মাযার সম্পর্কে বিভিন্ন আকিদা ভিত্তিক প্রশ্নোত্তরের সমাধান :
আগেই এইটুকু সংক্ষেপে জানিয়ে রাখা ভাল যে হাদিসশাস্ত্রে ইমামগনের অবদান কেমন :
কুরআন মজীদে যেমন এরশাদ হয়েছে: “আল্লাহ তা (কুরআন মজীদ) দ্বারা অনেককে গোমরাহ (পথভ্রষ্ট) করেন এবং অনেককে হেদায়াত (পথপ্রদর্শন) করেন।” [আল-কুরআন, ২:২৬]
যদি কুরআন মজীদ পাঠ করে মানুষেরা গোমরাহ হতে পারে (যেমনটি হয়েছে ওহাবীরা), তাহলে একইভাবে হাদীস শরীফও যথাযথভাবে বিশেষজ্ঞদের অধীনে পাঠগ্রহণ না করে অধ্যয়নের চেষ্টা করলে তা দ্বারা মানুষজন পথভ্রষ্ট হতে পারে।
এ কারণেই মহান সালাফ আস্ সালেহীন (প্রাথমিক যুগের পুণ্যাত্মাবৃন্দ) ইমাম সুফিয়ান ইবনে উবায়না (রহ:) ও ইবনে ওহাব (রহ:) কী সুন্দর বলেছেন:
সুফিয়ান ইবনে উবায়না (রহ:) বলেন, “হাদীসশাস্ত্র পথভ্রষ্টতা, ফকীহমণ্ডলীর মধ্যস্থতা ব্যতিরেকে।”
ইবনে ওহাব (রহ:) বলেন, “হাদীসশাস্ত্র গোমরাহী, উলেমাবৃন্দের মধ্যস্থতা ব্যতিরেকে।” [দ্বিতীয় উদ্ধৃতিটি ইমাম কাজী আয়ায কৃত ‘তারতীব আল-মাদারিব’ গ্রন্থের ২৮ পৃষ্ঠায় বিদ্যমান]
অধিকন্তু, ইমাম আবূ হানিফা (রহ:)-কে একবার বলা হয়, ‘অমুক মসজিদে তমুক এক দল আছে যারা ফেকাহ (ইসলাম ধর্মশাস্ত্র সম্পর্কিত সূক্ষ্ম জ্ঞান) বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে।’ তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘তাদের কি কোনো শিক্ষক আছে?’ উত্তরে বলা হয়, ‘না।’ এমতাবস্থায় হযরত ইমাম (রহ:) বলেন, ‘তাহলে তারা কখনোই এটি বুঝতে সক্ষম হবে না।’ [ইবনে মুফলিহ রচিত ‘আল-আদাব আশ্ শরিয়াহ ওয়াল্ মিনাহ আল-মারিয়া’, ৩ খণ্ডে প্রকাশিত, কায়রোতে পুনর্মুদ্রিত সংস্করণ, মাকতাবা ইবনে তাইমিয়া, কায়রো, ১৩৯৮ হিজরী/১৯৭৮ খৃষ্টাব্দ, ৩:৩৭৪]
অধ্যায় ১ :
★★★ কবরের ওপর ফলকে লিখা :
ইমাম আল-হাকিম (রহ:), বলেন কবরের ওপরে ফলকে লেখা মুসলমানদের পরবর্তী প্রজন্ম ‘সালাফ’বৃন্দ থেকেই গ্রহণ করেছিলেন।” [’মোস্তাদরাক-এ-হাকিম’, ১:৩৭০, হাদীস #১৩৭০]
অধ্যায় ২ :
★★★ কবরের পাশে বসা :
ইমাম মালেক (রহ:) নিম্নবর্ণিত শিরোনামে গোটা একখানা অধ্যায় বরাদ্দ করেছেন:
”জানাযার জন্যে থামা এবং কবরস্থানের পাশে বসা”
ওপরে উক্ত অধ্যায়ে বর্ণিত দ্বিতীয় রওয়ায়াতে বিবৃত হয়: “এয়াহইয়া (রা:) আমার (ইমাম মালেকের) কাছে বর্ণনা করেন মালেক (রা:) হতে, যিনি শুনেছিলেন এই মর্মে যে, হযরত আলী ইবনে আবি তালেব (ক:) কবরে মাথা রেখে পাশে শুয়ে থাকতেন। মালেক (রা:) বলেন, ‘আমরা যা দেখেছি, কবরের ধারে পেশাব-মলত্যাগ করার ক্ষেত্রেই কেবল নিষেধ করা হয়েছে’।” [’মুওয়াত্তা-এ-ইমাম মালেক’, ১৬তম বই, অধ্যায় # ১১, হাদীস # ৩৪]
মনে রাখা জরুরি, অনেক ইসলামী পণ্ডিতের মতে বোখারী শরীফ হতে ইমাম মালেক (রহ:)-এর ’মুওয়াত্তা’ গ্রন্থটি অধিক কর্তৃত্বসম্পন্ন।
অধ্যায় ৩ :
রওজা মোবারক ও মাযার (বরকতের উদ্দেশ্যে) হাত দ্বারা স্পর্শ করে মুখে মাসেহ করা, ভালবেসে বা তাজিমার্থে চুম্বন করা সম্পর্কে :
হযরত নাফে’ (রহ:) বলেন,
“আমি হযরত (আবদুল্লাহ) ইবনে উমর (রা:)-কে দেখেছি এক’শ বার বা তারও বেশি সময় মহানবী (দ:)-এর পবিত্র রওযা শরীফ যেয়ারত করেছেন। তিনি সেখানে বলতেন, ‘রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক; আল্লাহতা’লা তাঁকে আশীর্বাদধন্য করুন এবং সুখ-শান্তি দিন। হযরত আবূ বকর (রা:)-এর প্রতিও শান্তি বর্ষিত হোক।’ অতঃপর তিনি প্রস্থান করতেন। হযরত ইবনে উমর (রা:)-কে রওযা মোবারক হাতে স্পর্শ করে ওই হাত মুখে (বরকত আদায় তথা আশীর্বাদ লাভের উদ্দেশ্যে) মুছতেও দেখা গিয়েছে।” [ইমাম কাজী আয়ায (রহ:) কৃত ‘শেফা শরীফ’ গ্রন্থের ৯ম অনুচ্ছেদে বর্ণিত]
হযরত দাউদ ইবনে আবি সালেহ হতে বর্ণিত; তিনি বলেন: “একদিন মারওয়ান (মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের রওযা মোবারকে) এসে দেখে, এক ব্যক্তি রওযা শরীফের খুব কাছাকাছি মুখ রেখে মাটিতে শুয়ে আছেন। মারওয়ান তাঁকে বলে, ‘জানো তুমি কী করছো?’ সে তাঁর দিকে এগিয়ে গেলে সাহাবী হযরত খালেদ বিন যাঈদ আবূ আইয়ুব আল-আনসারী (রহ:)-কে দেখতে পায়। তিনি (সাহাবী) জবাবে বলেন, ‘হ্যাঁ (আমি জানি); আমি রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর কাছে (দর্শনার্থী হতে) এসেছি, কোনো পাথরের কাছে আসি নি। আমি মহানবী (দ:)-এর কাছে শুনেছি, (ধর্মের) অভিভাবক যোগ্য হলে ধর্মের ব্যাপারে কাঁদতে না; তবে হ্যাঁ, অভিভাবক অযোগ্য হলে ধর্মের ব্যাপারে কেঁদো।”
রেফারেন্স/সূত্র
* আল-হাকিম এই বর্ণনাকে সহীহ বলেছেন; অপরদিকে, আয্ যাহাবীও তাঁর সত্যায়নের সাথে একমত হয়েছেন। [হাকিম, আল-মোস্তাদরাক, ৪র্থ খণ্ড, হাদীস নং ৫১৫]
* ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:)-ও তাঁর ’মুসনাদ’ গ্রন্থের ৫ম খণ্ডে সহীহ সনদে এটি বর্ণনা করেন। [হাদীস নং ৪২২]
অধ্যায় ৪ :
কবর ও মাযার জিয়ারতের শরীয়তী বিধান :
★★★ রওজা মোবারক জিয়ারতের আদব :
ইমাম আবূ হানিফা (রহ:) বর্ণনা করেন ইমাম নাফে’ (রহ:) হতে, তিনি হযরত ইবনে উমর (রা:) হতে; তিনি বলেন: “কেবলার দিক থেকে আসার সময় মহানবী (দ:)-এর রওযা-এ-আকদস যেয়ারতের সঠিক পন্থা হলো রওযার দিকে মুখ করে এবং কেবলার দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়াতে হবে; অতঃপর সালাম-সম্ভাষণ জানাতে হবে এই বলে - ‘হে আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর-ই রহমত ও বরকত (দ:), আপনার প্রতি সালাম’।” [মুসনাদে ইমামে আবি হানিফাহ, বাবে যেয়ারাতে কবর আন্ নবী (দ:)]
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) বর্ণনা করেন যে হুযূর পূর নূর (দ:) এরশাদ ফরমান: “আমার বেসালপ্রাপ্তির পরে যে ব্যক্তি আমার রওযা মোবারক যেয়ারত করে, সে যেন আমার হায়াতে জিন্দেগীর সময়েই আমার দেখা পেল।”
রেফারেন্স
* আত্ তাবারানী, ২য় খণ্ড, হাদীস নং ৪০৬
* ইমাম বায়হাকী প্রণীত শু’য়াবুল ঈমান, ৩য় খণ্ড, হাদীস নং ৪৮৯
জ্ঞাতব্য: এই হাদীসটি হযরত ইবনে উমর (রা:) কর্তৃক বর্ণিত হলেও এর এসনাদে বর্ণনাকারীরা একেবারেই ভিন্ন; আর তাই এ হাদীস হাসান পর্যায়ভুক্ত।
ইমাম ইবনে কুদামা (রহ:) বলেন, “মহানবী (দ:)-এর রওযা শরীফের যেয়ারত মোস্তাহাব (প্রশংসনীয়), যা হযরত ইবনে উমর (রা:)-এর সূত্রে আদ্ দারাকুতনী সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন এই মর্মে যে রাসূলুল্লাহ (দ:) এরশাদ করেন, ’যে ব্যক্তি হজ্জ্ব করে, তার উচিত আমার রওযা শরীফ য়েযারত করা; কারণ তা যেন আমার হায়াতে জিন্দেগীর সময়ে আমার-ই দর্শন লাভ হবে।’ তিনি আরেকটি হাদীসে এরশাদ ফরমান, ‘যে কেউ আমার রওযা যেয়ারত করলে তার জন্যে শাফায়াত (সুপারিশ) করা আমার প্রতি ওয়াজিব হয়’।” [ইমাম ইবনে কুদামা কৃত আল-মুগনী, ৫ম খণ্ড, ৩৮১ পৃষ্ঠা]
* ইমাম আল-বাহুতী আল-হাম্বলী (রহ:) নিজ আল-কাশাফ আল-ক্কান্না গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ২৯০ পৃষ্ঠায় একই কথা বলেন।
ইমাম কাজী আয়ায (রহ:) তাঁর সুপ্রসিদ্ধ ‘শেফা শরীফ’ পুস্তকের ‘মহানবী (দ:)-এর রওযা মোবারক যেয়ারতের নির্দেশ এবং কারো দ্বারা তা যেয়ারত ও সালাম (সম্ভাষণ) জানানোর ফযীলত’ শীর্ষক অধ্যায়ে বলেন, ”এটি জ্ঞাত হওয়া উচিত যে মহানবী (দ:)-এর মোবারক রওযা যেয়ারত করা সকল মুসলমানের জন্যে ‘মাসনূন’ (সর্বজনবিদিত রীতি); আর এ ব্যাপারে উলেমাবৃন্দের এজমা’ হয়েছে। এর এমন-ই ফযীলত যা হযরত ইবনে উমর (রা:)-এর বর্ণিত হাদীস দ্বারা আমাদের জন্যে সাব্যস্ত হয়েছে (অর্থাৎ, ’কেউ আমার রওযা যেয়ারত করলে তার জন্যে আমার শাফায়াত ওয়াজিব হবে’)।” [ইমাম কাজী আয়ায কৃত ’শেফা শরীফ’, ২য় খণ্ড, ৫৩ পৃষ্ঠা]
★★★ মহিলাগন কর্তৃক মাযার জিয়ারতের হুকুম-আহকাম :
→→→ উম্মল মুমেনিন হযরত সাইয়্যেদাহ আয়েশা (রা:) নিজে রাসুলুল্লাহ (সা) এর রওজা মোবারক জিয়ারত করতেন :-
তিনি বর্ণনা করেন:-
যে ঘরে মহানবী (দ:) ও আমার পিতা (আবূ বকর – রা:)-কে দাফন করা হয়, সেখানে যখন-ই আমি প্রবেশ করেছি, তখন আমার মাথা থেকে পর্দা সরিয়ে ফেলেছি এই ভেবে যে আমি যাঁদের যেয়ারতে এসেছি তাঁদের একজন আমার পিতা ও অপরজন আমার স্বামী। কিন্তু আল্লাহর নামে শপথ! যখন হযরত উমর ফারূক (রা:) ওই ঘরে দাফন হলেন, তখন থেকে আমি আর কখনোই ওখানে পর্দা না করে প্রবেশ করি নি; আমি হযরত উমর (রা:)-এর প্রতি লজ্জার কারণেই এ রকম করতাম।
Reference :-
♦ মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ২০২ পৃষ্ঠা, হাদীসঃ ২৫৭০১
♦ আল-বাছায়ের ৭৯
♦ মোস্তাদরাক আল-হাকিম, হাদীসঃ ৩/৬৩, হাদিস ৪৪০৬
♦ মোস্তাদরাক আল-হাকিম, হাদীসঃ ৪/৮, হাদিস ৬৭২১
♦ যুরকাশী : আল-ইজাবাহ : হাদিস - ৬৮
♦ হাইছমী : মাজমাউল যাওয়ায়েদ : ৮/২৬ এবং ৯/৩৭ পৃ
সনদ পর্যালোচনা :
♦ ইমাম নূরুদ্দীন হায়তামী (রহ:) এই হাদীসটি সম্পর্কে বলেন:
এটি ইমাম আহমদ (রহ:) কর্তৃক বর্ণিত এবং এর বর্ণনাকারীরা সবাই সহীহ।
— মজমাউয্ যাওয়াইদ, ৯:৪০, হাদীসঃ১২৭০৪
♦ ইমাম আল-হাকিম (রহ:) এটি বর্ণনা করার পর বলেন,
এই হাদীসটি বোখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ।
— মোস্তাদরাক আল-হাকিম, হাদীসঃ ৩/৬৩, হাদিস ৪৪০৬
♦ ইমাম হাইছমী বলেন, উক্ত হাদিসের বর্ননাকারীগন সহিহ হাদিসের রাবী।
♦ ইমাম জরকশী বলেন, এ হাদিস বুখারী ও মুসলিম এর শর্তানুযায়ী সহিহ।
♦ নাসিরুদ্দীন আলবানী আল-মোবতাদি আল-মাশহুর (কুখ্যাত বেদআতী) এই হাদীসকে মেশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থের ওপর নিজ ব্যাখ্যামূলক ‘তাখরিজ’পুস্তকে সমর্থন করেছে (# ১৭১২)।
টিকা :
জরুরি জ্ঞাতব্য: প্রথমতঃ এই হাদীসে প্রমাণিত হয় যে শুধু আম্বিয়া (আ:)-এর মাযার-রওযা নির্মাণ-ই ইসলামে বৈধ নয়, পাশাপাশি সালেহীন তথা পুণ্যবান মুসলমানদের জন্যেও তা নির্মাণ করা বৈধ। লক্ষ্য করুন যে হাদীসে ‘বায়ত’ বা ‘ঘর’ শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে। মানে মহানবী (দ:)-এর রওযা শরীফের সাথে সর্ব-হযরত আবূ বকর (রা:) ও উমর (রা:)-এর মাযার-রওযাও ‘একটি নির্মিত ঘরের অভ্যন্তরে’ অবস্থিত ছিল।
দ্বিতীয়তঃ হযরত উমর ফারূক (রা:)-এর উক্ত ঘরে দাফনের পরে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) পূর্ণ পর্দাসহ সেখানে যেয়ারতে যেতেন। এটি এতদসংক্রান্ত বিষয়ে হযরতে সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-এর আকীদা-বিশ্বাস প্রতিফলনকারী স্পষ্ট দলিল, যা’তে বোঝা যায় তাঁরা মাযারস্থদের দ্বারা যেয়ারতকারীদের চিনতে পারার ব্যাপারটিতে স্থির বিশ্বাস পোষণ করতেন। হাদীসটির স্পষ্ট বর্ণনার দিকে লক্ষ্য করুন। তাতে বলা হয়েছে ‘হায়া মিন উমর’, মানে হযরত উমর (রা:)-এর প্রতি লজ্জার কারণে হযরত আয়েশা (রা:) ওখানে পর্দা করতেন।
ইমাম নূরুদ্দীন হায়তামী (রহ:) এই হাদীসটি সম্পর্কে বলেন: “এটি ইমাম আহমদ (রহ:) কর্তৃক বর্ণিত এবং এর বর্ণনাকারীরা সবাই সহীহ মানব।” [মজমাউয্ যাওয়াইদ, ৯:৪০, হাদীস # ১২৭০৪]
ইমাম আল-হাকিম (রহ:) এটি বর্ণনা করার পর বলেন, “এই হাদীস বোখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ।” [মোস্তাদরাক আল-হাকিম, হাদীস # ৪৪৫৮]
নাসিরুদ্দীন আলবানী আল-মোবতাদি আল-মাশহুর (কুখ্যাত বেদআতী) এই হাদীসকে মেশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থের ওপর নিজ ব্যাখ্যামূলক ‘তাখরিজ’পুস্তকে সমর্থন করেছে (# ১৭১২)।
★★★ সাহাবীগন কর্তৃক মাযার জিয়ারত : মাযার শুধু একটা পাথরের গম্বুজ নয় বরং আল্লাহর মহান নবীগন ও অলীগন এতে শায়িত আছেন :
হযরত দাউদ ইবনে আবি সালেহ হতে বর্ণিত; তিনি বলেন: “......
(সাহাবী) আইয়্যুব আল-আনসারী (রা) জবাবে বলেন, ‘হ্যাঁ (আমি জানি);
আমি রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর কাছে এসেছি, কোনো পাথরের কাছে আসি নি।
রেফারেন্স/সূত্র
* আল-হাকিম এই বর্ণনাকে সহীহ বলেছেন; অপরদিকে, আয্ যাহাবীও তাঁর সত্যায়নের সাথে একমত হয়েছেন। [হাকিম, আল-মোস্তাদরাক, ৪র্থ খণ্ড, হাদীস নং ৫১৫]
* ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:)-ও তাঁর ’মুসনাদ’ গ্রন্থের ৫ম খণ্ডে সহীহ সনদে এটি বর্ণনা করেন। [হাদীস নং ৪২২]
হযরত নাফে’ (রহ:) বলেন, “আমি হযরত (আবদুল্লাহ) ইবনে উমর (রা:)-কে দেখেছি এক’শ বার বা তারও বেশি সময় মহানবী (দ:)-এর পবিত্র রওযা শরীফ যেয়ারত করেছেন।
[ইমাম কাজী আয়ায (রহ:) কৃত ‘শেফা শরীফ’ গ্রন্থের ৯ম অনুচ্ছেদে বর্ণিত]
অধ্যায় ৫ :
★★★ মাযার উচু, আস্তর বা পাকা করার প্রমান সমুহ :
হযরত আবূ বকর বিন আইয়াশ (রা:) বর্ণনা করেন: হযরত সুফিয়ান আত্ তাম্মার (রা:) আমাকে জানান যে তিনি মহানবী (দ:)-এর রওযা মোবারককে উঁচু ও উত্তল দেখতে পেয়েছেন। [সহীহ বোখারী, ২য় খণ্ড, ২৩তম বই, হাদীস নং ৪৭৩]
অতএব, মাযার-রওযা ভেঙ্গে ফেলা বা গুঁড়িয়ে দেয়া ‘সালাফী’দের দ্বারা ‘নস’ বা শরয়ী দলিলের চরম অপব্যাখ্যা ছাড়া কিছুই নয়।
মহান হানাফী মুহাদ্দীস ইমাম মোহাম্মদ ইবনে হাসসান শায়বানী (রহ:) এতদসংক্রান্ত বিষয়ে গোটা একটি অধ্যায় বরাদ্দ করে তার শিরোনাম দেন ‘কবরের ওপর উঁচু স্তূপাকৃতির ফলক ও আস্তর’। এই অধ্যায়ে তিনি নিম্নের হাদীসটি লিপিবদ্ধ করেন:
ইমাম আবূ হানিফা (রহ:) আমাদের কাছে হযরত হাম্মাদ (রহ:)-এর কথা বর্ণনা করেন, তিনি হযরত ইবরাহীম (রা:)-এর কথা উদ্ধৃত করেন, যিনি বলেন, কেউ একজন আমাকে জানান যে তাঁরা মহানবী (দ:), হযরত আবূ বকর (রা:) ও হযরত উমর (রা:)-এর মাযার-রওযার ওপরে ‘উঁচু স্তূপাকৃতির ফলক যা (চোখে পড়ার মতো) বাইরে প্রসারিত ছিল তা দেখতে পেয়েছিলেন এবং তাতে আরও ছিল সাদা এঁটেলমাটির টুকরো।
ইমাম মোহাম্মদ (রহ:) আরও বলেন, আমরা (আহনা’ফ) এই মতকেই সমর্থন করি; মাযার-রওযা বড় স্তূপাকৃতির ফলক দ্বারা চিহ্নিত করতে হবে। কিন্তু তা বর্গাকৃতির হতে পারবে না। এটি-ই হচ্ছে ’ইমাম আবূ হানিফা (রহ:)-এর সিদ্ধান্ত’। [কিতাবুল আসা’র, ১৪৫ পৃষ্ঠা, Turath Publishing কর্তৃক প্রকাশিত]
হযরত আম্বিয়া (আ:)-এর মাযার-রওযা আস্তর করার বৈধতা প্রমাণকারী রওয়ায়াতটি
হযরত আবূ আইয়ুব আনসারী (রা:) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে; তিনি বলেন: “আমি মহানবী (দ:)-এর কাছে এসেছি, পাথরের কাছে নয়” [মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, হাদীস # ২৩৪৭৬]।
নোট : এখানে বুঝা যায় যে রওজা মোবারক পাকা ছিল। যদি পাকা করা নিষিদ্ধ হত রওজা মোবারক পাকা থাকত না।
ইমাম আল-হাকিম (রহ:)-ও এটি বর্ণনা করে এর সনদকে সহীহ বলেছেন; তিনি বলেন, “আয্ যাহাবীও তাঁর (ইমাম আহমদের) তাসহিহ-এর সাথে একমত হয়েছেন এবং একে সহীহ বলেছেন।” [’মোস্তাদরাক আল-হাকিম’, আয্ যাহাবীর তালখীস সহকারে, ৪:৫৬০, হাদীস # ৮৫৭১]
’কবরে আস্তর না করা, না লেখা বা বসা’ সংক্রান্ত হাদীসটি বর্ণনার পরে ইমাম তিরমিযী (রহ:) বলেন: “এই হাদীসটি হাসান সহীহ এবং এটি বিভিন্ন সনদ বা সূত্রে হযরত জাবের (রা:) হতে বর্ণিত হয়েছে। কিছু উলেমা (কাদা) মাটি দ্বারা কবর আস্তর করার অনুমতি দিয়েছেন; এঁদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম হাসান আল-বসরী (আমীরুল মো’মেনেীন ফীল্ হাদীস)। অধিকন্তু, ইমাম শাফেঈ (রহ:) কাদামাটি দ্বারা কবর আস্তর করাতে কোনো ক্ষতি দেখতে পাননি।” [সুনানে তিরমিযী, কবর আস্তর না করার হাদীস #১০৫২]
★★★ মাযারে গম্বুজ নির্মানের প্রমান আল-কোরআন ও তফসীর থেকে :
কুরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে, “এবং এভাবে আমি তাদের (আসহাবে কাহাফ) বিষয় জানিয়ে দিলাম, যাতে লোকেরা জ্ঞাত হয় যে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামতে কোনো সন্দেহ নেই; যখন এই সব লোক তাদের (আসহাবে কাহাফ) ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করতে লাগলো, অতঃপর তারা বল্লো, ’তাদের গুহার ওপর কোনো ইমারত নির্মাণ করো! তাদের রব (খোদা)-ই তাদের বিষয়ে ভাল জানেন। ওই লোকদের মধ্যে যারা (এ বিষয়ে) ক্ষমতাধর ছিল তারা বল্লো, ‘শপথ রইলো, আমরা তাদের (আসহাবে কাহাফের পুণ্যময় স্থানের) ওপর মসজিদ নির্মাণ করবো’।” [সূরা কাহাফ, ২১ আয়াত]
ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (রহ:) এই আয়াতের তাফসীরে লেখেন, “কেউ কেউ (ওদের মধ্যে) বলেন যে গুহার দরজা বন্ধ করে দেয়া হোক, যাতে আসহাবে কাহাফ আড়ালে গোপন থাকতে পারেন। আরও কিছু মানুষ বলেন, গুহার দরজায় একটি মসজিদ নির্মাণ করা হোক। তাঁদের এই বক্তব্য প্রমাণ করে যে এই মানুষগুলো ছিলেন ’আল্লাহর আরেফীন (আল্লাহ-জ্ঞানী), যাঁরা এক আল্লাহর এবাদত-বন্দেগীতে বিশ্বাস করতেন এবং নামাযও পড়তেন’।” [তাফসীরে কবীর, ৫ম খণ্ড, ৪৭৫ পৃষ্ঠা]
ইমাম রাযী (রহ:) আরও লেখেন: “এবং আল্লাহর কালাম - ‘(এ বিষয়ে) যারা ক্ষমতাশালী’ বলতে বোঝানো হয়ে থাকতে পারে ‘মুসলমান শাসকবৃন্দ’, অথবা আসহাবে কাহাফ (মো’মেনীন)-এর বন্ধুগণ, কিংবা শহরের নেতৃবৃন্দ। ‘আমরা নিশ্চয় তাদের স্মৃতিস্থানের ওপরে মসজিদ নির্মাণ করবো’ - এই আয়াতটিতে এ কথাই বোঝানো হয়েছে, ‘আমরা যাতে সেখানে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করতে পারি এবং এই মসজিদের সুবাদে আসহাবে কাহাফ তথা গুহার সাথীদের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ করতে পারি’।” [তাফসীরে কবীর, ৫ম খণ্ড, ৪৭৫ পৃষ্ঠা]
’তাফসীরে জালালাইন’ শিরোনামের বিশ্বখ্যাত সংক্ষিপ্ত ও সহজে বোধগম্য আল-কুরআনের ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থে ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (রহ:) ও আল-মোহাল্লী (রহ:) লেখেন: ”(মানুষেরা বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল), অর্থাৎ, বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীরা (ওই) তরুণ (আসহাবে কাহাফ)-দের বিষয়ে বিতর্ক করছিল যে তাঁদের পার্শ্বে কোনো স্মৃতিচিহ্ন নির্মাণ করা যায় কি-না। এমতাবস্থায় অবিশ্বাসীরা বলে, তাঁদেরকে ঢেকে দেয়ার জন্যে ইমারত নির্মাণ করা হোক। তাঁদের প্রভু-ই তাঁদের অবস্থা সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। কিন্তু যে মানুষেরা ওই তরুণ আসহাবে কাহাফের বিষয়ে বেশি প্রভাবশালী ছিলেন, মানে বিশ্বাসীরা, তারা বল্লেন, আমরা তাঁদের পার্শ্বে এবাদতের উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করবো। আর এটি গুহার প্রবেশপথে প্রকৃতই নির্মিত হয়েছিল। [তাফসীর আল-জালালাইন, ১ম খণ্ড, ৩৮৯ পৃষ্ঠা]
ইমাম নাসাফী (রহ:) নিজ ‘তাফসীরে নাসাফী’ পুস্তকে লেখেন: “যারা (আসহাবে কাহাফের বিষয়ে) প্রভাবশালী ছিলেন, তারা মুসলমান এবং শাসকবর্গ; এরা বলেন যে গুহার প্রবেশপথে একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেবেন, যাতে ‘মুসলমানবৃন্দ সেখানে এবাদত-বন্দেগী করতে পারেন এবং তা (স্মৃতিচিহ্ন) থেকে বরকত আদায় করতে সক্ষম হন’।” [তাফসীর আল-নাসাফী, ৩য় খণ্ড, ১৮ পৃষ্ঠা]
ইমাম শেহাবউদ্দীন খাফফাজী (রহ:) লেখেন: “(গুহামুখে মসজিদ নির্মাণ) সালেহীন তথা পুণ্যাত্মাবৃন্দের মাযার-রওযার পার্শ্বে মসজিদ নির্মাণের প্রামাণিক দলিল, যেমনটি উল্লেখিত হয়েছে ‘তাফসীরে কাশশাফ’ পুস্তকে; আর এই দালানের ভেতরে এবাদত-বন্দেগী করা ’জায়েয’ (বৈধ)।” [ইমাম খাফফাজী কৃত ‘এনায়াতুল কাদী’, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৮৭ পৃষ্ঠা; দারুস্ সাদির, বৈরুত, লেবানন হতে প্রকাশিত]
ইমাম মোহাম্মদ বিন হাসান শায়বানী (রহ:) বলেন, “হযরত ইমাম আবূ হানিফাহ (রহ:) আমাদের জানিয়েছেন এই বলে যে সালিম আফতাস্ আমাদের (তাঁর কাছে) বর্ণনা করেন: ‘এমন কোনো নবী নেই যিনি কা’বা শরীফে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করতে নিজ জাতিকে ছেড়ে আসেন নি; আর এর আশপাশে ৩০০ জন নবী (আ:)-এর মাযার-রওযা বিদ্যমান’।” [ইমাম শায়বানীর ‘কিতাবুল আসার’; লন্ডনে Turath Publishing কর্তৃক প্রকাশিত; ১৫০ পৃষ্ঠা]
ইমাম শায়বানী (রহ:) আরও বলেন, “ইমাম আবূ হানিফা (রহ:) আমাদেরকে জানিয়েছেন এই বলে যে হযরত আতা’ বিন সায়েব (রা:) আমাদের (তাঁর কাছে) বর্ণনা করেন, ‘আম্বিয়া সর্ব-হযরত হুদ (আ:), সালেহ (আ:) ও শোয়াইব (আ:)-এর মাযার-রওযা মসজিদে হারামে অবস্থিত’।” [প্রাগুক্ত]
ইমাম ইবনে জারির তাবারী (রহ:) নিজ ‘তাফসীরে তাবারী’ পুস্তকে লেখেন: “মুশরিকরা বলেছিল, আমরা গুহার পার্শ্বে একটি ইমারত নির্মাণ করবো এবং আল্লাহর উপাসনা করবো; কিন্তু মুসলমানগণ বলেন, আসহাবে কাহাফের ওপর আমাদের হক বেশি এবং নিশ্চয় আমরা ওখানে ‘মসজিদ নির্মাণ করবো’ যাতে আমরা ওতে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করতে পারি।” [তাফসীরে তাবারী, ১৫:১৪৯]
মোল্লা আলী কারী ওপরে উদ্ধৃত আয়াতের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন: “যে ব্যক্তি কোনো সত্যনিষ্ঠ বোযর্গ বান্দার মাযারের সন্নিকটে মসজিদ নির্মাণ করেন, কিংবা ওই মাযারে (মাক্কবারা) এবাদত-বন্দেগী করেন, অথবা উক্ত বোযর্গের রূহ মোবারকের অসীলায় (মধ্যস্থতায়) সাহায্য প্রার্থনা করেন, বা তাঁর রেখে যাওয়া কোনো বস্তু থেকে বরকত তথা আশীর্বাদ অন্বেষণ করেন, তিনি যদি (এবাদতে) ওই বোযর্গকে তা’যিম বা তাওয়াজ্জুহ পালন না করেই এগুলো করেন, তবে এতে কোনো দোষ বা ভ্রান্তি নেই। আপনারা কি দেখেননি, মসজিদে হারামের ভেতরে হাতীম নামের জায়গায় হযরত ইসমাঈল (আ:)-এর রওযা শরীফ অবস্থিত? আর সেখানে এবাদত-বন্দেগী পালন করা অন্যান্য স্থানের চেয়েও উত্তম। তবে কবরের কাছে এবাদত-বন্দেগী পালন তখনই নিষিদ্ধ হবে, যদি মৃতের নাজাসাত (ময়লা) দ্বারা মাটি অপবিত্র হয়ে যায়। ....হাজর আল-আসওয়াদ (কালো পাথর) ও মিযা’য়াব-এর কাছে হাতীম জায়গাটিতে ’৭০জন নবী (আ:)-এর মাযার-রওযা’ বিদ্যমান।” [মিরক্কাত শরহে মিশক্কাত, ২য় খণ্ড, ২০২ পৃষ্ঠা]
ইমাম আবূ হাইয়ান আল-আনদালুসী (রহ:) বলেন: “তাঁদের (আসহাবে কাহাফের) পার্শ্বে ইমারত নির্মাণের কথা যে ব্যক্তি বলেছিল, সে এক অবিশ্বাসী মহিলা। সে গীর্জা নির্মাণের কথা-ই বলেছিল, যেখানে কুফরী কাজ করা যেতো। কিন্তু মো’মেন বান্দারা তাকে থামিয়ে দেন এবং ওর পরিবর্তে মসজিদ নির্মাণ করেন।” [তাফসীরে বাহর আল-মুহীত, ৭ম খণ্ড, ১৫৮ পৃষ্ঠা]
ইবনুল জাওযী, যাকে কট্টর হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ‘সালাফী’রাও মানে, তিনি উক্ত আয়াতের (১৮:২১) তাফসীরে বলেন: “ইবনে কুতায়বা (রা:) বর্ণনা করেন যে মুফাসসিরীনবৃন্দ মত প্রকাশ করেছিলেন, ওখানে যাঁরা মসজিদ নির্মাণ করেন, তাঁরা ছিলেন মুসলমান রাজা ও তাঁর মো’মেন সাথীবৃন্দ।” [তাফসীরে যা’য়াদ আল-মাসীর, ৫ম খণ্ড, ১২৪ পৃষ্ঠা]
★★★ মাযারে গম্বুজ নির্মান ও চাদর জড়ানো :
মহান হানাফী আলেম মোল্লা আলী কারী তাঁর চমৎকার ’মিরকাত শরহে মিশকাত’ গ্রন্থে লেখেন: “সালাফ তথা প্রাথমিক যুগের মুসলমানগণ প্রখ্যাত মাশায়েখ (পীর-বোযর্গ) ও হক্কানী উলেমাবৃন্দের মাযার-রওযা নির্মাণকে মোবাহ, অর্থাৎ, জায়েয (অনুমতিপ্রাপ্ত) বিবেচনা করেছেন, যাতে মানুষেরা তাঁদের যেয়ারত করতে পারেন এবং সেখানে (সহজে) বসতে পারেন।” [মিরকাত শরহে মিশকাত, ৪র্থ খণ্ড, ৬৯ পৃষ্ঠা]
মহান শাফেঈ আলেম ও সূফী ইমাম আব্দুল ওয়াহহাব শারানী (রহ:) লেখেন: “আমার শিক্ষক আলী (রহ:) ও ভাই আফযালউদ্দীন (রহ:) সাধারণ মানুষের কবরের ওপরে গুম্বজ নির্মাণ ও কফিনে মৃতদের দাফন এবং (সাধারণ মানুষের) কবরের ওপরে চাদর বিছানোকে নিষেধ করতেন। তাঁরা সব সময়-ই বলতেন, গুম্বজ ও চাদর চড়ানোর যোগ্য একমাত্র আম্বিয়া (আ:) ও মহান আউলিয়া (রহ:)-বৃন্দ। অথচ, আমরা মনুষ্য সমাজের প্রথার বন্ধনেই রয়েছি আবদ্ধ।” [আল-আনওয়ারুল কুদসিয়্যা, ৫৯৩ পৃষ্ঠা]
অধ্যায় ৬ :
★★★ ইসলামে মাযারের অস্তিত্ব :
বোখারী শরীফ, ২য় খণ্ড, বই নং ২৩, হাদীস নং ৪২৩
হুযূর পাক (দ:) এরশাদ ফরমান: “আমি যদি সেখানে থাকতাম, তাহলে আমি তোমাদেরকে মূসা (আ:)-এর মাযারটি দেখাতাম, যেটি লাল বালির পাহাড়ের সন্নিকটে পথের ধারে অবস্থিত।”
সুস্পষ্ট হাদীস শরীফ
হযরত ইবনে উমর (রা:) বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর হাদীস, যিনি বলেন: “মসজিদে আল-খায়ফের মধ্যে (’ফী’) ৭০ জন নবী (আ:)-এর মাযার-রওযা (এক সাথে) বিদ্যমান।” ইমাম আল-হায়তামী (রহ:) বলেন যে এটি আল-বাযযার বর্ণনা করেন এবং ”এর সমস্ত রাবী (বর্ণনাকারী)-ই আস্থাভাজন”। মানে এই হাদীস সহীহ। ইমাম আল-হায়তামী (রহ:) নিজ ‘মজমাউয্ যাওয়াইদ’ পুস্তকের ৩য় খণ্ডে ‘বাবু ফী মসজিদিল্ খায়ফ’ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ #৫৭৬৯ নং হাদীসটি উদ্ধৃত করেন, যা’তে বিবৃত হয়: “মসজিদে খায়ফের মধ্যে (’ফী’) ৭০ জন আম্বিয়া (আ:)-এর মাযার-রওযা বিদ্যমান।”
হুকুম: শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) এ প্রসঙ্গে বলেন, “এই হাদীসের সনদ সহীহ।” [মোখতাসারুল বাযযার, ১:৪৭৬]
অধ্যায় ৭ :
ইসলে সওয়াব পাঠানো বিদআত নয় বরং সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত :
হাদীস শরীফ থেকে প্রমাণ
দলিল নং - ১
ইমাম বোখারী ও ইমাম মুসলিম লেখেন:
”এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর দরবারে এসে আরয করেন, ‘(হে আল্লাহর রাসূল - দ:) আমার মা অকস্মাৎ ইন্তেকাল করেছেন এবং তিনি কোনো অসিয়ত (উইল) করে যাননি। তবে আমার মনে উদয় হয়েছে, তিনি তা চাইলে হয়তো কোনো দান-সদকা করার কথা আমাকে বলতেন। এক্ষণে আমি তাঁর পক্ষ থেকে কোনো দান-সদকাহ করলে তিনি কি এর সওয়াব পাবেন?’ মহানবী (দ:) জবাবে বলেন, ‘হ্যাঁ।’ এমতাবস্থায় ওই ব্যক্তি বলেন, ‘হে রাসূল (দ:), আমি আপনাকে আমার (খেজুর) ফলে পরিপূর্ণ বাগানটি সদকাহ হিসেবে দানের ব্যাপারে সাক্ষী করলাম’।”
* আল-বোখারী, ‘অসিয়ত’ অধ্যায়, ৪র্থ খণ্ড, বই নং ৫১, হাদীস নং ১৯
* মুসলিম শরীফ, ‘অসিয়ত‘ অধ্যায়, বই নং ১৩, হাদীস নং ৪০০৩
এই হাদীস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, ইন্তেকালপ্রাপ্তদের পক্ষে কোনো দান-সদকাহ করা হলে তা ইন্তেকালপ্রাপ্তদের জন্যে সুফল বয়ে আনে।
দলিল নং - ২
ইমাম বোখারী (রহ:) লেখেন: “মহানবী (দ:) এরশাদ ফরমান, ‘(কবর জীবনে) ইন্তেকালপ্রাপ্তের মর্যাদা উন্নীত করা হলে তিনি আল্লাহর কাছে এর কারণ জিজ্ঞেস করেন। আল্লাহতা’লা জবাবে বলেন, তোমার পুত্র তোমার জন্যে ক্ষমা চেয়ে দোয়া করেছে’।”
* আল-বোখারী, আল-আদাব আল-মোফিদ, ‘পিতা-মাতার শ্রেষ্ঠত্ব/মাহাত্ম্য’ অধ্যায়
এই বিশেষ হাদীস থেকে উপলব্ধি করা যায় যে কেবল দান-সদকাহ-ই নয়, বরং দোয়া ও আর্থিক সাহায্য করাও
ইন্তেকালপ্রাপ্তদের জন্যে খোদায়ী আশীর্বাদ বয়ে আনে।
দলিল নং - ৩
নবী পাক (দ:) এরশাদ করেন, “এটি (সূরা এয়াসিন) ইন্তেকালপ্রাপ্ত বা ইন্তেকাল হতে যাচ্ছে এমন ব্যক্তির কাছে (’ইনদা) পাঠ করো।” [সুনানে ইবনে মাজাহ, কিতাবুল জানায়েয # ১৪৩৮]
’সুনানে ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থের ব্যাখ্যাকারী আরও বলেন, “হুযূর পাক (দ:)-এর ‘ইন্তেকালপ্রাপ্ত বা ইন্তেকাল হতে যাচ্ছে এমন ব্যক্তি’ এই বাণীর উদ্দেশ্য ইন্তেকাল হতে যাচ্ছে এমন ব্যক্তি অথবা (’আও’) ইন্তেকালপ্রাপ্ত (বা’দ) ব্যক্তিও।” [শরহে সুনানে ইবনে মাজাহ আল-সনদি, প্রাগুক্ত]
‘সুনানে আবি দাউদ’ পুস্তকের ’আওন আল-মা’বুদ শরহে সুনানে আবি দাউদ’ শীর্ষক ব্যাখ্যাগ্রন্থে বিবৃত হয়: “এবং নাসাঈ (শরীফে) হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসটি (যা’তে এরশাদ হয়েছে), মহানবী (দ:) জানাযার নামায পড়েন এবং সূরা ফাতেহা পাঠ করেন।”
দলিল নং - ৪
হুযূর পূর নূর (দ:) এরশাদ ফরমান, “একরা’ও ‘আলা মওতাকুম এয়াসীন”, মানে ‘তোমাদের মধ্যে ইন্তেকালপ্রাপ্ত বা ইন্তেকাল হতে যাচ্ছে এমন ব্যক্তিদের কাছে সূরা এয়াসীন পাঠ করো।’
রেফারেন্স
* আবূ দাউদ কৃত ‘সুনান’ (জানায়েয)
* নাসাঈ প্রণীত ‘সুনান’ (’আমল আল-এয়াওম ওয়াল-লায়লাহ)
* ইবনে মাজাহ রচিত ‘সুনান’ (জানায়েয)
* ইবনে হিব্বান লিখিত ‘সহীহ’ (এহসান); তিনি এটিকে সহীহ বলেছেন।
দলিল নং - ৫
হযরত মা’কিল ইবনে এয়াসার আল-মুযানি বর্ণনা করেন; মহানবী (দ:) এরশাদ ফরমান: “কেউ যদি সূরা এয়াসীন আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের উদ্দেশ্যে তেলাওয়াত করে, তবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ হবে; অতএব, তোমাদের মধ্যে ইন্তেকাল হতে যাচ্ছে এমন ব্যক্তিদের কাছে তা পাঠ করো।”
ইমাম বায়হাকী (রহ:) এটি নিজস্ব ‘শুয়াবুল ঈমান’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
* আত্ তিরমিযী, হাদীস নং ২১৭৮
দলিল নং - ৬ [ইমাম নববী (রহ:)]
সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আমর ইবনুল আস্ (রা:)-এর কথা বর্ণিত হয়েছে; তিনি বলেন: ’তোমরা যখন আমাকে দাফন করবে, তখন আমার কবরের পাশে ততোক্ষণ দাঁড়াবে যতোক্ষণ একটি উট যবেহ করে তার গোস্ত বিতরণ করতে সময় প্রয়োজন হয়; এতে আমি তোমাদের সঙ্গ লাভের সন্তুষ্টি পাবো এবং আল্লাহর ফেরেশতাদের কী জবাব দেবো তা মনঃস্থির করতে পারবো।’
ইমাম আবূ দাউদ (রহ:) ও ইমাম বায়হাকী (রহ:) ‘হাসান’ এসনাদে হযরত উসমান (রা:) থেকে বর্ণনা করেন; তিনি বলেন: মহানবী (দ:) ইন্তেকালপ্রাপ্ত কারো দাফনের পরে তার (কবরের) পাশে দাঁড়াতেন এবং বলতেন, ‘এই ইন্তেকালপ্রাপ্তের গুনাহ মাফের জন্যে দোয়া করো, যাতে সে দৃঢ় থাকে; কেননা তাকে (কবরে) প্রশ্ন করা হচ্ছে।’
ইমাম শাফেঈ (রহ:) ও তাঁর শিষ্যবৃন্দ বলেন, ‘(কবরে) কুরআনের অংশবিশেষ তেলাওয়াত করা ভাল; কুরআন খতম করতে পারলে আরও উত্তম।’
’হাসান’ সনদে ‘সুনানে বায়হাকী’ গ্রন্থে বর্ণনা করা হয়েছে যে হযরত ইবনে উমর (রা:) ইন্তেকালপ্রাপ্তদের দাফনের পরে কবরের পাশে সূরা বাকারাহ’র প্রারম্ভিক ও শেষ আয়াতগুলো তেলাওয়াত করাকে মোস্তাহাব বিবেচনা করতেন। [’কিতাবুল আযকার, ২৭৮ পৃষ্ঠা]
ইমাম নববী (রহ:) বলেন: “যে ব্যক্তি কবর যেয়ারত করেন, তিনি সেটির অধিবাসীকে সালাম-সম্ভাষণ জানাবেন, আল-কুরআনের অংশবিশেষ তেলাওয়াত করবেন এবং ইন্তেকালপ্রাপ্তের জন্যে দোয়া করবেন।”
* ইমাম নববী রচিত ‘মিনহাজ আত্ তালেবীন’, কিতাবুল জানায়েয অধ্যায়ের শেষে।
’আল-মজমু’ শারহ আল-মুহাযযাব’ শীর্ষক গ্রন্থে ইমাম নববী (রহ:) আরও লেখেন: “এটি কাঙ্ক্ষিত (ইউস্তাহাব্ব) যে কবর যেয়ারতকারী তাঁর জন্যে সহজে পাঠযোগ্য কুরআনের কোনো অংশ তেলাওয়াত করবেন, যার পরে তিনি কবরস্থদের জন্যে আল্লাহর দরবারে দোয়া করবেন। ইমাম শাফেঈ (রহ:) এই শর্তারোপ করেন এবং তাঁর শিষ্যবৃন্দ তাঁর সাথে ঐকমত্য পোষণ করেন।” বইয়ের আরেক স্থানে তিনি বলেন: “যদি কুরআন খতম করা সম্ভব হয়, তবে তা আরও উত্তম।”
* ইমাম সৈয়ুতী (রহ:) ওপরের দু’টি উদ্ধৃতি-ই তাঁর প্রণীত ‘শরহে সুদুর’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন (৩১১ পৃষ্ঠা)।
”উলেমাবৃন্দ কবরের পাশে কুরআন তেলাওয়াতকে মোস্তাহাব (কাম্য) বলে ঘোষণা করেছেন।”
* ইমাম নববী (রহ:) কৃত ‘শরহে সহীহ আল-মুসলিম’ (আল-মায়স্ সংস্করণ, ৩/৪: ২০৬)
দলিল নং - ৭
বর্ণিত আছে যে আল-’আলা ইবনে আল-লাজলাজ তাঁর সন্তানদেরকে বলেন, “তোমরা যখন আমাকে দাফন করবে এবং কবরের ‘লাহদ’ বা পার্শ্ববর্তী খোলা জায়গা স্থাপন করবে, তখন পাঠ করবে - বিসমিল্লাহ ওয়া ‘আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ - অর্থাৎ, মহান আল্লাহর নামে এবং মহানবী (দ:)-এর ধর্মীয় রীতি মোতাবেক। অতঃপর আমার ওপর মাটি চাপা দেবে এবং আমার কবরের শিয়রে সূরা বাকারা’র প্রারম্ভিক ও শেষের আয়াতগুলো তেলাওয়াত করবে; কারণ আমি দেখেছি হযরত ইবনে উমর (রা:) তা পছন্দ করতেন।”
রেফারেন্স
* ইমাম বায়হাকী, ‘আল-সুনান আল-কুবরা’ (৪:৫৬)
* ইবনে কুদামা, ’আল-মুগনী’ (২:৪৭৪, ২:৫৬৭, ১৯৯৪ ইং সংস্করণের ২:৩৫৫)
* আত্ তাবারানী, ‘আল-কবীর’; আর ইমাম হায়তামী নিজ ‘মজমা’ আল-যওয়াইদ’ (৩:৪৪) গ্রন্থে জানান যে এর সকল বর্ণনাকারীকেই নির্ভরযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
দলিল নং - ৮
ইবনে তাইমিয়া লিখেছে:
”বিশুদ্ধ আহাদীস বা হাদীসসমূহে প্রমাণিত হয় যে ইন্তেকালপ্রাপ্ত জন তাঁর পক্ষে অন্যান্যদের পালিত সমস্ত নেক আমলের সওয়াব বা পুরস্কার লাভ করবেন। কিছু মানুষ আপত্তি উত্থাপন করে এই মর্মে যে কোনো ব্যক্তি শুধু তার নিজের কর্মের ফলেই সওয়াব অর্জন করতে সক্ষম; আর তারা এ যুক্তির পক্ষে আল-কুরআনের দলিল দিতে তৎপর হয়। এটি সঠিক নয়। প্রথমতঃ ( এ কারণে যে) কোনো মুসলমান নিজে যে নেক আমল পালন করেননি, তার সওয়াব-ও তিনি পেতে পারেন; যেমনটি আল্লাহতা’লা কুরআন মজীদে এরশাদ ফরমান যে আল্লাহর আরশের ফেরেশতারা সর্বদা তাঁর-ই প্রশংসা করেন এবং সকল মুসলমানের পক্ষে মাফ চান। আল-কুরআনে আরও পরিস্ফুট হয় যে আল্লাহ পাক তাঁর-ই প্রিয়নবী (দ:)-কে নিজ উম্মতের জন্যে দোয়া করতে বলেছেন, কেননা তাঁর দোয়া উম্মতের মানসিক ও আত্মিক শান্তিস্বরূপ। অনুরূপভাবে, দোয়া করা হয় জানাযার নামাযে, কবর যেয়ারতে এবং ইন্তেকালপ্রাপ্তদের জন্যে।
”দ্বিতীয়তঃ আমরা জানি, আল্লাহ পাক অন্যান্যদের নেক আমল, যা আমাদের পক্ষে তাঁরা পালন করেন, তার বদৌলতে আমাদেরকে পুরস্কৃত করে থাকেন। এর উদাহরণ হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর একখানি হাদীস যা’তে তিনি এরশাদ ফরমান, “কোনো মুসলমান যখন-ই অন্যান্য মুসলমানের জন্যে দোয়া করেন, তৎক্ষণাৎ আল্লাহ পাক একজন ফেরেশতা নিয়োগ করেন ‘আমীন’ বলার জন্যে; অর্থাৎ, ওই ফেরেশতা আল্লাহর কাছে দোয়া কবুলের জন্যে ফরিয়াদ করেন। কখনো কখনো আল্লাহতা’লা জানাযার নামাযে শরিক মুসলমানদেরকে ইন্তেকালপ্রাপ্তদের পক্ষে কৃত তাঁদের প্রার্থনার জবাবে রহমত-বরকত দান করেন; আর ইন্তেকালপ্রাপ্তদেরকেও এর বিপরীতে পুরস্কৃত করেন।”
রেফারেন্স: ইবনে তাইমিয়া রচিত ‘মজমু’ আল-ফাতাওয়া’, সউদী আরবীয় সংস্করণ, ৭ম খণ্ড, ৫০০ পৃষ্ঠা এবং ২৪ খণ্ড, ৩৬৭ পৃষ্ঠা।
দলিল নং - ৯ [হাফেয ইবনে কাইয়্যেম জাওযিয়্যা]
”সুদূর অতীতের এক শ্রেণীর বোযূর্গ (এসলাফ) থেকে বর্ণিত আছে যে তাঁরা ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দাফনের পর তাঁদের কবরের কাছে কুরআন পাক তেলাওয়াত করতে অসিয়ত করে গিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল হক (রহ:) বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁর মাযারে যেন সূরা বাকারাহ পাঠ করা হয়। হযরত মুআল্লা ইবনে আব্দির রহমান (রহ:)-ও তদ্রূপ অভিমত পোষণ করতেন। ইমাম আহমদ (রহ:) প্রথমাবস্থায় উপরোক্ত মতের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনিও কবরে কুরআন শরীফ পাঠ করার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন।
”হযরত আলা ইবনে লাজলাজ (রহ:) থেকে বর্ণিত: তাঁর পিতা অসিয়ত করেছিলেন যে তিনি ইন্তেকাল করলে তাঁকে যেন লাহাদ ধরনের কবরে দাফন করা হয় এবং কবরে মরদেহ নামানোর সময় ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ’ বাক্যটি পাঠ করা হয়। আর মাটি দেয়ার পর তাঁর শিয়রের দিক থেকে যেন সূরা বাকারাহ’র প্রথম অংশের আয়াতগুলো পাঠ করা হয়। কেননা, তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা:)-কে এ রকম বলতে শুনেছিলেন।
”এই প্রসঙ্গে হযরত আদ্ দুরী (রহ:) বলেন, আমি একবার ইমাম আহমদ (রহ:)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কবরের কাছে কুরআন শরীফ পাঠ করা সম্পর্কে কোনো রওয়ায়াত আপনার স্মরণে আছে কি? তিনি তখন বলেছিলেন, ‘না’। কিন্তু হযরত ইয়াহইয়া ইবনে মুয়ীন (রহ:)-কে একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হলে তিনি আলা ইবনে লাজলাজ কর্তৃক উদ্ধৃত হাদীসটি বর্ণনা করেছিলেন। হযরত আলী ইবনে মূসা আল-হাদ্দাদ (রহ:) বলেন, আমি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) ও হযরত মোহাম্মদ ইবনে কুদামাহ (রহ:)-এর সঙ্গে এক জানাযায় শরীক হয়েছিলাম। লাশ দাফনের পর জনৈক অন্ধ ব্যক্তি কবরের কাছে পবিত্র কুরআন পড়তে লাগলেন। তখন ইমাম আহমদ (রহ:) বল্লেন, ‘এই যে শোনো, কবরের কাছে কুরআন শরীফ পাঠ করা বেদআত।’ আমরা যখন কবরস্থান থেকে বেরিয়ে এলাম, তখন হযরত মোহাম্মদ ইবনে কুদামাহ (রহ:) ইমাম আহমদ (রহ:)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হযরত মোবাশশির হালাবী (রহ:) সম্পর্কে আপনার ধারণা কী? তিনি উত্তরে বললেন, হযরত মোবাশশির হালাবী (রহ:) একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি। আমি আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি তাঁর থেকে কোনো রওয়ায়াত লিপিবদ্ধ করেছেন কি? তিনি বল্লেন, ‘হ্যাঁ, করেছি।’ মোহাম্মদ ইবনে কুদামাহ (রহ:) বল্লেন, ’আমাকে হযরত মোবাশশির (রহ:), আর তাঁকে হযরত আবদুর রহমান ইবনে আলা ইবনে লাজলাজ (রহ:), আর তাঁকে তাঁর পিতা অসিয়ত করেছিলেন এই মর্মে যে তাঁর পিতার মরদেহ দাফন করার পর তাঁর শিয়রে যেন সূরা বাকারাহ’র প্রথম ও শেষ অংশ থেকে পাঠ করা হয়। তাঁর পিতা তাঁকে আরও বলেছিলেন যে তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা:)-কে এই রকম করার জন্যে অসিয়ত করতে শুনেছিলেন।’ উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ইমাম আহমদ (রহ:) তাঁর মত পরিবর্তন করে ইবনে কুদামা (রহ:)-কে বলেন, ‘ওই অন্ধ ব্যক্তিকে গিয়ে বলো, সে যেন কবরে কুরআন শরীফ পাঠ করে’।”
রেফারেন্স
* ইবনে কাইয়্যেম জাওযিয়্যা কৃত ’কিতাবুর রূহ’; বাংলা সংস্করণ ১৬-৭ পৃষ্ঠা; ১৯৯৮ ইং
* ইমাম গাযযালী (রহ:) রচিত ‘এহইয়া’, ইন্তেকাল ও পরকালের স্মরণবিষয়ক বই; ড: আবদুল হাকিম মুরাদ অনূদিত; ক্যামব্রিজ: ইসলামিক টেক্সটস্ সোসাইটি, ১৯৮৯; ১১৭ পৃষ্ঠা।
* আল-খাল্লাল এটি নিজ ‘আল-আমর বিল্ মা’রূফ’ শীর্ষক পুস্তকে বর্ণনা করেন; ১২২ পৃষ্ঠা # ২৪০-২৪১
*ইবনে কুদামাহ প্রণীত ‘আল-মুগনী’ (২:৫৬৭; বৈরুত ১৯৯৪ সংস্করণের ২:৩৫৫) এবং ‘ক্কা’ল আজি-ইন ফেকাহে ইবনে উমর’ (৬১৮ পৃষ্ঠা)
”হযরত হাসান ইবনে হাইসাম (রহ:) বলেন, আমি আবূ বকর ইবনে আতরূশ (রহ:)-কে বলতে শুনেছি, এক ব্যক্তি নিজের মায়ের কবরের কাছে গিয়ে প্রতি জুমআ-বারে সূরা ইয়াসীন পাঠ করতেন। একদিন তিনি সূরা ইয়াসীন পাঠ করে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইলেন, ‘হে আল্লাহ, এই সূরা পাঠ করলে যে সওয়াব পাওয়া যায়, তা আপনি এই কবরস্থানের সকল ইন্তেকালপ্রাপ্তের কাছে পৌঁছে দিন।’ পরের জুমআ-বারে তাঁর কাছে এক মহিলা এসে বললেন, আপনি কি অমুকের পুত্র অমুক? তিনি জবাবে বল্লেন, জ্বি হাঁ। ওই মহিলা বললেন, আমার এক মেয়ে মারা গিয়েছে। আমি তাকে স্বপ্নে দেখলাম, সে নিজের কবরের পাশে বসে আছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি এখানে বসে আছো কেন? সে আপনার নাম উল্লেখ করে বললো, তিনি নিজের মায়ের কবরের কাছে এসে সূরা ইয়াসীন পড়েন এবং এর সওয়াব সমস্ত ইন্তেকালপ্রাপ্তের প্রতি বখশিয়ে দেন। সেই সওয়াবের কিছু অংশ অামিও পেয়েছি এবং সে জন্যে আমাকে মাফ করে দেয়া হয়েছে। আমার ওই মেয়ে আমাকে এ ধরনের আরও কিছু কথা বলেছিল।”
রেফারেন্স: ইবনে কাইয়্যেম আল-জাওযিয়্যা লিখিত ‘কিতাবুর রূহ’ বাংলা সংস্করণ, ১৭ পৃষ্ঠা; ১৯৯৮ ইং সাল।
”কোনো মো’মেন বান্দা যখন কোনো ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে দোয়া, এস্তেগফার, সাদকাহ, হজ্জ্ব প্রভৃতি নেক আমল পালন করেন, তখন এ সবের সওয়াব ইন্তেকালপ্রাপ্তদের রূহে পৌঁছে যায়। ..এক শ্রেণীর বেদআতী (ভ্রান্ত মতের অনুসারী)-র দৃষ্টিতে ইন্তেকালপ্রাপ্তদের কাছে জীবিতদের নেক আমলের সওয়াব পৌঁছে না। তবে সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয় যে এ ধারণা ভুল।...কুরআন মজীদেই এর প্রমাণ রয়েছে (সূরা আল-হাশর, ১০ম আয়াত), যেখানে মহান আল্লাহ পাক সে সকল মুসলমানের প্রশংসা করেন যাঁরা তাঁদের (অগ্রবর্তী) মুসলমান ভাইদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ...একটি বিশুদ্ধ হাদীস প্রতীয়মান করে যে মহানবী (দ:) এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কোনো ইন্তেকালপ্রাপ্তের পক্ষে পেশকৃত সাদকাহ’র সওয়াব তাঁর রূহে পৌঁছে যায় (বোখারী ও মুসলিম)। ...কতিপয় লোক সন্দেহ করে থাকে যে পূর্ববর্তী তথা প্রাথমিক যুগের মুসলমানবৃন্দ ইসালে সওয়াব (ওরস) পালন করেননি; কিন্তু এটি ওই সব লোকের অজ্ঞতা বা জ্ঞানের অভাবে ঘটেছে। প্রাথমিক যুগের মুসলমানবৃন্দ প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে এগুলো করতেন না। ....মহানবী (দ:) স্বয়ং সাদকাহ প্রদানের অনুমতি দিয়েছিলেন। অতএব, ইসালে সওয়াব সঠিক। ...আল-কুরআনের যে আয়াতটিতে ঘোষিত হয়েছে কোনো ব্যক্তি শুধু সে সওয়াবটুকুই পাবেন যা তিনি আমল করেছেন, তাতে বোঝানো হয়েছে তাঁকে সওয়াব অর্জনের মতো যোগ্যতাসম্পন্ন নেককার হতে হবে; কিন্তু আল্লাহ পাক এ ছাড়াও অন্য কারো উপহৃত নেক আমলের সওয়াব ইন্তেকালপ্রাপ্তদের রূহের প্রতি বখশে দেন।” [ইবনে কাইয়্যেম জাওযিয়্যা কৃত ‘কেতাবুর রূহ’, ১৬তম অধ্যায়]
”হযরত শায়বী (রহ:) বলেন, আনসার সাহাবা (রা:)-দের কেউ ইন্তেকাল করলে তাঁরা তাঁর কবরের কাছে গিয়ে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করতেন। [প্রাগুক্ত ‘কেতাবুর রূহ’, ১৭ পৃষ্ঠা; বাংলা সংস্করণ]
”হযরত আল-হাসান ইবনে আস্ সাবাহ আয্ যাফরানী (রহ:) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, কবরের পাশে কুরআন শরীফ পাঠ করা সম্পর্কে আমি ইমাম শাফেঈ (রহ:)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি জবাবে বলেন, ’এতে আপত্তির কোনো কিছু নেই’।” [প্রাগুক্ত ’কেতাবুর রূহ’, ১৭ পৃষ্ঠা; বাংলা সংস্করণ]
দলিল নং - ১০ [কাজী শওকানী]
”সুন্নী জামাআতের মতানুযায়ী, ইন্তেকালপ্রাপ্ত মুসলমানগণ (তাঁদের পক্ষে) অন্যদের পেশকৃত দোয়া, হজ্জ্ব, সাদকাহ ইত্যাদির বদৌলতে সওয়াব হাসেল করেন। কিন্তু মো’তাযেলা (ভ্রান্ত মতবাদী) সম্প্রদায় এ সত্য মানতে নারাজ। ইন্তেকালপ্রাপ্তদের উদ্দেশ্যে এগুলো পেশ করা যদি ভ্রান্তি-ই হতো, তবে কবরস্থানে যেয়ারত বা প্রবেশের সময় ইন্তেকালপ্রাপ্তদের প্রতি আমাদের সালাম দেয়াকেও ইসলাম ধর্ম অনুমোদন করতো না।” [কাজী শওকানী রচিত ‘নায়ল আল-আওতার’, জানায়েয অধ্যায়]
”দাফনের পরে কবরের পাশে সূরা বাকারা’র প্রারম্ভিক ও শেষের আয়াতগুলো পাঠ করা হোক। এই সিদ্ধান্ত হযরত ইবনে উমর (রা:)-এর কথার ভিত্তিতে নেয়া হয়েছে, যা বর্ণিত হয়েছে ইমাম বায়হাকী (রহ:)-এর ’সুনান’ (৪:৫৬) গ্রন্থে এবং যা’তে বলা হয়েছে: ‘আমি পছন্দ করি কবরের পাশে সূরা বাকারা’র প্রারম্ভিক ও শেষাংশ পঠিত হোক।’
”ইমাম নববী (রহ:) ঘোষণা করেন যে (ওপরের) এই বর্ণনার এসনাদ হাসান (’হাসসানা এসনাদুহূ’); আর যদিও এটি শুধু হযরত ইবনে উমর (রা:)-এরই বাণী, তথাপি তা স্রেফ কোনো মতামতের ভিত্তিতে উপস্থাপিত নয়। এটির সম্ভাব্য কারণ হতে পারে এই যে, তিনি সার্বিকভাবে আলোচিত এ ধরনের তেলাওয়াতের ফায়দাগুলো সম্পর্কে জেনেছিলেন, এবং এর গুণাগুণের আলোকে কবরের ধারে তা পঠিত হওয়াকে পছন্দনীয় ভেবেছিলেন এই আশায় যে এর তেলাওয়াতের দরুন ইন্তেকালপ্রাপ্ত মুসলমানবৃন্দ সওয়াব হাসেল করতে সক্ষম হবেন।” [শওকানী কৃত ‘তোহফাত আয্ যাকেরীন’, ২২৯ পৃষ্ঠা; আল-জাযুরী দামেশকী (রহ:)-এর প্রণীত ‘হিসনে হাসিন’ গ্রন্থেও এই উদ্ধৃতি আছে]
অধ্যায় ৮ :
অলীগনের মাযারে গিয়ে নফল সালাত আদায় করা ও তাদের উসীলার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা :
[ইমাম শাফেঈ (রহ:)]
ইমাম আবূ হানিফা (রহ:)-এর মাযারে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনাকালে ইমাম শাফেঈ (রহ:) বলেন, “আমি ইমাম আবু হানিফা (রা:) হতে বরকত আদায় করি এবং তাঁর মাযার শরীফ প্রতিদিন যেয়ারত করি। আমি যখন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হই, তখন-ই দুই রাকআত নফল নামায পড়ে তাঁর মাযার শরীফ যেয়ারত করি; আর (দাঁড়িয়ে) সমাধানের জন্যে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি। ওই স্থান ত্যাগ করার আগেই আমার সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।”
রেফারেন্স
* খতীব বাগদাদী সহীহ সনদে এই ঘটনা বর্ণনা করেন তাঁর কৃত ‘তারিখে বাগদাদ’ গ্রন্থে (১:১২৩)
* ইবনে হাজর হায়তামী প্রণীত ‘আল-খায়রাত আল-হিসান ফী মানাক্কিবিল ইমাম আল-আ’যম আবূ হানিফা’ (৯৪ পৃষ্ঠা)
* মোহাম্মদ যাহেদ কাওসারী, ‘মাক্কালাত’ (৩৮১ পৃষ্ঠা)
* ইবনে আবেদীন শামী, ‘রাদ্দুল মোহতার আ’লা দুররিল মোখতার’ (১:৪১)
জ্ঞাতব্য: এটি সমর্থনকারী দালিলিক প্রমাণ হিসেবে পেশকৃত এবং এটি একটি ’হুজ্জাহ’, কেননা চার মযহাবের অনেক ফুকাহা একে দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
এই বর্ননার একজন ""উমর ইবনে ইসহাক" কে আল-বানী অপরিচিত বলেছে তার জবাব :
★ Ta'nib al-khatib : pg 34, again no definitive info on this narrator ('Umar or 'Amr ibn Ishaq)
★ Amr ibn Ishaq ibn Ibrahim al-Himsi
who is not unknown [cf. Ibn Hajar in Nata'ij al-Afkar (2:28)]
★ Amr is established to narrate from --
→ his father Ishaq ibn Ibrahim ibn al-`Ala' (d. 238) and from
→ his grandfather Abu Ishaq Ibrahim ibn al- `Ala' ibn al-Dahhak (d. 235).
→ From Amr narrate Sulayman ibn Ahmad al-Tabarani (260-360) and
→ Abu Ja`far Muhammad ibn Muhammad ibn `Abd Allah al-Baghdadi (d. 346).
In al-Khatib's report, the unassessed link :-
→ (`Umar or `Amr) narrates from
→ Ali ibn Maymun (d. 246), and from the unassessed link
→ narrates Makram ibn Ahmad (d. 345).
If the link is indeed `Amr, then the chain is strong since he is muwaththaq as this also stated by -
this event is Also narrated by : এই ঘটনাটি বিভিন্ন বর্ননায় এসেছে :
★ Ibn Abil Wafa in his Tabaqat al-Hanafiyya (p. 519) through another chain of narrators
--
★ Muhammad Zihid Kawthari, Maqilit (p.381)
--
★ This narration is also cited by Imam Abu al-Muwaid al-Muwaffiq Ibn Ahmad al-Makki (d. 568H) in Manaqib al-Imam al-Azam Abi Hanifah 2, p. 199.
Imam Abu al-Muwaid al-MuwaffiqIbn Ahmad al-Makki (d. 568H) copied this authentic statement of Imam Shafai :
“I seek blessings from Imam Abu Hanifah and visit his grave daily. Whenever I am in need, I visit his grave after offering two rakah Prayer, and state my need before Allah. Within no time my need is met”. [Manaqib al-Imam al-Azam Abi Hanifah]
★ The belief of Imam ibn Hajar Makki ash-Shafi'i (radiyallahu ta'ala anhu) (d. 973 H)
Imam ibn Hajar Makki writes that it has always been the practice of the scholars and those who need to go to the shrine of Imam Abu Haneefa (radiyallahu ta'ala anhu) and seek the intermediation of the Imam to remove their difficulties. These people believed this to be a means of success and received great rewards from this practice. Imam Shafi'i, whenever he was in Baghdad , would go to the shrine of Imam Abu Haneefa and seek blessings from him. Whenever I am in need, I offer two rak'ahs of salah and then go near his grave. I pray to Allah at this place, hence, my difficulty is immediately removed.
(Al-Khairat al-Hissan, p.166)
★ Ibn Hajar al-Haytami mentioned in the thirty-fifth chapter (35th) of his book on Imam Abu Hanifa entitled al-Khayrat al-Hisan:
★ Ibn Hajar in Nata'ij al-Afkar (2:28), and the rest of al-Khatib's chain is solid."
★ Khatib's tarikh baghdad 1:123 and in the -
★ Jami' Masanid 1:120 , the author of Ta'nib al-Khatib (p 16) states that the narrators of (Khatib's) chain are each declared trustworthy (muwaththaqun) according to Khatib"
[ইবনুল জাওযী]
ইবনুল জাওযী এ বিষয়ে একখানা বই লেখেন, যেখানে তিনি আউলিয়া কেরাম (রহ:)-এর জীবনীর বিস্তারিত বিবরণ দেন। তিনি লেখেন:
হযরত মা’রূফ কারখী (বেসাল: ২০০ হিজরী): ”তাঁর মাযার শরীফ বাগদাদে অবস্থিত; আর তা থেকে মানুষেরা বরকত আদায় করেন। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ:)-এর সাথী হাফেয ইবরাহীম আল-হারবী (বেসাল: ২৮৫ হিজরী) বলতেন, হযরত মা’রূফ কারখী (রহ:)-এর মাযার শরীফ হচ্ছে পরীক্ষিত আরোগ্যস্থল” (২:২১৪)।
ইবনে জাওযী আরও বলেন, “আমরা নিজেরাই ইবরাহীম আল-হারবী (রহ:)-এর মাযার যেয়ারত করে তা থেকে বরকত আদায় করে থাকি।” [২:৪১০]
রেফারেন্স :
হাফেয যাহাবীও হযরত ইবরাহীম আল-হারবী (রহ:)-এর উপরোক্ত কথা (হযরত মা’রূফ কারখী (রহ:)-এর মাযার শরীফ হচ্ছে পরীক্ষিত আরোগ্যস্থল) বর্ণনা করেন। [‘সিয়্যার আ’লম আল-নুবালা’, ৯:৩৪৩]
[ইমাম যাহাবী]
ইমাম যাহাবী বর্ণনা করেন:
একবার সমরকন্দ অঞ্চলে খরা দেখা দেয়। মানুষজন যথাসাধ্য চেষ্টা করেন; কেউ কেউ সালাত আল-এস্তেসক্কা (বৃষ্টির জন্যে নামায-দোয়া) পড়েন, কিন্তু তাও বৃষ্টি নামে নি। এমতাবস্থায় সালেহ নামের এক প্রসিদ্ধ নেককার ব্যক্তি শহরের কাজী (বিচারক)-এর কাছে উপস্থিত হন এবং বলেন,
আমার মতে আপনার এবং মুসলমান সর্বসাধারণের ইমাম বোখারী (রহ:)-এর মাযার শরীফ যেয়ারত করা উচিত। তাঁর মাযার শরীফ খারতাংক এলাকায় অবস্থিত। ওখানে মাযারের কাছে গিয়ে বৃষ্টি চাইলে আল্লাহ হয়তো বৃষ্টি মঞ্জুর করতেও পারেন।
অতঃপর বিচারক ওই পুণ্যবান ব্যক্তির পরামর্শে সায় দেন এবং মানুষজনকে সাথে নিয়ে ইমাম সাহেব (রহ:)-এর মাযারে যান। সেখানে (মাযারে)
বিচারক সবাইকে সাথে নিয়ে একটি দোয়া পাঠ করেন; এ সময় মানুষেরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং ইমাম সাহেব (রহ:)-কে দোয়ার মধ্যে অসীলা হিসেবে গ্রহণ করেন। আর অমনি আল্লাহতা’লা মেঘমালা পাঠিয়ে ভারি বর্ষণ অবতীর্ণ করেন। সবাই খারতাংক এলাকায় ৭ দিন যাবত অবস্থান করেন এবং তাঁদের কেউই সামারকান্দ ফিরে যেতে চাননি। অথচ এই দুটি স্থানের দূরত্ব মাত্র ৩ মাইল।
[ইমাম যাহাবী কৃত সিয়্যার আল-আ’লম ওয়ান্ নুবালাহ, ১২তম খণ্ড, ৪৬৯ পৃষ্ঠা]
[Abdhul Haq Muhaddith E Dehlovi] : About the MAZAR OF IMAM MUSA KAAZIM (RA) [7th Imam] :-
Shaykh Abdul Haq Dehlwi writes: "Imam Shafi'i said that the grave of Hadrat Musa Kaazim (radiyallahu ta'ala anhu) is a place where supplications are accepted readily" (Ashi'atul Lum'aat, vol.1 p.715)
[Al-Hafidh Ibn Hibban] : about the MAZAR OF ALI BIN MUSA AL-RIDHA (RA) (8th Imam)
…” (مات على بن موسى الرضا بطوس من شربة سقاه إياها المأمون فمات من ساعته وذلك في يوم السبت آخر يوم سنة ثلاث ومائتين وقبره بسناباذ خارج النوقان مشهور يزار بجنب قبر الرشيد، قد زرته مرارا كثيرة وما حلت بي شدة في وقت مقامى بطوس فزرت قبر على بن موسى الرضا صلوات الله على جده وعليه ودعوت الله إزالتها عنى إلا أستجيب لي وزالت عنى تلك الشدة وهذا شيء جربته مرارا فوجدته كذلك أماتنا الله على محبة المصطفى وأهل بيته صلى الله عليه وعليهم أجمعين)
ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ:) নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনাকালে আল-রেযা (রহ:)-এর মাযারে তাঁর তাওয়াসসুলের বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন এবং বলেন, “তুস্ নগরীতে অবস্থান করার সময় যখনই আমি কোনো সমস্যা দ্বারা পেরেশানগ্রস্ত হয়েছি, তৎক্ষণাৎ আমি হযরত আলী ইবনে মূসা রেযা (তাঁর নানা তথা হুযূর পাক ও তাঁর প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক)-এর মাযার শরীফ যেয়ারত করতাম এবং আল্লাহর কাছে সমাধান চাইতাম। এতে আমার দোয়া কবুল হতো এবং পেরেশানিও দূর হতো। আমি এটি-ই করতাম এবং বহুবার এর সুফল পেয়েছি।” [ইবনে হিব্বান প্রণীত ‘কিতাবুস্ সিকাত’, ৮ম খণ্ড, ৪৫৬-৭ পৃষ্ঠা, # ১৪৪১১]
বাতিলদের জবাবে ইমাম সাবী (রহ) বলেন,
Imam Sawi writes: "who said that The Muslims who visit the graves of the saints are Kafir because they believe that those visitors are worshipping other than Allah is a sign of clear heresy.
★★ To visit the saints is not worshipping other than Allah, rather it is a sign of loving those whom Allah loves [so, it is not kufur] " (Tafseer Sawi, vol.1 p.245)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন