আমাদের সমাজে কিছু মানুষ ওহাবী সালাফীদের কথা শুনে নাচানাচি শুরু করে অথচ তারা কিছু যাচাই বাছাই না করেই একজনকে শিরিক কুফরের অপবাদ দিয়ে দেয় যার পাপ উল্টা তার কাধে পরে।
অনেকেই প্রশ্ন করে,
রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর গোলাম বা পীরের গোলাম বলা কি জায়েজ নাকি শিরিক?
উত্তরঃ
গোলাম ( غلام ) শব্দের আরবী প্রতিশব্দ হল, خادم (সেবক), عامل (কর্মচারী) প্রভৃতি। অতএব রাসূলের গোলাম বা পীরের গোলাম বা খাদেম, কর্মচারী, সেবক বলাতে কোন আপত্তি নেই। যেমন,
♦ মুসলিম শরীফের ২য় খন্ডের كتاب الالفاظ من الادب -এ বর্ণিত হয়েছে যেঃ-
لايقولن احدكم عبدي وامتي كلكم عبيد الله وكل نساءكم اماء الله ولكن ليقل غلامي وجاريتي
অর্থাৎ, নবীজী ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ عبدي (আমার বান্দাহ) বলোনা। তোমরা সবাই আল্লাহ’র বান্দাহ এবং তোমাদের সকল মহিলারা আল্লাহ’র বান্দী। কিন্তু আমার গোলাম আমার চাকরানী বলতে পার।
★ সহিহ মুসলিম, আধ্যায় : ৪১ : শব্দচয়ণ ও শব্দ প্রয়োগে শিষ্টাচার : ৫৬৮১।
ইফাঃ অনুবাদ থেকেঃ
♦ মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এ হল সে সব হাদীস, যা আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে রিওয়ায়াত করেছেন। একথা বলে তিনি কয়েকখানি হাদীস উল্লেখ করেছেন। (সে সবের একখানি হল) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেনঃ তোমাদের কেউ (মনিব সমন্ধে এভাবে) বলবে না যে, তোমার রব্বকে পান করাও, তোমার রব্বকে খাবার দাও, তোমার রব্বকে উযু করাও। তিনি আরও বলেনঃ
"তোমাদের কেউ (নিজেও) বলেছেনঃ আমার রব্ব বরং বলবে আমার সায়্যিদ- সরদার বা নেতা, আমার মাওলা-মনিব। আর তোমাদের কেউ বলবে না, আমার বান্দা আমার বাঁদী, বরং বলবে, আমার সেবক আমার সেবিকা।"
(ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনুদিত)
★ সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), আধ্যায় : ৪১ : শব্দচয়ণ ও শব্দ প্রয়োগে শিষ্টাচার : ৫৬৮১।
—
ব্যাখ্যাঃ
এখানে সরাসরি গোলাম শব্দটিই ব্যবহার হয়েছে এবং তা ব্যবহারের বৈধতাও দেয়া হয়েছে। সুতরাং কেউ যদি নিজেকে খাদেম বা চাকর বা কর্মচারী অর্থে পীরের গোলাম বলে তা অবশ্যই জায়িয।
প্রসংগত, হাদীস শরীফে عبدي (আমার বান্দাহ) বলতে নিষেধ করা হয়েছে। কাজেই শরয়ী পরিভাষায় ইবাদাতকারী হিসেবে কেউ তার গোলামকে বা কর্মচারীকে বা খাদেমকে কিংবা কোন মুরীদ নিজেকে পীরের عبد (আবদ তথা বান্দাহ) বলতে পারবে না। কেননা ইবাদতের একমাত্র মালিক আল্লাহ পাকই; এতে সন্দেহ নেই। অন্য যে কাউকেই হোক না কেন, ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য বা ইলাহ মনে করলে শিরক হবে; তবে এ অর্থ ছাড়া গোলাম অর্থে যদি عبد (বান্দাহ) শব্দটি কেউ তার কর্মচারী বা খাদেমকে বলে কিংবা কোন মুরীদ নিজেকে গোলাম অর্থে পীরের عبد (বান্দাহ) বলে এতে সমস্যা নেই।
♦ আল্লাহ বলেন-
قل ياعبادي الذين اسرفوا علي انفسهم لاتقنطوا من رحمة الله
অর্থাৎ, হে নবী! আপনি তাদের কে সম্বোধন করুন, হে আমার বান্দাহগণ, তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহ’র অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না।
এ আয়াতেقل ياعبادي (হে আমার বান্দাগণ) এর দু’টি অর্থ প্রকাশ পায়।
এক, আল্লাহ বলেন- ওহে আমার বান্দাহগণ;
অথবা
দুই, হুযুর পাককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, হে নবী আপনি বলুন, হে আমার (অর্থাৎ, আপনার) বান্দাহগণ। এ দ্বিতীয় অর্থে রাসূলুল্লাহ’র বান্দাহ বুঝানো হয়েছে, অর্থাৎ নবীজীর গোলাম এবং উম্মত।
অনেক বুযুর্গানে দ্বীন দ্বিতীয় অর্থটি গ্রহণ করেছেন।
♦ আল্লামা রুমী মসনবী শরীফে বলেছেন -
بندہ خود خواند احمد در رشاد * جملہ عالم را بخوان قل یا عباد
অর্থাৎ, সমগ্র জগতবাসীকে হুযুর স্বীয় বান্দাহ বলেছেন।
কুরআন শরীফে দেখুন قل ياعبادي বলা হয়েছে।
♦ ইযালাতুল খফা গ্রন্থে শাহ ওলী উল্লাহ সাহেব রাহিমাহুল্লাহ আর রিয়াযুন নফরা ইত্যাদি কিতাবের উদৃতি দিয়ে বলেছেন যে,
হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতে গিয়ে বলেছিলেন-
قد كنت مع رسول الله صلي الله عليه وسلم فكنت عبده وخادمه
অর্থাৎ,আমি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। তখন আমি তাঁর বান্দাহ ও খাদেম ছিলাম।
অতএব, প্রমাণিত হল যে, عبد (বান্দাহ) শব্দটি গোলাম অর্থে আল্লাহকে ছাড়াও ব্যবহার করা যায়।
♦ আল্লাহ পাক সুরা তাহরীমের 4 নং আয়াতে সুস্পষ্টভাবে 'মাওলা' শব্দটি নিজেই অন্যদের জন্য ব্যবহার করেছেন।
যেমন,আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন...
↓
অবশ্যই মহান আল্লাহ তাঁর [প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা'র] 'মাওলা'।হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালামও তাঁর 'মাওলা' এবং নেককার ঈমানদারগণও তাঁর 'মাওলা'।এছাড়া ফিরিশতাগণও তাঁর সাহায্যকারী।
হাদীস শরীফেও রয়েছে,রাসুলুল্লাহ আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু এর ফযিলত বর্ণানা করতে গিয়ে ইরশাদ করেছেন,আমি যার 'মাওলা' আলীও তার 'মাওলা'।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন