয়েশা (আলাইহিস সালাম) থেকে বর্ণিত যে, রাতে রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদায়কৃত নামাযে রাকআত সংখ্যা ছিল দশ। তিনি বিতরের নামায এবং ফজরের দুই রাকআত (সুন্নাত) নামাযও আদায় করতেন। আর এর যোগফল হচ্ছে তেরো রাকআত।

★ সহীহ মুসলিম, ৪র্থ বই, হাদীস নং ১৬৮৬

আবূ জামরা (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) বর্ণনা করেন: আমি হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু
তা’য়ালা আনহু)-কে বলতে শুনেছি যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তেরো রাকআত নামায পড়তেন।

★ সহীহ মুসলিম, ৪র্থ বই, হাদীস নং ১৬৮৭

হযরত যায়দ বিন খালেদ আল-জুহানী (রহ:) বলেন: ”নিশ্চয় আমি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আদায়কৃত রাতের নামায প্রত্যক্ষ করতাম। তিনি প্রথমে সংক্ষিপ্ত দুই রাকআত নামায পড়তেন; অতঃপর দীর্ঘ, অতি দীর্ঘ দুই রাকআত পড়তেন; এর পরের দুই রাকআত পূর্ববর্তী দুই রাকআতের চেয়ে সংক্ষিপ্ত ছিল; পরবর্তী যে দুই রাকআত পড়তেন, তা আরও সংক্ষিপ্ত; তৎপরবর্তী দুই রাকআত আরও সংক্ষিপ্ত; এর পরে আরও দুই রাকআত পড়তেন যা আরও সংক্ষিপ্ত ছিল। অতঃপর তিনি একটি রাকআত (বিতর) পড়তেন, যা সর্বসাকুল্যে তেরো রাকআত নামায হতো।”

ওপরে প্রদর্শিত আমাদের ৮ এবং ৯ নং দলিল, যার মধ্যে রয়েছে হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) কর্তৃক সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে প্রদত্ত ২০ রাকআত তারাবীহ নামাযের বর্ণনা, উভয় বর্ণনাতেই অবশ্য আবূ শায়বাহ (মহান মুহাদ্দীস ইবনে আবি শায়বাহ’র বাবা) নামে একজন রাবী (বর্ণনাকারী) আছেন যাঁর নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ মুহাদ্দেসীন তাঁকে ‘দুর্বল’ বিবেচনা করেছেন। এমতাবস্থায় এই সকল বেদআতী লোকেরা আবারও আনন্দে লাফ দিয়ে বলে ওঠে যে আবূ শায়বাহ দুর্বল; তাই ২০ রাকআত তারাবীহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়। তাদের কথার সমর্থনে তারা নিম্নের হাদীসটি প্রদর্শন করে:

★ হযরত জাবের ইবনে আব্দিল্লাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) বর্ণনা করেন, “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে (এক রাতে) আট রাকআত ও বেতরের নামাযে ইমামতি করেন। পরবর্তী রাতে আমরা মসজিদে সমবেত হই এই আশায় যে তিনি আবারও ইমামতি করার জন্যে বেরিয়ে আসবেন। আমরা সেখানে সকাল পর্যন্ত অবস্থান করি। অতঃপর আমরা মসজিদের মাঝখানে এসে আরয করি, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা গত রাতে মসজিদে অবস্থান করেছি এই আশায় যে আপনি নামাযে ইমামতি করবেন।’ প্রত্যুত্তরে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, ‘নিশ্চয় আমি আশংকা করেছি এটি তোমাদের প্রতি অবশ্য পালনীয় না হয়ে যায়’।” [ইবনে খুযাইমাহ (২:১৩৮, হাদীস # ১০৭০), ইমাম তাবারানী কৃত মু’আজম আস্ সাগীর (১:১৯০) এবং অন্যান্যরা]

এই বেদআতীরা নিজেদের হীন স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলে যে কোনো হাদীসকে যয়ীফ (দুর্বল) ঘোষণা করতে মোটেও দেরি করে না। এখন আমরা হযরত জাবের ইবনে আব্দিল্লাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) হতে জাল হাদীস বর্ণনাকারী সম্পর্কে আল-জারহ ওয়াত্ তা’দীল-বৃন্দ কী বলেছেন তা দেখবো।





★★ এই হাদীসটির ‘একমাত্র’ বর্ণনাকারী ঈসা ইবনে জারিয়াহ; মহান মোহাদ্দেসীনবৃন্দ ও আল-জারহ ওয়াত্ তা’দীল-মণ্ডলীর অভিমত নিচে পেশ করা হলো:

★ হযরত ইয়াহইয়া বিন মঈন (রহ:) বলেন: এই লোক ‘কেউই নয়’ এবং সে যার কাছ থেকে হাদীস নিয়েছে এমন বর্ণনাকারীদের মধ্যে ইয়াকুব (শিয়াপন্থী) ছাড়া আর কাউকে আমি জানি না। [তাহযিবুত্ তাহযিব, ৪:৫১৮]

★ ইমাম আল-মিযযী (রহ:) প্রণীত ‘তাহযিবুল কামাল’ গ্রন্থে ইমাম আবূ দাউদ (রহ:)-এর বাণীও বিধৃত হয়েছে, যেখানে তিনি ঈসাকে মুনকার আল-হাদীস ঘোষণা করেন। যথা, আবূ উবায়দ আল-আজরী ইমাম আবূ দাউদ (রহ:)-এর কথা উদ্ধৃত করেন, যিনি বলেন যে ঈসা বিন জারিয়াহ ‘মুনকার আল-হাদীস’। [তাহযিব আল-কামাল, ১৪তম খণ্ড, ৫৩৩ পৃষ্ঠা]

★ ইমাম নাসাঈ (রহ:) নিজ ‘দু’আফা ওয়াল মাতরুকীন’ গ্রন্থে বলেন, “ঈসা বিন জারিয়াহ হাদীস গ্রহণ করেছে (শিয়া বর্ণনাকারী) ইয়াকুব আল-কুম্মী হতে; আর সে (ঈসা) হচ্ছে ‘মুনকার’।” [ইমাম নাসাঈ কৃত ‘দু’আফা ওয়াল মাতরুকীন, ২:২১৫]

অতএব, ছয়টি বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য হাদীসগ্রন্থের মধ্যে দু’টির রচয়িতা (ইমাম আবূ দাউদ ও ইমাম নাসাঈ) ওই বর্ণনাকারীকে ‘মুনকারুল হাদীস’ ঘোষণা করেছেন বলে সপ্রমাণিত হলো।

★★ ঈসা বিন জারিয়াহ সম্পর্কে অন্যান্য উলামা-এ-কেরাম যা বলেছেন, তা নিম্নরূপ:

★ ইমাম আল-সা’যী (রহ:) ও ইমাম আল-উকাইলী (রহ:) ’দু’আফা’ (দুর্বল/অ-নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী)-এর তালিকায় ঈসাকে উল্লেখ করেন।

★ ইমাম ইবনে আদী (রহ:) বলেন, তার বর্ণিত আহাদীস ‘মাহফূয নয়’। [তাহযিবুত্ তাহযিব, ৪:৫১৮]

★ ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) স্বয়ং বলেন, ঈসা বিন জারিয়াহ ‘লাঈন’ (দুর্বলতাপ্রবণ, অর্থাৎ, অ-নির্ভরযোগ্য)। [তাকরিবুত্ তাহযিব, ১:৭৬৮]

★ এমন কি আলবানী ও হুসাইন সালীম আসাদের মতো শীর্ষস্থানীয় ‘বাতিল-সালাফীরাও ঈসা বিন জারিয়াহ বর্ণিত এই হাদীসটিকে যয়ীফ বলেছে। যেমন হুসাইন সালীম আসাদ ‘মুসনাদে আবি এয়ালা’ গ্রন্থের নিজস্ব ব্যাখ্যামূলক ’তাহকীক’ পুস্তকে বলে, এর সনদ ’দুর্বল’। [তাহকীক, ৩:৩৩৬, দারুল মা’মূন, দামেশক থেকে প্রকাশিত]

সুতরাং পরিদৃষ্ট হচ্ছে যে আল-জারহ ওয়াত্ তা’দীল তথা হযরত এয়াহইয়া বিন মঈন (রহ:), ইমাম নাসাঈ (রহ:) ও ইমাম আবূ দাউদ (রহ:)-এর মতো কর্তৃত্বসম্পন্ন মহান উলামাবৃন্দ ঈসাকে দা’য়ীফ-ই শুধু নয়, বরং মুনকারুল হাদীস-ও বলেছ্নে।






উপমহাদেশে পরিচিত ‘সালাফী’ আলেম মওলানা আবদুর রহমান মোবারকপুরী (মৃত্যু: ১৩৫৩ হিজরী) লিখেছে, যে বর্ণনাকারী (রাবী) মুনকারুল হাদীস বলে জ্ঞাত, তার বর্ণিত সমস্ত আহাদীস-ই প্রত্যাখ্যানযোগ্য। [এবকারুল মতন, ১৯১ পৃষ্ঠা]

★ অতএব, হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) ও হযরত জাবের (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) বর্ণিত উভয় হাদীসই বড় জোর দুর্বল (শেষোক্ত জনের বর্ণনাটি বানোয়াট বলে প্রমাণিত); অধিকন্তু, ইমাম আবূ দাউদ (রহ:)-এর প্রদত্ত নিম্নের উসূলে হাদীসের ব্যাখ্যা অনুযায়ী হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর বর্ণিত হাদীসটি মকবূল বা গৃহীত বলে সাব্যস্ত হয়। ইমাম আবূ দাউদ (রহ:) একখানি হাদীস বর্ণনার পরে বলেন, যদি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত দু’টি হাদীসের মধ্যে ’পরস্পরবিরোধিতা’ দেখা যায়, তাহলে আমরা সেই রীতি গ্রহণ করি যেটি সাহাবা-এ-কেরাম কর্তৃক সমর্থিত  [সুনানে আবি দাউদ, হাদীস নং ১৫৭৭-এর অধীন]

এমতাবস্থায় হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) হতে বর্ণিত হাদীসটি সমর্থিত হয়েছে, কেননা তা হযরত উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু), হযরত উবাই বিন কা’ব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) ও অন্যান্য আরও অনেকের বর্নিত হাদীসের সাথে মিলে যায়। ওহাবীরা অবশ্য ইমাম মালেক (রহ:)-এর ‘মুয়াত্তা মালেক’ হতে নিজেদের অবস্থানের পক্ষে আরেকটি রেওয়ায়েত প্রদর্শন করে থাকে। কিন্তু এই বর্ণনাটি হযরত উবাই বিন কাআব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর ২০ রাকআত তারাবীহ নামায পড়ানোর রীতি সম্পর্কে বর্ণিত একচেটিয়া আহাদীসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।


★ মুওয়াত্তা-এ-ইমাম মালেক, ৬ষ্ঠ বই, নম্বর ৬.২.৪

এয়াহইয়া আমার (ইমাম মালেক স্বয়ং) কাছে বর্ণনা করেন মালেক হতে, তিনি মোহাম্মদ ইবনে ইউসূফ হতে, এই মর্মে যে, হযরত সা’ইব ইবনে ইয়াযীদ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) বলেন: “খলীফা হযরত উমর ফারূক (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) ও হযরত তামীম আদ্ দারী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-কে নির্দেশ দেন যেন তাঁরা রাতের এগারো রাকআত নামাযের জামাআতে ইমামতি করেন। কুরআন তেলাওয়াতকারী (ইমাম) মি’ঈন (মধ্যম আকৃতির সূরার সমষ্টি) পাঠ করতেন যতোক্ষণ না আমরা দীর্ঘ সময় নামাযে দণ্ডায়মান হওয়ার দরুন নিজেদের লাঠির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতাম। ভোর না হওয়া পর্যন্ত আমরা (মসজিদ) ত্যাগ করতাম না।”

এটি-ই ‘সালাফী’দের কাছে দ্বিতীয় বড় দলিল। পরিতাপের বিষয় এই যে, আল-জারহ ওয়াত্ তা’দীল এবং আসমাউর রেজাল জ্ঞানের শাস্ত্রগুলো সম্পর্কে অনবধান নিরীহ মুসলমান সর্বসাধারণকেই কেবল ‘সালাফী’রা ধোকা দিয়ে বিভ্রান্ত করতে পারে, কিন্তু আহলে সুন্নাতের জ্ঞান বিশারদগণ তাদেরকে এই জ্ঞানে সমুচিত শিক্ষা দেবেন।


★ মুয়াত্তা মালেক’ গ্রন্থে লক্ষণীয় যে এর এ সনদ হিসেবে বলা হয়েছে, ‘মোহাম্মদ বিন ইউসূফ ‘আ’ন সাইব ইবনে ইয়াযীদ’ (সাইব বিন ইয়াযীদ হতে মোহাম্মদ বিন ইউসূফ বর্ণিত)।

‘মোসান্নাফ-এ-আবদির রাযযাক’ গ্রন্থে ওই একই বর্ণনা একই এসনাদ-সহ লিপিবদ্ধ আছে, কিন্তু তাতে বিবৃত হয়েছে: হযরত সাইব বিন এয়াযীদ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) হতে মোহাম্মদ বিন ইউসূফ বর্ণনা করেন যে, খলীফা হযরত উমর ফারূক (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) রমযান মাসে মানুষদেরকে হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) ও হযরত তামীম দারী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর ইমামতিতে একুশ রাকআত নামায জামাতে আদায়ের নির্দেশ দেন। [মুসান্নাফে আবদির রাযযাক, ৪র্থ খণ্ড, ২৬০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৩০]

অতএব, ‘মুয়াত্তা মালেক’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ বর্ণনা থেকেও ৮ রাকআত প্রমাণিত হয় না, বরং রওয়ায়াত থেকে সুস্পষ্টভাবে ২০ রাকআত তারাবীহ’র নামায-ই প্রমাণিত হয়।


★ এক্ষণে ‘সালাফী’দের কাছে খুলাফায়ে রাশেদীনের আর কোনো বর্ণনা নেই যা দ্বারা ৮ রাকআত তারাবীহ সাব্যস্ত করা যায়। কাজেই ’মুয়াত্তা মালেক’ গ্রন্থে বর্ণিত রেওয়ায়েতটি ‘মুদতারেব’ হিসেবে প্রমাণিত হয় এবং তাই এটি প্রামাণিক দলিল বলে গ্রহণের অযোগ্য। অনুগ্রহ করে ওপরে পেশকৃত বিভিন্ন রওয়ায়াতের একচেটিয়া দলিলগুলো দেখুন, যা’তে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) ২০ রাকআত তারাবীহ আদায় করেছেন। এমন কি ’সালাফী’গুরু (তাদের ‘শায়খুল ইসলাম’) ইবনে তাইমিয়াহ আল-মুজাসমী-ও এ সম্পর্কে বলে: “এটি সপ্রমাণিত যে হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) রমযান মাসে সাহাবা-এ-কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম)-দের জামাআতে ২০ রাকআত তারাবীহ ও ৩ রাকআত বেতরের নামাযে ইমামতি করতেন। অতএব, অধিকাংশ উলামা-এ-কেরামের মাসলাক (রীতি-নীতি) এই যে, এটি-ই সুন্নাহ। কেননা, হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) এই ২০ রাকআতের ইমামতি করার সময় ওখানে উপস্থিত ছিলেন মোহাজির (হিজরতকারী) ও আনসার (সাহায্যকারী) সাহাবীবৃন্দ, কিন্তু তাঁদের একজনও এর বিরোধিতা করেন নি!” [ইবনে তাইমিয়াহ কৃত মজমুয়া-এ-ফাতাওয়া, ১:১৯১]














জান্নাতী মুমিনদেরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র স্ত্রী ও হুরদের সাথে বিয়ে দেবেন।


জান্নাতীদেরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র স্ত্রী ও হুরদের সাথে বিয়ে দেবেন মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿

 مُتَّكِ‍ِٔينَ عَلَىٰ سُرُرٖ مَّصۡفُوفَةٖۖ وَزَوَّجۡنَٰهُم بِحُورٍ عِينٖ ٢٠ ﴾ [الطور: ٢٠]

অর্থঃ ‘তারা সামনা-সামনিভাবে সাজানো সারি সারি আসনের উপর ঠেস দিয়ে বসে থাকবে এবং আমি তাদের সাথে সুনয়না হুরদের বিবাহ দেবো।’ (সূরা তুর: ২০)

حور বহুবচনের শব্দ। একবচনে حوراء অর্থ অত্যন্ত সুশ্রী, অনিন্দ্য সুন্দর। عين শব্দটিও বহুবচন। একবচনে عيناء অর্থ ভাসা ভাসা ডাগর চক্ষুওয়ালা নারী। যাদেরকে বাংলা সাহিত্যের ভাষায় হরিণ নয়না বলা হয়। হুর সম্বন্ধে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মুফাচ্ছিরগণ দু’ভাগে ভাগ করেছেন, এক দলের মতেঃ সম্ভবত এরা হবে সেসব মেয়ে যারা বালেগা হওয়ার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেছিলো এবং যাদের পিতা-মাতা জান্নাতে যাওয়ার যোগ্য হয় নি। সে সব মেয়েদেরকে ষোড়শী যুবতী করে হুরে রূপান্তর করা হবে। আর তারা চিরদিন নব্য যুবতীই থেকে যাবে।


অন্যদের মতেঃ হুরগণ প্রকৃতপক্ষে স্ত্রী জাতি কিন্তু তাদের সৃষ্টি মানব সৃষ্টির চেয়ে আলাদা এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আপন মহিমায় তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। অন্যত্র বলা হয়েছেঃ ﴿

فِيهِنَّ خَيۡرَٰتٌ حِسَانٞ ٧٠ ﴾ [الرحمن: ٧٠]

অর্থঃ ‘(এসব নিয়ামতের মধ্যে থাকবে) তাদের জন্য সচ্চরিত্রবান ও সুদর্শন স্ত্রীগণ।’ (সূরা আর-রাহমান: ৭০)

সূরা আল-ইমরানে বলা হয়েছেঃ ﴿

 لِلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ عِندَ رَبِّهِمۡ جَنَّٰتٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَا وَأَزۡوَٰجٞ مُّطَهَّرَةٞ وَرِضۡوَٰنٞ مِّنَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ بَصِيرُۢ بِٱلۡعِبَادِ ١٥ ﴾ [ال عمران: ١٥]

অর্থঃ ‘যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদের জন্য এমন উদ্যান সমূহ রয়েছে যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহমান। আর সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। সেখানে তাদের জন্য আরও আছে পবিত্রা স্ত্রীগণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি।

হুরেরা হবে আবরণে রক্ষিত উজ্জ্বল মণি-মুক্তার মতো সুন্দরী আল্লাহ বলেন: ﴿

 وَحُورٌ عِينٞ ٢٢ كَأَمۡثَٰلِ ٱللُّؤۡلُوِٕ ٱلۡمَكۡنُونِ ٢٣ ﴾ [الواقعة: ٢٢، ٢٣]

“হুরের উদাহরণ হলো, আবরণে রক্ষিত মুক্তার মতো সুন্দর ও উজ্জ্বল এবং আয়তলোচনা। ”(সূরা ওয়াকি‘আহ্‌: ২৩)

আল্লাহ আরো বলেন, ﴿

وَعِندَهُمۡ قَٰصِرَٰتُ ٱلطَّرۡفِ عِينٞ ٤٨ كَأَنَّهُنَّ بَيۡضٞ مَّكۡنُونٞ ٤٩﴾ [الصافات: ٤٨، ٤٩]

“তাদের চোখ সর্বদাই অবনত (পবিত্রা যারা অন্যের দিকে তাকায় না), সুন্দর চোখ বিশিষ্ট এবং তারা যেন ডিমের আবরণের ভেতর সুপ্ত উজ্জ্বল।” (সূরা সাফ্‌ফাত:৪৮- ৪৯)

আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন «

وَلَوْ أَنَّ امْرَأَةً مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ اطَّلَعَتْ إِلَى أَهْلِ الأَرْضِ لَأَضَاءَتْ مَا بَيْنَهُمَا، وَلَمَلَأَتْهُ رِيحًا، وَلَنَصِيفُهَا عَلَى رَأْسِهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا

» ‘জান্নাতীগণের স্ত্রীদের মধ্যে থেকে কোনো একজন স্ত্রী যদি পৃথিবীর দিকে উঁকি মেরো দেখতো তবে আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী সবকিছু আলোকিত হয়ে যেতো এবং গোটা পৃথিবী সুগন্ধে ভরে যেতো। তার মাথার উড়নাটিও পৃথিবী এবং পৃথিবীর সমস্ত বস্তুর চেয়ে দামী।’ (বুখারী, ২৭৯৬)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, হুরেরা অত্যন্ত উজ্জ্বল সুন্দরী, রূপবতী, লাবণ্যময়ী, সুন্দর ও বড় বড় চোখের অধিকারিণী হবে, কাপড়ের মধ্য দিয়ে তাদের হাড়ের ভেতরের মজ্জা দেখা যাবে, তাদের দেহ আয়নার মতো স্বচ্ছ হবে এবং যে কেউ নিজের চেহারা তাতে দেখতে পাবে। আনাস ইবন মালেক থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: মোমিনকে জান্নাতে ১শত নারীর সাথে যৌনমিলনের শক্তি দেয়া হবে। (মুসনাদে আহমাদ, ৪/৩৭১)

অন্য বর্ণনায় আছেঃ «

إِنَّ أَوَّلَ زُمْرَةٍ يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ يَوْمَ القِيَامَةِ ضَوْءُ وُجُوهِهِمْ عَلَى مِثْلِ ضَوْءِ القَمَرِ لَيْلَةَ البَدْرِ، وَالزُّمْرَةُ الثَّانِيَةُ عَلَى مِثْلِ أَحْسَنِ كَوْكَبٍ دُرِّيٍّ فِي السَّمَاءِ، لِكُلِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ عَلَى كُلِّ زَوْجَةٍ سَبْعُونَ حُلَّةً يُرَى مُخُّ سَاقِهَا مِنْ وَرَائِهَا»

“প্রথম যারা কিয়ামতের দিন জান্নাতে যাবে, তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জ্বল দেখা যাবে, আর দ্বিতীয় দল, তারা যেন সৌন্দর্যে আকাশের ধ্রুব তারা, তাদের প্রত্যেকের জন্য থাকবে দু’জন স্ত্রী, প্রত্যেক স্ত্রীর উপর থাকবে সত্তরটি কাপড়, তথাপি তার ভেতর থেকেও পায়ের নলার ভিতরের মগজ দৃষ্টিগোচর হবে।” (তিরমিযী, ২৫৩৫)।

বৃহস্পতিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

পুরুষদের টাকনোর নিচে কাপড় পরিধানের শাস্তি





মুলকথা :-

১) টাকনোর নিচে কাপড় থাকলে সেই অংশটুকু জাহান্নামে যাবে।

২) আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাদের দিকে ফিরেও তাকাবেন না বা রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না।

৩) এটা হল অহংকার। আর আল্লাহ অহংকার কারীকে পছন্দ করেন না।

৪) আল্লাহ এমন ব্যক্তির নামায গ্রহন করবেন না, যে তার লুঙ্গি-কাপড় ঝুলিয়ে দিয়ে নামায আদায় করে।নামায পড়ে ফেললে সেই নামায বাতিল পুনরায় ওযু করে নামায পড়তে হবে।

৫) নিয়ম হল হাটুর নিচে ও টাকনোর মধ্যবর্তী স্থানে পরা বা সমস্যা হলে টাকনোর উপরে কাপড় পরলেই হবে।


এই ৫ টি কথা নিচের সকল হাদিসের মুলকথা :-


জাবের ইবন সুলাইম রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, “টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পড়ার ব্যাপারে সাবধান হও। কারণ, তা অহংকারের অন-র্ভূক্ত। আর আল্লাহ অহংকার করাকে পছন্দ করেন না।” (আবু দাঊদ)।


আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত৷
তিনি বলেন,
নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন; ইযারের বা পরিধেয় বস্ত্রের যে অংশ পায়ের গোড়ালির গিঁটের নীচে (টাখনুর নিচে) থাকবে, সে অংশ জাহান্নামে যাবে৷
[সহীহ বুখারী হাঃ ৫৭৮৭],

আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; আল্লাহ কিয়ামত দিবসে সে ব্যক্তির দিকে (দয়ার)
দৃষ্টি দিবেন না, যে ব্যক্তি অহংকার বশতঃ ইযার বা পরিধেয় বস্ত্র পায়ের গিঁটের নিচে (টাখনুর নিচে) ঝুলিয়ে পরিধান
করে৷
[সহীহ বুখারী হাঃ ৫৭৮৮;
মুসলিম হাঃ ২০৮৭],

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পুরুষের শরীরের যে কোন পোশাক টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পড়া হারাম। পোশাক যদি টাখনুর নিচে ঝুলে যায়, তাহলে টাখনুর নিচের ঐ অংশকে জাহান্নামের অংশ বলে ধরা হল।
[বুখারী হাঃ ৫৪৫০],

আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন এক লোক পায়ের গিঁটের নিচে (টাখনুর নিচে) লুঙ্গি-কাপড় ঝুলিয়ে নামায পড়ছিলো। তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও, পুনরায় ওযু কর। সে গিয়ে আবার ওযু করে এলো। তিনি আবার বললেন যাও, পুনরায় ওযু কর। একজন বললো ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কেন আপনি তাকে ওযূ করার আদেশ দিচ্ছেন, তারপর নীরাবতা পালন করেছেন? তিনি বললেন : এ লোক তার লুঙ্গি-কাপড় পায়ের গিঁটের (টাখনুর নিচে) ঝুলিয়ে নামায পড়ছিলো। অথচ আল্লাহ এমন ব্যক্তির নামায গ্রহন করবেন না, যে তার লুঙ্গি-কাপড় ঝুলিয়ে দিয়ে নামায আদায় করে। এ হাদীসটি মুসলিমের শর্তে আবূ দাঊদ সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।
[আবূ দাঊদ হাঃ ৪০৮৬],

আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
একলোক গোডালির গিঁটের নিচে (টাখনুর নিচে) কাপড় পরিধান করে রাস্তা দিয়ে হাটছিল৷ হঠাৎ তাকে মাটির সাথে ধ্বসিয়ে দেওয়া হল৷ এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত
লোকটি ধ্বসতেই থাকবে৷
[বুখারী]

এটি আবূ হুরাইরাহ
রাদিয়াল্লাহু আনহু
হতেও বর্ণিত হয়েছে৷
[বুখারী]



আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কিয়ামতের দিন তিন শ্রেনীর লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি ফিরে তাকাবেন না এবং তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্রও (মুক্ত) করবেন না। তাছাড়া তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন তিনবার কথাগুলি বললেন। আবূ যার রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এসব বিফল মনোরথ ও বঞ্চিত কারা? তিনি বললেন :

(১) অহংকারবশে যে লোক লুঙ্গি-কাপড় পায়ের গিঁটের নিচে (টাখনুর নিচে) ঝুলিয়ে দেয়,

(২) উপকার করে যে লোক খোটা দেয় বা বলে বেড়ায় এবং

(৩) মিথ্যা শপথ করে যে লোক তার মালসামগ্রী বিক্রয় করে। হাদীসটি ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন। তার অপর এক বর্ণনায় রয়েছে : যে লোক তার লুঙ্গি হেঁচরিয়ে চলে।
[সহীহ মুসলিম হাঃ ১০৬; তিরমিযী হাঃ ১২১১; নাসায়ী হাঃ ১৫৬৩; আবূ দাঊদ হাঃ ৪০৮৭; ইবনে মাজাহ হাঃ ২২০৮],


ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তহবন্দ বা পায়জামা, জামা ও পাগড়ীই ঝুলিয়ে দেয়া হয়। যে লোক অহংকার বশত এমন কিছু ঝুলিয়ে দিবে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কিয়ামতের দিন তার প্রতি তাকাবেন না। হাদীসটি আবূ দাঊদ ও নাসায়ী সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।
[সহীহ আবূ দাঊদ, তাহক্বীক্ব আলবানী হাঃ ৩৪৫০, ৪০৯৪; সহীহ আল-জামি হাঃ ২৭৭],


হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি অহংকারের বশীভূত হয়ে নিজের কাপড় অত্যন্ত নিচে [টাখনুর নিচে] পরিধান করবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত দিবসে তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। [বুখারি শরিফ, খ. ২, পৃ. ৮৬০]


ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অহংকারবশত যে ব্যক্তি তার বস্ত্র বা কাপড় পায়ের গিঁটের নিচে (টাখনুর নিচে) ঝুলিয়ে চলবে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কিয়ামতের দিন তার দিকে ফিরেও তাকবেন না। উম্মু সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, তাহলে মহিলারা তাদের আচঁলের ব্যাপারে কি করবে? তিনি বললেন, তারা পায়ের গিঁট থেকে এক বিঘত পরিমান ঝুলিয়ে রাখবে। উম্মু সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, এতে তো তাদের পা অনাবৃত হয়ে পড়বে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তাহলে তারা একহাত পরিমান নিচে পর্যন্ত ঝুলতে পারে, এর চাইতে বেশি যেন না ঝুলায়। এ হাদীসটি আবূ দাঊদ ও তিরমিযী বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি হাসান সহীহ।
[সহীহ আল-জামি হাঃ ৬১৮৭; গাইয়াতুল মারাম হাঃ ৯০; সহীহ আবূ দাউদ হাঃ ৩৪৬৭, ৪০৮৫; তিরমিযী হাঃ ১৭৩১],


ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মুখ দিয়ে গেলাম। তখন আমার লুঙ্গি-কাপড় পায়ের গিঁটের নিচে (টাখনুর নিচে) ঝুলন্ত ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : হে আবদুল্লাহ! তোমার লুঙ্গি-কাপড় উপরে উঠাও। তা আমি উপরে উঠালাম। তিনি আবার বললেন : আরো উঠাও। আমি তা আরো উঠালাম। তাঁর নির্দেশক্রমে এভাবে আমি তা উঠাতেই থাকলাম। লোকদের মধ্যে একজন বললো, তা কতদূর উঠাতে হবে? তিনি বললেন পায়ের নলার অর্ধেক পর্যন্ত।
[মুসলিম হাঃ ২০৮৬],


ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অহংকার বশত যে লোক তার কাপড় পায়ের গিঁটের নিচে (টাখনুর নিচে) ঝুলিয়ে দেয়, কিয়ামতের দিন তার প্রতি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ফিরে তাকাবেন না। আবূ বাকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পায়জামা তো প্রায়ই ঝুলে যায়, আমি যদি সচেতন না থাকি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন তাদের মধ্য তুমি অন্তর্ভুক্ত নও, যারা অহংকারের বর্শবর্তী হয়ে কাপড় ঝুলিয়ে রাখে। হাদীসটি ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন এবং এর অংশবিশেষ মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
[বুখারী হাঃ ৩৬৬৫, ৫৭৮৪; মুসলিম হাঃ ২০৮৫],


আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলিমের লুঙ্গি বা পায়জামা হাঁটু ও পায়ের গিঁটের বা টাখনুর মাঝামাঝি জায়গা পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। তবে তা পায়ের নলার মাঝখান হতে পায়ের গিঁটের মাঝামাঝি থাকাও দোষের নয়। যে অংশটুকু পায়ের গিঁটের নিচে (টাখনুর নিচে) থাকবে তা, জাহান্নামে যাবে। অহংকার বর্শবর্তী হয়ে যে ব্যক্তি লুঙ্গি বা পায়জামা নীচের দিকে ঝুলিয়ে দেয়, কিয়ামতের দিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার দিকে ফিরেও তাকবেন না। আবূ দাঊদ হাদীসটি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।
[সহীহ আবূ দাঊদ, তাহক্বীক্ব আলবানী হাঃ ৩৪৪৯, ৪০৯৩],


হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে শুনেছি, মুমিন বান্দাদের জন্য পায়জামা পরিধান করার (উত্তম ও সুন্দর) পদ্ধতি হলো 'নিছফ্ সাক্ব'- অর্ধহাঁটু পর্যন্ত পরিধান করা। অর্থাৎ পায়ের গোছার মধ্যখান পর্যন্ত বা অর্ধহাঁটু অথবা পায়ের গিঁটের মধ্যখান পর্যন্ত হলে গুনাহ হবে না, তা বৈধ। যা এর নিচে হবে, তা জাহান্নামে যাবে (তার পরিণাম জাহান্নাম)। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথাটি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনবার বলেছেন। অতঃপর তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তির দিকে চোখ তুলেও তাকাবেন না, যে অহংকার ও বড়ত্বের বশীভূত হয়ে কাপড় হিঁচড়ে চলে। [আবু দাউদ শরিফ, ইবনে মাজাহ শরিফ]


হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.)-এর হাদিস থেকে অনুভূত হয়, মুমিনদের জন্য উত্তম হলো লুঙ্গি বা পায়জামা 'নিছফ্ সাক্ব'- অর্ধহাঁটু হওয়া। তবে পায়ের গিঁট পর্যন্ত পরিধান করা বৈধ। কিন্তু তারও নিচে পরিধান করা বৈধ নয়; বরং বড় গুনাহ, তার ওপর জাহান্নামের হুকুম এসেছে। (মারেফুল হাদিস, পৃ. ২৯০, খ. ২)


বিশর রাহিমাহুল্লাহ বললেন, একদা ইবনু হানযালিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, আমাদের এমন কিছু কথা বলুন, আমারা যাতে লাভবান হই এবং আপনার ক্ষতি না হয়। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, খুরাইম আসাদী কি চমৎকার লোক। তার চূল যদি বেশি লম্বা না হতো এবং তার লুঙ্গি-কাপড় যদি পায়ের গিঁটের নিচে (টাখনুর নিচে) না পড়তো। কথাটি খুরাইমের কানে পৌঁছে গেল। কাঁচি নিয়ে তিনি দ্রুত কান পর্যন্ত নিজের চুল কেটে ফেললেন এবং নিজের পায়জামাটি হাটু ও পায়ের গিঁটের মাঝখানের অর্ধেক পর্যন্ত উঠিয়ে নিলেন। হাদীসটি আবূ দাঊদ উত্তম সনদে বর্ণনা করেছেন।
[আবূ দাঊদ হাঃ ৪০৮৯],


আবূ জুরাই জাবির ইবনু সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে তিনি বলেন,
আমি বললাম, আলাইকাস সালামু ইয়া রাসূলুল্লাহ! এভাবে দুবার বললাম। তিনি বললেন : আলাইকাস সালাম বলো না। কারণ, আলাইকাস সালাম এটা হলো মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে সালাম, বরং বল, আসসালামু আলাইকা। আমি বললাম, আপনি কি আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন : হ্যাঁ আমি সেই আল্লাহর রাসূল, কোন বিপদ-মুসিবাতে পতিত হলে তুমি যাঁর কাছে দুআ করলে তা যিনি দূর করেন, দুর্ভিক্ষে পড়ে তুমি যার কাছে দুআ করলে তোমার জন্য যিনি শস্য উৎপন্ন করেন, জনমানবহীন অথবা পানিবিহীন প্রান্তরে তোমার সাওয়ারী হারিয়ে গেলে তুমি যার কাছে দুআ করলে তোমাকে যিনি তা ফিরিয়ে দেন। জাবির ইবনু সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বললাম, আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেন : কখনো কাউকে গালি-গালাজ করো না। জাবির ইবনু সুলাইম বলেন, এরপর কখনো আযাদ, গোলাম, উট, বকরীকেও আমি গালি দেইনি। উত্তম ও পুন্যের কোন কাজকে তুচ্ছ মনে করো না। তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে কথা বলবে। এটিও একটি সাওয়াবের কাজ। লুঙ্গি-কাপড় তোমার হাঁটুর নীচে অর্ধাংশ পর্যন্ত তুলে রাখবে। এতো দূর উঠাতে তোমার যদি বাঁধা থাকে তাহলে অন্তত পায়ের গিঁট (টাখনু) পর্যন্ত তুলে রাখবে। লুঙ্গি-কাপড় ঝুলিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকবে। কারণ, এটা অহংকারের অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা অহংকার পছন্দ করেন না। তোমাকে কেউ যদি গালি দেয় অথবা তোমার সম্পর্কে যা সে জানে সে বিষয়ে তোমার দুর্নাম করে, তার সম্পর্কে তুমি যা জানো, সে বিষয়ে তার দুর্নাম করো না। কারণ, এর খারাপ পরিণতি তারই উপর বর্তাবে। হাদীসটি সহীহ সনদসহকারে আবূ দাঊদ ও তিরমিযী বর্ণনা করেছেন।
[তিরমিযী হাঃ ২৭২; সহীহ আল জামি হাঃ ৭৪০২; সহীহ হাদীস সিরিজ হাঃ ১৪০৩; সহীহ আবূ দাঊদ, তাহক্বীক আলবানী হাঃ ৩৪৪২, ৪০৪৮],








বুধবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

কামেল পীর-আউলিয়ার কাছে বাইয়াতের বিধান



★★★ প্রশ্ন : আমরা যাকে পীর মুরিদ করা বলে থাকি মানে হল বায়াত করা এবং হওয়া এর বিধান কি কোরআন হাদিসে কোথাও আছে?


উত্তর : ★ হে রাসূল! যেসব লোক আপনার নিকট বাইয়াত হচ্ছিল, তারা আসলে আল্লাহর নিকটই বাইয়াত হচ্ছিল। তাদের হাতের উপর আল্লাহর কুদরতের হাত ছিল।হে রাসূল! আল্লাহ মুমিনদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন তারা গাছের নীচে আপনার নিকট বাইয়াত হচ্ছিল। (সূরা ফাতহ ঃ ১৮)

★ অপর আয়াতে আল্লাহ বাইয়াত বা প্রতিশুতি বদ্ধ হওয়ার পর তা রক্ষাকারী সম্পর্কে বলেন :-

فَلْيُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللّهِ الَّذِينَ يَشْرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالآخِرَةِ وَمَن يُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللّهِ فَيُقْتَلْ أَو يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا

যে ব্যক্তি তার ওয়াদা (প্রতিশ্রুতি) পূর্ণ করবে এবং তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করবে, সে আল্লাহ পাকের প্রিয়জন হবে। আর নিশ্চিতভাবে আল্লাহ পাক মুত্তাকীদের ভালবাসেন। (সূরা আলে ইমরান ঃ ৭৬)

★ সহিহ হাদীসে আছে :-

عَنْ اِبْنِ عُمَرَ (رض) عَنِ النَّبِيْ (صلعم) قَالَ مَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِيْ عُنُقِه بَيْعَ’ُ مَاتَ مَيْتَةً جَاهِلِيْةً ـ (مسلم )

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) রাসূলে পাক (সা) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন,যে ব্যক্তি বাইয়াতের বন্ধন ছাড়াই মারা গেল সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল। (মুসলিম)

★ অপর হাদিসে আছে :-

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنْ دِيْنَارٍ (رض) اَنَّهُ سًمِعَ اللهِ بْنْ عُمَرَ (رض) يُقَوْلُ كُنَّا نَبَايِعْ رَسُوْلُ اللهِ (صلعم) عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ يَقًُوْلُ لََنَا فِيْهَا اِسْتَطَيْعْتُمْ ـ (مسلم)

★ আব্দুল্লাহ ইবনে দিনার (রা) হতে বর্ণিত, তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) কে বলতে শুনেছেন যে, আমরা রাসূল (সা) এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করতাম, শ্রবণ ও আনুগত্যের উপর এবং তিনি আমাদের সামর্থ্য উক্ত আমল করার অনুমতি দিয়েছেন। (মুসলিম)


★★★ পীরে-মুর্শিদ বা ওলী ধরতে হবে, এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআন পাকে বহু নির্দেশ বা ইংগিত আছে ।

** তবে পীর শব্দটি পবিত্র কোরআন পাকে নেই। কারন পীর শব্দটি ফার্সি ভাষা হতে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে । যেমনঃ নামাজ, রোজা, ফিরিস্তা, খোদা, ইত্যাদি শব্দগুলো কোরআন শরীফে-এ নেই। কারন উহা ফার্সি শব্দ, তবে এর প্রতিটি ফার্সি শব্দেরই প্রতিশব্দ কোরআন শরীফে আছে, যেমনঃ নামাজ-সালাত, রোজা-সাওম, ফিরিশ্তা-মালাকুন ইত্যাদি।

** আবার সালাত আরবি শব্দটি স্থান বিশেষ বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। অনুরূপ ভাবে পীর ফার্সি শব্দের প্রতিশব্দ পবিত্র কোরআন শরীফের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন শব্দে প্রকাশ করেছেন, যথাঃ 'অলি' বহুবচনে আউলিয়া, মুর্শিদ, ইমাম, বহুবচনে আইম্মা, হাদি, ছিদ্দিকিন, ইত্যাদি।



নিম্নে পবিত্র কোরআন শরিফের কিছু আয়াত অর্থসহ পেশ করা হলঃ-



(১) হে মুমিনগণ! তোমরা অনুস্মরণ কর, আল্লাহ্ পাক এর, তাঁর রাসুল পাক (সাঃ) এর এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর রয়েছে তাদের।
[সুরা ৪ নিসা: ৫৯]।

(উলিল আমর এর মানে হল ন্যায় বিচারক/ধর্মীয় নেতা/ওলি-আউলিয়া/­পীর-মুর্শিদ ইত্যাদি শব্দ ধরা যেতে পারে)


(২) স্মরণ কর! সেই দিনকে যেদিন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাঁদের (ইমাম) ধর্মীয় নেতা সহ আহ্বান করব।
[সুরা ১৭ বনী-ইসরাঈল: ৭১]

★ যারা তোমাদের ধর্ম মতে চলবে, তাদের ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করবে না। বলে দিন নিঃসন্দেহে হেদায়েত সেটাই, যে হেদায়েত আল্লাহ করেন। আর এসব কিছু এজন্যে যে, তোমরা যা লাভ করেছিলে তা অন্য কেউ কেন প্রাপ্ত হবে, কিংবা তোমাদের পালনকর্তার সামনে তোমাদের উপর তারা কেন প্রবল হয়ে যাবে! বলে দিন, মর্যাদা আল্লাহরই হাতে; তিনি যাকে ইচ্ছা।


(৩) নিজের বিশেষ অনুগ্রহ দান করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। [সুরা ৩ ইমরান: ৭৩-৭৪] ।


(৪) অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত। [সুরা ৩৬ ইয়া-সীন: ২১]।

(এখানে রাসুলের কথা বলা হয়েছে রাসুলুল্লাহ (সা) এর দ্বীন প্রচারের সিলসিলা কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে আল্লাহর ওলীগন এ দ্বীন প্রচার করে যাচ্ছেন যেমন ইন্দুস্থানে হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতী আজমিরি (রহ) ৯০ লক্ষ মুসলমান করেছিল। বাংলাদেশে কোন নবী আসে নি সাহাবীও না ওলীগন দ্বারা কোটি কোটি মুসলমান হয়েছে। তাদের কাছে মুসলমানগন বায়াত গ্রহন করেছিল মুরিদ হয়েছিল।)


(৫) যে বিশুদ্ধ চিত্তে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো। [সুরা ৩১ লুকমান: ১৫]।

(এখানে কামেল পীরের কাছে বায়াত গ্রহন করার ইংগীত হয়েছে শরীয়ত বিরোধী কোন নামধারী পীর এর কাছে নয়)


(৬) অতএব তোমরা যদি না জান তবে যারা জানেন তাদের নিকট হতে জেনে নাও। [সুরা ২১ আম্বিয়া: ৭]।


★ কিয়ামতের আগে মানুষ মুর্খতা বশত জ্ঞানহীন মানুষ এর কাছ থেকে ফতোয়া জিজ্ঞেস করবে যারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট অন্যকেও পথভ্রষ্ট করবে।(আল-হাদিস)

তাই এমন কারো কাছ থেকে ইসলামকে জানার জন্য শিখার জন্য আল্লাহর হুকুম বা ইংগীত যাদের কাছে ইলমে লাদ্দুনি তথা আল্লাহর পক্ষ থেকে খাটি জ্ঞান রয়েছে আর ওলী তাদেরকেই বলা হয় যারা আল্লাহর বন্ধু যাদের নিকট ইলমে লাদ্দুনি রয়েছে তাদেরকে না যারা নাকি শরীয়ত বিরোধী মুর্খ তাই এখানে বর্তমানে কামেল ওলীর চাইতে উত্তম আর কে হতে পারে যার কাছে সঠিক জ্ঞান পাবে কারন নবী-রাসুল- সাহাবাগন তো এখন নেই)


(৭) হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং (ছাদেকিন) সত্যবাদীগণের সঙ্গী হয়ে যাও। [সুরা তাওবা: ১১৯]।

(কামেল পীর বা ওলী বুজুর্গ হওয়ার ১ম শর্ত সত্যবাদী বলা যায় আব্দুল কাদির জিলানী (রা) ছোট বেলায় ডাকাতের হামলার শিকার হয়েও মায়ের কথামত ওনার কাছে লুকানো স্বর্নের কথা গোপন করে নি ওনার সেই সত্য প্রকাশ করার পর ডাকাতরা ডাকাতি করতে এসে ভাল হয়ে ইমানদার হয়ে গেছিল। অন্য কারো এমন কারামত পাবেন না এটা পাওয়ার জন্য পীর-ফকির/ ওলী-দরবেশের কাছেই যেতে হবে)


(৮) নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাকের রহমত (মুহসিনিন) আউলিয়া কিরামগনের নিকটবর্তী । [সুরা ৭ আরাফ: ৫৬]।


(৯) আল্লাহ্ যাকে সৎপথে পরিচালিত করেন, সে সৎপথ প্রাপ্ত হয় এবং তিনি (আল্লাহ্) যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তাঁর জন্য কোন পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না। [সুরা কা’হফ: ১৭]।

(সিদ্ধান্ত আপনার কাছে আল্লাহর কোন হেদায়াতপ্রাপ্ত ওলীর কাছে যাবেন তাদের অনুগত থাকবেন নাকি জালিমের কাছে যাবেন)


(১০) সাবধান! নিশ্চয় আল্লাহর অলিগণের কোন ভয় নেই এবং তারা কোন বিষয় এ চিন্তিতও নহেন। তাঁদের জন্য আছে সুসংবাদ দুনিয়া ও আখেরাতে, আল্লাহর কথার কোন পরিবর্তন বা হের-ফের হয় না, উহাই মহা সাফল্য। [সুরা ১০ ইউনুস: ৬২-৬৪]।


(১১) হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্ পাককে ভয় কর এবং তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় বা ওয়াছিলা তালাশ কর।[সুরা ৫ মায়েদা: ৩৫]।

(বহু সহিহ হাদিসে আসছে যে সাহাবীগন রাসুলুল্লাহ (সা) এর উসিলা দিতেন বা ওনারা একে অন্যের উসিলা দিতেন এখন আমরা নবী-রাসুল, সাহাবী, ইমাম, ওলী-আউলিয়ার উসিলা দেই)


(১২) “যে দয়াময় আ̂ল্লাহর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছ, সে ব্যাতীত আর কেউ সুপারিশ করার অধিকারী হবে না”। [সুরা ১৯ মারঈয়াম: ৮৭]


- এখন জানতে হবে তাহলে কারা তারা যারা আমাদের জন্য শুপারিশ করবে?
তারা হলেন নবীজি রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, শহীদগন এবং আল্লাহর প্রিয় অলীগণ এবং অন্যন্য কারো কিছু সম্প্রদায়। তাহলে ওহাবীদের যদি ওলীগনের শুপারিসকে তুচ্ছ মনে হয় তাদের দরকার নেই কিন্তু আমাদের দরকার আছে সবার সুপারিশ। এ ব্যপারে বিস্তারিত জানতে চাইলে এখানে ভিজিট করুন বিশাল বড় একটা পোস্ট :-


★★★ প্রশ্ন : পীর- আউলিয়াগন কি শাফায়াত করতে পারবে?


উত্তর :

★ শাফায়েত যারা যারা করবেন (কুরআন ও হাদিসের আলোকে) :-

http://goo.gl/JSBAS6

 পীর-আউলিয়াগনের শাফায়াত এর ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত বলে দিচ্ছি :-

★ “তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা আছে, তা তিনি (আ̂ল্লাহ) জানেন। তারা (নবীজি রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এবং আল্লাহর প্রিয় অলীগণ) শুধু তাদের জন্যে সুপারিশ করে, যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট এবং যারা আ̂ল্লাহর ভয়ে ভীত”। [সুরা ২১ আম্বিয়া: ২৮]

(Note: ব্রেকেট দিয়ে আয়াতের ব্যাখ্যা বুঝানোর জন্য কুরআন হাদিস বা এই আয়াতের সাথে সংগত কিছু আলাদা করে বুঝানো যায় এটা সকল মুফাসসিরে কেরাম করে থাকেন বুঝার সুবিধার জন্য। এখানে নিজের কথাকে আলাদা করা হয়েছে । এটা আয়াতের সাথে শুধুই সম্পর্কিত কিন্তু তা আয়াতের অন্তর্ভুক্ত না।)

★ “নিশ্চই আমি(আ̂ল্লাহ) আপনাকে(নবীজি রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে) কাওসার(জান্নাতের একটা নহর) দান করেছি”। [সুরা ১০৮ কাউসার: ১]


★ রাসুলুল্লাহ (সা) সর্ব প্রথম শাফায়াতে কুবরার অনুমতি পাবেন (মাকামে মাহমুদ শুধু রাসুলুল্লাহ (সা) এর জন্য) আর এর পরে আল্লাহ অনুমতিতে রাসুলুল্লাহ (সা) এর সম্মতিতে অন্যরা সুপারিশ করার ক্ষমতা পাবেন।)


★ হজরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহুতালা আনহু হতে বর্ণিতঃ আমি নবীজি রাসূলুল্লাহ্ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আমি হবো কিয়ামতের দিন আদম সন্তানের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি এবং আমিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যার কবর প্রথম খুলে যাবে, আমিই সর্বপ্রথম সুপারিশকারী এবং সর্বপ্রথম আমার সুপারিশ গ্রহনযোগ্য হবে’।
– (সাহহী মুসলিম শরীফ খন্ড ৭, পৃঃ ৩৫৩, হাদীস নং-৫৭৭২।)


★ ‘যখন আল্লাহর অলীগণ দেখবে যে তারা মুক্তি পেয়ে গেল, তখন তাদের মুমীন ভাইদের জন্য তারা আল্লাহর কাছে আবেদন করবে "হে আমার প্রতিপালক এরা আমাদের ভাই, যাদেরকে তুমি জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছ তারা আমাদের সাথে নামাজ পড়ত, আমাদের সাথে রোজা রাখত এবং আমাদের সাথে সতকাজ করত"। তখন আল্লাহ বলবেন "যাদের অন্তরে শুধুমাত্র এক দিনার ওজন পরিমাণও ঈমান পাবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আস। তাদের মুখমন্ডল তথা আকৃতিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দেওয়া হয়েছে"। অতঃপর তারা (অলীগণ) সেখানে জাহান্নামীদের নিকট যাবেন। সেখানে গিয়ে দেখবেন কেউ কেউ পা পর্যন্ত কেউ পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত আগুনে ডুবে আছে। এর মধ্যে যাদের তারা চিনবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসবে’।‘ (সহীহ বুখারী , খন্ড ২ পৃষ্ঠা ১১০৭ । হাদীস নং ৭০০১)


★ আমরা ওলীগন দের ভালবাসি আর তাদের কাছে বায়াত হলে ওহাবীরা আমাদের বিরোধীতা তো করেই ওলীগন দেরও ছাড়ে না। ওলীগনের শানে বিরোধীদের হুশিয়ারি আল্লাহ দিয়েছেন হাদিসে কুদসীতে :-

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: যে ব্যক্তি আমার অলীর সাথে শত্রুতা করে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করছি। আমার বান্দার প্রতি যা ফরয করেছি তা দ্বারাই সে আমার অধিক নৈকট্য লাভ করে। আমার বান্দা নফল কাজের মাধ্যমেও আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে। অবশেষে আমি তাকে ভালবেসে ফেলি। যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার কান হয়ে যাইযা দিয়ে সে শোনে, তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে এবং তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলাফেরা করে। সে আমার কাছে কিছু চাইলে, আমি তাকে তা দেই। সে যদি আমার নিকট আশ্রয় কামনা করে, তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি যা করার ইচ্ছা করি, সে ব্যাপারে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগি না কেবল মুমিনের আত্মার ব্যাপার ছাড়া। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার মন্দকে অপছন্দ করি। [বুখারী: ৬৫০২]


★ সাবধান! নিশ্চয় আল্লাহর অলিগণের কোন ভয় নেই এবং তারা কোন বিষয় এ চিন্তিতও নহেন। তাঁদের জন্য আছে সুসংবাদ দুনিয়া ও আখেরাতে, আল্লাহ্র কথার কোন পরিবর্তন বা হের-ফের হয় না, উহাই মহা সাফল্য। [সুরা ১০ ইউনুস: ৬২-৬৪]।


★ আল্লাহ পাক বলেন, “তোমরা সব আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও”। (সূরা ইমরান-৭৯)

(আর সেই আল্লাহ ওয়ালাদের সংগ ছাড়া কেমনে আল্লাহ ওয়ালা হবেন? কথায় আছে না "সত সংগে স্বর্গ বাস অসত সংগে সর্বনাশ" ওহাবীরা যদি শয়তানের সংগ চায় তাই করুক আমরা কামেল পীর-আউলিয়াগনের সংগ নিব)

★★★ এখন আসুন আমরা কাদের থেকে দ্বীন শিখব তা একটু জেনে নেই বুঝে নেই :-

১) এক ব্যক্তি এমন কোন বিদ্বানকে শিক্ষক হিসেবে ধরেছে যার কুরআন হাদিস জানা আছে ঠিকই কিন্তু ইলমে লাদ্দুনী নেই তাই সে যেভাবে বুঝে সেই ভাবেই ফতোয়া দেয়। নাকি

২) অপর ব্যাক্তি যে এমন একজন কামেল ওলীর কাছে দ্বীন শিখতে গিয়ে বায়াত হয়েছে যার আছে খোদা প্রদত্ত ইলমে লাদ্দুনী আছে আর যে তার কাশফকে (অন্তর চক্ষু বা বাতেনী চক্ষু) জাগ্রত করেছে।

কে সর্বাপেক্ষা উত্তম হবে?

★ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ করেন,

“প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য (দ্বীনের অপরিহার্য শরীয়তী) ইলম অর্জন করা ফরয।

(বায়হাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, শরহুত্ ত্বীবী, মোযাহেরে হক্ব, আশয়াতুল লুময়াত)

★ হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ইলম দু’প্রকার-

(১) ক্বল্বী ইলমে অর্থাৎ ইলমে তাছাউফ। আর এটাই মূলতঃ উপকারী ইলম।

(২) যবানী ইলম অর্থাৎ ইল্মে ফিক্বাহ্, যা আল্লাহ্ পাক,এর পক্ষ হতে বান্দার জন্য দলীল।
(দারিমী, তারগীব ওয়াত তারহীব, তারীখ, আব্দুল বার, দাইলামী, বায়হাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব)

★ কুরআন শরীফ-এ আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,

“নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার রহমত মুহসিন বা আল্লাহওয়ালা গণদের নিকটে।” (সূরা আ’রাফ : আয়াত শরীফ ৫৬)

★ আল্লাহ পাক বলেন, “যদি তোমরা না জানো, তবে জ্ঞানীদেরকে (আহলে যিকির বা আল্লাহওয়ালাগণকে) জিজ্ঞেস করে জেনে নাও”। (সূরা নহল ৪৩ ও সূরা আম্বিয়া-৭)

★ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন শিক্ষা করছ, তাকে দেখে নাও”। (মুসলিম শরীফ)

এ আয়াতে কারীমায় সুষ্পষ্টভাবে আল্লাহর হেদায়াতপ্রাপ্ত বুযুর্গদের সাহচর্যে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে:-

اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ

অনুবাদ- আমাদের সরল সঠিক পথ [সীরাতে মুস্তাকিম] দেখাও। তোমার নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দাদের পথ।{সূরা ফাতিহা-৬,৭}


★ সূরায়ে ফাতিহায় মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর নিয়ামাতপ্রাপ্ত বান্দারা যে পথে চলেছেন সেটাকে সাব্যস্ত করেছেন সীরাতে মুস্তাকিম।আর তার নিয়ামত প্রাপ্ত বান্দা হলেন –

الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ

অনুবাদ-যাদের উপর আল্লাহ তাআলা নিয়ামত দিয়েছেন, তারা হল নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ, ও নেককার বান্দাগণ।{সূরা নিসা-৬৯}

** আর নেককারদের মধ্যে এখন সর্বোত্তম কাউকে
খুজলে ওলী-আউলিয়া কামেল পির বুজুর্গ ছাড়া আর কাউকে পাবেন না কারন বারবার বলছি এখন নবী-রাসুল বা কোন সাহাবীকে তো আর পাচ্ছেন না।)

★ আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে নির্দেশ দিয়েছেন –

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ

অনুবাদ:- হে মুমিনরা! আল্লাহকে ভয় কর, আর সৎকর্মপরায়নশীলদের সাথে থাক।{সূরা তাওবা-১১৯)


আমরা আসলে পীরের হাতে হাত রেখে বা তাদের হক তরিকার উপর তখনি বাইয়াত হই যখন তা রাসুলুল্লাহ (সা) এর তরিকা অনুযায়ী হয়। মুলত আমরা তাদের কাছে বাইয়াত হচ্ছি না আমাদের মুল শিকর হল বিশ্বাস হল রাসুলের তরিকার উপর বাইয়াত হচ্ছি।

★★★ বাইয়াত শাব্দিক বিশ্লেষণ :

** “বাইয়াত” শব্দের উৎপত্তি হয়েছে, “বাইয়ুন” শব্দ থেকে।
** “বাইয়ুন” শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে “ক্রয়-বিক্রয়”
** এখানে এই “ক্রয়-বিক্রয়” মানে হচ্ছে আমার আমিত্বকে আল্লাহর রাহে (ওয়াস্তে) রাসূলের নিকট গিয়ে কোরবান করে দিলাম,বিলিন করে দিলাম,বিক্রি করে দিলাম।

★ আমার আমিত্ব, আমার যত অহংকার আছে, অহমিকা আছে, আমি আমি যত ভাব আছে সমস্তকিছু আল্লাহর রাসুলের কাছে গিয়ে আল্লাহর রাহে সম্পূর্ণরূপে উৎসর্গ করে দেয়া, কোরবান করে দেয়া, নিজেকে আল্লাহ্‌ তে সম্পূর্ণ রূপে আল্লাহর কাছে সমর্পন করে দেয়াই হল বাইয়াত ।
অন্য ভাষায় মুরিদ মানে হল বাইয়াত হওয়া।

★ হে রাসূল! যেসব লোক আপনার নিকট বাইয়াত হচ্ছিল, তারা আসলে আল্লাহর নিকটই বাইয়াত হচ্ছিল। তাদের হাতের উপর আল্লাহর কুদরতের হাত ছিল।হে রাসূল! আল্লাহ মুমিনদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন তারা গাছের নীচে আপনার নিকট বাইয়াত হচ্ছিল। (সূরা ফাতহ ঃ ১৮)

★ অপর আয়াতে আল্লাহ বাইয়াত বা প্রতিশুতি বদ্ধ হওয়ার পর তা রক্ষাকারী সম্পর্কে বলেন :-

فَلْيُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللّهِ الَّذِينَ يَشْرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالآخِرَةِ وَمَن يُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللّهِ فَيُقْتَلْ أَو يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا

যে ব্যক্তি তার ওয়াদা (প্রতিশ্রুতি) পূর্ণ করবে এবং তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করবে, সে আল্লাহ পাকের প্রিয়জন হবে। আর নিশ্চিতভাবে আল্লাহ পাক মুত্তাকীদের ভালবাসেন। (সূরা আলে ইমরান ঃ ৭৬)

★ সহিহ হাদীসে আছে :-

عَنْ اِبْنِ عُمَرَ (رض) عَنِ النَّبِيْ (صلعم) قَالَ مَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِيْ عُنُقِه بَيْعَ’ُ مَاتَ مَيْتَةً جَاهِلِيْةً ـ (مسلم )

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) রাসূলে পাক (সা) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন,যে ব্যক্তি বাইয়াতের বন্ধন ছাড়াই মারা গেল সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল। (মুসলিম)

★ অপর হাদিসে আছে :-

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنْ دِيْنَارٍ (رض) اَنَّهُ سًمِعَ اللهِ بْنْ عُمَرَ (رض) يُقَوْلُ كُنَّا نَبَايِعْ رَسُوْلُ اللهِ (صلعم) عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ يَقًُوْلُ لََنَا فِيْهَا اِسْتَطَيْعْتُمْ ـ (مسلم)

★ আব্দুল্লাহ ইবনে দিনার (রা) হতে বর্ণিত, তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) কে বলতে শুনেছেন যে, আমরা রাসূল (সা) এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করতাম, শ্রবণ ও আনুগত্যের উপর এবং তিনি আমাদের সামর্থ্য উক্ত আমল করার অনুমতি দিয়েছেন। (মুসলিম)

★ আর ওহাবীরা এগুলো জেনেও সাধারন মুসলমান ভ্রান্ত পথে টানছে গোমরাহী করছে যেমন :-

১) রাসুলের হাতে সমস্ত সাহাবীগন বাইয়াত হয়েছেন।

২) রাসুলুল্লাহ (সা) এর ওফাতের পর সমস্ত সাহাবীগন একে একে আবু বকর (রা), ওমর (রা), হযরত ওসমান (রা), হযরত আলী (রা) এই ভাবে সমস্ত সাহাবীগন তাদের যুগের নেতৃস্থানীয় যাকে উত্তম মনে করেছেন সবাই মিলে তার কাছে বাইয়াত হয়েছেন।

৩) অত:পর আহলে বাইয়াতের ইমামগনের নিকট যেমন : ইমাম হাসান (রা) , ইমাম হোসাইন (রা) এর নিকট মুসলমানগন বাইয়াত হয়েছেন।
ইয়াজিদ (লানতুল্লাহ) তার না-জায়েয ক্ষমতার উপর বাইয়াত হতে জোর জবরদস্তি করলে হক আর বাতিলকে প্রতিষ্টা করার জন্য তার বিরোদ্ধে কারবালায় যুদ্ধ করে ইমাম হোসাইন (রা) শহীদ হয়।

৪) সেই সিলসিলা অনুযায়ী ৪ মাযহাবের ইমামগন হকের উপর মুসলমানদের বাইয়াত করেছেন।

৫) তাদের পরবর্তীতেও এমন কোন হক পীর-বুজুর্গ বা জ্ঞানী পন্ডিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন না যারা কামেল পীর বা ইমামগনের নিকট বাইয়াত হন নি। এমনকি ওলীকুল সম্রাট গাউসুল আজম পীরানে পীর দস্তাগীর (রহ) তিনিও কামেল পীরের নিকট বাইয়াত হয়েছিলেন।

৬) বর্তমানেও সেই সিলসিলা জারি আছে কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। কামেল বেক্তির হাতে হাত রেখে ওয়াদা করা ও নিজেকে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুল এর পথে সমারপিত করা জায়েজ।
(কারন কামেল বেক্তি অবশ্যই আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুল (সঃ) এর প্রিয়)

★ এজাজতনামা :

এজাজত এর অর্থ অনুমতি সন্মতি ইত্যাদি এজাজতনামা অর্থঃ অনুমতিপত্র উদাহরনসহ বুঝিয়ে দিলাম এই এজাযতনামা যা নবীজি (স:)

★ প্রথম সাহাবীদের বাইয়াত করেন যেটি আকাবার শফত নামে আমরা জানি ,

★ পরবতীতে এটি খোলফায়ে রাশেদীন, তবেয়ী (ইমাম হাসান বসরী রঃ) তাবে তাবেয়ীন

★ এই ভাবে ওলীগনের বংশগত হক তরিকা অর্থাৎ বাইয়াত করার যোগ্যতা রাখে তাদের মাধ্যমে এই সিলসিলা চলতে থাকে।

★যেমনটা (জোনায়েদ বাগদাদী রঃ) মাধ্যমে আব্দুল কাদের জিলানী (রঃ) আসতে থাকে, এটির একটি লিখিত Permission আছে , এটিকে” এজাজত নামা ) বলে।