শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৫

সালাতে কোথায় হাত বাধতে হবে? (পর্ব ১)

উত্তরঃ এ ব্যাপারে চার ধরনের বর্ননা পাওয়া যায় :

★ সালাতে হাত রাখবে বুকে[1],
★ বুকের নীচে নাভীর উপরে[2] (সর্বোত্তম)
★ নাভীর নিচে[3]। (সর্বোত্তম)
★ গলা বা কন্ঠনালীর নিচে হাত বাধা [26]

সুত্র :

[1] . সুনানে আবু দাউদ, তাউস কর্তৃক বর্ণিত মুরসাল(যঈফ) হাদীস; ইবনু খুজাইমাতে বর্ণিত যঈফ হাদীস।(বিস্তারিত আলোচনা সামনে আসছে)
[2] . সুনানে আবু দাউদ, আলী(রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যঈফ হাদীস।
[3] . সুনানে আবু দাউদ, আলী(রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যঈফ হাদীস।
[26], বায়হাকী : সুনানে কুবরা



হানাফী মাযহাবের মত[4],
শাফিয়ী মাযহাবের একটি মত[5],
ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বলের প্রসিদ্ধ মত[6],
হাম্বলী মাযহাবের প্রসিদ্ধ মত[7] অনুসারে সালাতে হাত নাভীর নিচে রাখা উত্তম,
ইমাম ইসহাক ইবন রাহাওয়াইহি, সুফিয়ান সাওরী প্রমুখ মুহাদ্দিস ফকীহও এ মতটি গ্রহন করেছেন।[8]
ইমাম মালিক ইবন আনাস এবং আহমাদ ইবন হাম্বলের একটি মত[9], এবং
শাফিয়ী মাযহাবের মূল মত[10] অনুসারে সালাতে হাত নাভীর উপরে বুকের নিচে রাখা উত্তম। কিছু হানাফী ফকীহ বলেছেন যে শাফিয়ীদের মতে বুকে হাত বাধবে কিন্তু এরুপ কোনো কথা শাফিয়ী ফকীহগন বর্ণনা করেছেন বলে জানা যায় না।

সুত্র :

[4] . মারগীনানী, আল-হেদায়া, ১/৪৭
[5] . ইমাম নববী, আল-মাজমূ ৩/৩১০-৩১৩ ; মুবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযী ৩/৮৩
[6] . ইবনুল কায়্যিম, বাদাইউল ফাওয়াইদ, ৩/৯১ ; ইবন কুদামা, আল-মুগনী ১/৫১৪-৫১৫
[7] . আলী ইবন সুলাইমান মারদাবী, আল-ইনসাফ, ২/৩৫
[8] . শাওকানী, নাইলুল আওতার, ২/২০৩
[9] . ইবনুল কায়্যিম, বাদাইউল ফাওয়াইদ, ৩/৯১ ; ইবন কুদামা, আল-মুগনী ১/৫১৪-৫১৫ ; শাওকানী, নাইলুল আওতার, ২/১৮৯ ; বাকর আবু যাইদ, লা জাদীদা ফী আহকামিস সালাত, পৃঃ ১২
[10] . ইমাম নববী, আল-মাজমূ ৩/৩১০-৩১১




এ ব্যাপারে বিখ্যাত মুহাদ্দিসগ এর বক্তব্য :




প্রখ্যাত শাফিয়ী ফকীহ ও মুহাদ্দিস ইমাম নববী(রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ

“হস্তদ্বয় বুকের নিচে এবং নাভীর উপরে রাখবে। এটিই হচ্ছে মাযহাবের লিপিবদ্ধ নিশ্চিতকৃত সঠিক মত। এ বিষয়ে আবূ ইসহাক মারওয়াযীর আরেকটি প্রসিদ্ধ মত আছে, তা হলো, হস্তদ্বয় নাভীর নিচে রাখতে হবে। প্রথম মতটিই (আমাদের)মাযহাব।”[11]

প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও হাম্বলী ফকীহ আল্লামা ইবনুল জাওযী (রহ) (মৃঃ ৫০৮ হিজরী) বলেনঃ

“ডান হাত বাম হাতের উপর বুকের নিচে রাখবে। এটি (ইমাম)শাফিয়ীর মত। আহমাদ(ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল) থেকে বর্ণিত মত যে, হস্তদ্বয় নাভীর নিচে রাখবে। তার অন্য মত বিষয়টি মুসাল্লীর ইচ্ছাধীন। আমাদের(হাম্বলী মাযহাবের) মতটিই(নাভীর নিচে রাখা) সালাতের বিনয় ও বিনম্রতার জন্য বেশী উপযোগী।”[12]

ইমাম নববী(রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ

“তাকবীরে তাহরীমার পর ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা মুসতাহাব। এভাবে হস্তদ্বয় বুকের নিচে নাভীর উপরে রাখবে। এটিই আমাদের(শাফিয়ী মাযহাবের) প্রসিদ্ধ মত। অধিকাংশ ফকীহ এ মত গ্রহন করেছেন। আবু হানীফা, সুফিয়ান সাওরী, ইসহাক ইবন রাহাওয়াইহি এবং আমাদের মাযহাবের আবূ ইসহাক মারওয়াযী বলেন যে, হস্তদ্বয় নাভীর নিচে রাখবে। আলী(রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে এ দু মাযহাবের পক্ষে দুটি বর্ণনা রয়েছে। ইমাম আহমাদ(ইবন হাম্বল) থেকে দুটি মত বর্ণিত উপরের দুটি মাযহাবের মত। ইমাম আহমাদের তৃতীয় মত যে, এ বিষয়ে উত্তম বলে কিছু নেই; কাজেই বিষয়টি মুসাল্লীর ইচ্ছাধীন। ইমাম আওযায়ী এবং ইবনুল মুনযির এ মত গ্রহন করেছেন। ইমাম মালিক থেকে দুটি মত বর্ণিতঃ এক মতে হস্তদ্বয় বুকের নিচে রাখবে, অন্য মতে হস্তদ্বয় একটির উপর অন্যটি রাখবে না, বরং ঝুলিয়ে রাখবে। মালিকী মাযহাবের অধিকাংশ আলিম দ্বিতীয় মতটি বর্ণনা করেছেন এবং এটিই তাদের নিকট অধিক প্রসিদ্ধ।”[13]

এখানে আমরা দেখছি যে, ইমাম নববী(রাহিমাহুল্লাহ) ফকীহগনের ৪টি মত উল্লেখ করেছেনঃ

(১) নাভীর উপরে বুকের নিচে রাখা,
(২) নাভীর নিচে রাখা,
(৩) বিষয়টি মুসল্লীর ইচ্ছাধীন,
(৪) হস্তদ্বয় ঝুলিয়ে রাখা।

(কিন্তু) বুকের উপরে রাখা বা গলার নিচে রাখার মত দুটি তিনি উল্লেখ করেন নি।…পূর্ববর্তী কোনো ফকীহ এ মত দুটি গ্রহন করেছেন বলে জানা যায় না।[14]
তবে সমসাময়িক কিছু আলীম বুকের উপর হাত বাধার মত প্রকাশ করেছেন।[15]
অপরদিকে ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল[16] এবং
প্রসিদ্ধ হাম্বলী ফকীহ, মুজতাহিদ ও মুহাদ্দিস শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ[17] বুকে হাত বাধাকে ‘মাকরুহ’ বা অপছন্দনীয় বলে মন্তব্য করেছেন।

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ(রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ

“এবং সে (সালাতে)হাত বাধবে নাভীর নিচে অথবা বুকের নিচে(নাভীর উপরে), এর কোনোটিই অপছন্দনীয় নয়(দুটিই বৈধ)।”[18]


প্রসিদ্ধ হাম্বলী ফকীহ ইমাম মুওয়াফফাক উদ্দীন ইবন কুদামাহ(মৃঃ ৬২০ হিজরী) বলেনঃ

“হস্তদ্বয় রাখার স্থান সম্পর্কে ইমাম আহমাদ থেকে একাধিক মত বর্ণিত হয়েছে। এক বর্ণনায় তিনি বলেছেনঃ নাভীর নিচে রাখবে। অন্য বর্ণনায় তিনি বলেছেনঃ নাভীর উপরে রাখবে। তৃতীয় বর্ণনায় তিনি বলেনঃ মুসল্লী এ বিষয়ে স্বাধীন, সে যেখানে ইচ্ছা রাখতে পারে; কারন সবই হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। বিষয়টি প্রশস্ত।”[19]

সুনানে তিরমিযী গ্রন্থের লিখক, প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ইমাম মুহাম্মাদ ইবন ঈসা আত-তিরমিযী(রাহিমাহুল্লাহ) সালাতে হস্তদ্বয় রাখার একটি হাদীস উল্লেখ করে বলেনঃ

“সাহাবীগন, তাবিয়ীগন ও পরবর্তী যুগের আলীমগন এ হাদীসের উপর আমল করেন। তারা মত প্রকাশ করেন যে, সালাতের মধ্যে মুসল্লী তার ডান হাত বাম হাতের উপর রাখবে। তাদের কারো মতে হস্তদ্বয় নাভীর উপরে রাখবে। আর কারো মতে হস্তদ্বয় নাভীর নিচে রাখবে। বিষয়টি তাদের মতে প্রশস্ত।”[20]

ইমাম তিরমিযীর ভাষ্য অনুসারে হাত রাখাই(বাধাই) সুন্নাত, রাখার স্থানটির বিষয় প্রশস্ত, নাভীর উপরে বা নিচে রাখা যেতে পারে। লক্ষনীয় যে, তিনি এখানে গলার নিচে বা বুকের উপরে হাত রাখার মত উল্লেখ করেন নি।


ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল(রাহিমাহুল্লাহ) এবং ইমাম ইসহাক ইবন রাহাওয়াইহি(রাহিমাহুল্লাহ) এই দুই প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসগনের প্রসিদ্ধ ছাত্র, মুহাদ্দিস ও ফকীহ ইমাম ইসহাক ইবন মানসূর আল-কাওসাজ আল-মারওয়াযী(মৃঃ ২৫১ হিজরী) তাদের দুজন থেকে ফিকহী মাসআলা জিজ্ঞাসা করে তা সংকলন করেন। তার বইটির নাম ‘মাসাইলুল ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল ওয়া ইমাম ইসহাক ইবন রাহাওয়াইহি’। এ গ্রন্থে তিনি(ইমাম মারওয়াযী) বলেনঃ

“আমি (ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বলকে) বললামঃ যদি বাম হাতের উপর ডান হাত রাখে তাহলে হস্তদ্বয় কোথায় রাখবে? তিনি বললেনঃ নাভীর উপরে ও নিচে, কোনোটিতেই অসুবিধা নেই, সবই আমার মতে প্রশস্ত। ইসহাক(ইমাম ইসহাক ইবন রাহাওয়াইহি) বলেনঃ তিনি(ইমাম আহমাদ) যেমন বলেছেন। নাভীর নিচে রাখা হাদীসের আলোকে শক্তিশালী এবং বিনয়ের জন্য বেশী উপযোগী।”[21]

ইমাম ইবনুল মুনযির(মৃঃ ৩১৯ হিজরী)(রাহিমাহুল্লাহ) সালাতে হাত রাখার স্থান সম্পর্কে ইমাম ইসহাক ইবন রাহাওয়াইহি এর মত উল্লেখ করে বলেনঃ

“ইসহাক বলেছেনঃ নাভীর নিচে রাখা হাদীসের দৃষ্টিতে অধিক শক্তিশালী ও বিনম্রতার জন্য অধিক উপযোগী।”[22]

কেউ কেউ দাবী করেন যে, ইমাম ইসহাক ইবন রাহাওয়াইহি(রাহিমাহুল্লাহ) সালাতে ‘বুকে’ হাত রাখতেন, শাইখ নাসীরুদ্দিন আলবানী(রাহিমাহুল্লাহ)ও এই দাবী করেছেন এবং ‘বুকে’ হাত রাখার জন্য শাইখ আলবানী ইমাম ইসহাকের প্রশংসাও করেছেন। শাইখ আলবানী(রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ

“এ সুন্নাতটির(সালাতে বুকে হস্তদ্বয় রাখা) বিষয়ে মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ইমাম ইসহাক ইবন রাহাওয়াইহি। মারওয়াযী তার মাসাইল গ্রন্থের ২২২ পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ ‘ইসহাক আমাদের নিয়ে বিতর পড়তেন। … তিনি কুনূতের মধ্যে হস্তদ্বয় উত্তোলন করতেন, রুকুর পূর্বে কুনূত পড়তেন এবং তার হস্তদ্বয় তার স্তনদ্বয়ের উপর অথবা স্তনদ্বয়ের নিচে রাখতেন।’”[23]


ইমাম মারওয়াযী(রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ

‘ইসহাক আমাদের নিয়ে বিতর পড়তেন। … তিনি কুনূতের মধ্যে হস্তদ্বয় উত্তোলন করতেন, রুকুর পূর্বে কুনূত পড়তেন এবং তার হস্তদ্বয় তার স্তনদ্বয়ের উপর অথবা স্তনদ্বয়ের নিচে রাখতেন।’
এটি দ্বারা শাইখ আলবানী বলেছেন যে, ইমাম ইসহাক সালাতে হস্তদ্বয় বুকে রাখতেন। কিন্তু মারওয়াযীর গ্রন্থের টীকাকার[24] বলেনঃ

“এখানে কাওসাজ(ইমাম মারওয়াযী)এর কথার অর্থ হলো, ইসহাক ইবন রাহাওয়াইহি কুনুতের সময় হস্তদ্বয় উত্তোলন করে তার স্তনদ্বয়ের বরাবর বা স্তনদ্বয়ের নিচে দুআর জন্য তুলে রাখতেন। এর অর্থ এ নয় যে, তিনি হস্তদ্বয় স্তনদ্বয়ের উপরে বা নিচে রাখতেন।
এর প্রমাণ হলো, ইবন কুদামা মুগনী গ্রন্থের ২/৫৮৪-এ ইমাম আহমাদের মত উল্লেখ করেছেন যে, কুনুতের সময় দু হাত দুআর জন্য বুক পর্যন্ত উঠাবে। এরপর বলেনঃ ইসহাকও এ মত পোষণ করেছেন। দ্বিতীয় বিষয় হলো, ইসহাক(রাহিমাহুল্লাহ) ফরয বা বিতর কোনো সালাতেই বুকের উপর হাত রাখার মত পোষণ করতেন না; বরং তিনি নাভীর নিচে হাত রাখার মত পোষণ করতেন, যা কাওসাজ(ইমাম মারওয়াযী) নিজেই উদ্ধৃত করেছেন।
… কাজেই শাইখ আলবানী(রাহিমাহুল্লাহ)-এর বক্তব্যে আপত্তির অবকাশ আছে। কাওসাজের(ইমাম মারওয়াযীর) পূর্বাপর বক্তব্য শাইখ আলবানীর বক্তব্য সমর্থন করে না।”[25]




‘গলার নিচে’ হাত বাধা সম্পর্কিত হাদীসের পর্যালোচনাঃ



(ক) ইমাম বাইহাকী বলেনঃ “আমাদেরকে আবূ যাকারিয়া ইবন আবী ইসহাক বলেন, আমাদেরকে হাসান ইবন ইয়াকূব বলেন, আমাদেরকে ইয়াহইয়া ইবন আবী তালিব বলেন, আমাদেরকে যাইদ ইবনুল হুবাব বলেন, আমাদেরকে রাওহ ইবনুল মুসাইব বলেন, আমাকে আমর ইবন মালিক নুকরী বলেন, তিনি আবুল জাওযা থেকে, তিনি ইবন আব্বাস(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে, তিনি সূরা কাওসারে (তোমার রব্বের জন্য সালাত আদায় কর এবং নাহর কর)- আল্লাহর এ কথার ব্যাখ্যায় বলেনঃ ‘নাহর’ করার অর্থ ডান হাতকে বাম হাতের উপর সালাতের মধ্যে ‘নাহর’ বা কণ্ঠনালীর কাছে রাখা।”[26]

হাদিস পর্যালোচনা :

এ হাদীসের ভিত্তি রাওহ ইবনুল মুসাইব[27] নামক রাবীর উপর। এই রাবীর বিষয়ে :

★ ইমাম ইয়াহইয়া ইবন মঈন বলেনঃ (صويلح) কোনো রকম গ্রহনযোগ্য।
★ রাযী বলেনঃ কোনো রকম গ্রহণযোগ্য তবে শক্তিশালী নয়।
★  ইবন আদী বলেন, লোকটি অনেক অনির্ভরযোগ্য হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইবন হিব্বান বলেনঃ লোকটি নির্ভরযোগ্য রাবীদের সূত্রে জাল[28] হাদীস বর্ণনা করে; তার হাদীস গ্রহন করা বৈধ নয়। তার(রাওহ ইবনুল মুসাইবের) উস্তাদ আমর ইবন মালিক আন-নুকরী সম্পর্কে ইবন আদী বলেনঃ মুনকারুল হাদীসঃ লোকটি আপত্তিকর হাদীস বর্ণনাকারী এবং হাদীস চুরি করে।[29]
অর্থাৎ এই মাউকূফ হাদীসটির সনদ অত্যন্ত দুর্বল বলে প্রমানিত হলো।[30]



বুকের উপর বা বুকে হাত বাধা সম্পর্কিত হাদীসসমূহের পর্যালোচনাঃ


(ক) ইমাম বাইহাকী বলেনঃ

“আমাদেরকে আবূ সা’দ আহমাদ ইবন মুহাম্মাদ সূফী বলেন, আমাদেরকে আবূ আহমাদ ইবন আদী বলেন, আমাদেরকে ইবন সায়িদ বলেন, আমাদেরকে ইবরাহীম ইবন সাঈদ বলেন, আমাদেরকে মুহাম্মাদ ইবন হুজর আল-হাদরামী বলেন, আমাকে সায়ীদ ইবন আব্দুল জাব্বার ইবন ওয়ায়িল তার পিতা থেকে তার মাতা থেকে ওয়ায়িল(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে, তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি মাসজিদের দিকে উঠে যেয়ে মিহরাবে ঢুকলেন, অতঃপর তাকবীর বলে হস্তদ্বয় উঠালেন, অতঃপর তার ডান হাত বাম হাতের উপরে বুকের উপরে রাখলেন।”[31]

শাইখ নাসীরুদ্দিন আলবানী উল্লেখ করেছেন যে, (উপরোক্ত)হাদীসটি তিনটি কারনে (যঈফ)দুর্বলঃ

(১) মুহাম্মাদ ইবন হুজর হাদরামী দুর্বল। তার বিষয়ে ইমাম বুখারী বলেনঃ তার বিষয়ে আপত্তি আছে। ইমাম বুখারীর এ কথার অর্থ লোকটি অত্যন্ত দুর্বল। (ইমাম)যাহাবী বলেনঃ লোকটি আপত্তিকর হাদীস বর্ণনা করেছেন।
(২) সায়ীদ ইবন আব্দুল জাব্বারের বিষয়েও আপত্তি রয়েছে। নাসাঈ বলেনঃ তিনি শক্তিশালী নন। ইবন হিব্বান তাকে নির্ভরযোগ্যদের তালিকায় উল্লেখ করেছেন।
(৩) ‘আব্দুল জাব্বারের মাতা’ একেবারেই অজ্ঞাত পরিচয়।[32]
অর্থাৎ উপরের হাদীসটি অত্যন্ত দুর্বল[33] এবং দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।

(খ) ইমাম ইবন খুযাইমা বলেনঃ

“আমাদেরকে আবূ তাহির বলেন, আমাদেরকে আবূ বকর বলেন, আমাদেরকে আবূ মূসা বলেন, আমাদেরকে মুআম্মাল(ইবন ইসমাঈল) বলেন, তিনি সাওরী থেকে, তিনি আসিম ইবন কুলাইব থেকে তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়ায়িল(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে, তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করলাম এবং তিনি তার ডান হাত তার বাম হাতের উপর তার বুকের উপর রাখলেন।”[34]



উপরোক্ত হাদীসটিকে ‘সহীহ’ দাবী করে সমসাময়িক কিছু আলীমগন বুকে হাত বাধার পক্ষে মত দিয়েছেন।[35] অপরদিকে কেউ কেউ উপরোক্ত হাদীসটির মধ্যে কিছুটা দুর্বলতা আছে বলে মন্তব্য করেছেন এবং এর উপর আমল করেছেন।[36] তবে উপরোক্ত হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল যা আমরা আলোচনা করবো।
উপরোক্ত হাদীসের মূল সমস্যা দুইটি, যথাঃ

(১) হাদীসটির সনদে থাকা মুআম্মাল ইবন ইসমাঈল দুর্বল রাবী হিসেবে বিবেচিত।
(২) ওয়ায়িল ইবন হুজর থেকে আসিম ইবন কুলাইবের সনদে আরো কিছু সহীহ হাদীস হাত বাধার পক্ষে বর্ণিত হয়েছে তবে সেখানে হাত কোথায় রাখবে তা বর্ণিত হয়নি[37], তাই হাদীসটি ‘মুনকার’ বা ‘আপত্তিকর’ ও ‘অত্যন্ত দুর্বল’ বলে গণ্য।

হাদিস পর্যালোচনা :

মুআম্মাল ইবন ইসমাঈল সম্পর্কে :

★ ইমাম আবূ হাতিম রাযী বলেন, তিনি সত্যপরায়ণ; তবে খুব বেশী ভুল করেন।
★ ইমাম বুখারী বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস বা আপত্তিকর হাদীস বর্ণনাকারী। ইমাম বুখারী অত্যন্ত দুর্বল বা মিথ্যা হাদীস বর্ণনাকারীদেরকেই মুনকারুল হাদীস বলেন।
★ ইবন হাজার আসকালানী বলেনঃ সত্যপরায়ণ; তবে সৃতিশক্তি খারাপ।[38]

★ ইবনুল কায়্যিম বলেনঃ “মুহাদ্দিসগন সুফিয়ান সাওরী থেকে, আসিম ইবন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়ায়িল ইবন হুজর(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে, তিনি বলেনঃ ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে সালাত আদায় করলাম। তখন তিনি তার ডান হাত তার বাম হাতের উপর, বুকের উপর রাখলেন।’ ‘বুকের উপর’ কথাটি মুআম্মাল ইবন ইসমাঈল ছাড়া কেউ বলেন নি।”[39]

★ ইবনুল কায়্যিম অন্যত্র বলেনঃ “তিনি(ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল) বলেনঃ … বুকের উপর হাত রাখা মাকরুহ; কারন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি ‘তাকফীর’ করতে নিষেধ করেছেন। আর ‘তাকফীর’ অর্থ বুকের উপর হাত রাখা।
মুআম্মাল সুফিয়ান থেকে, আসিম ইবন কুলাইব থেকে তার পিতা থেকে ওয়ায়িল বর্ণনা করেছেন যে, নাবীউল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হাত বুকের উপর রাখেন। অথচ এ হাদীসটিই আব্দুল্লাহ ইবন ওয়ালীদ সুফিয়ান থেকে বর্ণনা করেছেন; কিন্তু তিনি ‘বুকের উপর’ কথাটি উল্লেখ করেন নি।”[40]


★ আব্দুল্লাহ ইবন ওয়ালীদের বর্ণনা ইমাম আহমাদ সংকলন করেছেনঃ “আমাদেরকে আব্দুল্লাহ ইবনুল ওয়ালীদ বলেন, আমাকে সুফিয়ান বলেছেন, তিনি আসিম ইবন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়ায়িল ইবন হুজর(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকেঃ আমি নাবীউল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখলাম যে, তিনি তার ডান হাত বাম হাতের উপর দিয়ে ধরে রেখেছেন।”

বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, ওয়ায়িল ইবন হুজর(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে অনেকেই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন; কিন্তু কেউই ‘বুকের উপর’ কথাটি বলেন নি। ওয়ায়িলের হাদীসটি আসিম ইবন কুলাইবের সুত্রেও অনেকেই বর্ণনা করেছেন কিন্তু তারাও কেউ ‘বুকের উপর’ কথাটি বলেন নি। এমনকি আসিম ইবন কুলাইব থেকে সুফিয়ান সাওরীর মাধ্যমে একই সনদে অন্যান্য রাবী বর্ণনা করেছেন কিন্তু কেউই ‘বুকের উপর’ কথাটি বলেন নি। শুধুমাত্র ‘মুআম্মাল ইবন ইসমাঈল’ ‘বুকের উপর’ কথাটি বলেছেন।

এখানে ইবনুল কায়্যিম বুকে হাত রাখা অপছন্দ করার বিষয়ে ইমাম আহমাদের মতের দলীল ব্যাখ্যা করেছেন। বুকে হাত রাখার কথা মুআম্মাল-এর হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে; কিন্তু মু’আম্মাল নিজে দুর্বল রাবী। উপরন্তু তিনি নির্ভরযোগ্য রাবীদের বিপরীতে বর্ণনা করেছেন। কাজেই তার বর্ণনা ‘মুনকার’ বা ‘আপত্তিকর’ ও ‘অত্যন্ত দুর্বল’ বলে গণ্য।[41]



রেফারেন্স সমুহ :



[11] . ইমাম নববী, আল-মাজমূ, ৩/৩১০-৩১১
[12] . ইবনুল জাওযী, আত-তাহকীক, ১/৩৩৯
[13] . ইমাম নববী, শারহ সহীহ মুসলিম, ৪/১১৪
[14] . ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, সালাতের মধ্যে হাত বাধার বিধান, পৃঃ ১০

[15] . যেমনঃ সৌদি আরবের বিগত প্রধান মুফতী শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায, শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালীহ আল-উসাইমীন, শাইখ মুহাম্মাদ নাসীরুদ্দীন আলবানী, শাইখ সাঈদ ইবন আলী আল-কাহতানী, শাইখ মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম আত-তুওয়াইযিরী। এছাড়াও বাঙ্গালী কিছু আলীম যেমনঃ ড. মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ, ড. মনজুরে ইলাহী, ড. আসাদুল্লাহ গালীব, মুফতী কাজী ইবরাহীম, শাইখ মতিউর রহমান মাদানী, শাইখ সাইফুদ্দীন বিলাল মাদানী, শাইখ আবুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী।

[16] . ইবনুল কায়্যিম, বাদাইউল ফাওয়াইদ, ৩/৯১-৯২
[17] . ইবন তাইমিয়্যাহ, শারহ উমদাহ আল-ফিকহ ফিল মাযহাব আল-হাম্বলী, পৃঃ ৬৭
[18] . ইবন তাইমিয়্যাহ, শারহ উমদাহ আল-ফিকহ ফিল মাযহাব আল-হাম্বলী, পৃঃ ৬৭
[19] . ইবন কুদামা, আল-মুগনী, ১/৫৪৯
[20] . সুনানে তিরমিযী, ২/৩২
[21] . মারওয়াযী, মাসাইলুল ইমাম আহমাদ ওয়া ইসহাক, ১/৫৫১-৫৫২
[22] . ইবনুল মুনযির, আল-আউসাত, ৪/১৮৫-১৮৭
[23] . আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, ২/৭১
[24] . মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়য়ের গবেষণা বিভাগ।
[25] . মারওয়াযী, মাসাইলুল ইমাম আহমাদ, টীকা, ৯/৪৮৫১
[26] . বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা, ২/৩১
[27] . অর্থাৎ, উপরোক্ত হাদীসের সনদের মধ্যে এই রাবী বিদ্যমান এবং এই রাবী যদি দুর্বল হয় তাহলে উপরোক্ত হাদীসও দুর্বল বা যঈফ বলে প্রমানিত হবে।
[28] . জাল অর্থাৎ বানোয়াট হাদীস, যা হাদীস নয় বরং কারো বানানো কথা হাদীস বলে চালিয়ে দেওয়া।
[29] . ড. ইবরাহীম আনীস, আম-মু’জামুল ওয়াসীত, ১/৫০৯ ; ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, সালাতের মধ্যে হাত বাধার বিধান, পৃঃ ৩০
[30] . ইবনুল মুলাক্কিন, সিরাজ উদ্দীন উমার ইবন আলীঃ আল-বাদরুল মুনীর, ৪/৮১ ; বাকর আবু যাইদ, লা জাদীদা ফী আহকামিস সালাত, পৃঃ ৯
[31] . বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা, ২/৩০
[32] . আলবানী, সিলসীলা যায়ীফাহ, ১/৬৪৩-৬৪৭
[33] . মুকবিল ওয়াদায়ী ও খালীদ শায়ি, আল-ই’লাম বি তাখয়ীরিল মুসাল্লী, পৃঃ ১০-১৩
[34] . সহীহ ইবন খুযাইমা, ১/২৪৩। [বিঃ দ্রঃ ইমাম ইবন খুযাইমা তার হাদীস গ্রন্থের নাম ‘সহীহ’ রাখলেও এতে সহীহ ও যঈফ সকল প্রকার হাদীস বিদ্যমান, এটি ইলমুল হাদীস সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান সম্পূর্ণ সকল মানুষই জানেন।]
[35] . যেমনঃ শাইখ মতিউর রহমান মাদানী। আর শাইখ আব্দুল হামীদ ফাইযী দাবী করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সালাতে) উভয় হাতকে বুকের উপর রাখতেন।[সালাতে মুবাশশির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), পৃঃ ১৪৪]
[36] . যেমনঃ শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালীহ আল-উসাইমীন, তিনি বলেছেনঃ “হাদীসটিতে সামান্য দুর্বলতা থাকলেও এক্ষেত্রে বর্ণিত অন্যান্য হাদীসের তুলনায় এটিই সর্বাধিক শক্তিশালী।” [ইবন উসাইমীন, ফাতওয়া আরকানুল ইসলাম, পৃঃ ২৯৮]
[37] . এখানে এরুপ দুটি হাদীস উল্লেখ করছি যা ওয়ায়িল ইবন হুজর থেকে বর্ণিত কিন্তু ‘বুকের উপর’ কথাটি নেই।


ইমাম মুসলিম বলেনঃ “আমাদেরকে যুহাইর ইবন হারব বলেন, আমাদেরকে আফফান বলেন, আমাদেরকে হাম্মাম বলেন, আমাদেরকে মুহাম্মাদ ইবন জুহাদাহ বলেন, আমাকে আব্দুল জাব্বার ইবন ওয়ায়িল বলেন, তিনি আলকামা ইবন ওয়ায়িল ও তাদের একজন মাওলা থেকে, তারা ওয়ায়িল ইবন হুজর(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে, তিনি দেখেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সালাত শুরু করতেন তখন তার দু হাত উঠালেন- হাম্মাম হাত উঠানোর বর্ণনা দিয়ে বলেনঃ তার কান পর্যন্ত – আল্লাহু আকবর বলেন। এরপর তিনি তার কাপড় জড়িয়ে নিলেন। অতঃপর তিনি তার ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন।” [সহীহ মুসলিম, কিতাবুস সালাত, ১/৩০১]
ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল বলেনঃ “আমাদেরকে ইউনুস ইবন মুহাম্মাদ বলেন, আমাদেরকে আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, আমাদেরকে আসিম ইবন কুলাইব তার পিতা থেকে, তিনি ওয়ায়িল ইবন হুজর(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে, তিনি বলেনঃ আমি নাবীউল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আগমন করলাম আর বললাম, তিনি কিভাবে সালাত আদায় করেন তা আমি দেখবো। তিনি বলেনঃ তিনি তখন কিবলামুখী হলেন, আল্লাহু আকবার বললেন এবং তার কাধদ্বয় পর্যন্ত হস্তদ্বয় উঠালেন। তিনি বলেনঃ এরপর তিনি তার ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরলেন।” [ইমাম আহমাদ, মুসনাদে আহমাদ, ৪/৩১৬(শুআইব আরনাউতের টীকাসহ)]
উপরোক্ত হাদীসটি ওয়ায়িল ইবন হুজর থেকে ‘আসিম ইবন কুলাইব’ এর সুত্রে বর্ণিত কিন্তু এখানেও ‘বুকের উপর’ কথাটি নেই। শুধুমাত্র ‘মুআম্মাল ইবন ইসমাঈল’ এর বর্ণনায় ‘বুকের উপর’ কথাটি রয়েছে। যেহেতু ‘মুআম্মাল ইবন ইসমাঈল’ এর বর্ণনা তার থেকে শক্তিশালী রাবীর বর্ণনার বিরুদ্ধে যাচ্ছে সেহেতু ‘মুআম্মাল ইবন ইসমাঈল’ এর বর্ণিত ‘বুকের উপর’ হাত বাধার হাদীসটি মুনকার বা দুর্বল অর্থাৎ দলীল হিসেবে অগ্রহনযোগ্য।


[38] . ইবন হাজার, তাহযীবুত তাহযীব, ১০/৩৩৯-৩৪০ ; তাকরীবুত তাহযীব, পৃঃ ৫৫৫
[39] . ইবনুল কায়্যিম, ই’লামুল মুওয়াক্কিয়ীন, ২/৪০০
[40] . ইবনুল কায়্যিম, বাদাইউল ফাওয়াইদ, ৩/৯১
[41] . বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ ড.খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার এর ‘সালাতের মধ্যে হাত বাধার বিধান’ বইটি। উক্ত বইটির পিডিএফ ডাউনলোড করতে ভিসিট করুনঃ http://www.quranheart.com
















কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন