গর্ব ও অহংকার একমাত্র আল্লাহর জন্য
- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই গৌরব আমার পোশাক এবং অহংকার আমার চাদর। এতএব, যে তা নিয়ে আমার সাথে কাড়াকাড়ি করবে তাকে আমি শাস্তি দেব।”
তিবরানী এ হাদীসটি হযরত আলী (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান আল্লাহ বলেন, “শ্রেষ্ঠত্ব, গর্ব ও অহংকার আমারই। আর মত আমার গোপনীয় বিষয়। এতএব, যে লোক এর কোন একটি নিয়ে আমার সাথে কাড়াকাড়ি করে, আমি তাকে জাহান্নামে ছুড়ে মারব।”
হাকেম ও তিরমিযী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেছেন, “অহংকার আমার চাদর এবং শ্রেষ্ঠত্ব আমার পোষাক। অনন্তর যে এর কোন একটি নিয়ে আমার সাথে কাড়াকাড়ি করবে তাকে আমি জাহান্নামে ছুড়ে মারব।”
আহমদ এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা ও ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- যখন চুল ঝুলিয়ে দেয়া হয় ও অহংঙ্কারের সাথে চলাচল করে, মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন, “আমি আমার সত্ত্বার কসম করে বলছি, আমি তাদের কতককে দিয়ে অপর কতকের প্রতি অকল্যাণ প্রেরণ করব।”
খারায়েতী এ হাদীসটি হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
- পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আমার নিদর্শনসমূহ থেকে তাদেরকে ফিরিয়ে রাখি, যারা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে অহংকার করে।’ (সূরা আ’রাফ-১৪৬)
- তাফসিরে রূহুল-বয়ানে উল্লেখ করা হয়েছে, অহংকার এমন এক মন্দ অভ্যাস যা ঐশী জ্ঞান লাভের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, আল্লাহর জ্ঞান লাভ হতে পারে একমাত্র আল্লাহরই রহমতে। আর আল্লাহর রহমত হয় একমাত্র বিনম্রতার মাধ্যমে। (তাফসিরে মাআরিফুল কুরআন-৪/৬৭)
- অন্যত্র আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় তুমি ভূপষ্ঠকে কখনোই বিদীর্ণ করতে পারবে না।’ (সূরা বনী ইসরাঈল-৩৭)
অর্থাৎ, এমন ভঙ্গিতে চলো না, যদ্দারা অহংকার ও দম্ভ প্রকাশ পায়। কেননা এটি অনর্থক কাজ।
- অন্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ পাক অহংকারকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা নাহল-২৩)
- কালামে পাকের অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘এমনিভাবে আল্লাহ পাক প্রত্যেক অহংকার-স্বৈরাচারী ব্যক্তির অন্তরে মোহর লাগিয়ে দেন।’ (সূরা মুমিন-৩৫)
- সূরা মুমিনের অন্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা আমার এবাদতে অহংকার করে তারা অপমানিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সূরা মুমিন-৬০)
- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘এমন কোনো ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে শস্যদানা পরিমাণ ঈমান থাকবে এবং এমন কোনো ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে শস্যদানা পরিমাণ অহংকার থাকবে।’ (মুসলিম শরীফ-১/৬৫)
- রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘আল্লাহ পাক বলেন, অহংকার আমার চাদর এবং শ্রেষ্ঠত্ব আমার ইযার। সুতরাং যে ব্যক্তি এদু’টির কোনো একটি নিয়ে আমার সাথে বিরোধিতা করবে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো।’ (ইবনে মাজাহ -২/৩০৮)
- অন্যত্র রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহ পাক তিন প্রকার ব্যক্তির সাথে কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদের প্রতি (দয়ার) দৃষ্টিপাতও করবেন না এবং তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি। তারা হলেন, এক. বৃদ্ধ ব্যভিচারী দুই. মিথ্যাবাদী শাসক তিন. অহংকারী ভিক্ষুক। (মুসলিম শরীফ-১/৭১)
- অন্যত্র রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, আমি কী তোমাদেরকে জান্নাতবাসী সম্পর্কে অবহিত করবো না? তারা হলেন, দুর্বল লোক তাদেরকে লোকেরাও দুর্বল ও হেয় মনে করে, কিন্তু আল্লাহর কাছে তারা এতো সম্মানিত যে, তারা যদি আল্লাহর নামে কসম করে, অবশ্যই আল্লাহ পাক তা সত্যে রূপান্তরিত করেন। তিনি আরো বলেছেন, আমি কী তোমাদেরকে জাহান্নাম সম্পর্কে অবহিত করবো না? তারা হলেন, অনর্থক বিবাদকারী, বদমেজাজী ও অহংকারী। (বুখারি শরীফ-২/৮৯৭)
- অন্যত্র রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘আল্লাহ পাক ওহির মাধ্যমে আমার কাছে নির্দেশ প্রেরণ করেছেন যে, নম্রতা এবং হেয়তা অবলম্বন করো। অহংকার ও গর্ব করা থেকে বিরত থাকো।’ কেননা এগুলো আল্লাহ পাকের কাছে অত্যন্ত অপছন্দনীয় ও নিকৃষ্ট।(ইবনে মাজাহ-২/৩০৮)
এছাড়া কিয়ামতের দিনে অহংকারীদেরকে ভয়াবহ শাস্তি প্রদান করা হবে। এ ব্যাপারে হাদিস শরীফে কঠোর হুঁশিয়ার বাণী উচ্চারিত হয়েছে।
- রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন অহংকারীদেরকে পিপীলিকার ন্যায় একত্রিত করা হবে এবং তাদের আকৃতি হবে পুরুষের মতো। অপমান-লাঞ্ছনা তাদেরকে বেষ্টন করে নিবে, তারপর তাদেরকে ‘বাওলাস’ নামক জাহান্নামের দিকে তাদেরকে হেঁকে নেয়া হবে। আগুনের অগ্নিশিখা তাদের ওপর ছায়া হবে এবং তাদেরকে পান করানো হবে জাহান্নামীদের দেহ নিংড়ানো ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ নামক পুঁজ-রক্ত।’ (তিরমিজি শরীফ-২/৭৬)
- হযরত ওমর রা. এর কণ্ঠে, তিনি বলেন, ‘হে মানব সকল! তোমরা বিনয়ী হও। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, যে আল্লাহর জন্যে বিনয়ী হয়, আল্লাহ পাক তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। সে নিজের কাছে তুচ্ছ এবং মানুষের দৃষ্টিতে সম্মানি। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি অহংকার করে আল্লাহ পাক তাকে হেয় করে দেন। সে মানুষের দৃষ্টিতে অসম্মানি ব্যক্তিতে পরিণত হয় এবং নিজেকে অনেক বড় মনে করে। পরিশেষে সে মানুষের কাছে কুকুর অথবা শুকরের চেয়েও ঘৃণিত ও তুচ্ছে পরিণত হয়।’(শু‘য়াবুল ঈমান- ৬/২৭৬)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন