পবিত্র জুমার ফযিলত সম্পর্কে "সুরাতুল জুমা" এর নবম আয়াতে ইরশাদ ফরমানঃ-
হে ঈমানদারগণ,যখন নামাযের আযান হয় জুমা দিবসে,তখন আল্লাহর যিকরের দিকে দৌঁড়াও এবং বেচা-কেনা পরিত্যাগ করো,এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানো|
(পারা-২৮,সুরা-জুমা,আয়াত-০৯...তরজুমায়ে কানযুল ঈমান)
|.......জুমার অর্থ.......|
প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন,হাকীমুল উম্মত,মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বর্ণনা করেন, যেহেতু সেদিনই সমস্ত সৃষ্ট জীবের অস্তিত্বের বিকাশ ঘটেছে,সেদিনই হযরত আদম ছফীয়্যুল্লাহ (আলাইহিস সালাম) উনার মাটি একত্রিত করা হয়,আর সেদিনই লোকেরা একত্রিত হয়ে জুমার নামায আদায় করে থাকে|তাই সে দিনকে জুমা বলা হয়|ইসলামের পূর্বে আরবরা উহাকে 'আরুবা' নামে অভিহিত করতো|
(মিরাত শরহে মিশকাত,খন্ড-০২,পৃঃ- ৩১৭)
|......দুরুদ শরীফ পড়ার ফযিলত......|
নবীয়ে দো জাহান,রহমতে আলামিয়ান,মাহবুবে রহমান ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেছেন, "যে ব্যক্তি আমার উপর জুমার দিন দুইশতবার দুরুদ শরীফ পাঠ করবে,তার দুইশত বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে|
(কানযুল উম্মান,খন্ড-১,পৃঃ-২৫৬,হাদীস নং-২২৩৮)
|......গরীবদের হজ্ব.......|
হযরত সাইয়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদ্বিআল্লাহতা'লা আনহু) থেকে বর্ণিত, সরকারে নামদার,বি-ইযনে পরওয়ারদিগার উভয় জগতের মালিকো মুখতার,শাহেনশাহে আবরার (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম) ইরশাদ ফরমান, "জুমার নামায মিসকিনদের হজ্ব|অন্য বর্ণনায় এসেছে,জুমার নামায গরীবদের হজ্ব|
(কানযুল উম্মাল,খন্ড-৭ম,হাদীস নং-২১০২৭ ও ২১০২৮)
»» রাসুলে আকরাম,নুরে মুজাসসাম,হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেছেন, "নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য প্রত্যেক জুমার দিবসে একটি হজ্ব ও একটি ওমরা রয়েছে|জুমার নামাযের জন্য তাড়াতাড়ি বের হওয়া তোমাদের জন্য হজ্ব এবং জুমার নামাযের পর আসরের নামাযের জন্য অপেক্ষা করা ওমরা (এর সমতুল্য)
(আস-সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী,খন্ড-৩,পৃঃ ৩৪২, হাদীস নং ৫৯৮০)
|.....জুমার নামাযে পাগড়ীর ফযিলত....।
সরকারে মদীনা,সুলতানে বা-কারীনা,রাসুলে আকরাম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ মুবারক করেছেন, "নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা ও উনার ফিরিশতারা জুমার দিবসে পাগড়ী পরিধানকারীদের উপর দুরুদ শরীফ প্রেরণ করেন|"
(মাযমাউয যাওয়ায়েদ,খন্ড-২,-পৃঃ-৩৯৪,হাদীস নং ৩০৭৫)
|.......আরোগ্যতা দান.......|
হযরত হুমাইদ আবনে আবদুর রহমান (রাদ্বিআল্লাহুতা'লা আনহু) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে,তিনি ইরশাদ করেন, "যে ব্যক্তি জুমার দিন নখ কাটে,আল্লাহ তা'আলা তার শরীর থেকে রোগ ব্যাধি বের করে তাতে সুস্থ্যতা প্রবিষ্ট করান|
(মুছান্নিফে ইবনে আবী শায়বা,খন্ড-২,পৃঃ ৬৫)
»»অপর এক বর্ণনায় আছে যে, "যে ব্যক্তি জুমার দিন নখ কাটবে,তাঁর নিকট রহমতের আগমন ঘটবে এবং তার পাপরাশি দূরীভূত হবে|
(তানযিয়াতুস শরীআতিল মারফুআ,খন্ড-২,পৃঃ ২৬৯/বাহারে শরীয়ত,খন্ড-১৬,পৃঃ ১৯৫)
বিঃদ্রঃ জুমার দিন হিযামত তথা শিঙা বসানো ও নখ কাটা জুমার নামাযের পরই উত্তম|
(রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার,খন্ড-০৯,পৃঃ ৫৮১,মুলতান থেকে প্রকাশিত)
॥...জুমার দিন জাহান্নামীদের মুক্তি দান...॥
হুযুর পাক (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম) ইরশাদ মুবারক করেছেন, "জুমার দিনের রাত-দিন ২৪ ঘন্টার মধ্যে এমন কোন ঘন্টা নেই,যার মধ্যে প্রতিনিয়ত ৬ লক্ষ দোযখবাসীকে মুক্তি দেয়া হচ্ছেনা,যাদের উপর জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে|"
(মুসনাদে আবু ইয়ালা,খন্ড-৩,পৃঃ- ২৩৫,হাদীস নং-৩৪৭১)
॥»»কবরের আযাব থেকে মুক্ত««॥
তাজেদারে মদীনা (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম) ইরশাদ মুবারক করেছেন, "যে ব্যক্তি জুমার দিন কিংবা জুমার রাতে মৃত্যু বরণ করবে,সে কবরের আযাব থেকে মুক্তি পাবে এবং ক্বিয়ামত দিবসে সে এমনিভাবে উঠবে যে,তার উপর শহীদদের মোহর শোভা পাবে|
(হিলআতুল আউলিয়া,খন্ড-৩,পৃঃ-১৮১,হাদীস নং ৩৬৯)
॥»»জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়««॥
রাসুলে পাক (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম) ইরশাদ ফরমান, "যে ব্যক্তি জুমার নামায পড়ে,ঐ দিন রোযা রাখে,কোন অসুস্থ্য ব্যক্তির সেবা করে,কোন জানাযায় উপস্থিত হয়,কারো বিয়েতে অংশগ্রহন করে,তবে ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়|
(আল মুজামুল কাবীর,খন্ড-৮ম,পৃঃ-১৯৭,হাদীস নং ৭৪৭৪)
««॥তিন হাজার মাগফিরাত»»॥
রহমতে কাওনাইন,হুযুর পাক (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম) ইরশাদ মুবার করেছেন, "যে ব্যক্তি প্রত্যেক জুমার দিন স্বীয় পিতামাতা উভয়ের কিংবা একজনের কবর যিয়ারত করে তথায় সূরা ইয়াছিন পাঠ করবে,আল্লাহ তা'আল্লাহ তাকে সূরা ইয়াছিন শরীফে যতটি অক্ষর আছে ততটি ক্ষমা প্রদর্শন করবেন|
(ইত্তেহাফুস সাদাতিল মুত্তাকিন,খন্ড-১০,পৃঃ-৩৬৩,বৈরুত থেকে প্রকাশিত)
॥««দশ হাজার বছরের রোযার সাওয়াব»»॥॥
ইমামে আহলে সুন্নাত,আযিমুল বারকাত,ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী (রাদ্বিআল্লাহুতা'লা আনহু) বলেছেন,বর্ণিত আছে যে, জুমাবারের রোযার সাথে বৃহস্পতিবার অথবা শনিবারের রোযা মিলিয়ে রাখলে দশ হাজার বছরের রোযার সমান সাওয়াব পাওয়া যাবে|
(ফতোয়ায়ে রযবীয়্যাহ শরীফ,নতুন সংস্করণ,খন্ড-১০,পৃঃ ৬৫৩)
অন্যান্য হাদিস থেকে :
১.
আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত এক হাদীসে রাসুল (সাঃ) বলেছেন,“যে ব্যাক্তি জু’আর দিন ফরজ গোসলের মত গোসল করে প্রথম দিকে মসজিদে হাজির হয়, সে যেন একটি উট কুরবানী করল,দ্বিতীয় সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন একটি গরু কুরবানী করল, তৃতীয় সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ছাগল কুরবানী করল। অতঃপর চতুর্থ সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে গেল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। আর পঞ্চম সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। অতঃপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুৎবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসেযায়।”
(বুখারীঃ ৮৮১, ইফা ৮৩৭, আধুনিক ৮৩০)
২.
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “জুম’আর সালাতে তিন ধরনের লোক হাজির হয়। (ক) এক ধরনের লোক আছে যারা মসজিদে প্রবেশের পর তামাশা করে, তারা বিনিময়ে তামাশা ছাড়া কিছুই পাবে না। (খ) দ্বিতীয় আরেক ধরনের লোক আছে যারা জুম’আয় হাজির হয় সেখানে দু’আ মুনাজাত করে, ফলে আল্লাহ যাকে চান তাকে কিছু দেন আর যাকে ইচ্ছা দেন না। (গ) তৃতীয় প্রকার লোক হল যারা জুম’আয় হাজির হয়, চুপচাপ থাকে, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনে, কারও ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে আগায় না, কাউকে কষ্ট দেয় না, তার দুই জুম’আর মধ্যবর্তী ৭ দিন সহ আরও তিনদিন যোগ করে মোট দশ দিনের গুনাহ খাতা আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেন।” (আবু দাউদঃ ১১১৩)
৩.
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,“জুম’আর দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতা এসে হাজির হয়। সেখানে দাঁড়িয়ে তারা সর্বাগ্রে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকে। প্রথম ভাগে যারা মসজিদে ঢুকেন তাদের জন্য উট, দ্বিতীয়বারে যারা আসেন তাদের জন্য গরু, তৃতীয়বারে যারা আসেন তাদের জন্য ছাগল, চতুর্থবারে যারা আসেন তাদের জন্য মুরগী, ও সর্বশেষ পঞ্চমবারে যারা আগমন করেন তাদের জন্য ডিম কুরবানী বা দান করার সমান সওাব্ব লিখে থাকেন। আর যখন ইমাম খুৎবা দেওয়ার জন্য মিম্বরে উঠে পড়েন ফেরেশতারা তাদের এ খাতা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যান।” (বুখারী ৯২৯, ইফা ৮৮২, আধুনিক ৮৭৬)
৪.
প্রতি পদক্ষেপে এক বছরের নফল রোজা ও এক বছরের সারারাত তাহাজ্জুদ পড়ার সওয়াব: আউস বিন আউস আস সাকাফী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “জুমা’আর দিন যে ব্যাক্তি গোসল করায় (অর্থাৎ সহবাস করে, ফলে স্ত্রী ফরজ গোসল করে এবং) নিজেও ফরজ গোসল করে, পূর্বাহ্ণে মসজিদে আগমন করে এবং নিজেও প্রথম ভাগে মসজিদে গমন করে, পায়ে হেঁটে মসজিদে যায় (অর্থাৎ কোন কিছুতে আরোহণ করে নয়), ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসে, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনে, কোন কিছু নিয়ে খেল তামাশা করে না; সে ব্যাক্তির প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য রয়েছে বছরব্যাপী রোজা পালন ও সারা বছর রাত জেগে ইবাদত করার সমতুল্য সওয়াব।” (মুসনাদে আহমাদঃ ৬৯৫৪, ১৬২১৮)
৫.
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,“পাঁচ বেলা সালাত আদায়, এক জুম’আ থেকে পরবর্তী জুম’আ, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজানের মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে যাওয়া সকল (সগীরা) গুনাহের কাফফারা স্বরূপ, এই শর্তে যে, বান্দা কবীরা গুনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে।” (মুসলিম)
৬.
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যাক্তি ভালভাবে পবিত্র হল অতঃপর মসজিদে এলো, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শুনতে চুপচাপ বসে রইল, তার জন্য দুই জুম’আর মধ্যবর্তী এ সাত দিনের সাথে আরও তিনদিন যোগ করে মোট দশ দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে খুৎবার সময় যে ব্যক্তি পাথর, নুড়িকণা বা অন্য কিছু নাড়াচাড়া করল সে যেন অনর্থক কাজ করল।’ (মুসলিমঃ ৮৫৭)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন