শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫

ঝগড়া-বিবাদ ও তর্ক-বিতর্কঃ (পর্ব ৩)


নিন্দনীয় বিতর্কের প্রকার:

নিন্দনীয় বিতর্ক ও দুই প্রকার:

এক. জ্ঞানহীন ঝগড়া বিবাদ। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يُجَٰدِلُ فِي ٱللَّهِ بِغَيۡرِ عِلۡمٖ وَيَتَّبِعُ كُلَّ شَيۡطَٰنٖ مَّرِيدٖ ﴾[الحج:3]

অর্থ, মানুষের মধ্যে কতক আল্লাহ সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক করে না জেনে এবং সে অনুসরণ করে প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানের। [আল- হজ: ৩]

আল্লাহ তা‘আলা আহলে কিতাবদের সম্বোধন করে বলেন,

﴿هَٰٓأَنتُمۡ هَٰٓؤُلَآءِ حَٰجَجۡتُمۡ فِيمَا لَكُم بِهِۦ عِلۡمٞ فَلِمَ تُحَآجُّونَ فِيمَا لَيۡسَ لَكُم بِهِۦ عِلۡمٞۚ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ﴾[آل عمران:66]

 সাবধান! তোমরা তো সেসব লোক, বিতর্ক করলে এমন বিষয়ে, যার জ্ঞান তোমাদের রয়েছে। তবে কেন তোমরা বিতর্ক করছ সে বিষয়ে যার জ্ঞান তোমাদের নেই? আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না। [সূরা আলে-ইমরান: ৬৬]

 আল্লাহ তা‘আয়ালার বিষয়ে বিতর্ক করা জ্ঞানহীন বিতর্কের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَيُسَبِّحُ ٱلرَّعۡدُ بِحَمۡدِهِۦ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ مِنۡ خِيفَتِهِۦ وَيُرۡسِلُ ٱلصَّوَٰعِقَ فَيُصِيبُ بِهَا مَن يَشَآءُ وَهُمۡ يُجَٰدِلُونَ فِي ٱللَّهِ وَهُوَ شَدِيدُ ٱلۡمِحَالِ﴾ [الرعد:13]

 আর বজ্র তার প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করে এবং ফেরেশতারাও তার ভয়ে। আর তিনি গর্জনকারী বজ্র পাঠান। অতঃপর যাকে ইচ্ছা তা দ্বারা আঘাত করেন এবং তারা আল্লাহর সম্বন্ধে ঝগড়া করতে থাকে। আর তিনি শক্তিতে প্রবল, শাস্তিতে কঠোর। [সূরা রায়াদ: ১৩]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يُجَٰدِلُ فِي ٱللَّهِ بِغَيۡرِ عِلۡمٖ وَيَتَّبِعُ كُلَّ شَيۡطَٰنٖ مَّرِيدٖ ٣ كُتِبَ عَلَيۡهِ أَنَّهُۥ مَن تَوَلَّاهُ فَأَنَّهُۥ يُضِلُّهُۥ وَيَهۡدِيهِ إِلَىٰ عَذَابِ ٱلسَّعِيرِ ﴾[حج:3-4]

অর্থ, মানুষের মধ্যে কতক আল্লাহ সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক করে না জেনে এবং সে অনুসরণ করে প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানের। তার সম্পর্কে নির্ধারণ করা হয়েছে যে, যে তার সাথে বন্ধুত্ব করবে সে অবশ্যই তাকে পথভ্রষ্ট করবে এবং তাকে প্রজ্বলিত আগুনের শাস্তির দিকে পরিচালিত করবে। [হজ ৩-৪]


আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يُجَٰدِلُ فِي ٱللَّهِ بِغَيۡرِ عِلۡمٖ وَلَا هُدٗى وَلَا كِتَٰبٖ مُّنِيرٖ ٨ ثَانِيَ عِطۡفِهِۦ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِۖ لَهُۥ فِي ٱلدُّنۡيَا خِزۡيٞۖ وَنُذِيقُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ عَذَابَ ٱلۡحَرِيقِ ﴾[الحج:8-9]

অর্থ, আর মানুষের মধ্যে কতক আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে কোন জ্ঞান ছাড়া, কোন হিদায়েত ছাড়া এবং দীপ্তিমান কিতাব ছাড়া। সে বিতর্ক করে ঘাড় বাঁকিয়ে, মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে তার জন্য রয়েছে দুনিয়াতে লাঞ্ছনা এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে দহন যন্ত্রণা আস্বাদন করাব। [আল-হজ্জ: ৮-৯] অর্থাৎ অহংকারী এবং চায় মানুষকে আল্লাহর রাস্তা হতে বিরত রাখতে।

এ ছাড়াও তারা কিয়ামত বিষয়ে বিতর্ক করত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَسۡتَعۡجِلُ بِهَا ٱلَّذِينَ لَا يُؤۡمِنُونَ بِهَاۖ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مُشۡفِقُونَ مِنۡهَا وَيَعۡلَمُونَ أَنَّهَا ٱلۡحَقُّۗ أَلَآ إِنَّ ٱلَّذِينَ يُمَارُونَ فِي ٱلسَّاعَةِ لَفِي ضَلَٰلِۢ بَعِيدٍ﴾ [الشورى: 18]

অর্থ, যারা এতে ঈমান আনে না, তারাই তা ত্বরান্বিত করতে চায়। আর যারা ঈমান এনেছে, তারা একে ভয় করে এবং তারা জানে যে, এটা অবশ্যই সত্য। জেনে রেখ, নিশ্চয় যারা কিয়ামত সম্পর্কে বাকÑবিতণ্ডা করে তারা সুদূর পথভ্রষ্টটায় নিপতিত। [সূরা সুরা: ১৮]


জ্ঞানহীন তর্কে অন্তর্ভুক্ত হল, কদর সম্পর্কে বিতর্ক করা।

فعن عمرو بن شعيب عن أبيه عن جده قال: «خرج رسول الله على أصحابه وهم يختصمون في القدر،فكأنما يُفقأُ في وجهه حب الرمان من الغضب. فقال: بِهَذَا أُمِرْتُمْ؟ أَوْ لَهِذَا خُلِقْتُمْ؟ تَضرِبُونَ القُرْآنَ بَعْضَهُ بِبَعْضٍ؟! بِهَذَاهَلَكَتِ الأُمَمُ قَبْلَكُمْ قال: فقال عبد الله بن عمروما غبطت نفسي بمجلس تخلفت فيه عن رسول الله ما غبطت نفسي بذلك المجلس وتخلفي عنه »

অর্থ, আমর ইবনে শুয়াইব রা. বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর থেকে বের হয়ে দেখেন তার সাহাবীরা কদর সম্পর্কে বিতর্ক করছে। এ দেখে রাগে এ ক্ষোভে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা মলিন হয়ে গেল। তখন তিনি তাদের বললেন, তোমাদের এর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে? অথবা তোমাদের এ জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে? তোমরা কুরআনের এক অংশ দ্বারা অপর অংশকে আঘাত করছ! এ কারণেই তোমাদের পূর্বের উম্মতরা ধ্বংস হয়েছে। তারপর আব্দুল্লাহ ইবনে আমর বলেন, আমি আর কোন মজলিশে অনুপস্থিত থাকতে এত পছন্দ করিনি সেদিন ঐ মজলিশে অনুপস্থিত থাকাকে যতটুকু পছন্দ করি।


ইব্রাহীম আ. নমরুদের সাথে তার বাতিলকে প্রতিহত করতে বিতর্ক করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿أَلَمۡ تَرَ إِلَى ٱلَّذِي حَآجَّ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ فِي رَبِّهِۦٓ أَنۡ ءَاتَىٰهُ ٱللَّهُ ٱلۡمُلۡكَ إِذۡ قَالَ إِبۡرَٰهِ‍ۧمُ رَبِّيَ ٱلَّذِي يُحۡيِۦ وَيُمِيتُ قَالَ أَنَا۠ أُحۡيِۦ وَأُمِيتُۖ قَالَ إِبۡرَٰهِ‍ۧمُ فَإِنَّ ٱللَّهَ يَأۡتِي بِٱلشَّمۡسِ مِنَ ٱلۡمَشۡرِقِ فَأۡتِ بِهَا مِنَ ٱلۡمَغۡرِبِ فَبُهِتَ ٱلَّذِي كَفَرَۗ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ﴾ [البقرة:258]

অর্থ, তুমি কি সে ব্যক্তিকে দেখনি, যে ইবরাহীমের সাথে তার রবের ব্যাপারে বিতর্ক করেছে যে, আল্লাহ তাকে রাজত্ব দিয়েছেন? যখন ইবরাহীম বলল, ‘আমার রব তিনিই’ যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। সে বলল, আমিই জীবন দান করি এবং মৃত্যু ঘটাই। ইবরাহীম বলল, নিশ্চয় আল্লাহ পূর্বদিক থেকে সূর্য আনেন। অতএব তুমি তা পশ্চিম দিক থেকে আন। ফলে কাফির ব্যক্তি হতভম্ব হয়ে গেল। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দেন না। [সূরা বাকারাহ: ২৫৮]



আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«الصِّيَامُ جُنَّةٌ، فَلَا يَرْفُثُ وَلَا يَجْهَلُ، وَإِنِ امْرُؤٌ قَاتَلَهُ أَوْ شَاتَمَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي صَائِمٌ – مَرَّتَيْنِ وفي رواية سهيل بن أبي صالح عن أبيه فَلَا يَرْفُثُ وَلَا يُجَادِلُ»

অর্থ, সাওম হল, ডাল স্বরূপ রোজা অবস্থা কেউ যেন অশ্লিল কোন কাজ না করে এবং অজ্ঞতার পরিচয় না দেয়। যদি কোন লোক তোমার সাথে ঝগড়া করে বা তোমাকে গালি দেয়, তখন তাকে বলে, দিবে যে আমি রোজাদার। এ কথা দুইবার বলবে।[14] আর সুহাইল ইবনে আবি সালেহের বর্ণনায় বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে যেন অশ্লিল কোন কাজ না করে এবং ঝগড়া না করে।[15]



রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أَنَا زَعِيمٌ بِبَيْتٍ فِي رَبَضِ الجَنةَِّ لِمَنْ تَرَكَ المِرَاءَ وَإِنْ كَانَ مُحِقّاً»

অর্থ, যে ব্যক্তি বিতর্ককে পরিহার করে যদিও সে হকের পক্ষে হয়, আমি তার জন্য জান্নাতের পার্শ্বের একটি প্রাসাদের দায়িত্বশীল।[16] আয়েশা রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ أَبْغَضَ الرِّجَالِ إلِى الله الأَلَدُّ الخَصِمُ»

অর্থ, আল্লাহ তায়ালার নিকট সর্বাধিক নিকৃষ্ট সে ব্যক্তি যে অধিক ঝগড়া বিবাদ করে।[17]


[14] বুখারি: ১৮৯৪
[15] ওমদাতুল কারী: ২৫৮/১০ ফতহুল বারী: ১০৪/৪
[16] আবু দাউদ: ৪৮০০
[17] বুখারি: ২৪৫৭ মুসলিম: ২৬৬৮


দ্বীনের ব্যাপারে কিছু বিতর্কের উদাহরণঃ


★ ইমাম আবু হানিফা রহ. দাহরীয়াদের একটি সম্প্রদায়ে সাথে মুনাজারা করেন। তারা বলেন, এ জগতের সৃষ্টি প্রাকৃতিক; জগতের আলাদা কোন স্রষ্টা নাই, সে নিজেই তার স্রষ্টা। প্রতি ছত্রিশ হাজার বছর পর পৃথিবী আপন কক্ষ পথে ফিরে আসে। আদম আ. আবার জন্ম লাভ করে এবং প্রতি জীবন যেগুলো চলে যায় সে গুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটে। এভাবে তারা মারা যায় আবার ফিরে আসে।

ইমাম আবু হানিফা রহ. বলেন, আচ্ছা বলত, এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমাদের মতামত কি? যে বলে নদীতে মাঝি ছাড়াই নৌকা চলে, কোন লোক ছাড়াই নৌকা নিজে নিজে তার মধ্যে মালামাল উঠায়, আবার নামায়।

তারা বলল, যে এ কথা বলে সে পাগল ছাড়া আর কি হতে পারে?

তিনি বললেন, ছোট্ট একটি নৌকা তার জন্য যদি মাঝি লাগে, পরিচালক লাগে, তাহলে এত বড় জগত তার জন্য কি পরিচালক লাগবে না? তা কীভাবে পরিচালক ছাড়া চলতে পারে?

তার কথা শোনে তারা কেঁদে ফেলল এবং হককে স্বীকার করে নিলো।

আমর ইবনে উবাইদ সে একজন মুতাযেলা যারা বলে কবীরাগুণাহকারী চির জাহান্নামী। সে একদিন বলে, কিয়ামতের দিন আমাকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত করা হলে আল্লাহ বলবে তুমি কেন বললে হত্যাকারী জাহান্নামী? আমি বলব তুমি তা বলছ!

﴿وَمَن يَقۡتُلۡ مُؤۡمِنٗا مُّتَعَمِّدٗا فَجَزَآؤُهُۥ جَهَنَّمُ خَٰلِدٗا فِيهَا وَغَضِبَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ وَلَعَنَهُۥ وَأَعَدَّ لَهُۥ عَذَابًا عَظِيمٗا ﴾[النساء:93]

অর্থ, আর যে ইচ্ছাকৃত কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার প্রতিদান হচ্ছে জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর আল্লাহ তার উপর ক্রুদ্ধ হবেন, তাকে লা‘নত করবেন এবং তার জন্য বিশাল আযাব প্রস্তুত করে রাখবেন। [সূরা নিসা: ৯৩]

তারপর তাকে কুরাইশ ইবনে আনাস বলল, ঘরের মধ্যে তার চেয়ে ছোট আর কেউ নাই; যদি তোমাকে বলে আমি বলছি

﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلَۢا بَعِيدًا﴾ [النساء:116]

অর্থ, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা করেন না তাঁর সাথে শরীক করাকে এবং এ ছাড়া যাকে চান ক্ষমা করেন। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে তো ঘোর পথভ্রষ্টটায় পথভ্রষ্ট হল। [নিসা আয়াত: ১১৬]

তুমি কিভাবে জানতে পারলে আমি ক্ষমা করতে চাইবো না? এ কথার পর সে আর কোন উত্তর দিতে পারেনি।


★ ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ রহ. আওন ইবনে আব্দুল্লাহকে খারেজিদের সাথে মুনাযারার জন্য পাঠান। তারা ইমামদের কাফর বলত। সে তাদের বলল, তোমরা ওমর ইবনে খাত্তাবের মতে শাসক চেয়েছিলে, কিন্তু যখন ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ আসল তোমরাই সর্বপ্রথম তার থেকে পলায়ন করলে?!

তারা বলল, সে তার পূর্বসূরিদের বলয় থেকে বের হতে পারেনি! আমরা শর্ত দিয়েছিলাম তার পূর্বের সব ইমাম ও খলিফাদের অভিশাপ করতে হবে। কিন্তু সে তা করেনি।

সে বলল, তোমরা সর্বশেষ করে হামানকে অভিশাপ করছ?

তারা বলল, না আমরা কখনোই হামানকে অভিশাপ করিনি!

সে বলল, ফেরআউনের উজির যে তার নির্দেশে প্রাসাদ নির্মাণ করল তাকে তোমরা ছাড়তে পারলে অথচ তোমরা ওমর ইবনে আব্দুল আজীজকে ছাড়তে পারলে না, যে হকের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং আহলে ক্বিবলার কাউকে চাই সে কোন বিষয়ে ভুল করুক?!

ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ তার কথায় খুব খুশি হন এবং বলেন তাদের নিকট তোমাকে ছাড়া আর কাউকে পাঠাবো না।

তারপর সে তাকে বলে, তুমি হামানের কথা বললে ফিরআউনের কথা বললে না?

সে বলে আমি আশংকা করছিলাম ফিরআউনের কথা বললে সে বলবে আমরা তাকে অভিশাপ করি।



★ জাহ্হাক আস-সারী নামে একজন খারেজী আবু হানিফা রহ. এর নিকট এসে বলে তুমি তাওবা কর!

তিনি বললেন, কীসের থেকে তাওবা করব?

সে বলল, তুমি যে বলছ, দুই ব্যক্তির মাঝে বিচারক নির্ধারণ করা বৈধ তা হতে। খারেজীরা কোন হাকীম মানে না তারা বলে, হাকিম একমাত্র আল্লাহ।

আবু হানিফা রহ. বলল, আচ্ছা তুমি কি আমাকে হত্যা করবে নাকি আমার সাথে মুনাযারা করবে?

সে বলল, আমি তোমার সাথে মুনাযারা করব!

বলল, যদি আমরা যে বিষয়ে মুনাযারা করব তাতে যদি আমরা একমত না হতে পারি তাহলে আমার আর তোমার মধ্যে কে ফায়সালা করবে?

সে বলল, যাকে তুমি চাও নির্ধারণ কর।

আবু হানিফা রহ. জাহ্হাক আশ-শারি এক সাথীকে বলল, তুমি বস আমরা যে বিষয়ে বিরোধ করি তাতে তুমি ফায়সালা দিবে।

তারপর সে জাহ্হাককে বলল, তুমি আমার ও তোমার মধ্যে বিচারক হিসেবে তাকে মান?

বলল, হ্যাঁ

আবু হানিফা রহ. বলল, তুমি-তো এখন বিচারক নির্ধারণ করাবে বৈধ বললে। তারপর সে নির্বাক হল এবং চুপ হয়ে গেল। আর কোন উত্তর দিতে পারল না।

ইবনে আসাকের বর্ণনা করেন, একদা রুমের একজন লোককে কাজী আবু বকর আলা-বাকিল্লানীর নিকট পাঠান ইফকের ঘটনা বিষয়ে বিতর্ক করার জন্য। উদ্দেশ্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আয়েশা রা. কে হেয় করা। সে বলল, আল্লাহ তায়ালা কুরআনের মধ্যে একজন মহিলাকে জেনার অপবাদ থেকে পবিত্র করেন, তার নাম কি?

কাজী উত্তরে বললেন, তার হল, দুইজন মহিলা। তাদের সম্পর্কে লোকেরা অপবাদ দেয় এবং যা বলার বলে। একজন হল আমাদের নবীর স্ত্রী আর অপর জন হল, মারয়াম বিনতে ইমরান। আমাদের নবীর স্ত্রী সন্তান প্রসব করেনি আর মারয়াম আ. একজন সন্তান কাঁধে নিয়ে মানুষের মধ্যে ফিরে আসে। আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্প্রদায়ের লোকেরা যে অপবাদ দেয়, তা থেকে আয়েশা রা. ও মারয়াম আ. উভয়কে পবিত্র করেন। তুমি তাদের দুজনের কার কথা জানতে চাও? এ কথা শোনে লোকটি চুপ হয়ে গেল কোন উত্তর দিতে পারল ন। এর পর তার আর কি বলার আছে?








কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন