বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫

মিলাদুন্নবী (সাঃ) সম্পর্কে প্রশ্নোত্তর [পর্ব ১]



এই পোস্টে যা যা পড়বেনঃ
সকল প্রশ্নের জবাব এখানে সংক্ষেপে দেয়া হয়েছে  কারন অন্য জায়গায় link গুলোতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।



বিস্তারিত এখানে পাবেনঃ


মিলাদুন্নবী صلى الله عليه و آله وسلم কুরআন ও হাদিসের আলোকে- 



মিলাদুন্নবী (সা) ইমামগন, মুহাদ্দিসিন, মুফাসসিরিন ও মুজাদ্দিদিন গনের দৃষ্টিতে:-  


Eid-Miladunnabi صلى الله عليه و آله وسلم Chelebration over 50 country 




প্রশ্নোত্তরঃ


→  Q 1 : ইসলামে জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? 


♦ ♦ ♦ ANS 1 : ইসলামে জন্মদিন পালন শরীয়ত সম্মত হলে জায়েজঃ


আমাদের সমাজে অনেক মুসলমান এর ভুল ধারনা রয়েছে তাই প্রশ্ন তুলে যে জন্মদিন পালন করা তো বিদআত। কেন বিদআত?
কারণ ইহুদি নাসারাদের বিপরীত করার হুকুম রয়েছে হাদিসে। 

উত্তরঃ এর Ans 2টা দিচ্ছিঃ
না জন্মদিন পালন করা বিদআত কথাটা ভুল বলতে হবে ইহুদী নাসারাদের মত জন্মদিন পালন করা ঠিক না।
বুঝিয়ে বলছিঃ
Ans 1) আল-কুরআন থেকে
Ans 2) হাদিস অনুযায়ী যুক্তি 

(1) আল্লাহ পাক জন্মদিন পালন করেছেনঃ

Ayah 1:-

হযরত ইয়াহিয়া (আ) এর জন্মদিন আল্লাহ পাক পালন করেছেনঃ

♦→ তার (অর্থাৎ ইয়াহিয়া আ. এর) প্রতি শান্তি-যেদিন সে জন্মগ্রহণ করে এবং যেদিন মৃত্যুবরণ করবে এবং যেদিন জীবিতাবস্থায় পুনরুত্থিত হবে।
★ সুরা মারইয়ম ১৫

Ayah 2:-

হযরত ইসা (আঃ) ওনার নিজের জন্মদিন পালনকে আল্লাহ পাক কুরআনে বর্ননা করেছেন এই ভাবেঃ

♦→ আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব।  
★ সুরা মারইয়ম ৩৩

যা কুরআন হাদিসে থাকে তাকে বিদআত বলা মানে মুর্খতা। সুতরাং System টাকে বিদআত বলা যেতে পারে তখন এটা-
A) ভাল System হলে বিদআতে হাসানাহ।
B) খারাপ System হলে বিদআতে সাইয়্যা। 

তাই বলে জন্মদিন পালনকে  বিদআত বলা যায় না। বলতে হবে ইহুদীদের মত পালন করলে বিদআত।

(2) হাদিস থেকে যুক্তিঃ

তাহলে আপনারা জন্মের পর আকিদা কেন করেন? আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নয় কি? প্রত্যেক মুসলমান জীবনে একবার আকিকা করে থাকে কিন্তু রাসুল (সা) ২ বার করেছিলেন। যাই হোক এটা গেল একবার জন্মদিন পালন (যা হাদিস সম্মত)
তারপর ধরুন আপনি নিজের জন্মদিনে আল্লাহর শুক্রিয়া আদায় করে রোজা রাখলেন (এটা রাসুল করেছেন তাই এটাও সুন্নাহ) অথবা নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এটা কি গুনাহ হবে? অবশ্যই না।

→ Q 2 :- কুরআনে মিলাদুন্নবী (সাঃ) পালনের কোন প্রমান আছে কি?

♦ ♦ ♦ ANS 2 : আল-কুরআনে মিলাদুন্নবী (দঃ) এর বৈধ্যতার প্রমানঃ

→ ``তোমরা রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর ঈমান আনো, রাসুলকে সম্মান করো ও রাসুলের মাহাত্ম্য বর্ননা করো এবং সকাল সন্ধ্যা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষনা করো !""

★ আলা হযরত আহমদ রেজা খান বেরলভী (রহ) প্রনীত তফসীরে কাঞ্জুল ইমানঃ সূরা ফাতহ ৯

→ হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি। 
★ সুরা আম্বিয়া: ১০৭

→ আপনার রব এর অনুগ্রহের কথা আপনে প্রকাশ করুন !"
★ সূরা আদ্ব দোহা ১১

→ [হে রাসুল (সা) আপনি] বলে দিন , মহান আল্লাহ পাক যে ফজল (অনুগ্রহ) ও রহমত প্রেরণ করেছেন , সেজন্য তারা যেন সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আর এটা সবচাইতে উত্তম যা তারা সঞ্চয় করে রাখে !"
★ সূরা ইউনূছ ৫৮

→ Q 3 :- এই সব আয়াতে মিলাদুন্নবী (সাঃ) কথা কোথায় আছে?
ANS 3 :- 
কোন মুসলমানকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি খুশির দিন কোনটি?
সবচেয়ে বড় নিয়ামতের দিন কোনটি? 
তার জন্য এর চেয়ে উত্তম জবাব আর কি যেদিন রহমতাল্লিল আল-আমিন দুনিয়ায় তশরিফ নিয়েছেন। উপরোক্ত আয়াত গুলোতে ওহাবীরা কিছু বুঝে না কিন্তু তাই বলে কি ইমামগন, মুফাসসির গনও কিছু বুঝবেন না? সেজন্যই দেখুন তারা শ্রেষ্ট নিয়ামত হিসেবে কি ব্যাক্ষ্যা দিয়েছেন?

TAFSIR - তফসির



♦ইমাম ইবনুল জাওযী নিজ ‘তাফসীর’গ্রন্থে সূরা ইউনূসের উক্ত ৫৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, “আদ্ দাহাক হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: এই আয়াতে ‘ফযল’ বলতে জ্ঞান (অর্থাৎ, আল-কুরআন ও তাওহীদ)-কে বুঝিয়েছে; আর ‘রহমত’ বলতে মহানবী(ﷺসা) -কে বোঝানো হয়েছে।” [ইবনে জাওযী কৃত ‘যা’দ আল-মাসীর ফী এলম আত্ তাফসীর’, ৪:৪০]

♦ইমাম আবু হাইয়ান আন্দালুসী এ সম্পর্কে বলেন, “ফযল বলতে জ্ঞানকে, আর রহমত বলতে রাসূলুল্লাহ (ﷺসা) -কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।” [তাফসীর আল-বাহর আল-মুহীত, ৫:১৭১]


♦ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (রহ:) বলেন, “আবু শায়খ হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আল্লাহর ফযল বলতে জ্ঞানকে, আর রহমত বলতে রাসূলুল্লাহ(ﷺসা) -কে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ বলেন, (হে রাসূল) আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি জগতসমূহের জন্যে আমার রহমত (করুণা) করে (সূরা আম্বিয়া, ১০৭ আয়াত)।” [আস্ সৈয়ুতী প্রণীত দুররে মনসূর, ৪:৩৩০]

♦আল্লামা আলূসী ব্যাখ্যা করেন যে এমন কি ‘ফযল’ (অনুগ্রহ) বলতেও হযূর পাক (দ:)-কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে, যেমনিভাবে বর্ণিত হয়েছে আল-খতীব ও ইবনে আসাকির থেকে যে আয়াতোক্ত ‘ফযল’ হলেন মহানবী(ﷺসা) । [আলূসী রচিত রূহুল মাআনী, ১১:১৪১]



Q 4:- হাদিসে মিলাদুন্নবী (সাঃ) এর কোন প্রমান আছে কি?
ANS 4:- 


মিলাদুন্নবী (সা) এর উতকৃষ্ট প্রমান সম্পর্কে এর চাইতে উত্তম আর কোন হাদিসে নেই।  এখানে স্পষ্ট যে মীলাদুন্নবী (সা) উপলক্ষে খুশি হলে কাফির লাহাবও যদি ১টা দিন (সোমবার) আজাব থেকে  মুক্তি পেয়ে থাকে যার বিরোদ্ধে কিনা স্বয়ং সুরা লাহাব নাজিল হয়েছে তাহলে চিন্তার বিষয় ইমানদারদের জন্য কত বড় পুরষ্কার থাকতে পারে আল্লাহই ভাল জানেন । যদিও কাফিরদের সমস্ত কাজ বৃথা যায় (যদি সে নামাজও পড়ে সেটাও) কিন্তু এই কাজটি বৃথা যায় নি। - সুবাহানাল্লাহ 


বুখারী শরীফে উল্লেখিত ঘটনাটি না বললেই নয়,

হযরত অরওয়া ইবনে জুবায়ের (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) বলেন,
সুহাইবাহ আবু লাহাবের দাসী ছিল। আবু লাহাব ওনার কাছে থেকে (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) এর বেলাদাতের (অর্থাৎ মিলাদুন্নবীর ) সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়ে (মিলাদুন্নবীর খুশিতে) সুহাইবাহ কে আযাদ করে দিয়েছিল।যখন আবু লাহাব মৃত্যুবরণ করেছিল তখন (এক বছর পর) তার ঘনিষ্ঠদের কেউ (হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) তাকে স্বপ্নে শোচনীয় অবস্থায় দেখে তার উদ্দেশে বলেন, “তোমার অবস্থা কেমন?” আবু লাহাব উত্তরে বলল, “তোমাদের নিকট থেকে আসার পর আমি কোন প্রকার শান্তি পাইনি,কেবল যে দিন (রাসুলুল্লাহ (দ.) জন্ম হওয়ার খুশিতে অর্থাৎ মিলাদুন্নবীর খুশিতে ) সুহাইবাকে (তর্জনী ও মধ্যমা দু’টি আঙ্গুলের ইশারায়) আযাদ করে দিয়েছিলাম, ঐ কারনে (প্রতি সোমবার) আংগুল দুটির মধ্যে কিছু পানি জমে আমি ঐ পানি (চুষে) পান করে থাকি ও প্রতি সোমবার (জাহান্নামের কঠিন) আযাবকে হাল্কাবোধ করে থাকি।”

Reference :-


♦Masnad Ahmed : Hadith 25953 under the heading of لو كانت تحل لي لما تزوجتها قد أرضعتني وأباها ثويبة مولاة بني هاشم فلا تعرضن علي أخواتكن ولا بناتكن and again in Hadith 26865 with matan of
ابنة أخي من الرضاعة وأرضعتني وأبا سلمة  ثويبة فلا تعرضن علي بناتكن ولا أخواتكن

♦Al-Sunnan Al Kubra (li Nisai): Hadith 5394/5395

♦Al Nisai’ al-Sughra : Hadith Nob 3287/3284/3285/3286

♦Sunnan Ibne Majah: Hadith 1939 Under the heading of ( ابنة أخي من الرضاعة أرضعتني وأباها ثويبة فلا تعرضن علي أخواتكن ولا بناتكن)

♦Sahih Muslim: Hadith Nob.1451(2634), 1451(2635) under the same matan

♦Sahih ibne Hibban: Hadith Nob, 4110 (4199), 4111(4200), the matan of hadith is إن زينب تحرم علي وإنها في حجري وأرضعتني وإياها ثويبة فلا تعرضن علي بناتكن ولا أخواتكن ولا عماتكن ولا خالاتكن ولا أمهاتكن
اطراف الحدیث

♦Sahih al Bukhari Sharif : kitabun nikah : 2644/2645/2646/3105/4796/5099/5100/5101/5103/5106/5107/5124/5133/5239/5372/6156/

♦Sunan Kubra by Imam Baihaqi, The Book of Nikah.

♦Jame Ul Ahadith Wal Maraseel, Masaneed us Sahabah, Hadith no. 43545

♦Kanzul 'Ummal Vol 6, Hadith no. 15725

♦Musannaf Abdul Razzaq, Vol 7, Hadith no. 13546.

♦Imam A’aini (ra) in his book “Umdatul Qari, Vol: 14,Page. No. 45;
<fg=b0ff0000>
♦Imam Ibn Kathir in “Seerat un Nabawiyyah” (vol. 1 pg 224)

♦Sharh Zurqani, Vol 1, Pg. no. 261

♦Subul ul Huda war Rashad Vol 1 Pg. no. 367.

♦Imam Ibn Asqalani in "Fath al bari"

♦ibn al-Qayyim : [Tuhfat al-Mawdud bi Ahkam al-Mawlud, p.19]

♦Ibn 'Abd al-Wahhab, M., Mukhtasar Sirat ar-Rasul, 'Milad an-Nabi'




Q 5 : ইমামগন কি মিলাদুন্নবী (সাঃ) পালন করেছেন?
ANS: সমস্ত ইমামগনই কোন না কোন ভাবে মিলাদুন্নবী (সা:) পালন করেছেন। যেমনঃ



মিলাদুন্নবী (দঃ) সম্পর্কে ৩ লক্ষ হাদিসের হাফিজ ইমাম ইবনে হাজর আসকালানীর ভাষ্যঃ 
সাবধান!যারা মিলাদুন্নবী (দঃ) কে মন্দ বিদআত বলে তারাই আসলে প্রকৃত বিদআতী। দেখুন ইমামগন কি বলে আর ওহাবী সালাফীরা কি বলে?

♥ হুজ্জাতুল ইসলাম, শায়খুল ইসলাম ও বিখ্যাত মুহাদ্দীস ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:):-

এমতাবস্থায় তিনি তাদেরকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা উত্তর দেন, ‘এই দিনে আল্লাহতা’লা ফেরাউনকে পানিতে ডুবিয়ে মূসা (আ:)-কে রক্ষা করেন। তাই আমরা মহান প্রভুর দরবারে এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে রোযা রেখে থাকি।’ এই ঘটনা পরিস্ফুট করে যে আল্লাহতা’লার রহমত অবতরণের কিংবা বালা-মসীবত দূর হওয়ার কোনো বিশেষ দিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, সেই উদ্দেশ্যে বার্ষিকী হিসেবে তা উদযাপনের সময় নামায, রোযা, দান-সদকাহ বা কুরআন তেলাওয়াতের মতো বিভিন্ন এবাদত-বন্দেগী পালন করা শরীয়তে জায়েয। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺসা)-এর মীলাদের (ধরণীতে শুভাগমন দিবসের) চেয়ে আল্লাহর বড় রহমত কী-ই বা হতে পারে? এরই আলোকে প্রত্যেকের উচিত হযরত মূসা (আ:) ও ১০ই মহররমের ঘটনার (দালিলিক ভিত্তির) সাথে সঙ্গতি রেখে মীলাদুন্নবী (সাﷺ) দিবস উদযাপন করা; তবে যাঁরা এটি বিবেচনায় নেন না, তাঁরা (রবিউল আউয়াল) মাসের যে কোনো দিন তা উদযাপনে আপত্তি করেন না; অপর দিকে কেউ কেউ সারা বছরের যে কোনো সময় (দিন/ক্ষণ) তা উদযাপনকে কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই বৈধ জেনেছেন।[প্রাগুক্ত ‘হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ’, ৬৪ পৃষ্ঠা]।

♥ তিনি আরো বলেন:-

”আমি মওলিদের বৈধতার দলিল সুন্নাহ’র আরেকটি উৎস থেকে পেয়েছি (আশুরার হাদীস থেকে বের করা সিদ্ধান্তের বাইরে)। এই হাদীস ইমাম বায়হাকী (রহ:) হযরত আনাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেন: ‘হুযূর পাক (ﷺসা)নবুয়্যত প্রাপ্তির পর নিজের নামে আকিকাহ করেন; অথচ তাঁর দাদা আবদুল মোত্তালিব তাঁরই বেলাদতের সপ্তম দিবসে তাঁর নামে আকিকাহ করেছিলেন, আর আকিকাহ দু’বার করা যায় না। অতএব, রাসূলে খোদা (সাﷺ) বিশ্বজগতে আল্লাহর রহমত হিসেবে প্রেরিত হওয়ায় মহান প্রভুর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যে এটি করেছিলেন, তাঁর উম্মতকে সম্মানিত করার জন্যেও, যেমনিভাবে তিনি নিজের ওসীলা দিয়ে দোয়া করতেন। তাই আমাদের জন্যেও এটি করা উত্তম হবে যে আমরা মীলাদুন্নবী (সাﷺ) দিবসে কৃতজ্ঞতাসূচক খুশি প্রকাশার্থে আমাদের দ্বীনী ভাইদের সাথে সমবেত হই, মানুষদেরকে খাবার পরিবেশন করি এবং অন্যান্য সওয়াবদায়ক আমল পালন করি।’ এই হাদীস পূর্বোক্ত মহানবী (সাﷺ) -এর দ্বারা মীলাদ ও নবুয়্যত-প্রাপ্তির দিবস পালনার্থে সোমবার রোযা রাখার হাদীসকে সমর্থন দেয়।” [প্রাগুক্ত ‘হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ, ৬৪-৬৫ পৃষ্ঠা]

বিস্তারিতঃ

এ সম্পর্কে ইমামগনের আকিদাঃ http://goo.gl/vPka7y

ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণা ও ভুল বোঝাবুঝিঃ

মূল: ইমাম সাঈদ সোহরাওয়ার্দী, ইসলামিক সুপ্রিম কাউন্সিল কানাডা
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
[Bengali translation of Islamic Supreme Council Canada's Online article "Misconceptions and Misunderstandings about Eid Milad-un-Nabi"; part - 1-4]


মহান প্রভু আল্লাহর নামে আরম্ভ, যিনি দয়ালু ও দাতা।
ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণা ও ভুল বোঝাবুঝি
বেশ কিছুদিন যাবত ইসলাম-আতঙ্কে আক্রান্ত একটি গোষ্ঠী ইসলাম সম্পর্কে নেতিবাচক এক ধারণা তৈরির অপচেষ্টায় সক্রিয় রয়েছে। তারা আমাদের মহানবী (দ:) ও কুরআন মজীদকে গালমন্দ করে থাকে এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। মহানবী (দ:)-এর প্রতি মিথ্যে অপবাদ দিয়ে তাঁকে আক্রমণ করে থাকে এই চক্র। তাই এসময় মুসলমানদের জন্যে একতাবদ্ধ হওয়া এবং বিদ্বেষ প্রচারকারীদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রত্যুত্তর দেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হলো, বর্তমানে মুসলমান সমাজ বহুধা বিভক্ত, এমন কি সেসব আকীদা-বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠান অনুশীলনের ব্যাপারেও, যেগুলো নিয়ে বিগত ১৩ শতকেরও অধিক সময়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের কেউই বিরোধিতা করেননি। মুসলিম উম্মাহ’র মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে ভাবার পরিবর্তে আমরা সেসব বিষয় নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে সময় ও সম্পদ অপচয় করছি, যেগুলো কখনোই কোনো বিতর্কের বিষয় ছিল না। প্রতি বছর রবিউল আউয়াল মাস এলে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর পবিত্র বেলাদত তথা ধরাধামে শুভাগমন দিবস ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-এর বিরুদ্ধে সবচেয়ে অনর্থক ও বিভ্রান্তিকর একটি অপপ্রচার অভিযানের সূচনা হয়। কী পণ্ডশ্রম!
বেদআত (ধর্মে নতুন প্রথা প্রবর্তন)
মীলাদুন্নবী (দ:)-এর বিরোধীরা অপযুক্তি প্রদর্শন করে থাকে যে মহানবী (দ:) নিজে এবং তাঁর সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) তাঁর মীলাদ দিবস পালন করেননি। তাদের মতে, এটি ইসলামে একটি নতুন সংযোজন এবং রাসূল (দ:) ইসলামে নতুন কিছু পরিবেশন নিষেধ করেছেন। ইসলামে নতুন কোনো কিছু সন্নিবেশিত করাই বেদআত। বিরোধীদের মতানুযায়ী, হুযূর পাক (দ:) কিংবা তাঁর সাহাবী (রা:)-বৃন্দ মীলাদ দিবস পালন করেননি; তাই এই বেদআত বর্জনীয়। তাদের দৃষ্টিতে এটি পাপও।
ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-এর বিরুদ্ধে ফতোওয়ার প্রকৃতি
বস্তুতঃ ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:) উদযাপনকে নিষেধকারী কোনো কুরআনের আয়াত কিংবা হাদীস শরীফ নেই। কিন্তু এর বিরোধিতাকারী লোকেরা উক্ত দুটি শরীয়তের উৎস থেকে অনেক উদ্ধৃতি দেয়; স্বল্প জ্ঞানী মুসলমানদের সামনে ভাবখানা যেন এই যে মীলাদুন্নবী (দ:) উদযাপন প্রকৃতপ্রস্তাবেই নিষিদ্ধ। তারা কুরঅান-হাদীসের অর্থ বিকৃত করে নিজেদের একপেশে মতামত তাতে সন্নিবেশিত করে থাকে। কয়েক সপ্তাহ আগে এক দ্বীনী ভাই মীলাদুন্নবী (দ:)-বিরোধী একটি ফতোওয়া-ইশ্তেহার আমাকে দিয়ে বলেন, “মীলাদুন্নবী (দ:)-বিরোধী কুরআন-হাদীসের অনেক দলিল এতে দেয়া আছে।”
আপনারা এ ধরনের ফতোওয়া-ইশ্তেহার পাঠ করলে কখনোই তাতে একটিও কুরআনের আয়াত বা হাদীস শরীফ দেখতে পাবেন না, যেটিতে আল্লাহতা’লা কিংবা রাসূলুল্লাহ (দ:) মীলাদুন্নবী (দ:) পালনকে নিষেধ করেছেন। ওইসব আয়াত ও হাদীসের বিকৃত ব্যাখ্যাই সব সময় করা হয়, যেগুলো এমন কি বিষয়টির সাথে সম্পৃক্ত-ও নয়। এটি-ই হলো ধোকাবাজি, যা মুসলমান সর্বসাধারণ বুঝতে পারেন না। তাঁরা দেখেন কেবল কুরআন-হাদীসের দলিলের সংখ্যা, এ কথা তাঁরা জানেন না যে এর সাথে মীলাদুন্নবী (দ:)-এর কোনো সম্পর্ক-ই নেই। মীলাদ-বিরোধীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব দলিল বিকৃতভাবে উদ্ধৃত করে, যাতে মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করা যায়। এক্ষেত্রে তাদের আচরণটি কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের মতোই, যারা নিজেদের ভণ্ড নবীকে বৈধতা দেয়ার জন্যে কুরআনের আয়াত ও হাদীস শরীফের বিকৃত ব্যাখ্যা দেয়।
ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:) কী?
মহানবী (দ:)-এর ধরাধামে শুভাগমন দিবসকে ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:) বলে। মুসলমান সমাজ কর্তৃক এ দিনটির উদযাপন খৃষ্টানদের ক্রিসমাস (ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মদিন) পালন হতে একেবারেই ভিন্ন প্রকৃতির। মুসলমানবৃন্দ এই দিনে কী করেন? তাঁরা মহানবী (দ:)-এর বেলাদত, জীবন ও কর্ম এবং তাঁর ঐশীবাণী প্রচারের মিশন নিয়ে আলোচনা (যিকর-তাযকেরা) করেন; গরিব ও মেহমানদের খাবার পরিবেশন করেন; কুরআন তেলাওয়াত করেন এবং আলেম-উলেমার কাছ থেকে কুরআন শিক্ষা করেন; মহানবী (দ:)-এর প্রশংসায় না’ত-নাশীদ পরিবেশন করেন; আর অ-মুসলমানদের কাছে ধর্মের বাণী পৌঁছে দেন। এই দিনটি ইসলামী জিন্দেগীর খাঁটি ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক দিকগুলো চর্চার মাধ্যমেই পালিত হয়ে থাকে। এই শুভলগ্নে মুসলমান সমাজ দৈনন্দিন জীবনে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর প্রতি মহব্বত এবং তাঁকে অনুসরণ-অনুকরণের কথা স্মরণ করেন। ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:) হচ্ছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (দ:)-কে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে মুসলমানদের জন্যে অন্য যে কোনো ধর্মীয় সমাবেশের মতোই একটি অনুষ্ঠান।


ইসলাম ধর্মের পয়গম্বর (দ:)-এর বেলাদত (ধরাধামে শুভাগমন), সীরাহ (জীবনচরিত) ও ঐশীবাণী প্রচার মিশন সম্পর্কে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন স্বয়ং তিনি এবং তাঁর সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) করেননি বা অন্যদেরও তা আয়োজন করতে বলেননি বিধায় এটি বেদআত বলে অজুহাত দেখানো হলে আমাদেরও ওই সব কাজ করা মোটেই উচিত হবে না, যেগুলো মহানবী (দ:) কিংবা তাঁর সাহাবী (রা:)-বৃন্দ আদৌ করেননি। তাহলে মুসলমান সমাজ সেগুলোর আয়োজন ও চর্চা করেন কেন? নিম্নে উল্লেখিত প্রথা ও উৎসবগুলো মহানবী (দ:) বা তাঁর মহান সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) অথবা ইসলামী ইতিহাসে কোনো আলেম কখনোই করেননি; অতি সম্প্রতি এগুলো চালু হয়েছে। কিন্তু ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-এর চর্চা হয়ে আসছে গত চৌদ্দ’শ বছর যাবত এবং এটি নিয়ে কখনোই কোনো ইসলামী আলেম দ্বিমত পোষণ করেননি, যতোদিন পর্যন্ত না ইহুদী গোত্রবাদী গোষ্ঠী ও খৃষ্টান ক্রুসেডার চক্র মুসলমান রাজ্যগুলো জবরদখল করে ১৮০০/১৯০০ খৃষ্টাব্দে ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। গত শতাব্দীতেই ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-কে বিতর্কিত করা হয়। যারা এই ধর্মীয় প্রথাকে বেদআত বলেন, তাদের পালিত বেদআতগুলো আমরা এক্ষণে আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। তাহলে তাদের এসব কাজ ও প্রথাগুলো বেদআত নয় কেন?

ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-এর বিরোধীদের সংঘটিত বেদআত 

বেদআত নং - ১/ আল্লাহতা’লার আদিষ্ট ও মহানবী (দ:)-এর চর্চাকৃত একমাত্র মুসলিম সমাবেশ হলো হজ্জ্ব। ইসলামে অন্য কোনো আন্তর্জাতিক সমাবেশ নেই। এমতাবস্থায় তাবলীগের নামে বিশ্বব্যাপী মুসলিম সমাবেশের পক্ষে কুরঅান-হাদীসের দলিল কোথায় খুঁজে পাবেন? পাকিস্তান ও বাংলাদেশে বার্ষিক তাবলীগী এজতেমা’য় এমন কি হজ্জ্বের চেয়েও বেশি মুসলমান যোগ দেয়। এটি কি বেদআত নয়? রাসূলুল্লাহ (দ:) অথবা তাঁর সাহাবী (রা:)-বৃন্দ কিংবা মুসলিম আলেম-উলেমা কবে এরকম বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন? বিশ্ব তাবলীগী এজতেমা’ শুরু হয়েছে মাত্র কয়েক দশক আগে; ভারতের গুজরাটের মৌলোভী ইলিয়াস তাবলীগ জামা’আত প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-এর ইতিহাস গত চৌদ্দ’শ বছরের। এর যেমন নির্দিষ্ট দিন-তারিখ ধার্য করা আছে, তেমনি তাবলীগ জামা’আতের এজতেমা’রও দিন-তারিখ নির্দিষ্টকৃত। উভয় অনুষ্ঠানেই মানুষ যোগ দেয়, দোয়া-খায়র করে এবং দ্বীন সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করে [যদিও তাবলীগে তা শেখার সুযোগ নেই, কারণ তাতে সহীহ আকীদা-বিশ্বাসের কোনো আলেম-উলেমা নেই - অনুবাদক]। এমতাবস্থায় তাবলীগ জামা’আতের কার্যক্রম বেদআত না হলেও ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-এর চর্চা বেদআত হবে কেন? 

বেদআত নং - ২/ পাকিস্তানে ১৯৭০-এর দশকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো সাহেব কা’বা শরীফের ইমামকে পাকিস্তান সফরে অামন্ত্রণ করেন। ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-এর ঘোর বিরোধী ওই সৌদি ইমাম পাকিস্তান এলে মুসলমান সর্বসাধারণ সমস্ত মসজিদ ত্যাগ করে তার ইমামতিতে বড় স্টেডিয়ামে জুম’আর নামায পড়েন। ইসলামে কি এমন ধর্মীয় সমাবেশের কোনো পূর্ব-নজির আছে? মহানবী (দ:) ও তাঁর সাহাবা (রা:)-বৃন্দ কখনোই এ রকম করেননি। মুসলমানদের ইতিহাসে এরকম ঘটনা কখনোই ঘটেনি যে মুসলমান সাধারণ নিজেদের মসজিদগুলো ত্যাগ করে স্রেফ সৌদি আরব থেকে আগত হওয়ার কারণে কোনো ইমামের পেছনে নামায আদায় করেছিলেন। এটি নিঃসন্দেহে এক বড় বেদআত। কেন তাহলে কা’বা শরীফের ইমাম ও তার ইমামতিতে নামায আদায়কারী মুসূল্লীদের বিরুদ্ধে কোনো ফতোওয়া জারি করা হয়নি? 

বেদআত নং - ৩/ ভারতের অন্যতম পুরোনো মাদ্রাসা দারুল উলূম দেওবন্দের আলেম-উলেমাবর্গ ও শিক্ষার্থীরা (কিছু বছর আগে) প্রতিষ্ঠানটির ১০০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করেছিল। আর তা উদযাপিত হয়েছিল ওই রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সভাপতিত্বে। আমাদের প্রিয়নবী (দ:) কিংবা তাঁর সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) কি কখনো মসজিদে কুবা অথবা মসজিদে নববীর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করেছিলেন? তাও আবার এক ভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে দিয়ে উলামা-এ-ইসলামের সমাবেশে সভাপতিত্ব করিয়ে? এটি নিশ্চিত যে ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-বিদ্বেষী চক্রটি মহানবী (দ;)-এর বেলাদত দিবসের চেয়ে নিজেদের দারুল উলূম ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বী সভাপতির প্রতি বেশি ভক্তিশ্রদ্ধা রাখে। 

বেদআত নং - ৪/ কিছু বছর আগে যুক্তরাজ্যে অবস্থিত আহলে হাদীস দলটি ‘তাওহীদে সুন্নাত’ শিরোনামে এক সভার আয়োজন করেছিল এবং তাতে কা’বা শরীফের ইমাম ও অন্যান্য আলেম-উলেমাকে দাওয়াত করে এনেছিল। তারা বর্তমানে প্রতি বছরই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। রাসূলুল্লাহ (দ:) বা তাঁর সাহাবী (রা:)-বৃন্দ কি কখনো ‘তাওহীদে সুন্নাত’ শিরোনামে কোনো কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন এবং তাতে বক্তব্য রাখতে সফর করে গিয়েছিলেন? তাহলে একে বেদআত বলা হবে না কেন? ‘সালাফী’ চক্র (স্বঘোষিত আহলে হাদীস সম্প্রদায়) দ্বীন ইসলামের অন্তর্ভুক্ত অন্য যে কোনো (ভ্রান্ত) ফেরকাহ হতে বেশি পরিমাণ বেদআত সংঘটন করে এবং হাদীস-ও বেশি বেশি অস্বীকার করে। 

বেদআত নং - ৫/ মুসলমান সাধারণ যখন কোনো বিষয় বা দ্বন্দ্ব-সংঘাতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন, তখন তারা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ সমাবেশ করে থাকেন। মুসলমান (রাজনৈতিক) নেতৃবৃন্দ ও (রাজনৈতিক দলের) আলেম-উলেমা তাতে ভাষণ দেন। ওই সব র‌্যালীর আয়োজক ও নেতৃবৃন্দের মধ্যে অনেকে ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-কে বেদআত মনে করেন। আমি তাদেরকে একটি অত্যন্ত সহজ প্রশ্ন করতে চাই। এ ধরনের দ্বন্দ্ব-সংঘাত বা আগ্রাসন অথবা (রাজনৈতিক) ইস্যূতে কি কখনো আমাদের মহানবী (দ:), তাঁর সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) কিংবা ইসলামের মহান আলেম-উলেমা প্রতিবাদ সমাবেশ করতে রাস্তায় র‌্যালী বা ব্যানার ব্যবহার করেছিলেন? ক্রুসেডার গোষ্ঠী যখন আল-কুদস্ দখল করে নেয়, তখন কি মুসলমানবৃন্দ কোনো র‌্যালীর আয়োজন করেছিলেন? কুরআন, হাদীস বা ইসলামী ইতিহাসে এসব র‌্যালীর ভিত্তি কোথায়? [মওদূদীবাদী জামা’আত ও হেফাযতীদের এ প্রশ্ন করা উচিত - অনুবাদক]। এসব র‌্যালী কি বেদআত নয়? ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-বিদ্বেষীরা মুসলমানদের প্রতি তাদের র‌্যালীতে যোগ দেয়ার জন্যে আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে। তারা মুখে বলে, “এসব র‌্যালীতে অংশগ্রহণ করাটা জ্বেহাদ এবং অংশগ্রহণকারীদেরকে আল্লাহতা’লা পুরস্কৃত করবেন।” অথচ প্রিয়নবী (দ:)-এর বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্যে কোনো সমাবেশের আয়োজন করা হলে তা হয়ে যায় (তাদের দৃষ্টিতে) একটি বেদআত। হায় লজ্জা! 

বেদআত নং - ৬/ পাকিস্তানে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জামা’আতে ইসলামী নামের রাজনৈতিক দলটি ‘এয়াওমে শওকতে ইসলাম’ নামে বড় বড় মিছিল সমাবেশ করেছিল। এই নামটি খোদ দ্বীন-ইসলামকে খাটো করেছে। জামা’আতে ইসলামী যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না, তখনো প্রতিদিনই এয়াওমে শওকতে ইসলাম (ইসলাম ধর্মের শান-শওকতের দিবস) বিরাজমান। এমন ‘এয়াওমে শওকতে ইসলাম’ কবে মহানবী (দ:) ও সাহাবা (রা:)-মণ্ডলী আয়োজন করেছিলেন? তাহলে জামা’আতের এই আয়োজন কি বেদআত নয়? ওই সব বড় মিছিলের বিরুদ্ধে (তাদের) কেউ কি ফতোওয়া জারি করেছিল? এগুলোর সবই ইসলামের নামে করা হয়েছিল। অথচ ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-এর জুলূসে (ধর্মীয় মিছিলে) অংশগ্রহণ করা হলে তা বেদআত বলে সাব্যস্ত হয়! সত্যি, (মোনাফেক) আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের অনুসারীরা (না-কি প্রেতাত্মা?) আমাদের যুগেও অস্তিত্বশীল! 

বেদআত নং - ৭/ সৌদি আরব রাজ্যটি ‘এয়াওম-উল-ওয়াতানী’ (জাতীয় দিবস) উদযাপন করে থাকে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে; খবরের কাগজগুলো বিশেষ সংখ্যা (ক্রোড়পত্র) প্রকাশ করে; আর বেসরকারি কোম্পানিগুলো নিজেদের কর্মীদের একদিনের ছুটি মঞ্জুর করে। সৌদি জাতীয় দিবস পালনের বিরুদ্ধে তাদের কোনো রাষ্ট্রীয় মৌলোভীকে ফতোওয়া দিতে আমি কখনোই দেখিনি। কিন্তু তারা ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-এর বিরুদ্ধে ফতোওয়া জারি করতে এক মুহূর্ত-ও দেরি করে না। রাসূলুল্লাহ (দ:) বা তাঁর সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) মদীনায় প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী কি কখনো পালন করেছিলেন? সৌদি মোল্লা-পুরোহিতবর্গ যারা ঈদে মীলাদুন্নবী (দ;)-এর বিরোধিতা করে, তারা সৌদি আরবে মার্কিন বাহিনীর অবস্থানের ন্যায্যতা প্রতিপাদন করার জন্যে (ইতিপূর্বে) ফতোওয়া জারি করেছিল; কিন্তু তারা নিজেদের সরকারের সংঘটিত বেদআত সম্পর্কে কোনো ফতোওয়াই বর্তমানে দিতে পারছে না। এটি-ই হচ্ছে ইসলাম ধর্মের মৌলিক বিকৃতি সাধন। 

বেদআত নং - ৮/ উত্তর আমেরিকায় ISNA, ICNA. CAIR-সহ আরো অনেক মুসলমান সংস্থা নিজেদের বার্ষিক সভার আয়োজন করে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষদেরকে বিভিন্ন পণ্ডিতের ভাষণ শোনার জন্যে টিকেট কিনতে হয়। এই পুরো ব্যবস্থাটি কি বেদআত নয়? রাসূলুল্লাহ (দ:) অথবা তাঁর সাহাবা (রা:)-বৃন্দ কিংবা তৎপরবর্তী ইসলামী উলেমা-মণ্ডলী কবে এ ধরনের সভা আয়োজন করেছিলেন? ইসলামী জ্ঞান বিশারদদের ভাষণ শোনার জন্যে মানুষজনকে অর্থ পরিশোধ করতে হবে কেন? এর ভিত্তি কোথায় আছে? মহানবী (দ:) কি তাঁর ধর্মীয় উপদেশমূলক ভাষণ শোনার জন্যে কোনো চার্জ নিতেন? তাঁর কোনো সাহাবী (রা:) কি নিজের ভাষণ দানের আগে মানুষদেরকে কোনো নেক আমল তথা পুণ্যদায়ক কর্মের জন্যে অর্থ পরিশোধ করতে বলতেন? অবশ্যই না! ওই পুণ্যাত্মাবৃন্দ কখনোই এরকম কিছু করতেন না। তবে মীলাদুন্নবী (দ:)-বিরোধীদের জন্যে এ কাজ সিদ্ধ। সত্য বটে, এটি এক বড় বেদআত। কিন্তু তারা এটিকে বেদআত বলতে রাজি নয়; নতুবা তাদেরকে তাদের দোকান (ব্যবসা) গুটাতে হবে।

বেদআত নং - ৯/ জামা’আতে আহলে হাদীস, সালাফী দল, জামা’আতে ইসলামী, WAMY, রাবেতা-এ-আলম-এ-ইসলামী, ISNA, ICNA, CAIR ইত্যাদি (ফিতনা সৃষ্টিকর) সংস্থা গঠনের ধারনাটাই একটা বেদআত। মহানবী (দ:) বা তাঁর সাহাবা (রা:)-বৃন্দ কখনোই এরকম সংস্থা গঠন করে সেগুলোর নাম দেননি। সারা বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের যে প্রতিষ্ঠান থাকা বাঞ্ছনীয়, তা হলো “মুসলিম”। কেবল আল্লাহ পাকই মানুষদেরকে গোত্র ও জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত করেছেন। ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-এর এসব বিরোধিতাকারীরা উম্মাহকে বিভক্ত করেছে। কতোই না নিকৃষ্ট বেদআত তারা সংঘটন করেছে! [অনুবাদকের নোট: মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করে এমন সংস্থা-সংগঠন অবৈধ হলেও ইসলামে মানবকল্যাণমূলক সংস্থা-সংগঠন জায়েয। যেমন - মহানবী (দ:) নিজেই ‘হিলফুল ফুযূল’ নামের একটি সংগঠন করেছিলেন]
বেদআত নং - ১০/ জনৈকা পাকিস্তানী মহিলা বর্তমানে কানাডায় বসবাস আরম্ভ করেছেন, যদিও তিনি পাকিস্তানেও কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। তিনি নিজেকে ইসলামী জ্ঞান বিশারদ বিবেচনা করেন। শুধু ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-এর বিরুদ্ধে ফতোওয়া-ই তিনি দেন না, কুরআন-খানী (সমবেতভাবে কিতাবুল্লাহ পাঠ) ইত্যাদির মতো ঐতিহ্যবাহী ইসলামী রসম-রেওয়াজের বিরুদ্ধেও তিনি ফতোওয়া জারি করেন। তিনি শুধুমাত্র মহিলাদের জন্যে নামাযের জামাতের আয়োজন করেন; এতে সালাতুত্ তাসবীহ ও তারাবীহ নামায-ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি নিজে ইসলামের মধ্যে কেবল মহিলাদের জন্যে অনেক নতুন প্রথা প্রবর্তন করেছেন, কিন্তু ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:) তার মতে বেদআত। তার প্রবর্তিত ধারায় ইসলাম প্রচার করার ভিত্তি কোথায় বিদ্যমান? মহানবী (দ:)-এর শিক্ষার পরিপন্থী মহিলা সমাবেশের আয়োজন তিনি করে থাকেন, যেটি সবচেয়ে নিকৃষ্ট ধরনের বেদআত। তিনি মুসলিম মহিলাদের উগ্রপন্থায় দীক্ষা দিয়ে ইসলামের নামে অনেক পরিবারের ধ্বংস সাধনও করেছেন। বস্তুতঃ তার পুরো সংগঠন-ই একটি বেদআত।
বেদআত নং - ১১/ আজকে উত্তর আমেরিকায় মুসলিম সংস্থাগুলো মসজিদ, ইসলামী বিদ্যালয় বা মানবকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে তহবিল গঠনমূলক নৈশভোজের আয়োজন করে থাকে। তারা টিকেট বিক্রি করে এবং বক্তাদের আমন্ত্রণ জানায়। তহবিল গঠনের জন্যে নৈশভোজের আয়োজন মহানবী (দ:) বা তাঁর সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) কবে করেছিলেন? কোনো একটি লক্ষ্যে তাঁরা কবে ৫, ২৫, ১০০ ডলার মূল্যের খাবারভর্তি প্লেট বিক্রি করেছিলেন? এগুলোর সবই কি বেদআত নয়? এই তহবিল গঠনমূলক নৈশভোজ দিয়ে তাদের ফায়দা হয় বলে তারা এর আয়োজন করে, কিন্তু মীলাদুন্নবী (দ:)-এর আয়োজন তাদের মর্মপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়! কী অদ্ভূত!
জনৈক উর্দু কবি বলেন:
“হাম আহ্ ভী কারতে হ্যায় তো হোজাতে হ্যায় বাদনাম
উয়ো ক্কাতল ভী কারদেয় তো চার্চা নাহী হোতা।”
অর্থাৎ, আমি বেদনার্ত হয়ে ‘উফ’ শব্দটি করলেও আমার বদনাম হয়; আর তারা খুন-খারাবী করলেও কেউ আপত্তি উত্থাপন করে না।
মহানবী (দ:)-এর বেলাদত দিবস যদি তাঁর বা তাঁর সাহাবী (রা:)-দের দ্বারা উদযাপিত না হওয়ার কারণে বেদআত বলে ধরা হয়, তাহলে নিম্নোক্ত বেদআতগুলো কেন বহু শতাব্দী আগে প্রবর্তন করা হয়েছিল এবং সেগুলো কেন আজো চর্চা করা হয়? কেন ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-বিরোধীরা সেগুলোকে নিন্দা করে না এবং অবিলম্বে সেগুলোর অনুশীলন পরিত্যাগ করে না?
বেদআত নং - ১২/ রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর প্রতি যখন কুরআন মজীদ অবতীর্ণ হয়, তখন তা ত্রিশ সিপারা ছিল না। তিনি বা তাঁর সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) এই ত্রিশ সিপারা প্রবর্তন করেননি। এটি কয়েক শতাব্দী পরে শাসক ও আলেম-উলেমাদের দ্বারা প্রবর্তন করা হয়, যাতে ঐশীগ্রন্থ মুখস্থ করতে হুফফায (কুরঅানে হাফেয)-দের সুবিধা হয়। রমযান মাসে তারাবীহ নামায আদায়ের সময় কুরআন তেলাওয়াতে হাফেযদের জন্যে এই পদ্ধতি সহায়ক হয়েছে।

বেদআত নং - ১৩/ নবী করীম (দ:) কিংবা তাঁর মহান সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-এর কেউই পবিত্র কুরআন শরীফে রুকূ বা সেগুলোর সংখ্যা বসাননি। এগুলো বহু শতাব্দী পরে শাসকবৃন্দ ও আলেম-উলেমা যুক্ত করেছিলেন, যাতে মসজিদের ইমাম ও কুরআনে হাফেযদের পবিত্র কুরআন মুখস্থ করতে সুবিধা হয়; এতে তারা প্রাত্যহিক ৫ ওয়াক্ত নামায ও সালাতে তারাবীহ পড়ানোর সময় বিশুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াত করতে সক্ষম হন।

বেদআত নং - ১৪/ রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর যুগে পবিত্র কুরঅান মজীদে কোনো এ’রাব (ফাতা/কাসরা/দাম্মা, অর্থাৎ, জের/জবর/পেশ) যুক্ত ছিল না। এগুলো নিষ্ঠুর মুসলমান শাসক হাজ্জাজ বিন ইউসূফের নির্দেশে যুক্ত করা হয়। অনারব মুসলমান সমাজ যাতে শুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াত করতে পারেন, সে জন্যে এগুলো সন্নিবেশিত হয়েছিল। এসব এ’রাব হচ্ছে বেদআত। কিন্তু এগুলো যদি কুরঅান মজীদ থেকে অপসারণ করা হয়, তাহলে মীলাদুন্নবী (দ:)-বিরোধীরা আল্লাহতা’লার কেতাব শুদ্ধভাবে পড়তে পারবে না। তাই তাদের এই বেদআতের বড়ই প্রয়োজন, কিন্তু ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-কে তাদের প্রয়োজন নেই!
বেদআত নং - ১৫/ ইসলামী বিধানানুযায়ী, কোনো মুসলমান নর বা নারীর জন্যে শুধু তিনটি পরিস্থিতিতে অ-মুসলিম রাজ্যে বসবাসের অনুমতি রয়েছে: (১) যখন তিনি তাঁর স্বদেশ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে জুলুম-অত্যাচারের মুখোমুখি হন এবং তাঁর প্রাণনাশের হুমকি দেখা দেয়; (২) যখন তিনি অ-মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্যে ধর্মপ্রচার করতে চান। আরেক কথায়, অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে বসতি স্থাপনের জন্যে ইসলামের ধর্মপ্রচারক হওয়া শর্ত; এবং (৩) যখন তাঁর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বদেশে তাঁরই অন্বেষণকৃত উচ্চতর শিক্ষা লভ্য হয় না। ওপরোক্ত এই তিনটি শর্ত ছাড়া অ-মুসলিম-প্রধান রাজ্যে বসতি স্থাপনের অনুমতি আমাদের ধর্ম আমাদেরকে দেয় না। “শ্রেয়তর অথনৈতিক সুবিধাগুলো গ্রহণের” উদ্দেশ্যে মহানবী (দ:) বা তাঁর সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে বসবাসের জন্যে যাননি। তাঁরা শুধু ওই তিনটি কারণেই গিয়েছিলেন। তবে মীলাদুন্নবী (দ:)-বিরোধীদের কাঙ্ক্ষিত এবং তাদের মাঝে প্রসার লাভকৃত অন্যতম বেদআত হচ্ছে অ-মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্যগুলোতে উন্নততর জীবনযাত্রার অন্বেষণ। বস্তুতঃ এটি এতোই কাঙ্ক্ষিত ও মরিয়া হওয়ার মতো বেদআত যে তারা এটি সংঘটনের জন্যে এমন কি আল্লাহর দরবারেও ফরিয়াদ করে থাকে। আর আল্লাহ ভালোই চেনেন-জানেন মোনাফেকদের।
সবচেয়ে বড় ধোকাবাজি

আমাদের যুগের মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত অন্যতম বিভ্রান্তি হলো তারা মক্কা মোয়াযযমা ও মদীনা মোনাওয়ারার আলেম-উলেমাকে ইসলামের প্রকৃত জ্ঞান বিশারদ মনে করেন। তারা বিশ্বাস করেন যে মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববী শরীফের ইমামবর্গ যা কিছু বলে, তা ‘কোনোক্রমেই ভুল হতে পারে না।’ এরা সারা জাহানের মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র মসজিদগুলোর ইমাম। যেহেতু এই ইমামেরা ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-কে বেদআত ফতোওয়া দেয়, তাই এটি বেদআত-ই হবে নিশ্চয়! সৌদি আরবের মুফতী সাহেব নিশ্চয় সবচেয়ে জ্ঞানী আলেম; তার ফতোওয়া-ই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হতে বাধ্য!
এ-ই যদি হয় মাপকাঠি বা মানদণ্ড, তাহলে ইতিহাসের দিকে আমি আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করবো:

উসমানীয় তুর্কী সালতানাত (শাসকবৃন্দ) সাত শতাব্দী যাবত মক্কা ও মদীনা শরীফ শাসন করেন। ওই সাতটি শতাব্দীতে মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীর ইমামবৃন্দ পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:) উদযাপন করতেন (বলে প্রামাণ্য দলিলে সাব্যস্ত)। সৌদি আরবীয় রাজতন্ত্র ক্ষমতায় আসীন হওয়ার আগে হারামাঈন শরীফাইনসহ পুরো আরব উপদ্বীপেই ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-এর অনুশীলন ছিল। বস্তুতঃ ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-এর সর্ববৃহৎ সমাবেশ হতো মক্কার মসজিদে হারামে। অতঃপর সৌদি ওহাবীদের ক্ষমতা দখলের পর এই প্রথা বন্ধ করে দেয়া হয়। আপনারা যদি উসমানীয় তুর্কী শাসনামলে জন্মগ্রহণ করতেন, তাহলে আপনারা হারামাঈন শরীফাইনে সর্ববৃহৎ মীলাদ অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করতে পারতেন।
সরকার পরিবর্তন হলেও আমাদের (মুসলমানদের) ধর্মীয় ঐতিহ্য ও রীতি-নীতি পরিবর্তন করা আমাদের মোটেও উচিত নয়। আমাদের এই ঐতিহ্য ও রীতি-নীতি পবিত্র কুরঅান, মহানবী (দ:)-এর সুন্নাহ ও উলামা-এ-ইসলামের ‘এজমা’র ওপর দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত। আজকে যদি সৌদি সরকারের বদলে অন্য কোনো সরকার ক্ষমতাসীন হয়, তাহলে ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-বিরোধীদের কী অবস্থা হবে? তারা কি মীলাদুন্নবী (দ:) উদযাপন আরম্ভ করবে?
ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:) মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে, আর এর অস্বীকার তাদেরকে বিভক্ত করে। গত চৌদ্দ’শ বছরের ইতিহাস-ই সাক্ষী। মহানবী (দ;)-এর বেলাদত দিবস যখন তাঁরা উদযাপন করতেন, তখন তাঁরা ছিলেন একতাবদ্ধ; আর যখন থেকে এ বিষয়ে মুসলমান সমাজ বিতর্কে জড়িয়েছেন, তখন-ই অনৈক্য দেখা দিয়েছে। মুসলমানদের যা বিভক্ত করেছে তা ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:) পালন নয়, বরং ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-এর অস্বীকার-ই তাদেরকে বিভক্ত করেছে।
ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-বিরোধীদের প্রদর্শিত একটি ধোকাপূর্ণ যুক্তি হচ্ছে এই যে, জাতীয় দিবস পালন, সংস্থা-সংগঠন প্রতিষ্ঠাকরণ এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ দুনিয়াবী তথা পার্থিব বিষয়। এগুলো ইসলামী শরীয়তের অংশ নয়; কিন্তু যারা মহানবী (দ:)-এর বেলাদত দিবস পালন করেন তাঁরা এটিকে ইসলাম ও ইসলামী শরীয়তের অংশ হিসেবেই উদযাপন করেন। অতএব, ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:) বেদআত, কেননা মহানবী (দ:) এটিকে ইসলামের অংশ বানাননি। মীলাদুন্নবী (দ:)-বিরোধীদের প্রদর্শিত এটি কতোই না অদ্ভূত ও ধোকাবাজিপূর্ণ এবং অনৈসলামী যুক্তি!
আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান: “হে ঈমানদার সকল! (তোমরা) ইসলামে পূর্ণাঙ্গভাবে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” [আল-কুরঅান, ২:২০৮; তাফসীরে নূরুল এরফান]
অর্থাৎ, একজন ঈমানদার মুসলমানের জীবনে কখনোই এমন একটি মুহূর্ত নেই, যখন তিনি ইসলাম বা ইসলামী শরীয়তের বাইরে অবস্থান করেন। আমরা মুসলমান সর্বসাধারণ বিশ্বাস করি যে, কোনো ঈমানদারের যাবতীয় আমল তথা কাজ-কর্ম, পরিবারকে সময় দেয়া, বন্ধু-বান্ধবের সাথে সময় কাটানো, স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক, ঘুমোনো, এমন কি শরীরচর্চাও এবাদতের অংশবিশেষ - যতোক্ষণ পর্যন্ত ওই ঈমানদার ব্যক্তি আল্লাহরই খাতিরে, তাঁরই রেযামন্দির উদ্দেশ্যে তা করে থাকেন।
আল্লাহতা’লা আরো এরশাদ ফরমান: “হে রাসূল আপনি বলুন, নিঃসন্দেহে আমার নামায, আমার সমস্ত কোরবানী, আমার জীবন এবং আমার মরণ - সবই আল্লাহ জন্যে, যিনি রব সমগ্র জাহানের।” [আল-কুরআন, ৬:১৬২]
এর মানে হলো, প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে তার সমস্ত পার্থিব বা অপার্থিব কর্ম আল্লাহরই উদ্দেশ্যে নিবেদিত। তার মানে কি মীলাদুন্নবী (দ:)-বিদ্বেষী চক্র যখন তাদের ‘পার্থিব কর্ম’ সম্পাদন করে তখন তা নিজেদের খাতিরেই করে এবং আল্লাহর ওয়াস্তে করে না? এতে তারা ইসলাম ধর্ম থেকে খারিজ হয়ে যাবে, যদি তারা ‘পার্থিব কর্ম’-গুলোকে শরীয়তের অংশ হিসেবে গণ্য করতে না চায়; কেননা তা শরীয়তেরই আওতাধীন। আমি মনে করি না তারা এই বিশ্বাস অন্তরে পোষণ করে। এমতাবস্থায় ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-বিরোধীদের ওপরোক্ত সমস্ত বেদআত-ই তারা আল্লাহর ওয়াস্তে করে থাকে। তাই তারা এসব অনুশীলনকে (যেগুলো বাস্তবিকই বেদআত) “শর’ঈ” (ইসলামে বৈধ) বিবেচনা করে। তাহলে মীলাদুন্নবী (দ:)-কে “শর’ঈ” (ইসলামে বৈধ) বিবেচনা করা হবে না কেন?

(চলবে)

ইমামে আজম আবু হানিফা (রহঃ) এর শান দেখে যারা ঘেউ ঘেউ করে তারা যেন এই লিখা গুলো পড়েঃ

ইমামে আযম আবু হানিফা (রহঃ) এর হাদীসের সবচেয়ে উচুঁ সনদ হল উহাদিয়্যাতঃ


ইমাম আযম  আবু হানিফা রহ এর হাদীসের সবচেয়ে উচুঁ সনদ  "উহাদিয়্যাত" উসুলে হাদীস তথা হাদীসের মুলনীতিতে উচুঁ সনদের দিক থেকে "উহাদিয়্যাত" এর একটি প্রকার রয়েছে। আর উহাদিয়্যাত ঐ সমস্ত হাদীস কে বলা হয়, যাতে হাদীস বর্ননাকারী কারো মাধ্যম ছাড়া কোন সাহাবী রা: থেকে হাদীস বর্ণনা করেন। 

আর তা তখনি সম্ভব যখন তিনি তাবেয়ী (সাহাবীর সাথে সাক্ষাৎকারী) হবেন এবং সরসরি সাহাবী থেকে হাদীস বর্ণনা করেন এবং মাঝখানে কোন মাধ্যমে না হয়। সুতরাং উহাদিয়্যাতের এই দুর্লভ ও উন্নত পর্যায়ে ইমাম আযম আবু হানীফা রহ ছাড়া অন্য কোন মাহাদ্দিছ তার সমকক্ষ নেই। 

উহাদিয়্যাত এর এই উচুঁ প্রকারের মাঝে তিনি একা। 

ইমাম আল খাওয়ারেযমী রহঃ এর বর্ননা অনুসারে হযরত ইমাম আবু হানীফা রহ ছয়জন সাহাবী এবং একজন সাহাবীয়া থেকে হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন এবং তা হল এরুপ :- 

ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻋﻦ ﺍﻧﺲ ﺑﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﺭﺽ، ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻧﻴﺲ ﺭﺽ . ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺹ .. ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺍﻟﺤﺎﺭﺙ ﺭﺽ . ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺹ .. ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺭﺽ . ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺹ .. ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺍﺑﻲ ﺍﻭﻓﻲ ﺭﺽ . ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺹ .. ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻋﻦ ﻭﺍﺛﻠﺔ ﺑﻦ ﺍﻻﺳﻘﻊ ﺭﺽ . ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺹ .. ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻋﻦ ﻋﺎﺀﺷﺔ ﺍﺑﻨﺖ ﻋﺠﺮﺩ ﺭﺽ . ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺹ .. 

ইমাম আবু হানীফা রহ এর ঐ সমস্ত রেওয়ায়েত , যেগুলোর সনদের মাঝে ইমাম আযম ও রাসুলুল্লাহ সাঃ এর মাঝখানে শুধু একজন রাবী (বর্ণনাকারী) তথা একজন সাহাবীর মধ্যস্থতা বিদ্যমান রয়েছে। যাতে ইমাম আযম আবু হানীফা রহ স্বয়ং সাহাবী থেকে শুনেছেন এবং সাহাবী হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন।

★ ইমাম আল খাওয়ারেযমী রহঃ (জামেউল মাসানিদিল ইমামিম আযম)

বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫

ইমামে আজম (রহঃ) তাবেয়ী হওয়ার ব্যাপারে ২১ জন ইমামের বিবৃতিঃ

ইমামে আজম (রহঃ) এর যুগে ২২ জন সাহাবী জীবিত ছিলেনঃ

ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) সাহাবীগনের সাক্ষাত পেয়েছিলেন এ সম্পর্কে ইমামগনের বিবৃতিঃ

ইমামে আজম আবু হানিফা (রহঃ) এর উঁচুমানের ফিকহী মানসের বর্ননাঃ